ঢাকায় দিনে দুই কোটি টাকা চাঁদা আদায়: পরিবহন সেক্টরে চলছে পাল্টাপাল্টি by মারুফ কিবরিয়া
রাজধানীর
গণপরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনা দীর্ঘ দিনের। সড়ক সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ন্ত্রণে
চলা চাঁদাবাজির টাকায় একেকজন শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি
শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যেও তাদের তৎপরতা থেমে নেই। তবে
গডফাদাররা বেশ সতর্কতার সঙ্গেই চলছেন। ঢাকার টার্মিনালগুলো থেকে প্রতিদিনই
প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্ট চলে
এই চাঁদাবাজি। দীর্ঘদিন ধরে নীরবে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও সরকার ঘোষিত
শুদ্ধি অভিযানের পর থেকে বিদ্যমান একাধিক পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে
চাঁদাবাজির জন্য। গত এক সপ্তাহে সড়ক সংশ্লিষ্ট দুই সংগঠন পরপর সংবাদ
সম্মেলনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজদের তথ্য প্রকাশ করে।
শুধু তাই নয়, ঢাকার সড়কের গডফাদারদের নামও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। সড়ক সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ওই নেতাদের ভাষ্যে, মালিক সমিতির এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। তার অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনী সকাল থেকে রাত অবধি বাস থেকে চাঁদা আদায় করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের বাস চালকদের প্রতিদিন ১ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হয়। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, গাবতলী, আব্দুল্লাহপুরসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা আদায় করে। একেক রুট থেকে ৬ থেকে ৭ ধাপে চাঁদার টাকা তোলা হয়। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, টঙ্গী পেরিয়ে ঢাকার সীমানায় প্রবেশ করলেই প্রতি বাস থেকে টাকা আদায় শুরু হয়। এই রুট থেকে সদরঘাট আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিভিন্ন অংকের চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশও এই টাকায় ভাগ বসান। চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মালিকরাও।
এসব চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে সম্প্রতি প্রেসক্লাবে সড়ক-পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে নয় দফা দাবির কথাও উল্লেখ করেন। ঢাকার সড়কে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রকের নাম প্রকাশ করতে গিয়ে সংগঠনটির সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বলেন, একজন ‘গডফাদার’ সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি গত কয়েক বছরে নিজস্ব পরিবহন সংস্থার ব্যানারে শত শত বাস নামিয়েছেন। মালয়েশিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ডে বিপুল সম্পদ পাচার করেছেন। সাংবাদিকরা ওই গডফাদারের নাম জানতে চাইলে তিনি সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যার কথা উল্লেখ করেন। এই সদস্য সচিব আরো দাবি করেন, এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি বলেন, এখনও পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের হাতে। তারা সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাদের অপসারণ করা না গেলে পরিবহন খাতে নৈরাজ্য দূর হবে না। এই সদস্য সচিব অভিযোগ করেন, গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে পুলিশ প্রতিদিন চালক-মালিকদের হয়রানি করছে। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বিরুদ্ধে সীমাহীন চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুল হক বলেন, চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ বাস মালিকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই দুর্দশা দেখার কেউ নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমিতির প্রভাবশালীদের ভয়ে সাধারণ মালিক, শ্রমিকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। বাস টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধ ও দুর্নীতিবাজ মালিক-শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বাড্ডা হয়ে ভিক্টর ক্লাসিক নামের একটি বাস যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি হাত উঁচিয়ে সংকেত দিলে ধীরগতি করে বাসের কন্ডাক্টর টাকা বের করে দেন। একই চিত্রের দেখা মেলে মিরপুর থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বাস