যেভাবে মাদকে জড়ায় শিক্ষার্থীরা by রুদ্র মিজান
এমবিবিএস
সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু প্রত্যাশা অনুসারে চাকরি পাচ্ছেন না। উচ্চতর
ডিগ্রিও নিতে পারছেন না। অনেক টাকার দরকার। এরকম হতাশায় আচ্ছন্ন ডাক্তার
রাকিবুল হাসান রাকিব। ইতিমধ্যে মা-বাবার বিপুল টাকা ব্যয় হয়েছে তাকে
লেখাপড়া করাতে। হতাশাগ্রস্ত রাকিব দু’চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। ঠিক তখনই
ইয়াবা সেবন শুরু করেন রাকিব। একসময় তা নেশা হয়ে দাঁড়ায়। ইয়াবা ছাড়া চলেই
না। কিন্তু চাকরি নেই। ইয়াবা কেনার টাকা পাবেন কোথায়।
একসময়ে ইয়াবা কেনার টাকার জন্য নিজেই ইয়াবা আমদানি ও বিক্রি শুরু করেন। ইয়াবাসহ ডা. রাকিবকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিকেলে কলেজেই প্রবেশ করছে মাদক। আসক্ত হচ্ছেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। হতাশা, কৌতূহল, সঙ্গদোষ, ভুল ধারণা থেকেই তারা মাদকাসক্ত হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মেডিকেলে কিছু ডাক্তার রয়েছেন যারা নিজ কক্ষে বসেই ইয়াবা সেবন করেন। বিশেষ করে রাতে ডিউটিকালীন এমনটি ঘটে। তাদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেন হাসপাতালের কর্মচারী, আনসার ও মাদক বিক্রেতারা।
রাকিবুল হাসান একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। এরমধ্যেই সহপাঠীকে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায়। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, মেডিকেলে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে আয় করা খুব সহজ না বলেই মনে করেন তিনি। এমবিবিএস পাস করলেই একজন ছাত্র চিকিৎসা প্রদানের লাইসেন্স পায় না। তাকে এক বছর ইন্টার্ণশিপ করতে হয়। ইন্টার্ণশিপ শেষ মানে ডাক্তার জীবনের শুরু। তখন স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। এজন্য আরও বিপুল টাকার প্রয়োজন হয়। এমবিবিএস পাস করার পর নামমাত্র বেতনে কিছুদিন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন রাকিব। কিন্তু এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর। ভালো চাকরিও পাচ্ছিলেন না। রাকিব মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করতেন একটি নিরাময় কেন্দ্রে। কিন্তু তিনি নিজেই একসময় আসক্ত হয়ে যান। শুরুতে নিজের হতাশা-কষ্ট ভুলে থাকার জন্য ইয়াবা সেবন শুরু করেন। ভালোই লাগছিলো। প্রায়ই ওই নিরাময় কেন্দ্রের নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ এক বন্ধুকে নিয়ে ইয়াবা সেবন করতেন। এভাবেই একসময় নেশা হয়ে যায়। ইয়াবা ছাড়া চলে না। বুঁদ হয়ে থাকেন নেশায়।
নেশাগ্রস্ত ডাক্তারকে প্রতিষ্ঠানে রাখতে চান না কর্তৃপক্ষ। চাকরি চলে যায়। চাকরি নেই, টাকাও নেই। কিন্তু ইয়াবা ছাড়া তার চলে না। ইয়াবা সেবনের জন্য অন্তত তার টাকা চাই। গত বছরের ঘটনা। শুরু করেন ইয়াবা বিক্রি। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তার কাছে ইয়াবা দিয়ে যায়। তিনি বিক্রি করেন। গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট গুলশান, বাড্ডা, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করতো। সেইসঙ্গে রাকিবের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি করা হতো বিভিন্ন মেডিকেলের ডাক্তারদের কাছে। মধ্য বাড্ডার নিজ বাসায় ইয়াবা রাখা হতো। গত বছরের শেষের দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় ডাক্তার রাকিবসহ এই সিন্ডিকেটের চার জনকে। মোহাম্মদ খোরশিদ আলম জানান, চাকরি না পেয়ে হতাশা থেকেই ইয়াবা সেবন ও বিক্রি শুরু করেছিলেন এই ডাক্তার। হতাশা থেকেই মেডিকেলের শিক্ষার্থী বা ডাক্তাররা এই মরণ নেশায় আসক্ত হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
