ভাসমান কন্যাদের দুর্বিষহ যন্ত্রণা বোবাকান্না by মোহাম্মদ ওমর ফারুক
মাত্র
বারো বছর বয়স তার। জন্মের পর মাকে দেখলেও বাবাকে দেখেনি কখনো। বছর খানেক
আগে ট্রেনে কাটা পরে মারা যায় তার মা। অল্প বয়সে হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। এতিম।
পেটতো চালাতে হবে? কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসে। চলতে তাকে
তার দিন। ক’দিন যেতে না যেতেই তার জীবনে নেমে আসে গভীর অন্ধকার।
ক’জন যুবক এসে তাকে টেনে নেয় পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতে। মুখ বেঁধে তার ইজ্জত লুটে নেয়। তার কথা- ইজ্জত কি তা বুঝার আগেই ওরা আমার ইজ্জত কেড়ে নেয়। সে রাত কাটিয়েছি ওই ট্রেনেই। রক্ত ঝরেছে। কাউকে কিছু বলতে পারিনি। বারো বছরের এতিম এই শিশু বলতে থাকে তার জীবনের গল্প।
দিনের বেলায় ভিক্ষা কইরা এক’শ দেড়’শ টেয়া পাই। কেউ টেয়া দিতে চায় না। সবাই শুধু ধমক দেয়। রাইতের বেলায় স্টেশনে দশটা এগারোটা পর্যন্ত ভিক্ষা করি। তহন রিকশার ড্রাইভার, ফুটপাথের নেশাখোররা আমগো লইয়া টানাটানি করে। না যাইতে চাইলে গায়ে হাত তুলে। ফুটপাতের পোলাপাইন একসঙ্গে তিন চার জন নিয়া দূরে চইল্যা যায়। পুরানা ট্রেনের ভেতর। খুব কষ্ট হয়। কাম কইরা পঞ্চাশ টেয়া দেয়। পুলিশের কাছে বিচার দিলে উল্টা ধমক দেয়। কয় তোরা খারাপ মাইয়্যা। কমলাপুর রেলস্টেশনের আরেক শিশু। বয়স ১৩ কি ১৪ বছর। চকলেট বিক্রি করে মাকে টাকা দেয়। তার মাও কমলাপুর স্টেশনে ভিক্ষা করে। দু’জনেই থাকে স্টেশনে খোলা আকাশের নিচে। তার কথা- প্রত্যেকটা দিন আমার লগে মানুষ গুলা খারাপ কাম করে। যেহানে যাই সবায় খারাপ কাম করতে চায়। আমার খুব ভয় লাগে। শুধু এ দু’শিশু নয়। এমন চিত্র রাজধানীর প্রায় সকল ভাসমান মেয়ে শিশুর বেলায়। সারাদিন ভিক্ষা বা ফেরি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন ঘুমাতে যায় তখনই তাদের সঙ্গে শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। সব কিছু সহ্য করতে হয় মুখ বন্ধ করে।
তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেনেশুনেই অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে কোমলমতি এসব শিশু। ভাসমান শিশুদের যৌন নির্যাতন যারা করে তাদেরও একটি বড় অংশ ছিন্নমূল কিশোর যুবক। রাজধানীর নিরিবিলি স্থান অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করছে তারা। এ কারণে শিশুরা মরণব্যাধী এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আর্থিক জোগান নিশ্চিত করতে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে শুধু মাত্র মেয়ে পথশিশুর সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ। এই মেয়ে শিশুদের বেশিরভাগই এ বয়স থেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ৬১ লাখ শিশুশ্রমিকের মধ্যে মেয়েদের শতকরা ৩২ জন পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত। যৌন নির্যাতনের শিকার এসব মেয়ে শিশুদেও দেখার মতো সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান নেই। নামে মাত্র কয়েকটি শিশুসদন থাকলেও তা পথশিশুদের কাজে আসে না। ফলে পথশিশুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বেড়েই চলেছে।
বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণে’র এক জরিপে বলা হয়েছে, পথশিশু বা টোকাইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ। এদের অর্ধেক রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় বসবাস করে। রাস্তায় বসবাস করা মেয়েশিশুরা নিরাপত্তার অভাবে সহজেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পথশিশুদের মধ্যে যারা মেয়ে তাদের মধ্যে ১৯ ভাগ বাধ্য হয় দেহ ব্যবসা করে। চিকিৎসার অভাবে এক সময় এদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। অনেক সময় মারাও যায়। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত এমন শিশুদের ৪৫ ভাগই কোনো না কোনো যৌনরোগে আক্রান্ত। তাদের অনেকেই কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবাও পায় না। যৌনকর্মী নেটওয়ার্ক ২০১৬- এর প্রতিবেদন মতে, দেশে ১০ লাখ ২০ হাজারের বেশি যৌনকর্মী রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৯ হাজার অপ্রাপ্তবয়স্ক বা কমবয়সী।
তাদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কাওরান বাজার, চন্দ্রিমা উদ্যান, হাইকোর্ট মাজার, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশনে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী পথশিশুদের মধ্যে শতকরা ৩২ ভাগ কন্যাশিশু যৌনকর্মে নিয়োজিত। এছাড়া কয়েকবছর আগে ইউনিসেফের প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এইচআইভিতে আক্রান্ত ১৪ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ৩১০ জন। এসব শিশুর একটা বড় অংশ রাজধানী ঢাকার। এসব শিশুদের নিয়ে কাজ করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র যদি তাদের সঠিক আইন গুলো কার্যকর করতো তাহলে আজকে এসব শিশুদের এমন অবস্থা হতো না। রাষ্ট্রের উচিৎ এ সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেয়া। পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গেলে সবার সহযোগিতা লাগবে। যেটা আমরা ছোট ছোট এনজিওগুলোর একার পক্ষে সম্ভব না।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, ভাসমান শিশুদের মানসিক অবস্থা সাধারণত ভালো থাকে না। তার উপর যদি তাদের এমন যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় তখন তারা বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। এক পর্যায়ে বড় ধরনের অপরাধের দিকে দিনে দিনে জড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের উচিৎ হবে এসব শিশুদের দিকে নজর দেয়া। এবং নির্যাতনকারীদের শাস্তির আওতায় আনা।
ক’জন যুবক এসে তাকে টেনে নেয় পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতে। মুখ বেঁধে তার ইজ্জত লুটে নেয়। তার কথা- ইজ্জত কি তা বুঝার আগেই ওরা আমার ইজ্জত কেড়ে নেয়। সে রাত কাটিয়েছি ওই ট্রেনেই। রক্ত ঝরেছে। কাউকে কিছু বলতে পারিনি। বারো বছরের এতিম এই শিশু বলতে থাকে তার জীবনের গল্প।
দিনের বেলায় ভিক্ষা কইরা এক’শ দেড়’শ টেয়া পাই। কেউ টেয়া দিতে চায় না। সবাই শুধু ধমক দেয়। রাইতের বেলায় স্টেশনে দশটা এগারোটা পর্যন্ত ভিক্ষা করি। তহন রিকশার ড্রাইভার, ফুটপাথের নেশাখোররা আমগো লইয়া টানাটানি করে। না যাইতে চাইলে গায়ে হাত তুলে। ফুটপাতের পোলাপাইন একসঙ্গে তিন চার জন নিয়া দূরে চইল্যা যায়। পুরানা ট্রেনের ভেতর। খুব কষ্ট হয়। কাম কইরা পঞ্চাশ টেয়া দেয়। পুলিশের কাছে বিচার দিলে উল্টা ধমক দেয়। কয় তোরা খারাপ মাইয়্যা। কমলাপুর রেলস্টেশনের আরেক শিশু। বয়স ১৩ কি ১৪ বছর। চকলেট বিক্রি করে মাকে টাকা দেয়। তার মাও কমলাপুর স্টেশনে ভিক্ষা করে। দু’জনেই থাকে স্টেশনে খোলা আকাশের নিচে। তার কথা- প্রত্যেকটা দিন আমার লগে মানুষ গুলা খারাপ কাম করে। যেহানে যাই সবায় খারাপ কাম করতে চায়। আমার খুব ভয় লাগে। শুধু এ দু’শিশু নয়। এমন চিত্র রাজধানীর প্রায় সকল ভাসমান মেয়ে শিশুর বেলায়। সারাদিন ভিক্ষা বা ফেরি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন ঘুমাতে যায় তখনই তাদের সঙ্গে শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। সব কিছু সহ্য করতে হয় মুখ বন্ধ করে।
তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেনেশুনেই অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে কোমলমতি এসব শিশু। ভাসমান শিশুদের যৌন নির্যাতন যারা করে তাদেরও একটি বড় অংশ ছিন্নমূল কিশোর যুবক। রাজধানীর নিরিবিলি স্থান অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করছে তারা। এ কারণে শিশুরা মরণব্যাধী এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আর্থিক জোগান নিশ্চিত করতে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে শুধু মাত্র মেয়ে পথশিশুর সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ। এই মেয়ে শিশুদের বেশিরভাগই এ বয়স থেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ৬১ লাখ শিশুশ্রমিকের মধ্যে মেয়েদের শতকরা ৩২ জন পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত। যৌন নির্যাতনের শিকার এসব মেয়ে শিশুদেও দেখার মতো সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান নেই। নামে মাত্র কয়েকটি শিশুসদন থাকলেও তা পথশিশুদের কাজে আসে না। ফলে পথশিশুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বেড়েই চলেছে।
বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণে’র এক জরিপে বলা হয়েছে, পথশিশু বা টোকাইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ। এদের অর্ধেক রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় বসবাস করে। রাস্তায় বসবাস করা মেয়েশিশুরা নিরাপত্তার অভাবে সহজেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পথশিশুদের মধ্যে যারা মেয়ে তাদের মধ্যে ১৯ ভাগ বাধ্য হয় দেহ ব্যবসা করে। চিকিৎসার অভাবে এক সময় এদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। অনেক সময় মারাও যায়। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত এমন শিশুদের ৪৫ ভাগই কোনো না কোনো যৌনরোগে আক্রান্ত। তাদের অনেকেই কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবাও পায় না। যৌনকর্মী নেটওয়ার্ক ২০১৬- এর প্রতিবেদন মতে, দেশে ১০ লাখ ২০ হাজারের বেশি যৌনকর্মী রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৯ হাজার অপ্রাপ্তবয়স্ক বা কমবয়সী।
তাদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কাওরান বাজার, চন্দ্রিমা উদ্যান, হাইকোর্ট মাজার, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশনে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী পথশিশুদের মধ্যে শতকরা ৩২ ভাগ কন্যাশিশু যৌনকর্মে নিয়োজিত। এছাড়া কয়েকবছর আগে ইউনিসেফের প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এইচআইভিতে আক্রান্ত ১৪ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ৩১০ জন। এসব শিশুর একটা বড় অংশ রাজধানী ঢাকার। এসব শিশুদের নিয়ে কাজ করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র যদি তাদের সঠিক আইন গুলো কার্যকর করতো তাহলে আজকে এসব শিশুদের এমন অবস্থা হতো না। রাষ্ট্রের উচিৎ এ সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেয়া। পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গেলে সবার সহযোগিতা লাগবে। যেটা আমরা ছোট ছোট এনজিওগুলোর একার পক্ষে সম্ভব না।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, ভাসমান শিশুদের মানসিক অবস্থা সাধারণত ভালো থাকে না। তার উপর যদি তাদের এমন যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় তখন তারা বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। এক পর্যায়ে বড় ধরনের অপরাধের দিকে দিনে দিনে জড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের উচিৎ হবে এসব শিশুদের দিকে নজর দেয়া। এবং নির্যাতনকারীদের শাস্তির আওতায় আনা।
No comments