সিলেটে স্বামী-স্ত্রীর মানবপাচার চক্র by ওয়েছ খছরু
সৌদি
আরবে অবস্থানকালে ৭ মাসে বদল করেন তিন বাসা। কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়
দফায় দফায় নির্যাতন। ক্রমাগত নির্যাতনে কাহিল হয়ে পড়েছিলো জৈন্তাপুরের
কুলসুমা বেগম। চেয়েছিলেন আত্মহত্যা করতে। দেশের স্বজনদের দেখাতে চান না
মুখও। কিন্তু হঠাৎ একদিন পালালেন বন্দিখানা থেকে। এরপর সেইফ হাউসে ছিলেন এক
মাসের উপরে। সেখান থেকে ১২ই সেপ্টেম্বর দেশে আসার সুযোগ পান কুলসুমা।
চলে আসেন নিজ বাড়ি জৈন্তাপুরে। দেশে ফিরেই কুলসুমা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। মানবপাচারকারী দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন থানায়। প্রাথমিক তদন্তের ঘটনার সত্যতা পায় পুলিশ। মামলা গ্রহণ করে গত বুধবার রাতে মানবপাচার সিন্ডিকেটের সদস্য দিলারা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার স্বামী জসিম উদ্দিনকে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মানবপাচারের কথা স্বীকার করেছে।
পুরো সিন্ডিকেটের তথ্য জানতে সিলেটের জৈন্তাপুর থানা পুলিশ তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। মানবপাচারের এই করুণ কাহিনী, মামলা ও সিন্ডিকেটদের গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়। জৈন্তাপুর উপজেলার ডৌডিক গ্রামের নুরুল হকের মেয়ের কুলসুমা বেগম। অভাব-অনটনের সংসার তার। ৯ ভাই-বোনের সংসারে অসুস্থ পিতা। এরপরও অনাহারে- অর্ধাহারে সামাজিকতা বজায় রেখে চলছে তাদের সংসার। চলতি বছরের শুরুতে নগরের টিলাগড়ের এক আত্মীয়ের বাসায় আসেন কুলসুমা বেগম। সেখান থেকে পয়েন্টে আসার পথে তার সঙ্গে দেখা হয় অপরিচিত দিলারা বেগমের। দিলারা বেগম হচ্ছে বালাগঞ্জ উপজেলার মৈশাশী গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী। কথায় কথায় তাদের পরিচয় হয়। এ সময় দিলারা বেগম ১৯ বছরের তরুণী কুলসুমাকে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
তার প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে কুলসুমা আলোচনা করেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। পরবর্তীতে দিলারা বেগমও তাদের বাড়ি যায়। গিয়ে বলে টাকা লাগবে না। শুধু পাসপোর্ট করতে হবে। এজন্য সে ৫ হাজার টাকা নেয়। দিলারার স্বামী জসিম উদ্দিনও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। সেও স্ত্রীর সঙ্গে কুলসুমার বিদেশ যাওয়ার প্রসেসিং করে। মামলার এজাহারে কুলসুমা বেগম উল্লেখ করেছেন- সিলেটের মারূফ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামানের মাধ্যমে তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ওই এজেন্সির লোকজন সব কাজ চূড়ান্ত করে তাকে ২৬শে জানুয়ারি বাড়ি থেকে নিয়ে যান। কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করার পর ২রা ফেব্রুয়ারি কুলসুমাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। এজাহারে কুলসুমা আরো জানান- বিদেশ যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে এজেন্সির লোকজন তাকে একটি বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসার মালিকসহ তার ছেলে কুলসুমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। তারা শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায় তারা বলে- ‘টাকা দিয়ে আমাকে কিনে এনেছে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে।’ এদিকে- তাদের নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে ওঠেন কুলসুমা। একপর্যায়ে তিনি অনুনয় শুরু করেন। পরে তাকে ওই বাসার মালিক অন্য বাসায় দিয়ে আসেন।