প্রায়ই মাদকসহ ডাক্তাররা গ্রেপ্তার হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে। গত বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক মোস্তাফা কামালকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ১২শ’ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার বাগুর বাস স্টেশন এলাকায় চান্দিনা থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। কয়েকদিন আগেও চট্টগ্রামে একজন ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের একটি নিরাময় কেন্দ্রে কথা হয় মাদকাসক্ত মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তেজগাঁও এলাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী তিনি। তার মাদকাসক্তের কারণ সম্পর্কে জানান, প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে শিসাবারে যেতেন। বন্ধুদের মধ্যে কয়েক জন ইয়াবা সেবন করতো। তিনি শিসা টানলেও ইয়াবার প্রতি কোনো আসক্তি ছিলো না। লেখাপড়ার প্রচন্ড চাপ ছিলো। বন্ধুরা ইয়াবা সেবন করে রাত জেগে লেখাপড়া করতো। রাত জেগে পড়ার জন্যই একপর্যায়ে তিনিও আগ্রহী হন। ইয়াবা সেবন শুরু করেন। সারা রাত জেগে লেখাপড়া করতে পারেন। লেখাপড়া হচ্ছিলো বেশ। কিন্তু মাঝে-মধ্যে ইয়াবা সেবন না করলেই সমস্যা। অস্বস্তি লাগে। কিছু একটার তীব্র অভাব বোধ করেন। তিনি জানান, অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে ইয়াবা ছাড়া তার চলছিলো না। নিজ রুমে বসেই ইয়াবা সেবন করতেন তিনি। বিষয়টি জানাজানির পর মা-বাবার উদ্যোগে তাকে ভর্তি করা হয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।
মেডিকেলে মাদকের বিস্তার নিয়ে তদন্ত করেছে কয়েক গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্রমতে, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ইণ্টার্ণি ডাক্তারদের মাধ্যমে মেডিকেলে মাদক বিস্তার লাভ করছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এই অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল-২’র ছাদ, নার্সিং হোস্টেল এলাকায় কর্মচারীরা ও ডিউটি কক্ষে ইণ্টার্ণি ডাক্তাররা রাতে ইয়াবা সেবন করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রায়ই মাদক বিক্রেতা বা মাদক সরবরাহকারীরা গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু মেডিকেলের ডাক্তার, কর্মকর্তারা রয়ে যান আড়ালে। ইতিমধ্যে একাধিকবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, স্বপন, আলম, বিল্লাল, শামীম, সোহেল, আয়েশা, রনি, লিটন, সুবির বিশ্বাস ও শামীমসহ আরও অনেককে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, হতাশা, সঙ্গদোষ, কৌতূহল ও ভুল ধারণা থেকেই ডাক্তার বা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন চরম হতাশা বিরাজ করছে। লেখাপড়া ও চাকরির ক্ষেত্রে তাদের তীব্র প্রতিযোগীতা করতে হচ্ছে। প্রতিবছর হাজার-হাজার ডাক্তার পাস করে বের হলেও বেশিরভাগই চাকরি পাচ্ছেন না। এছাড়াও ইয়াবা সেবনে ঘুম চলে যায়, লেখাপড়া বেশি করা যায়- এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকেই অনেকেই আসক্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এরমধ্যে নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালেই দেশে চাহিদার তুলনায় ১১ হাজার ৫২৯ জন ডাক্তার অতিরিক্ত ছিল। ওই বছর দেশে ১৬ কোটি মানুষের বিপরীতে ডাক্তারের চাহিদা ছিল ৬৩ হাজার ৩৯৫ জন। জোগান ছিল ৭৪ হাজার ৯২৪। ২০২১ সালে ৬৭ হাজার ২৬৫ জন ডাক্তারের চাহিদার বিপরীতে জোগান দাঁড়াবে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৬৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ১০ হাজারের বেশি ডাক্তার স্বাস্থ্যখাতে যুক্ত হচ্ছেন। সেই তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। অবসরে যাচ্ছেন মাত্র দুই থেকে আড়াইশ’ ডাক্তার। যা গড়ে ৩ শতাংশ। বিএমডিসি সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৭৬৩ জন। তাদের মধ্যে এমবিবিএস ৮৫ হাজার ৬৩৩ জন এবং বিডিএস (ডেন্টাল) ৮ হাজার ১৩০ জন। সরকারি চাকরিত আছেন প্রায় ৫০ হাজার ডাক্তার।
