শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজে অনিয়ম দুর্নীতি লুটপাট অভিযোগের পাহাড় by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
অনিয়ম,
দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে রাজধানীর শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের
সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানকে গত শনিবার ঘেরাও করেন শিক্ষকরা। ওই দিন
গভর্নিং বডির বৈঠক চলাকালে শিক্ষকরা তাকে ঘেরাও করেন। বৈঠক পণ্ড হয়ে যায়।
পরে ওই বৈঠককে রোববার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু এ দিনও কোন সিদ্ধান্ত
আসেনি। কলেজের শিক্ষকরা জানান, সভাপতি যোগদানের পর থেকে নানা কায়দায় ও
ফন্দি করে টাকা লুটপাট করছিলেন। কোটি কোটি টাকায় তিনি কেরানীগঞ্জের অজপাড়া
গায়ে জমি কেনেন। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। জমি কেনার
নামে অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভেঙে ৪৫ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন না করে ১৫ থেকে ২০ দিন পর ফল প্রকাশ করা হয়। ফলে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা কলেজ থেকে নেন। মাসে ২০ থেকে ২২ দিন কলেজে ভূরিভোজ করেন। নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বেহিসাবে ব্যয়ের অভিযোগ আছে। এমন নানা অভিযোগে শিক্ষকরা ছিলেন ক্ষুব্ধ। এর মধ্যে বানোয়াট অভিযোগে শনিবার স্থায়ী অধ্যক্ষকে ও একজন শিক্ষক কে বরখাস্ত করে নিজের লুটপাটের এক সাক্ষীকে অধ্যক্ষ পদে বসানোর উদ্যোগ নিলে শিক্ষকরা সভাপতিকে অন্য সদস্যদেরসহ ঘেরাও করে। কিন্তু এ সময় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষকরা বৈঠকে ঢুকে পড়েন। শুরু হয় বাক-বিতান্ড। একপর্যায়ে অন্য সদস্যদের হস্তক্ষেপে সভাপতি মুক্ত হন। পরে রোববার সকাল পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হলে শিক্ষকদের প্রতিবাদে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই গতকাল বৈঠকটি স্থগিত হয়ে যায়। জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষকরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। আমার করার কিছু ছিল না।
এদিকে কলেজের শিক্ষকরা তিন শিক্ষক প্রতিনিধির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে লিখিত দিয়েছেন। যাতে পুনরায় শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কোন মিটিংয়ে তারা অংশগ্রহণ না করতে। এছাড়া অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কলেজের সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশিদকে বাদ দিয়ে নতুন গভর্নির বডি গঠন করার জন্য শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চিঠি দিয়েছেন। শিক্ষকরা কলেজের অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়ির প্রকৃত দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিবি সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কাগজ নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেন। গত দুই দিনে মিটিং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে দ্রত ফোনটি কেটে দেন।
শিক্ষকরা জানান, কারসাজি করে জমি কেনা, নানান ধরনের উন্নয়ন, কেনাকাটা এবং মিটিং-সিটিংয়ের নামে লুট হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের অর্থ। আওয়ামী লীগের ৯ বছরের শাসনামলে তিলে তিলে জমানো প্রতিষ্ঠানটির ৮৬ কোটি টাকার মধ্যে ২২ কোটিই গত দু’বছরে হাওয়া হয়ে গেছে। এর পেছনে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির (জিবি) সভাপতি এবং তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি মূল ভূমিকা রাখছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় জিবির সভাপতি বেশি বেপরোয়া বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শুধু অর্থ লুটেই শেষ নেই অপতৎপরতা। সরকারি নিয়ম ভেঙে শিক্ষক নিয়োগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভেঙে প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেয়া, প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৪ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল ক্রয়, মোবাইল ফোনের বিল বাবদ মাসে ৪ হাজারসহ নানাভাবে মাসে গড়ে সাড়ে ৬৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন সভাপতি। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও আছে। এছাড়া বিভিন্ন সভার নামে সম্মানী গ্রহণ তার নেশায় পরিণত হয়েছে। এভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সভা পরিচালনা ও ব্যয় করা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষক পদোন্নতি, বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা কলেজের স্থায়ী আমানত ভেঙে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে আরেক ব্যাংকে রাখার মত কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করছেন। দুর্নীতিবাজ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের আর্থিকসহ অন্যান্য অপরাধ ও অভিযোগ আমলে নেন না। বিপরীত দিকে তার অন্যায়-অপকর্মের প্রতিবাদ কারীদের শায়েস্তা করতে বানোয়াট অভিযোগ তুলে ‘সাইজ’ করে থাকেন তিনি।
