অচিরেই দেখতে পাবেন: রহস্যের কেন্দ্রে সম্রাট by শুভ্র দেব
যুবলীগ
নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ঘিরে আলোচনা দেশজুড়ে। তিনি এখন কোথায় এ
প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। শুক্রবার রাত থেকে গুঞ্জন তিনি গ্রেপ্তার
হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কব্জায় ঢাকার ক্যাসিনো পল্লীর এই
নিয়ন্ত্রক। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত
সম্রাটকে নিয়ে আলোচনা গত কয়েকদিন ধরেই। যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো ডন খালেদ
মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর একে একে বেরিয়ে আসে ক্যাসিনো ডনদের নাম।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছেন, ঢাকার
বেশির ভাগ ক্যাসিনো সম্রাটের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি এসব ক্যাসিনো থেকে
প্রতিদিন মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করতেন। সম্রাটের তথ্য আসার পর থেকেই তাকে
নজরদারিতে রাখে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
ব্যাংক হিসাব জব্দ করে এনবিআর। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সম্রাট কৌশলের
আশ্রয় নেন। শ শ নেতাকর্মী ঘিরে রাখে তার কাকরাইলের কার্যালয়। বলা হয়, এই
কার্যালয় থেকে সম্রাট অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। গত এক সপ্তাহ ধরে
সেখানে নেতাকর্মীদের শোডাউন দিলেও তিনি ভেতরে আছেন কিনা এ নিয়ে ছিল
ধোঁয়াশা। কারণ সংবাদকর্মী বা বাইরের কাউকে এই ডেরায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
সংগঠনের পরিচিতরাই সেখানে যাতায়াত করতেন। তার গ্রেপ্তারের গুঞ্জন উঠার পর
থেকে ওই কার্যালয়টিও এখন ফাঁকা। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কামালের একটি বক্তব্যের পর সম্রাটের অবস্থান নিয়ে আরও রহস্যের সৃষ্টি হয়।
‘সম্রাটের বিষয়ে শিগগির জানা যাবে’ তার এমন বক্তব্যের পর অনেকে ধরে নেন
সম্রাট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেই আছেন। তাকে যেকোন সময়
গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। সম্রাটের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হতে গতকাল
সকাল থেকে র্যাব সদরদপ্তর ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ভিড়
করে সংবাদ কর্মীরা। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, কাকরাইলের অফিসে নিজেকে অনিরাপদ ভেবে গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি সম্রাট আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং করেছিলেন। সে চেষ্টায় তিনি ব্যর্থ হয়ে একজন প্রভাবশালী নেতার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। ওই নেতার বাসা থেকেই তাকে একটি সংস্থার হেফাজতে নেয়া হয় বলে আলোচনা রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, কয়েকদিন ধরেই সম্রাট গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন। গতকাল সোনারগাঁও হোটেলে একটি অনুষ্ঠানে সম্রাট গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন অপেক্ষা করুন যা ঘটে সবই গিগগিরই দেখবেন। আপনারা অনেক কিছুই বলছেন, আমরা যেটা বলছি সম্রাট হোক যেই হোক অপরাধ করলে তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। আমি এটা এখনও বলছি, সম্রাট বলে কথা না যে কেউ আইনের আওতায় আসবে। আপনারা সময় হলেই দেখবেন। তার এমন বক্তব্যের পর সম্রাটের গ্রেপ্তারের আলোচনা আরও তীব্র হয়। এদিকে যুবলীগের এই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। প্রকাশ্য অস্ত্র উচিয়ে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলাফেরা, অস্ত্রের মহড়া, খেলাধুলার ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো চালানো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, বিদেশে টাকা পাচার করে সেকেন্ডহোম, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ। গোয়েন্দাসূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য পেয়ে যুবলীগ দক্ষিণের বেশ কয়েকজন নেতার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। যুবলীগের দক্ষিণের কমিটিও ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে মতিঝিলের ক্যাসিনো পাড়ায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই দিনই গুলশানের বাসা থেকে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই সম্রাটের বিষয়টি সামনে চলে আসে।