সেখানেও একই অবস্থায় তার উপর নির্যাতন চলে। কয়েক মাস সেখানে রাখার পর আরো একটি বাসায় পাঠানো হয়। ওই বাসাতে তাকে মারধর করা হয়। এতে কাহিল হয়ে পড়েন কুলসুমা। নির্যাতনে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু কারো কাছে বলার সুযোগ নেই। বন্দিদশা অবস্থায় সব নীরবে সয়ে যান। ওই বাসাতে থাকার সময় গত জুলাই মাসে সুযোগ বুঝে একদিন পালান কুলসুমা। রাস্তায় পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায় এম্বেসিতে। সেখান থেকে কুলসুমাকে পাঠানো হয় সৌদি সরকারের সেইফ হাউসে। কুলসুমা গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সেইফ হাউসে যাওয়ার পর তার মতো শ’ শ’ নারীকে দেখতে পান। তাদের সঙ্গে একইভাবে আচরণ করা হয়েছে। তারাও পালিয়ে ধরা পড়ে এই সেইফ হাউসে চলে এসেছে। কিন্তু কবে দেশে পাঠানো হবে সেটি তারা জানেন না। এ কারণে প্রায় সময় সেইফ হাউসে থাকা মহিলারা ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। ফেরার আগে দ্রুত দেশে পাঠানোর দাবি তুলেন তারা। শেষে গত ১১ই সেপ্টেম্বর কুলসুমার ডাক পড়ে দেশে আসার। বিমানের একটি ফ্লাইটে ১২ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় পা রাখেন কুলসুমা।
এয়ারপোর্টে ছিলো তার পিতা ও ভাই। তাদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান সব ঘটনা। এরপর তিনি বাড়ি চলে আসেন। চিকিৎসা গ্রহণের পর কুলসুমা এখন সুস্থ। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার প্রতিবাদ হিসেবে ২রা অক্টোবর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মানবপাচারকারী দিলারা, তার স্বামী জসিম উদ্দিন ও মারূফ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর গত বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে জৈন্তাপুরের শুক্কুবারী বাজার এলাকা থেকে দিলারা বেগম ও তার স্বামী জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। জৈন্তাপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারের পর দিলারা ও জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের কাছে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে তাদের আদালতে সোর্পদ করা হয়। তিনি বলেন- মানবপাচারের পুুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য জানতে আদালতে দিলারা ও জসিমের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এদিকে- পুলিশ মামলার অপর আসামি ওয়াহিদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকে ওয়াহিদুজ্জামান পলাতক রয়েছে। মামলার বাদী ভুক্তভোগী কুলসুমা বেগম জানিয়েছেন- সৌদি আরবে থাকার সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু বেঁচে লড়াই অনুধাবন করায় দেশে ফিরে প্রতিবাদী হয়েছেন। এই প্রতিবাদের কারণ হচ্ছে- আর কোনো মেয়ে যেন ওদের প্রলোভনে পড়ে অনিশ্চিত জীবনে পতিত না হয়।
চলে আসেন নিজ বাড়ি জৈন্তাপুরে। দেশে ফিরেই কুলসুমা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। মানবপাচারকারী দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন থানায়। প্রাথমিক তদন্তের ঘটনার সত্যতা পায় পুলিশ। মামলা গ্রহণ করে গত বুধবার রাতে মানবপাচার সিন্ডিকেটের সদস্য দিলারা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার স্বামী জসিম উদ্দিনকে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মানবপাচারের কথা স্বীকার করেছে।
পুরো সিন্ডিকেটের তথ্য জানতে সিলেটের জৈন্তাপুর থানা পুলিশ তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। মানবপাচারের এই করুণ কাহিনী, মামলা ও সিন্ডিকেটদের গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়। জৈন্তাপুর উপজেলার ডৌডিক গ্রামের নুরুল হকের মেয়ের কুলসুমা বেগম। অভাব-অনটনের সংসার তার। ৯ ভাই-বোনের সংসারে অসুস্থ পিতা। এরপরও অনাহারে- অর্ধাহারে সামাজিকতা বজায় রেখে চলছে তাদের সংসার। চলতি বছরের শুরুতে নগরের টিলাগড়ের এক আত্মীয়ের বাসায় আসেন কুলসুমা বেগম। সেখান থেকে পয়েন্টে আসার পথে তার সঙ্গে দেখা হয় অপরিচিত দিলারা বেগমের। দিলারা বেগম হচ্ছে বালাগঞ্জ উপজেলার মৈশাশী গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী। কথায় কথায় তাদের পরিচয় হয়। এ সময় দিলারা বেগম ১৯ বছরের তরুণী কুলসুমাকে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