উল্লিখিত সব ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। বর্তমান সভাপতি আসার পর একাডেমিক উন্নয়নের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী গচ্ছিত অর্থ ভেঙে জমি কেনাসহ তথাকথিত উন্নয়ন শুরু হয়। কলেজের পাশের জমি না কিনে কেরানীগঞ্জে বিচ্ছিন্ন এলাকায় জমি কেনা হয়। অথচ কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির কোনো নিয়মই নেই। তাছাড়া খণ্ড জমি কোনো কাজেও আসবেনা। তিনি বলেন, কমিটি থাকার পরও একই কাজের জন্য সভাপতির ইচ্ছায় বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ নির্বিচারে জমি কেনা ও নিয়োগের প্রতিবাদ করায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার এই কাজে সঙ্গী হয়েছেন বিগত বিএনপি আমলে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত কয়েকজন শিক্ষক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, সভাপতি নিয়ম বর্হিভুতভাবে মোবাইল ফোন সেট কেনার নামে কলেজ থেকে ৮৩ হাজার ৯৬০ টাকা নগদ নিয়েছেন। পাশাপাশি বিধি বহির্ভূতভাবে তিনি টেলিফোন ভাতার নামে মাসে ৪ হাজার করে টাকা নেন। কলেজ থেকে টাকা লুটে নিতে তিনি মিটিং বাণিজ্য করে থাকেন। গত বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর কলেজের স্টাফ কাউন্সিল মিটিংয়ে তিনি তথাকথিত শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আটটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। প্রত্যেক কমিটির উপদেষ্টা তিনি। ওইসব কমিটি মূলত করা হয় মিটিং বাণিজ্য করার জন্য। এরপর বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবহিত করা হলে তিনি সভাপতির কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। তখন ২টি কমানো হয়। কিন্তু প্রত্যেক কমিটির প্রধান থাকেন তিনি এবং ওইসব কমিটিকে মাসে দু’টি বৈঠক করতে বাধ্য করেন। প্রত্যেক মিটিং থেকে তিনি সম্মানি নেন।
এক হিসাবে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে তিনি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার ৬৫৪ টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে নিয়োগ কমিটি বাবদ-২ লাখ ৬৩ হাজারন ৩৫০ টাকা, জিবির মিটিং বাবদ ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা, ওয়ার্কিং গ্রুপ বাবদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল বিল-৪৮ হাজার টাকা, ক্লাস বাবদ ২ লাখ টাকা এবং পদোন্নতি কমিটির মিটিং করে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে।
অভিযোগ আছে, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তিনি কলেজে ৪৫জন শিক্ষক নেন। ওই নিয়োগে একইদিনে একাধিক বিষয়ের পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রতি বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক সম্মানী নেন তিনি। তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা উন্নয়নের নামে অর্থ লুটপাট করছেন। যে কক্ষে টাইলস লাগাতে ৬ বস্তা সিমেন্ট দরকার, সেখানে ৫৬ বস্তা সিমেন্টের ভাউচার দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে অভিযোগ তিনি আমলে নেননি।
জমি ক্রয়ে আড়াই কোটি টাকা লোপাট: কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস করার কথা বলে কলেজ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে গ্রামের মধ্যে প্রায় ৪০০শতক জমি কেনা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। এক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন। জানা গেছে, মোট তিন দফায় জমি কেনা হয়। এরমধ্যে প্রথম দফায় ২৬২ শতাংশ জমি ক্রয়ে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়। এখানে ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি জাল দলিল হয়। জমির মালিক চার জন। তারা হলেন মো. সলিমুল্লা, মো. কালিমুল্লাহ, মো. হাবিবুল্লাহ ও মো. অলিউল্লাহ। তাদের পক্ষ থেকে মো. সাইদুল ইসলাম নামে একজনকে আম মোক্তার সাজিয়ে দলিল করা হয়। কিন্তু চার ভাই জানান, এ নামে কাউকে তারা আম মোক্তার নিয়োগ করেননি। এ নামে কাউকে তারা চিনেন না। তারা নিজেরাও জমি বিক্রি করেননি। মিনহাজ উদ্দিন নামে একজনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকার জমি কেনা হলেও তিনি ৩৪ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