অভিযোগ আছে, র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ও বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুরু ছিলেন সম্রাট। খালেদের সকল অপকর্মের আশ্রয় দিতেন তিনি। খালেদের নেতৃত্বে যতগুলো ক্যাসিনো চলত তার প্রত্যেকটি থেকে ভাগ দিতে হতো তাকে। সূত্রমতে ঢাকার মতিঝিল, বনানী, উত্তরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি ক্যাসিনো সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাট। তিনি নিজে গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রিড়া চক্রে একটি ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। এসব ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে সম্রাট নিতেন অর্ধকোটি টাকা। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা করে নিতেন ক্যাসিনো থেকে। এরমধ্যে ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে সম্রাট নিতেন চার লাখ টাকা, কলা বাগান ক্লাব থেকে দুই লাখ টাকা, সৈনিক ক্লাব থেকে চার লাখ টাকা, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব থেকে চার লাখ, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ৫ লাখ, দিলকুশা ক্লাব থেকে চার লাখ, আরামবাগ ক্লাব থেকে তিন লাখ, ফুয়াং ক্লাব থেকে দুই লাখ, মোহামেডান ক্লাব থেকে পাঁচ লাখ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রিড়া চক্র থেকে পাঁচ লাখ, ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে চার লাখ, এজাজ ক্লাব থেকে তিন লাখ ও উত্তরা এলাকার দুটি ক্যাসিনো থেকে নিতেন চার লাখ টাকা।
সূত্র বলছে, দেশের বড় বড় জুয়াড়িদের কাছে তিনি ক্যাসিনো সম্রাট নামে পরিচিত। বিদেশের মাটিতেও তিনি ভিআইপি জুয়াড়ি হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে সাধারণ জুয়া খেলা থেকে ক্লাব ভিত্তিক ক্যাসিনো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সম্রাটের ভুমিকা অনেক।
সূত্র বলছে, সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো হচ্ছে মেরিনা বে স্যান্ডস। এই ক্যাসিনোতে পশ্চিমা দেশের বাসিন্দারাও জুয়া খেলতে আসেন। আর এই ক্যাসিনোর ভিআইপি জুয়াড়ি হচ্ছেন ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট। ভিআইপি জুয়াড়ি হওয়াতে সিঙ্গাপুরের একটি বিমানবন্দরে তাকে বিশেষভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস পর্যন্ত বিশাল প্রটৌকলে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, সম্রাটের জুয়া খেলার সঙ্গী হতেন তার ভাই বাদল। এছাড়া খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ডিএসসিসি কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ নেতা আরমানুল হক আরমান ছাড়াও আরও কয়েকজন নামকরা জুয়াড়ি। গোয়েন্দাসূত্র বলছে, শুধু সিঙ্গাপুর না দুবাই মালেয়শিয়াও নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাদের। এসব দেশে বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে তারা জুয়া খেলতেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ও মালেয়শিয়া সম্রাট, খালেদ সেকেন্ডহোম করেছেন। এসব দেশে তাদের ব্যবসায়িক খাতেও বড় অংকের বিনিয়োগ আছে। তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসাবে আছেন কয়েকজন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। টাকার ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি থেকে ভাগ দেয়া হত জিসানকে।
সূত্র বলছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরে টেন্ডারবাজির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন সম্রাট। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমকে টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার জন্য পর্দার আড়ালের নায়ক হিসাবে কাজ করতেন তিনি। মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, হলিডে মার্কেট, ছাড়াও ফুটপাতে দোকানপাঠ বসিয়ে চাঁদা আদায়ের মূল হোতা ছিলেন সম্রাট। ফিতা দিয়ে ফুট মেপে মতিঝিল শাপলা চত্বর, সোনালী ব্যাংকের সামনে, আলিকো অফিসের আশেপাশে দোকানপাট বসানো হত। এসব দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা তুলতো সম্রাটের ক্যাডার বাহিনী। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফুটপাত অবমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেই চেষ্টা বৃথা যায়। গুলিস্তান এলাকায় দিন রাতে তিন শিফটে দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় করতো সম্রাট বাহিনী। এক স্থান থেকে দিনে তিনবার চাঁদা উঠত। এছাড়া স্থায়ীভাবেও কিছু দোকানপাট ছিল। একইভাবে পল্টন, বায়তুল মোকাররম, হলিডে মার্কেট থেকে চাঁদা তুলতো তার ক্যাডার বাহিনী। গত বছর চাঁদা দাবি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান কাকরাইলের আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একটি ভবন নির্মাণের। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহেনা নিজে দান করেন।