একসময়ে ইয়াবা কেনার টাকার জন্য নিজেই ইয়াবা আমদানি ও বিক্রি শুরু করেন। ইয়াবাসহ ডা. রাকিবকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিকেলে কলেজেই প্রবেশ করছে মাদক। আসক্ত হচ্ছেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। হতাশা, কৌতূহল, সঙ্গদোষ, ভুল ধারণা থেকেই তারা মাদকাসক্ত হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মেডিকেলে কিছু ডাক্তার রয়েছেন যারা নিজ কক্ষে বসেই ইয়াবা সেবন করেন। বিশেষ করে রাতে ডিউটিকালীন এমনটি ঘটে। তাদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেন হাসপাতালের কর্মচারী, আনসার ও মাদক বিক্রেতারা।
রাকিবুল হাসান একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। এরমধ্যেই সহপাঠীকে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায়। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, মেডিকেলে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে আয় করা খুব সহজ না বলেই মনে করেন তিনি। এমবিবিএস পাস করলেই একজন ছাত্র চিকিৎসা প্রদানের লাইসেন্স পায় না। তাকে এক বছর ইন্টার্ণশিপ করতে হয়। ইন্টার্ণশিপ শেষ মানে ডাক্তার জীবনের শুরু। তখন স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। এজন্য আরও বিপুল টাকার প্রয়োজন হয়। এমবিবিএস পাস করার পর নামমাত্র বেতনে কিছুদিন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন রাকিব। কিন্তু এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর। ভালো চাকরিও পাচ্ছিলেন না। রাকিব মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করতেন একটি নিরাময় কেন্দ্রে। কিন্তু তিনি নিজেই একসময় আসক্ত হয়ে যান। শুরুতে নিজের হতাশা-কষ্ট ভুলে থাকার জন্য ইয়াবা সেবন শুরু করেন। ভালোই লাগছিলো। প্রায়ই ওই নিরাময় কেন্দ্রের নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ এক বন্ধুকে নিয়ে ইয়াবা সেবন করতেন। এভাবেই একসময় নেশা হয়ে যায়। ইয়াবা ছাড়া চলে না। বুঁদ হয়ে থাকেন নেশায়।
নেশাগ্রস্ত ডাক্তারকে প্রতিষ্ঠানে রাখতে চান না কর্তৃপক্ষ। চাকরি চলে যায়। চাকরি নেই, টাকাও নেই। কিন্তু ইয়াবা ছাড়া তার চলে না। ইয়াবা সেবনের জন্য অন্তত তার টাকা চাই। গত বছরের ঘটনা। শুরু করেন ইয়াবা বিক্রি। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তার কাছে ইয়াবা দিয়ে যায়। তিনি বিক্রি করেন। গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট গুলশান, বাড্ডা, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করতো। সেইসঙ্গে রাকিবের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি করা হতো বিভিন্ন মেডিকেলের ডাক্তারদের কাছে। মধ্য বাড্ডার নিজ বাসায় ইয়াবা রাখা হতো। গত বছরের শেষের দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় ডাক্তার রাকিবসহ এই সিন্ডিকেটের চার জনকে। মোহাম্মদ খোরশিদ আলম জানান, চাকরি না পেয়ে হতাশা থেকেই ইয়াবা সেবন ও বিক্রি শুরু করেছিলেন এই ডাক্তার। হতাশা থেকেই মেডিকেলের শিক্ষার্থী বা ডাক্তাররা এই মরণ নেশায় আসক্ত হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