এভাবে কলেজ থেকে ৫০০ শতক জমি কেনার নামে ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এছাড়া এ জমির রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম দফায় কেনা দলিল হাতে পাওয়া ২৬২ শতক জমির দলিল কলেজে জমা পড়েছে। এ জমি কেনায় রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১৭ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
দুর্নীতি ও লোপাটের রাস্তা সহজ করতে কলেজের জমি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক আবু নাঈম মো. রাফীর নিকট আত্মীয়ের রিহ্যাবে অনিবন্ধিত ও ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠান সারা রিয়েল এষ্টেট এন্ড ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ওই জমির বায়নাসূত্রে মালিক প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী শাহ আলম। সে অনুযায়ী জমি ক্রয় করার কথা শাহ আলমের কাছ থেকে। কিন্তু জমি ক্রয় করা হয় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে। লক্ষ্যনীয় যে, শুধুমাত্র চুক্তিপত্র করার জন্য তাকে টাকা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ১৭হাজার ১৬০ টাকা। সবমিলে এই খাতে আড়াই কোটির বেশি টাকা আত্মসাত হয়েছে।
এ সংক্রান্ত দলিল ও নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জমির মূল্য চেকের মাধ্যমে পরিশোধের কথা থাকলেও অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে তা নগদে প্রদান করা হয়। ওই জমি মালিক পক্ষের নিকট থেকে সরাসরি ক্রয় করা হলেও অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অংকের টাকা প্রদান করা হয়েছে। টাকা গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ গ্রহীতার নাম ও জমি দাতার স্বাক্ষরের কোন মিল নাই। জমির মালিকের নিকট থেকে কম দামে জমি ক্রয় করা হলেও দলিলে বেশি দাম দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্নসাত করেছে। এর ফলে জমি রেজি: খরচ বাবদ সতের লাখ দুইশত সত্তর টাকা কলেজের ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় কলেজের জন্য ৮৫ শতক জমি ক্রয় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লেনদেন নগদে সম্পন্ন হয়েছে। অথচ জিবি পে অর্ডার ছাড়া ব্যয় করতে নিষেধ করেছে। নগদে ব্যয় করায় কৃষককে কত টাকা দিয়েছে তা জানা যায়নি। সুতরাং এখানে আরও বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃতীয় দফায় কেনা জমির কোনো তথ্যই জানা যায়নি।
এফডিআর সংক্রান্ত দুর্নীতি: বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রেখে সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ আছে। সভাপতি কমিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখেন। সাব-স্টেশন সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কলেজের ব্যয় কার্য ও অডিট কার্য সম্পন্ন হয় সিন্ডিকেট দ্বারা। শিক্ষক প্রতিনিধি আবু নাইম মো. রাফি সব ধরনের আর্থিক কাজ করেন। সেটা অডিটের নামে জায়েজ করেন অপর শিক্ষক প্রতিনিধি বাদল চন্দ্র অপু। শিক্ষকদের আপত্তি সত্ত্বেও নিরপেক্ষ কোনো শিক্ষককে অডিটের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। সভাপতির নির্দেশে ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি ও তাদের পছন্দের অভিভাবক প্রতিনিধি দিয়ে কমিটি গঠন করা যাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা সহজ হয়।
কলেজের সব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার জিবি সদস্য ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম এবং এনসিটিবির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। বিভিন্ন সভায় এ নিয়ে এই দুই সদস্যের সঙ্গে সভাপতির তর্ক হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক তাসলিমা বেগম মানবজমিনকে বলেন, সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে জিবিতে আছি। সব সময় চেষ্টা করি সরকারের নিয়ম- কানুনের মধ্যে থাকতে। ফলে জিবির বৈঠকে কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। অনেক সময় আমরা (দুইজন) কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টও