বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: ইকোনমিস্টের মূল্যায়ন
লন্ডনের
প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে গত ২৫শে
সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নন পারফরমিং লোন (এনপিএল)বৃদ্ধি, রাজনৈতিক
হস্তক্ষেপ এবং সরকারের ঋণ নেয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
পত্রিকাটি ঋণখেলাপিদের দেয়া সুবিধার কারণে ব্যাংকিং খাতের ওপর নানা অভিঘাত বিশ্লেষণ করে একটি সতর্ক উপসংহার টেনেছে। পত্রিকাটির কথায়, ‘যাই হোক না কেন, যদি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটে এবং অর্থনীতির গতি নাটকীয়ভাবে মন্থর না হয়ে পড়ে, তাহলে আমরা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একটি পদ্ধতিগত সংকট আশা করি না।’ পত্রিকাটির আরেকটি মূল্যায়ন হলো, ‘আমরা আশা করি যে, সংস্কারের জন্য রেগুলেটরি এবং রাজনৈতিক পরিবেশ আগের মতোই প্রতিকূল থাকবে, আর সেটাই ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধন ঘটাতে পারে।
ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল করতে অতীতের মতোই, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ‘রিক্যাপিটালাইজেশন’ এবং অধিকতর অ্যাডহক পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।’ উল্লেখ্য, দি ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনে নির্দিষ্টভাবে একটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এটা উদ্বেগজনক যে, সরকার একটি আইন তৈরি করতে যাচ্ছে। এর আওতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর (এসওই) ক্যাশ রিজার্ভে ঢুকতে সরকার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। ২০১৯ সালের মে মাসে এরকম ৬৮টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার রিজার্ভ ছিল ২.১ ট্রিলিয়ন টাকা বা ২৪. ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আসন্ন আইনের অধীনে সরকার ওই অর্থের একটি বৃহৎ অংশই রাষ্ট্রের কোষাগারে নিয়ে আসতে পারবে। এই অর্থের সিংহভাগই বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে ডিপোজিট রয়েছে। সুতরাং এরকম একটি ঝুঁকি রয়েছে যে, নতুন আইন ব্যাংকের জামানতের পরিমাণ আরো হ্রাস করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এভাবেই নতুন করে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।’ পত্রিকাটির একটি নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স ইউনিট রয়েছে। পত্রিকাটি তার প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ক্রেডিট গ্রুথ বা ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ৮.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি ধরে ১৪.৮ ভাগ টার্গেট করেছে। কিন্তু দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করছে, এই টার্গেটে ঘাটতি পড়বে। প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৭ শতাংশ। পত্রিকাটি আরো জানাচ্ছে, ‘আমরা আশা করি যে, ঋণখেলাপিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই পুনঃতফসিলকরণের সুবিধা নেবেন। এটা এনপিএলের অনুপাত কমাবে। এর ফলে খেলাপি ঋণের ক্ষুদ্র অংশ পরিশোধের ফলে ব্যাংকের রাজস্ব সামান্য হলেও বাড়বে। ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এনপিএল অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। কারণ, গত জুলাইয়ে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ সুপ্রিম কোর্ট উল্টে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি দীর্ঘমিয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ ডেকে আনবে।
কারণ, পুনঃতফসিল করা ঋণ অতীতের চেয়ে কম লাভজনক হবে। আর যেহেতু কম লাভজনক এই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলকরণের আবর্তে টাকাটা আটকে থাকবে, আর তাই ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগতে পারে। আর সেই কারণে অর্থনীতির অন্যান্য অংশে ঋণ সরবরাহে ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য সংকুচিত হবে। দি ইকোনমিস্ট লিখেছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। তাই ঋণ প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। সরকার সাম্প্রতিককালে যেসব নীতি নিয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি উন্নত করে দিতে সহায়তা দেয়ার কোনো লক্ষণ ফুটে উঠছে না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য এনপিএল একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে রেখেছে। গত তিন বছর ধরে এনপিএল-এর অনুপাত মোট ঋণদানের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। ২০১৯ সালের মে মাসে ব্যাংকিং খাতের ওপর চাপ কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অ্যামনেস্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এটা ঋণ খেলাপিদের ঋণ অত্যন্ত উদার নৈতিক শর্তে পুনঃতফসিল করার একটা সুযোগ দিয়েছে। ওই কর্মসূচির অধীনে তারা তাদের মোট ঋণের মাত্র ২ শতাংশ পরিশোধ করে পুনঃতফসিল করতে পারবে। আর বাদবাকি টাকা শোধ করতে ১০ বছর মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়। এর সঙ্গে রয়েছে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড। আর সর্বোচ্চ সুদের হার শতকরা ৯ ভাগ। এই কর্মসূচি ২০শে অক্টোবর শেষ হচ্ছে। সবশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুনে মোট বকেয়া ঋণের মধ্যে ১১.৭ শতাংশ এনপিএল হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০১৮ সালের শেষে এই হার ছিল ১০.৩ ভাগ। ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘ঋণ খেলাপিদের পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা দেয়ার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ঋণ গ্রহণকারীদের একটা স্বল্প মেয়াদে স্বস্তি দেয়া আর ব্যাংকগুলো যাতে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য ঋণ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে। কিন্তু এর সুবিধাটা বেশি পেলো ঋণ খেলাপিরাই। ইকোনমিস্টের রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেছে যে, ‘বাংলাদেশি সরকারের কর রাজস্ব/জিডিপির অনুপাত ২০১৮-১৯ সালে ১১.৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। এটা এই অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্নে। অবকাঠোমা প্রকল্প এবং অন্যান্য বিনিয়োগে সরকার ঋণ করতে বাধ্য হচ্ছে।’ ২০১৯-২০২০ সালে সরকার ব্যাংক থেকে ১২.৭ শতাংশ বেশি ঋণ করার পরিমাণ পূর্বাভাস করেছে।