ইউনাইটেড-এ। মিরপুর ১২ থেকে ছেড়ে আসার পর কাজীপাড়ায় বাসটির কন্ডাক্টরকে দেখা যায় পকেট থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। মিরপুর মতিঝিলে রুটে শিকড়, সময় নিয়ন্ত্রণ ও দিশারীসহ কয়েকটি পরিবহনের প্রায় এক হাজার বাস চলাচল করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি দিন একটি বাসের মালিককে কমপক্ষে সাড়ে ৮শ’রও বেশি টাকা গুনতে হয়। এর মধ্যে টার্মিনাল চাঁদা ৪৫০ টাকা এবং সিরিয়াল ও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দিতে হয় ৩৩০ টাকা। সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের অনেকে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের পেছনে ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, যখন যে দল সরকারে আসে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ সেই দলের পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও তাদের ক্যাডারদের হাতেই থাকে। সাধারণ পরিবহণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবহন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রাজধানীতে খুনোখুনির ঘটনাও কম হয়নি। কিন্তু পরিবহন চাঁদাবাজি কখনো থেমে থাকেনি। এর মধ্যে আরেক খবর হলো চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী পরিহবনগুলোর কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে দিতে দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। গত দুই বছরে এক ডজনের মতো নতুন বাস নেমেছে শহরের বিভিন্ন রুটে।
এসব রুটের নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহনগুলোর মালিকানা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে। দলীয় পরিচয় ছাড়া নতুন কোনো ব্যবসায়ী এসব রুটে বাস নামাতে চাইলে প্রথমেই তাদের সংশ্লিষ্ট রুট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ধার্য করে দেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। আর প্রথম ধাক্কায় মোটা অংকের টাকার কথা শুনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন নতুন ব্যবসায়ীরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক, কাজলসহ বেশ কয়েকজন নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখানে কোনো বাস থেকে ট্রিপ প্রতি ৩০ টাকা, কোনো বাস থেকে ৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন তারা। আবার এই রুটেই বাড্ডায় আসলে ফজলু নামের এক নেতা নেন ২২০টাকা। গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ইজারা বাবাদ ১৩০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বাস থেকে ৩৩০ টাকা করে দিতে হয় চালকদের। অন্যদিকে সদরঘাট গেলে প্রতি বাস থেকে দিনে ৪৫০ টাকা নেন আশরাফ নামের এক পরিবহন নেতা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালে চাঁদা আদায় করে আতিক এবং মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ। মহাখালী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সাদেকুর রহমান হিরু ও শহীদুল্লাহ সদুর হাতে।
সায়েদাবাদে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে আছে আবুল কালাম আজাদ, নয়ন, করম আলী, মনির চৌধুরী, আলী রেজা ও আমির হোসেনের হাতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর বেশ কয়েকটি রুটের পরিবহন মালিক জানান, বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক ক্যাডার ও পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে লাভের টাকা মালিকের পকেটে যাওয়ার আগে পথেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি এখন চাঁদা দিতে হয় এলাকাভিত্তিক পলিটিক্যাল ক্যাডারদেরও। নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের স্থান না থাকায় রাতে সরকারি রাস্তায় গাড়ি রাখলেও থানা পুলিশের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক পলিটিক্যাল ক্যাডারদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। সাধারণ মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, চাঁদার নির্ধারিত এ টাকা দিতে না পারলে রাস্তায় গাড়ি নামানো যায় না। রবরব বাসের চালক ফারুক বলেন, আমরা তো রাস্তায় থাকি। যত কষ্ট আমাদের।