দিতে চেয়েছি। পরে তা দিতে হয়নি। জমি কেনার সম্মতি থাকলেও লেনদেন ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে করতে বলা হয়েছে। কিন্তু নগদ টাকায় জমি কেনা হয়েছে শুনেছি। নগদ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। ওখানে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষযে শুনেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ ছাড়া সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভেঙে ৪৫ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন না করে ১৫ থেকে ২০ দিন পর ফল প্রকাশ করা হয়। ফলে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা কলেজ থেকে নেন। মাসে ২০ থেকে ২২ দিন কলেজে ভূরিভোজ করেন। নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বেহিসাবে ব্যয়ের অভিযোগ আছে। এমন নানা অভিযোগে শিক্ষকরা ছিলেন ক্ষুব্ধ। এর মধ্যে বানোয়াট অভিযোগে শনিবার স্থায়ী অধ্যক্ষকে ও একজন শিক্ষক কে বরখাস্ত করে নিজের লুটপাটের এক সাক্ষীকে অধ্যক্ষ পদে বসানোর উদ্যোগ নিলে শিক্ষকরা সভাপতিকে অন্য সদস্যদেরসহ ঘেরাও করে। কিন্তু এ সময় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষকরা বৈঠকে ঢুকে পড়েন। শুরু হয় বাক-বিতান্ড। একপর্যায়ে অন্য সদস্যদের হস্তক্ষেপে সভাপতি মুক্ত হন। পরে রোববার সকাল পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হলে শিক্ষকদের প্রতিবাদে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই গতকাল বৈঠকটি স্থগিত হয়ে যায়। জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষকরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। আমার করার কিছু ছিল না।
এদিকে কলেজের শিক্ষকরা তিন শিক্ষক প্রতিনিধির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে লিখিত দিয়েছেন। যাতে পুনরায় শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কোন মিটিংয়ে তারা অংশগ্রহণ না করতে। এছাড়া অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কলেজের সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশিদকে বাদ দিয়ে নতুন গভর্নির বডি গঠন করার জন্য শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চিঠি দিয়েছেন। শিক্ষকরা কলেজের অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়ির প্রকৃত দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিবি সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কাগজ নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেন। গত দুই দিনে মিটিং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে দ্রত ফোনটি কেটে দেন।
শিক্ষকরা জানান, কারসাজি করে জমি কেনা, নানান ধরনের উন্নয়ন, কেনাকাটা এবং মিটিং-সিটিংয়ের নামে লুট হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের অর্থ। আওয়ামী লীগের ৯ বছরের শাসনামলে তিলে তিলে জমানো প্রতিষ্ঠানটির ৮৬ কোটি টাকার মধ্যে ২২ কোটিই গত দু’বছরে হাওয়া হয়ে গেছে। এর পেছনে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির (জিবি) সভাপতি এবং তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি মূল ভূমিকা রাখছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় জিবির সভাপতি বেশি বেপরোয়া বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শুধু অর্থ লুটেই শেষ নেই অপতৎপরতা। সরকারি নিয়ম ভেঙে শিক্ষক নিয়োগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভেঙে প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেয়া, প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৪ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল ক্রয়, মোবাইল ফোনের বিল বাবদ মাসে ৪ হাজারসহ নানাভাবে মাসে গড়ে সাড়ে ৬৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন সভাপতি। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও আছে। এছাড়া বিভিন্ন সভার নামে সম্মানী গ্রহণ তার নেশায় পরিণত হয়েছে। এভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সভা পরিচালনা ও ব্যয় করা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষক পদোন্নতি, বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা কলেজের স্থায়ী আমানত ভেঙে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে আরেক ব্যাংকে রাখার মত কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করছেন। দুর্নীতিবাজ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের আর্থিকসহ অন্যান্য অপরাধ ও অভিযোগ আমলে নেন না। বিপরীত দিকে তার অন্যায়-অপকর্মের প্রতিবাদ কারীদের শায়েস্তা করতে বানোয়াট অভিযোগ তুলে ‘সাইজ’ করে থাকেন তিনি।
