ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ষড়যন্ত্রের অংশ :-পাপন by ইশতিয়াক পারভেজ
আমি ওদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানও করি। তাহলে আমাদের সঙ্গে না আলোচনা করে, কোনো দাবি আমাদের না জানিয়ে কীভাবে ওরা ক্রিকেট খেলবে না বললো? আমাদের সুযোগ দিতো, দেখতো দাবি মানি কি না? আমাদের সুযোগ না দিয়ে এভাবে ধর্মঘট ডাকা, তাও ঠিক ভারত সফরের আগে, আমার মনে হয় অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমি তা খুঁজে বের করবোই। কারা জড়িত তা আপনারাও জানতে পারবেন দ্রুত।’
ক্রিকেটারদের দেয়া ১১ দাবির অনেকগুলো আগেই পূরণ করা হয়েছে বলেও জানান পাপন। বাকি যে দাবি আছে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমেও পূরণ হতে পারতো বলে দাবি করেন তিনি। পাপন সরাসরি বলেন, ‘ওরা চেয়েছে কিন্তু পায়নি এমন কোনো কিছু কি আছে? ক্রিকেটের কথা বাদ দিন। ব্যক্তিগতভাবে ওদের যেকোনো দরকারে আমি এগিয়ে গেছি। এই কিছু দিন আগেও ইমরুলের বাচ্চাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর হাসপাতালে যাবে। ভিসা নেই। তা আমি করিয়ে দিয়েছি। মুশফিকের বাবা থেকে শুরু করে মিরাজের খালা সবার প্রয়োজনে আমি পাশে থেকেছি। ওরা কি আমার কাছে দাবি নিয়ে আসতে পারতো না! আমি মনে করি না, যে দাবি ওরা করে তা না মানার কিছু আছে। তাই আমি বলছি, নিশ্চয়ই কোন ষড়যন্ত্র আছে। আমাদের ক্রিকেটাররা সবাই তা করছে তা নয়, হয়তো দু-একজন আছে। আর বাইরে থেকে কারা করছে তাও আমি জানি। ওদের আমি চিনি।’
ধর্মঘটের বিষয়টিকে কেন ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে, তার আরো কিছু কারণও তুলে ধরেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই খেলা বন্ধ। এমন এক সময়ে বন্ধ করলো- যখন ফিটনেস এবং ক্যাম্প শুরু করার কথা রয়েছে। নতুন কোচ এসেছে, সামনে ভেট্টরিও (স্পিন বোলিং কোচ) আসবে। আমার মনে হয়, ওদের বিদেশি কোচ পছন্দ নয়। তারা তো এমনও বলেছে, কোচই চাই না। এখন চায় দেশি কোচ। কিন্তু তাদের মতো করে তো আমরা কোচ নিয়োগ দিতে পারি না।’
ধর্মঘটকে পরিকল্পিত বলেও দাবি করেন বিসিবি সভাপতি। তার মতে বিসিবির পরিচালকদের টার্গেট করেই এমনটি করছে কোনো মহল। বিশেষ করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে লোকমান হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর থেকেই এমনটি হচ্ছে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক ডাইরেক্টর অ্যারেস্ট (লোকমান হোসেন) হওয়ার পর থেকেই সবার টার্গেটে পরিণত হয়েছি আমি নিজে এবং আমার বোর্ড। তারা প্রথমে চেষ্টা করেছে নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করার। আমাদের আক্রমণ করে যদি বাইরে পাঠানো যায়, বোর্ডকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ওটাতে তারা সফল হয়নি। এখন সেকেন্ড স্টেপ চলছে। যদি কোনোভাবে ভারত সফরটা মিস করা যায়, তাহলে বড় ধরনের একটা সমস্যায় পড়তে পারি।’
ভারত সিরিজের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এমন অবস্থানের পেছনে কারো ‘ইন্ধন’ আছে বলেও মনে করেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে ভারতে গিয়ে এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এখন যখন প্রথম সিরিজ খেলতে যাবে ক্রিকেটাররা, তার আগ মুহূর্তে এ আন্দোলন কেন? ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে এই প্রথম যাচ্ছে। এত কষ্ট করে একটি ফুল সিরিজ ভারত থেকে আসলো। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে এবং প্রথম খেলাটাই ভারতের সঙ্গে। অথচ তার আগেই তারা বলে দিলো, আমরা খেলবো না। কী কারণ এর পেছনে?’
বিসিবি সভাপতি মনে করেন, এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হলেও বেশির ভাগ ক্রিকেটারই তা জানেন না। পাপনের ধারণা ক্রিকেটাররা সবাই জেনে-বুঝে এ আন্দোলনে যোগ দেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না বেশির ভাগ ক্রিকেটার জেনে বুঝে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। এর পেছনের উদ্দেশ্য কি তা হয়তো জানেন দু-একজন। তবে আমি মনে করি, যারা আছে তাদের বেশিরভাগই ক্রিকেটকে ভালোবাসে এবং দেশকে ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস, অধিকাংশ খেলোয়াড়ই জেনে-বুঝে যোগ দেয়নি। আমার আশা তারা ভারত সফরে খেলবে।’ সেই সঙ্গে কড়া কন্ঠে ‘শেষ দেখা’র কথাও জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘দেখি কে কে ২৫ তারিখ থেকে অনুশীলন ক্যাম্প বর্জন করে? আর কে কে ভারত সফরে না গিয়ে পারে? আমি শুধু দেখতে চাই তারা কারা? এই ধর্মঘট করে লাভটা কার হচ্ছে? বাংলাদেশ ক্রিকেটের নাকি তাদের?
No comments