প্রায়ই মাদকসহ ডাক্তাররা গ্রেপ্তার হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে। গত বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক মোস্তাফা কামালকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ১২শ’ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার বাগুর বাস স্টেশন এলাকায় চান্দিনা থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। কয়েকদিন আগেও চট্টগ্রামে একজন ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের একটি নিরাময় কেন্দ্রে কথা হয় মাদকাসক্ত মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তেজগাঁও এলাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী তিনি। তার মাদকাসক্তের কারণ সম্পর্কে জানান, প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে শিসাবারে যেতেন। বন্ধুদের মধ্যে কয়েক জন ইয়াবা সেবন করতো। তিনি শিসা টানলেও ইয়াবার প্রতি কোনো আসক্তি ছিলো না। লেখাপড়ার প্রচন্ড চাপ ছিলো। বন্ধুরা ইয়াবা সেবন করে রাত জেগে লেখাপড়া করতো। রাত জেগে পড়ার জন্যই একপর্যায়ে তিনিও আগ্রহী হন। ইয়াবা সেবন শুরু করেন। সারা রাত জেগে লেখাপড়া করতে পারেন। লেখাপড়া হচ্ছিলো বেশ। কিন্তু মাঝে-মধ্যে ইয়াবা সেবন না করলেই সমস্যা। অস্বস্তি লাগে। কিছু একটার তীব্র অভাব বোধ করেন। তিনি জানান, অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে ইয়াবা ছাড়া তার চলছিলো না। নিজ রুমে বসেই ইয়াবা সেবন করতেন তিনি। বিষয়টি জানাজানির পর মা-বাবার উদ্যোগে তাকে ভর্তি করা হয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।
মেডিকেলে মাদকের বিস্তার নিয়ে তদন্ত করেছে কয়েক গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্রমতে, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ইণ্টার্ণি ডাক্তারদের মাধ্যমে মেডিকেলে মাদক বিস্তার লাভ করছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এই অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল-২’র ছাদ, নার্সিং হোস্টেল এলাকায় কর্মচারীরা ও ডিউটি কক্ষে ইণ্টার্ণি ডাক্তাররা রাতে ইয়াবা সেবন করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রায়ই মাদক বিক্রেতা বা মাদক সরবরাহকারীরা গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু মেডিকেলের ডাক্তার, কর্মকর্তারা রয়ে যান আড়ালে। ইতিমধ্যে একাধিকবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, স্বপন, আলম, বিল্লাল, শামীম, সোহেল, আয়েশা, রনি, লিটন, সুবির বিশ্বাস ও শামীমসহ আরও অনেককে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, হতাশা, সঙ্গদোষ, কৌতূহল ও ভুল ধারণা থেকেই ডাক্তার বা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন চরম হতাশা বিরাজ করছে। লেখাপড়া ও চাকরির ক্ষেত্রে তাদের তীব্র প্রতিযোগীতা করতে হচ্ছে। প্রতিবছর হাজার-হাজার ডাক্তার পাস করে বের হলেও বেশিরভাগই চাকরি পাচ্ছেন না। এছাড়াও ইয়াবা সেবনে ঘুম চলে যায়, লেখাপড়া বেশি করা যায়- এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকেই অনেকেই আসক্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এরমধ্যে নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালেই দেশে চাহিদার তুলনায় ১১ হাজার ৫২৯ জন ডাক্তার অতিরিক্ত ছিল। ওই বছর দেশে ১৬ কোটি মানুষের বিপরীতে ডাক্তারের চাহিদা ছিল ৬৩ হাজার ৩৯৫ জন। জোগান ছিল ৭৪ হাজার ৯২৪। ২০২১ সালে ৬৭ হাজার ২৬৫ জন ডাক্তারের চাহিদার বিপরীতে জোগান দাঁড়াবে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৬৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ১০ হাজারের বেশি ডাক্তার স্বাস্থ্যখাতে যুক্ত হচ্ছেন। সেই তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। অবসরে যাচ্ছেন মাত্র দুই থেকে আড়াইশ’ ডাক্তার। যা গড়ে ৩ শতাংশ। বিএমডিসি সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৭৬৩ জন। তাদের মধ্যে এমবিবিএস ৮৫ হাজার ৬৩৩ জন এবং বিডিএস (ডেন্টাল) ৮ হাজার ১৩০ জন। সরকারি চাকরিত আছেন প্রায় ৫০ হাজার ডাক্তার।
No comments