একদিন বাস না চালালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলেই জায়গায় জায়গায় টাকা ছাড়তে হয়। না হলে বাস আটক করে রাখে। টাকা দিতে না চাইলে গ্লাস ভাঙে। আবার মাঝে মধ্যে মারধরও করে। আবার আমরা বাস না চালাইলে মালিকেরও সমস্যা। তাকে যে টাকা দেই সেটা থেকে আবার কোম্পানির লোকজনদের দিতে হয়। সমিতিতে টাকা পয়সা দিতে হয়। সারাদিন যা ইনকাম হয় সেখানে মালিকের খুব বেশি টাকা থাকে না। সব মানুষের পেটে চলে যায়। একই চাঁদাবাজির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার তুরাগ পরিবহনের এক চালক জানান, সকালে বাস নামাইলেই স্ট্যান্ডে ৫০ টাকা দিয়া গাড়ি স্টার্ট দিতে হয়। নাইলে গাড়ি চালাইতে দেয় না। রামপুরা আসলে দিতে হয় আরো টাকা। প্রতিদিন যে টাকা ইনকাম হয় তার বেশিরভাগ চলে যায় রাস্তার খরচে।
শুধু তাই নয়, ঢাকার সড়কের গডফাদারদের নামও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। সড়ক সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ওই নেতাদের ভাষ্যে, মালিক সমিতির এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। তার অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনী সকাল থেকে রাত অবধি বাস থেকে চাঁদা আদায় করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের বাস চালকদের প্রতিদিন ১ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হয়। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, গাবতলী, আব্দুল্লাহপুরসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা আদায় করে। একেক রুট থেকে ৬ থেকে ৭ ধাপে চাঁদার টাকা তোলা হয়। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, টঙ্গী পেরিয়ে ঢাকার সীমানায় প্রবেশ করলেই প্রতি বাস থেকে টাকা আদায় শুরু হয়। এই রুট থেকে সদরঘাট আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিভিন্ন অংকের চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশও এই টাকায় ভাগ বসান। চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মালিকরাও।
এসব চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে সম্প্রতি প্রেসক্লাবে সড়ক-পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে নয় দফা দাবির কথাও উল্লেখ করেন। ঢাকার সড়কে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রকের নাম প্রকাশ করতে গিয়ে সংগঠনটির সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বলেন, একজন ‘গডফাদার’ সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি গত কয়েক বছরে নিজস্ব পরিবহন সংস্থার ব্যানারে শত শত বাস নামিয়েছেন। মালয়েশিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ডে বিপুল সম্পদ পাচার করেছেন। সাংবাদিকরা ওই গডফাদারের নাম জানতে চাইলে তিনি সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যার কথা উল্লেখ করেন। এই সদস্য সচিব আরো দাবি করেন, এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি বলেন, এখনও পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের হাতে। তারা সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাদের অপসারণ করা না গেলে পরিবহন খাতে নৈরাজ্য দূর হবে না। এই সদস্য সচিব অভিযোগ করেন, গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে পুলিশ প্রতিদিন চালক-মালিকদের হয়রানি করছে। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বিরুদ্ধে সীমাহীন চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুল হক বলেন, চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ বাস মালিকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই দুর্দশা দেখার কেউ নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমিতির প্রভাবশালীদের ভয়ে সাধারণ মালিক, শ্রমিকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। বাস টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধ ও দুর্নীতিবাজ মালিক-শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বাড্ডা হয়ে ভিক্টর ক্লাসিক নামের একটি বাস যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি হাত উঁচিয়ে সংকেত দিলে ধীরগতি করে বাসের কন্ডাক্টর টাকা বের করে দেন। একই চিত্রের দেখা মেলে মিরপুর থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বাস ইউনাইটেড-এ। মিরপুর ১২ থেকে ছেড়ে আসার পর কাজীপাড়ায় বাসটির কন্ডাক্টরকে দেখা যায় পকেট থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। মিরপুর মতিঝিলে রুটে শিকড়, সময় নিয়ন্ত্রণ ও দিশারীসহ কয়েকটি পরিবহনের প্রায় এক হাজার বাস চলাচল করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি দিন একটি বাসের মালিককে কমপক্ষে সাড়ে ৮শ’রও বেশি টাকা গুনতে হয়। এর মধ্যে টার্মিনাল চাঁদা ৪৫০ টাকা এবং সিরিয়াল