পত্রিকাটি ঋণখেলাপিদের দেয়া সুবিধার কারণে ব্যাংকিং খাতের ওপর নানা অভিঘাত বিশ্লেষণ করে একটি সতর্ক উপসংহার টেনেছে। পত্রিকাটির কথায়, ‘যাই হোক না কেন, যদি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটে এবং অর্থনীতির গতি নাটকীয়ভাবে মন্থর না হয়ে পড়ে, তাহলে আমরা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একটি পদ্ধতিগত সংকট আশা করি না।’ পত্রিকাটির আরেকটি মূল্যায়ন হলো, ‘আমরা আশা করি যে, সংস্কারের জন্য রেগুলেটরি এবং রাজনৈতিক পরিবেশ আগের মতোই প্রতিকূল থাকবে, আর সেটাই ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধন ঘটাতে পারে।
ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল করতে অতীতের মতোই, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ‘রিক্যাপিটালাইজেশন’ এবং অধিকতর অ্যাডহক পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।’ উল্লেখ্য, দি ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনে নির্দিষ্টভাবে একটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এটা উদ্বেগজনক যে, সরকার একটি আইন তৈরি করতে যাচ্ছে। এর আওতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর (এসওই) ক্যাশ রিজার্ভে ঢুকতে সরকার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। ২০১৯ সালের মে মাসে এরকম ৬৮টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার রিজার্ভ ছিল ২.১ ট্রিলিয়ন টাকা বা ২৪. ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আসন্ন আইনের অধীনে সরকার ওই অর্থের একটি বৃহৎ অংশই রাষ্ট্রের কোষাগারে নিয়ে আসতে পারবে। এই অর্থের সিংহভাগই বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে ডিপোজিট রয়েছে। সুতরাং এরকম একটি ঝুঁকি রয়েছে যে, নতুন আইন ব্যাংকের জামানতের পরিমাণ আরো হ্রাস করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এভাবেই নতুন করে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।’ পত্রিকাটির একটি নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স ইউনিট রয়েছে। পত্রিকাটি তার প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ক্রেডিট গ্রুথ বা ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ৮.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি ধরে ১৪.৮ ভাগ টার্গেট করেছে। কিন্তু দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করছে, এই টার্গেটে ঘাটতি পড়বে। প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৭ শতাংশ। পত্রিকাটি আরো জানাচ্ছে, ‘আমরা আশা করি যে, ঋণখেলাপিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই পুনঃতফসিলকরণের সুবিধা নেবেন। এটা এনপিএলের অনুপাত কমাবে। এর ফলে খেলাপি ঋণের ক্ষুদ্র অংশ পরিশোধের ফলে ব্যাংকের রাজস্ব সামান্য হলেও বাড়বে। ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এনপিএল অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। কারণ, গত জুলাইয়ে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ সুপ্রিম কোর্ট উল্টে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি দীর্ঘমিয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ ডেকে আনবে।
কারণ, পুনঃতফসিল করা ঋণ অতীতের চেয়ে কম লাভজনক হবে। আর যেহেতু কম লাভজনক এই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলকরণের আবর্তে টাকাটা আটকে থাকবে, আর তাই ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগতে পারে। আর সেই কারণে অর্থনীতির অন্যান্য অংশে ঋণ সরবরাহে ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য সংকুচিত হবে। দি ইকোনমিস্ট লিখেছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। তাই ঋণ প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। সরকার সাম্প্রতিককালে যেসব নীতি নিয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি উন্নত করে দিতে সহায়তা দেয়ার কোনো লক্ষণ ফুটে উঠছে না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য এনপিএল একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে রেখেছে। গত তিন বছর ধরে এনপিএল-এর অনুপাত মোট ঋণদানের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। ২০১৯ সালের মে মাসে ব্যাংকিং খাতের ওপর চাপ কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অ্যামনেস্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এটা ঋণ খেলাপিদের ঋণ অত্যন্ত উদার নৈতিক শর্তে পুনঃতফসিল করার একটা সুযোগ দিয়েছে। ওই কর্মসূচির অধীনে তারা তাদের মোট ঋণের মাত্র ২ শতাংশ পরিশোধ করে পুনঃতফসিল করতে পারবে। আর বাদবাকি টাকা শোধ করতে ১০ বছর মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়। এর সঙ্গে রয়েছে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড। আর সর্বোচ্চ সুদের হার শতকরা ৯ ভাগ। এই কর্মসূচি ২০শে অক্টোবর শেষ হচ্ছে। সবশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুনে মোট বকেয়া ঋণের মধ্যে ১১.৭ শতাংশ এনপিএল হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০১৮ সালের শেষে এই হার ছিল ১০.৩ ভাগ। ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘ঋণ খেলাপিদের পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা দেয়ার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ঋণ গ্রহণকারীদের একটা স্বল্প মেয়াদে স্বস্তি দেয়া আর ব্যাংকগুলো যাতে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য ঋণ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে। কিন্তু এর সুবিধাটা বেশি পেলো ঋণ খেলাপিরাই। ইকোনমিস্টের রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেছে যে, ‘বাংলাদেশি সরকারের কর রাজস্ব/জিডিপির অনুপাত ২০১৮-১৯ সালে ১১.৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। এটা এই অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্নে। অবকাঠোমা প্রকল্প এবং অন্যান্য বিনিয়োগে সরকার ঋণ করতে বাধ্য হচ্ছে।’ ২০১৯-২০২০ সালে সরকার ব্যাংক থেকে ১২.৭ শতাংশ বেশি ঋণ করার পরিমাণ পূর্বাভাস করেছে।
No comments