সম্রাটের চাঁদা দাবির পর প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন সম্রাট। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সম্রাটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সূত্র বলছে, খালেদা মাহমুদ ভূইয়া, মোহামেডানের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূইয়া ও টেন্ডার মুঘল জি কে শামীম রিমান্ডে সম্রাট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া আরেক পলাতক ডন মুমিনুল হক সাঈদের বিষয়েও অনেক তথ্য এসেছে। সম্রাট এবং সাঈদকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্যাসিনো জগতের আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সূত্র জানায়, কাকরাইলের অফিসে নিজেকে অনিরাপদ ভেবে গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি সম্রাট আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং করেছিলেন। সে চেষ্টায় তিনি ব্যর্থ হয়ে একজন প্রভাবশালী নেতার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। ওই নেতার বাসা থেকেই তাকে একটি সংস্থার হেফাজতে নেয়া হয় বলে আলোচনা রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, কয়েকদিন ধরেই সম্রাট গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন। গতকাল সোনারগাঁও হোটেলে একটি অনুষ্ঠানে সম্রাট গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন অপেক্ষা করুন যা ঘটে সবই গিগগিরই দেখবেন। আপনারা অনেক কিছুই বলছেন, আমরা যেটা বলছি সম্রাট হোক যেই হোক অপরাধ করলে তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। আমি এটা এখনও বলছি, সম্রাট বলে কথা না যে কেউ আইনের আওতায় আসবে। আপনারা সময় হলেই দেখবেন। তার এমন বক্তব্যের পর সম্রাটের গ্রেপ্তারের আলোচনা আরও তীব্র হয়। এদিকে যুবলীগের এই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। প্রকাশ্য অস্ত্র উচিয়ে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলাফেরা, অস্ত্রের মহড়া, খেলাধুলার ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো চালানো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, বিদেশে টাকা পাচার করে সেকেন্ডহোম, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ। গোয়েন্দাসূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য পেয়ে যুবলীগ দক্ষিণের বেশ কয়েকজন নেতার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। যুবলীগের দক্ষিণের কমিটিও ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে মতিঝিলের ক্যাসিনো পাড়ায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই দিনই গুলশানের বাসা থেকে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই সম্রাটের বিষয়টি সামনে চলে আসে।
অভিযোগ আছে, র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ও বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুরু ছিলেন সম্রাট। খালেদের সকল অপকর্মের আশ্রয় দিতেন তিনি। খালেদের নেতৃত্বে যতগুলো ক্যাসিনো চলত তার প্রত্যেকটি থেকে ভাগ দিতে হতো তাকে। সূত্রমতে ঢাকার মতিঝিল, বনানী, উত্তরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি ক্যাসিনো সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাট। তিনি নিজে গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রিড়া চক্রে একটি ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। এসব ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে সম্রাট নিতেন অর্ধকোটি টাকা। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা করে নিতেন ক্যাসিনো থেকে। এরমধ্যে ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে সম্রাট নিতেন চার লাখ টাকা, কলা বাগান ক্লাব থেকে দুই লাখ টাকা, সৈনিক ক্লাব থেকে চার লাখ টাকা, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব থেকে চার লাখ, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ৫ লাখ, দিলকুশা ক্লাব থেকে চার লাখ, আরামবাগ ক্লাব থেকে তিন লাখ, ফুয়াং ক্লাব থেকে দুই লাখ, মোহামেডান ক্লাব থেকে পাঁচ লাখ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রিড়া চক্র থেকে পাঁচ লাখ, ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে চার লাখ, এজাজ ক্লাব থেকে তিন লাখ ও উত্তরা এলাকার দুটি ক্যাসিনো থেকে নিতেন চার লাখ টাকা।