উল্লিখিত সব ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। বর্তমান সভাপতি আসার পর একাডেমিক উন্নয়নের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী গচ্ছিত অর্থ ভেঙে জমি কেনাসহ তথাকথিত উন্নয়ন শুরু হয়। কলেজের পাশের জমি না কিনে কেরানীগঞ্জে বিচ্ছিন্ন এলাকায় জমি কেনা হয়। অথচ কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির কোনো নিয়মই নেই। তাছাড়া খণ্ড জমি কোনো কাজেও আসবেনা। তিনি বলেন, কমিটি থাকার পরও একই কাজের জন্য সভাপতির ইচ্ছায় বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ নির্বিচারে জমি কেনা ও নিয়োগের প্রতিবাদ করায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার এই কাজে সঙ্গী হয়েছেন বিগত বিএনপি আমলে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত কয়েকজন শিক্ষক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, সভাপতি নিয়ম বর্হিভুতভাবে মোবাইল ফোন সেট কেনার নামে কলেজ থেকে ৮৩ হাজার ৯৬০ টাকা নগদ নিয়েছেন। পাশাপাশি বিধি বহির্ভূতভাবে তিনি টেলিফোন ভাতার নামে মাসে ৪ হাজার করে টাকা নেন। কলেজ থেকে টাকা লুটে নিতে তিনি মিটিং বাণিজ্য করে থাকেন। গত বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর কলেজের স্টাফ কাউন্সিল মিটিংয়ে তিনি তথাকথিত শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আটটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। প্রত্যেক কমিটির উপদেষ্টা তিনি। ওইসব কমিটি মূলত করা হয় মিটিং বাণিজ্য করার জন্য। এরপর বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবহিত করা হলে তিনি সভাপতির কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। তখন ২টি কমানো হয়। কিন্তু প্রত্যেক কমিটির প্রধান থাকেন তিনি এবং ওইসব কমিটিকে মাসে দু’টি বৈঠক করতে বাধ্য করেন। প্রত্যেক মিটিং থেকে তিনি সম্মানি নেন।
এক হিসাবে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে তিনি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার ৬৫৪ টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে নিয়োগ কমিটি বাবদ-২ লাখ ৬৩ হাজারন ৩৫০ টাকা, জিবির মিটিং বাবদ ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা, ওয়ার্কিং গ্রুপ বাবদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল বিল-৪৮ হাজার টাকা, ক্লাস বাবদ ২ লাখ টাকা এবং পদোন্নতি কমিটির মিটিং করে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে।
অভিযোগ আছে, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তিনি কলেজে ৪৫জন শিক্ষক নেন। ওই নিয়োগে একইদিনে একাধিক বিষয়ের পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রতি বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক সম্মানী নেন তিনি। তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা উন্নয়নের নামে অর্থ লুটপাট করছেন। যে কক্ষে টাইলস লাগাতে ৬ বস্তা সিমেন্ট দরকার, সেখানে ৫৬ বস্তা সিমেন্টের ভাউচার দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে অভিযোগ তিনি আমলে নেননি।
জমি ক্রয়ে আড়াই কোটি টাকা লোপাট: কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস করার কথা বলে কলেজ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে গ্রামের মধ্যে প্রায় ৪০০শতক জমি কেনা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। এক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন। জানা গেছে, মোট তিন দফায় জমি কেনা হয়। এরমধ্যে প্রথম দফায় ২৬২ শতাংশ জমি ক্রয়ে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়। এখানে ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি জাল দলিল হয়। জমির মালিক চার জন। তারা হলেন মো. সলিমুল্লা, মো. কালিমুল্লাহ, মো. হাবিবুল্লাহ ও মো. অলিউল্লাহ। তাদের পক্ষ থেকে মো. সাইদুল ইসলাম নামে একজনকে আম মোক্তার সাজিয়ে দলিল করা হয়। কিন্তু চার ভাই জানান, এ নামে কাউকে তারা আম মোক্তার নিয়োগ করেননি। এ নামে কাউকে তারা চিনেন না। তারা নিজেরাও জমি বিক্রি করেননি। মিনহাজ উদ্দিন নামে একজনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকার জমি কেনা হলেও তিনি ৩৪ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