তার প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে কুলসুমা আলোচনা করেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। পরবর্তীতে দিলারা বেগমও তাদের বাড়ি যায়। গিয়ে বলে টাকা লাগবে না। শুধু পাসপোর্ট করতে হবে। এজন্য সে ৫ হাজার টাকা নেয়। দিলারার স্বামী জসিম উদ্দিনও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। সেও স্ত্রীর সঙ্গে কুলসুমার বিদেশ যাওয়ার প্রসেসিং করে। মামলার এজাহারে কুলসুমা বেগম উল্লেখ করেছেন- সিলেটের মারূফ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামানের মাধ্যমে তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ওই এজেন্সির লোকজন সব কাজ চূড়ান্ত করে তাকে ২৬শে জানুয়ারি বাড়ি থেকে নিয়ে যান। কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করার পর ২রা ফেব্রুয়ারি কুলসুমাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। এজাহারে কুলসুমা আরো জানান- বিদেশ যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে এজেন্সির লোকজন তাকে একটি বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসার মালিকসহ তার ছেলে কুলসুমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। তারা শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায় তারা বলে- ‘টাকা দিয়ে আমাকে কিনে এনেছে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে।’ এদিকে- তাদের নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে ওঠেন কুলসুমা। একপর্যায়ে তিনি অনুনয় শুরু করেন। পরে তাকে ওই বাসার মালিক অন্য বাসায় দিয়ে আসেন।
সেখানেও একই অবস্থায় তার উপর নির্যাতন চলে। কয়েক মাস সেখানে রাখার পর আরো একটি বাসায় পাঠানো হয়। ওই বাসাতে তাকে মারধর করা হয়। এতে কাহিল হয়ে পড়েন কুলসুমা। নির্যাতনে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু কারো কাছে বলার সুযোগ নেই। বন্দিদশা অবস্থায় সব নীরবে সয়ে যান। ওই বাসাতে থাকার সময় গত জুলাই মাসে সুযোগ বুঝে একদিন পালান কুলসুমা। রাস্তায় পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায় এম্বেসিতে। সেখান থেকে কুলসুমাকে পাঠানো হয় সৌদি সরকারের সেইফ হাউসে। কুলসুমা গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সেইফ হাউসে যাওয়ার পর তার মতো শ’ শ’ নারীকে দেখতে পান। তাদের সঙ্গে একইভাবে আচরণ করা হয়েছে। তারাও পালিয়ে ধরা পড়ে এই সেইফ হাউসে চলে এসেছে। কিন্তু কবে দেশে পাঠানো হবে সেটি তারা জানেন না। এ কারণে প্রায় সময় সেইফ হাউসে থাকা মহিলারা ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। ফেরার আগে দ্রুত দেশে পাঠানোর দাবি তুলেন তারা। শেষে গত ১১ই সেপ্টেম্বর কুলসুমার ডাক পড়ে দেশে আসার। বিমানের একটি ফ্লাইটে ১২ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় পা রাখেন কুলসুমা।
এয়ারপোর্টে ছিলো তার পিতা ও ভাই। তাদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান সব ঘটনা। এরপর তিনি বাড়ি চলে আসেন। চিকিৎসা গ্রহণের পর কুলসুমা এখন সুস্থ। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার প্রতিবাদ হিসেবে ২রা অক্টোবর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মানবপাচারকারী দিলারা, তার স্বামী জসিম উদ্দিন ও মারূফ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর গত বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে জৈন্তাপুরের শুক্কুবারী বাজার এলাকা থেকে দিলারা বেগম ও তার স্বামী জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। জৈন্তাপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারের পর দিলারা ও জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের কাছে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে তাদের আদালতে সোর্পদ করা হয়। তিনি বলেন- মানবপাচারের পুুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য জানতে আদালতে দিলারা ও জসিমের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এদিকে- পুলিশ মামলার অপর আসামি ওয়াহিদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকে ওয়াহিদুজ্জামান পলাতক রয়েছে। মামলার বাদী ভুক্তভোগী কুলসুমা বেগম জানিয়েছেন- সৌদি আরবে থাকার সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু বেঁচে লড়াই অনুধাবন করায় দেশে ফিরে প্রতিবাদী হয়েছেন। এই প্রতিবাদের কারণ হচ্ছে- আর কোনো মেয়ে যেন ওদের প্রলোভনে পড়ে অনিশ্চিত জীবনে পতিত না হয়।
No comments