সূত্র বলছে, দেশের বড় বড় জুয়াড়িদের কাছে তিনি ক্যাসিনো সম্রাট নামে পরিচিত। বিদেশের মাটিতেও তিনি ভিআইপি জুয়াড়ি হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে সাধারণ জুয়া খেলা থেকে ক্লাব ভিত্তিক ক্যাসিনো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সম্রাটের ভুমিকা অনেক।
সূত্র বলছে, সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো হচ্ছে মেরিনা বে স্যান্ডস। এই ক্যাসিনোতে পশ্চিমা দেশের বাসিন্দারাও জুয়া খেলতে আসেন। আর এই ক্যাসিনোর ভিআইপি জুয়াড়ি হচ্ছেন ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট। ভিআইপি জুয়াড়ি হওয়াতে সিঙ্গাপুরের একটি বিমানবন্দরে তাকে বিশেষভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস পর্যন্ত বিশাল প্রটৌকলে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, সম্রাটের জুয়া খেলার সঙ্গী হতেন তার ভাই বাদল। এছাড়া খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ডিএসসিসি কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ নেতা আরমানুল হক আরমান ছাড়াও আরও কয়েকজন নামকরা জুয়াড়ি। গোয়েন্দাসূত্র বলছে, শুধু সিঙ্গাপুর না দুবাই মালেয়শিয়াও নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাদের। এসব দেশে বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে তারা জুয়া খেলতেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ও মালেয়শিয়া সম্রাট, খালেদ সেকেন্ডহোম করেছেন। এসব দেশে তাদের ব্যবসায়িক খাতেও বড় অংকের বিনিয়োগ আছে। তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসাবে আছেন কয়েকজন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। টাকার ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি থেকে ভাগ দেয়া হত জিসানকে।
সূত্র বলছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরে টেন্ডারবাজির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন সম্রাট। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমকে টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার জন্য পর্দার আড়ালের নায়ক হিসাবে কাজ করতেন তিনি। মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, হলিডে মার্কেট, ছাড়াও ফুটপাতে দোকানপাঠ বসিয়ে চাঁদা আদায়ের মূল হোতা ছিলেন সম্রাট। ফিতা দিয়ে ফুট মেপে মতিঝিল শাপলা চত্বর, সোনালী ব্যাংকের সামনে, আলিকো অফিসের আশেপাশে দোকানপাট বসানো হত। এসব দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা তুলতো সম্রাটের ক্যাডার বাহিনী। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফুটপাত অবমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেই চেষ্টা বৃথা যায়। গুলিস্তান এলাকায় দিন রাতে তিন শিফটে দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় করতো সম্রাট বাহিনী। এক স্থান থেকে দিনে তিনবার চাঁদা উঠত। এছাড়া স্থায়ীভাবেও কিছু দোকানপাট ছিল। একইভাবে পল্টন, বায়তুল মোকাররম, হলিডে মার্কেট থেকে চাঁদা তুলতো তার ক্যাডার বাহিনী। গত বছর চাঁদা দাবি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান কাকরাইলের আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একটি ভবন নির্মাণের। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহেনা নিজে দান করেন।
সম্রাটের চাঁদা দাবির পর প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন সম্রাট। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সম্রাটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সূত্র বলছে, খালেদা মাহমুদ ভূইয়া, মোহামেডানের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূইয়া ও টেন্ডার মুঘল জি কে শামীম রিমান্ডে সম্রাট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া আরেক পলাতক ডন মুমিনুল হক সাঈদের বিষয়েও অনেক তথ্য এসেছে। সম্রাট এবং সাঈদকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্যাসিনো জগতের আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
No comments