এভাবে কলেজ থেকে ৫০০ শতক জমি কেনার নামে ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এছাড়া এ জমির রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম দফায় কেনা দলিল হাতে পাওয়া ২৬২ শতক জমির দলিল কলেজে জমা পড়েছে। এ জমি কেনায় রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১৭ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
দুর্নীতি ও লোপাটের রাস্তা সহজ করতে কলেজের জমি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক আবু নাঈম মো. রাফীর নিকট আত্মীয়ের রিহ্যাবে অনিবন্ধিত ও ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠান সারা রিয়েল এষ্টেট এন্ড ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ওই জমির বায়নাসূত্রে মালিক প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী শাহ আলম। সে অনুযায়ী জমি ক্রয় করার কথা শাহ আলমের কাছ থেকে। কিন্তু জমি ক্রয় করা হয় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে। লক্ষ্যনীয় যে, শুধুমাত্র চুক্তিপত্র করার জন্য তাকে টাকা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ১৭হাজার ১৬০ টাকা। সবমিলে এই খাতে আড়াই কোটির বেশি টাকা আত্মসাত হয়েছে।
এ সংক্রান্ত দলিল ও নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জমির মূল্য চেকের মাধ্যমে পরিশোধের কথা থাকলেও অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে তা নগদে প্রদান করা হয়। ওই জমি মালিক পক্ষের নিকট থেকে সরাসরি ক্রয় করা হলেও অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অংকের টাকা প্রদান করা হয়েছে। টাকা গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ গ্রহীতার নাম ও জমি দাতার স্বাক্ষরের কোন মিল নাই। জমির মালিকের নিকট থেকে কম দামে জমি ক্রয় করা হলেও দলিলে বেশি দাম দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্নসাত করেছে। এর ফলে জমি রেজি: খরচ বাবদ সতের লাখ দুইশত সত্তর টাকা কলেজের ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় কলেজের জন্য ৮৫ শতক জমি ক্রয় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লেনদেন নগদে সম্পন্ন হয়েছে। অথচ জিবি পে অর্ডার ছাড়া ব্যয় করতে নিষেধ করেছে। নগদে ব্যয় করায় কৃষককে কত টাকা দিয়েছে তা জানা যায়নি। সুতরাং এখানে আরও বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃতীয় দফায় কেনা জমির কোনো তথ্যই জানা যায়নি।
এফডিআর সংক্রান্ত দুর্নীতি: বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রেখে সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ আছে। সভাপতি কমিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখেন। সাব-স্টেশন সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কলেজের ব্যয় কার্য ও অডিট কার্য সম্পন্ন হয় সিন্ডিকেট দ্বারা। শিক্ষক প্রতিনিধি আবু নাইম মো. রাফি সব ধরনের আর্থিক কাজ করেন। সেটা অডিটের নামে জায়েজ করেন অপর শিক্ষক প্রতিনিধি বাদল চন্দ্র অপু। শিক্ষকদের আপত্তি সত্ত্বেও নিরপেক্ষ কোনো শিক্ষককে অডিটের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। সভাপতির নির্দেশে ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি ও তাদের পছন্দের অভিভাবক প্রতিনিধি দিয়ে কমিটি গঠন করা যাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা সহজ হয়।
কলেজের সব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার জিবি সদস্য ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম এবং এনসিটিবির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। বিভিন্ন সভায় এ নিয়ে এই দুই সদস্যের সঙ্গে সভাপতির তর্ক হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক তাসলিমা বেগম মানবজমিনকে বলেন, সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে জিবিতে আছি। সব সময় চেষ্টা করি সরকারের নিয়ম- কানুনের মধ্যে থাকতে। ফলে জিবির বৈঠকে কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। অনেক সময় আমরা (দুইজন) কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টও দিতে চেয়েছি। পরে তা দিতে হয়নি। জমি কেনার সম্মতি থাকলেও লেনদেন ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে করতে বলা হয়েছে। কিন্তু নগদ টাকায় জমি কেনা হয়েছে শুনেছি। নগদ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। ওখানে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষযে শুনেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
No comments