ও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দিতে হয় ৩৩০ টাকা। সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের অনেকে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের পেছনে ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, যখন যে দল সরকারে আসে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ সেই দলের পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও তাদের ক্যাডারদের হাতেই থাকে। সাধারণ পরিবহণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবহন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রাজধানীতে খুনোখুনির ঘটনাও কম হয়নি। কিন্তু পরিবহন চাঁদাবাজি কখনো থেমে থাকেনি। এর মধ্যে আরেক খবর হলো চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী পরিহবনগুলোর কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে দিতে দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। গত দুই বছরে এক ডজনের মতো নতুন বাস নেমেছে শহরের বিভিন্ন রুটে।
এসব রুটের নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহনগুলোর মালিকানা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে। দলীয় পরিচয় ছাড়া নতুন কোনো ব্যবসায়ী এসব রুটে বাস নামাতে চাইলে প্রথমেই তাদের সংশ্লিষ্ট রুট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ধার্য করে দেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। আর প্রথম ধাক্কায় মোটা অংকের টাকার কথা শুনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন নতুন ব্যবসায়ীরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক, কাজলসহ বেশ কয়েকজন নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখানে কোনো বাস থেকে ট্রিপ প্রতি ৩০ টাকা, কোনো বাস থেকে ৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন তারা। আবার এই রুটেই বাড্ডায় আসলে ফজলু নামের এক নেতা নেন ২২০টাকা। গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ইজারা বাবাদ ১৩০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বাস থেকে ৩৩০ টাকা করে দিতে হয় চালকদের। অন্যদিকে সদরঘাট গেলে প্রতি বাস থেকে দিনে ৪৫০ টাকা নেন আশরাফ নামের এক পরিবহন নেতা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালে চাঁদা আদায় করে আতিক এবং মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ। মহাখালী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সাদেকুর রহমান হিরু ও শহীদুল্লাহ সদুর হাতে।
সায়েদাবাদে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে আছে আবুল কালাম আজাদ, নয়ন, করম আলী, মনির চৌধুরী, আলী রেজা ও আমির হোসেনের হাতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর বেশ কয়েকটি রুটের পরিবহন মালিক জানান, বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক ক্যাডার ও পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে লাভের টাকা মালিকের পকেটে যাওয়ার আগে পথেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি এখন চাঁদা দিতে হয় এলাকাভিত্তিক পলিটিক্যাল ক্যাডারদেরও। নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের স্থান না থাকায় রাতে সরকারি রাস্তায় গাড়ি রাখলেও থানা পুলিশের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক পলিটিক্যাল ক্যাডারদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। সাধারণ মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, চাঁদার নির্ধারিত এ টাকা দিতে না পারলে রাস্তায় গাড়ি নামানো যায় না। রবরব বাসের চালক ফারুক বলেন, আমরা তো রাস্তায় থাকি। যত কষ্ট আমাদের।
একদিন বাস না চালালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলেই জায়গায় জায়গায় টাকা ছাড়তে হয়। না হলে বাস আটক করে রাখে। টাকা দিতে না চাইলে গ্লাস ভাঙে। আবার মাঝে মধ্যে মারধরও করে। আবার আমরা বাস না চালাইলে মালিকেরও সমস্যা। তাকে যে টাকা দেই সেটা থেকে আবার কোম্পানির লোকজনদের দিতে হয়। সমিতিতে টাকা পয়সা দিতে হয়। সারাদিন যা ইনকাম হয় সেখানে মালিকের খুব বেশি টাকা থাকে না। সব মানুষের পেটে চলে যায়। একই চাঁদাবাজির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার তুরাগ পরিবহনের এক চালক জানান, সকালে বাস নামাইলেই স্ট্যান্ডে ৫০ টাকা দিয়া গাড়ি স্টার্ট দিতে হয়। নাইলে গাড়ি চালাইতে দেয় না। রামপুরা আসলে দিতে হয় আরো টাকা। প্রতিদিন যে টাকা ইনকাম হয় তার বেশিরভাগ চলে যায় রাস্তার খরচে।
No comments