মিষ্টিকুমড়া ক্ষেতে ভাইরাসের প্রকোপ, কৃষক ও মৌচাষিরা বিপাকে by জাকির মোস্তাফিজ মিলু
গত
বেশ কয়েক বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁওয়ে মিষ্টিকুমড়া চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে
আসছিলেন চাষিরা। এতে তারা তুলনামূলক অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছিলেন।
কিন্তু এ বছর লাভের আশায় বেশি জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে বিপদে পড়েছেন
তারা। আগের মতো ওইসব ক্ষেতে এখন সারি সারি মিষ্টিকুমড়া তেমন চোখে পড়ছে না।
কারণ, ব্যাপক হারে ‘মোজাইক’ নামক ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে জেলার মিষ্টি
কুমড়া ক্ষেতে। শত শত বিঘা জমির কুমড়া গাছ ও সবুজ পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে।
ক্ষেতে বালাইনাশক ছিটিয়ে এই ভাইরাস থেকে ফসল বাঁচাতে পারছেন না কৃষক। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে। রোগ সারাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। দুশ্চিন্তার রেখা মৌচাষিদেরও কপালে। কারণ মিষ্টিকুমড়া ক্ষেত তাদের মধু আহরণের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।
সদর উপজেলার নারগুণ গ্রামের কুমড়ো চাষি তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষেতে গাছ বড় হয়েছে। ডগাও ছড়িয়ে পড়েছে। ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে। আর এ সময়ে সবুজ ডগা, পাতা ও কুশি হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এতে ফুল-ফল টিকছে না।’
একই গ্রামের বর্গা চাষি শাহ আলম জানান, তারা মিষ্টি কুমড়া সাথি ফসল হিসেবে আবাদ করেন। এ বছর আলু চাষ করে খুব একটা লাভ হয়নি। কুমড়া চাষ করে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন বলে আশা করেছেন। এ ছাড়া আমন ধান ওঠা পর্যন্ত কুমড়া বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ মেটান তারা। কিন্তু এবার কুমড়া ক্ষেতে রোগ দেখা দেওয়ায় বিপদে পড়েছেন এলাকার কুমড়া চাষিরা।
বালিয়া গ্রামের আবদুল লতিফের অভিযোগ, তারা কোম্পানির বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন।বীজ থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে ধারণা ভুক্তভোগী কৃষকদের। একই গ্রামের শুক জামাল বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তা ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে ওষুধ ছিটিয়ে উপকার পাচ্ছেন না তারা। রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে।’
শবদল হাট গ্রামের হাজী আবদুল হাই জানান, ২০-২৫ বছর ধরে তিনি মিষ্টিকুমড়া চাষ করছেন। এর আগে কুমড়া ক্ষেতে এ ধরনের মহামারি দেখা দেয়নি। লাভের আশায় অনেক বড় পুঁজি বিনিয়োগ করে তার পরিবার এখন ঝুঁকির মুখে।
এ দিকে কুমড়া চাষিদের পাশাপাশি মৌচাষিরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্ষেতে ফুল না থাকায় তারা মধু আহরণ করতে পারছেন না। মৌচাষি কাদের বলেন, ‘কুমড়া চাষিদের পাশাপাশি মৌ-খামারিরাও ক্ষতিতে পড়েছেন। এ মৌসুমে কুমড়া ক্ষেতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে নিজেরা যেমন বাঁচে তেমনি আমরাও আর্থিকভাবে লাভবান হই। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। মৌমাছিকে চিনি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, আলু তোলার পর একই জমিতে মিষ্টিকুমড়া জাতীয় ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এ এলাকার কৃষক। বিশেষ করে কুমড়া একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে সমাদৃত এখন কৃষকদের কাছে। উৎপাদন খরচ কম, লাভ পাওয়ায় প্রতিবছর কুমড়া আবাদ করছেন কৃষক।
জানা গেছে, সার-বীজ, কীটনাশক, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ প্রতিবিঘা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু ফলনে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় এ ক্ষতি পোষাবে কীভাবে এ নিয়ে অনেক কৃষক আহাজারি করছেন।
ইতোমধ্যেই বীজ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন কুমড়াচাষিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মিষ্টিকুমড়া ক্ষেত। এই ভাইরাসের সরাসরি কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।’ তবে তিনি জানান, কৃষকদের একটি আবেদনপত্র পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এ ব্যাপারে তার করার কিছুই নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় এক হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব উদ্দিন এ ব্যাপারে বলেন, ‘মিষ্টিকুমড়ো অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্যগুণ সম্পন্ন ফসল। কখনও কখনও হেলাফেলা করেও বাড়ির চালে বা ক্ষেতেও বাম্পার ফলন হয়, বীজ ও রোপণকালীন পরিচর্যা ঠিক থাকলে অনেক রোগ থেকেই একে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু একবার রোগ ধরলে রক্ষা করা কঠিন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এসব ফসল চাষের ব্যাপারে।’
ক্ষেতে বালাইনাশক ছিটিয়ে এই ভাইরাস থেকে ফসল বাঁচাতে পারছেন না কৃষক। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে। রোগ সারাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। দুশ্চিন্তার রেখা মৌচাষিদেরও কপালে। কারণ মিষ্টিকুমড়া ক্ষেত তাদের মধু আহরণের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।
সদর উপজেলার নারগুণ গ্রামের কুমড়ো চাষি তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষেতে গাছ বড় হয়েছে। ডগাও ছড়িয়ে পড়েছে। ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে। আর এ সময়ে সবুজ ডগা, পাতা ও কুশি হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এতে ফুল-ফল টিকছে না।’
একই গ্রামের বর্গা চাষি শাহ আলম জানান, তারা মিষ্টি কুমড়া সাথি ফসল হিসেবে আবাদ করেন। এ বছর আলু চাষ করে খুব একটা লাভ হয়নি। কুমড়া চাষ করে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন বলে আশা করেছেন। এ ছাড়া আমন ধান ওঠা পর্যন্ত কুমড়া বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ মেটান তারা। কিন্তু এবার কুমড়া ক্ষেতে রোগ দেখা দেওয়ায় বিপদে পড়েছেন এলাকার কুমড়া চাষিরা।
বালিয়া গ্রামের আবদুল লতিফের অভিযোগ, তারা কোম্পানির বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন।বীজ থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে ধারণা ভুক্তভোগী কৃষকদের। একই গ্রামের শুক জামাল বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তা ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে ওষুধ ছিটিয়ে উপকার পাচ্ছেন না তারা। রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে।’
শবদল হাট গ্রামের হাজী আবদুল হাই জানান, ২০-২৫ বছর ধরে তিনি মিষ্টিকুমড়া চাষ করছেন। এর আগে কুমড়া ক্ষেতে এ ধরনের মহামারি দেখা দেয়নি। লাভের আশায় অনেক বড় পুঁজি বিনিয়োগ করে তার পরিবার এখন ঝুঁকির মুখে।
এ দিকে কুমড়া চাষিদের পাশাপাশি মৌচাষিরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্ষেতে ফুল না থাকায় তারা মধু আহরণ করতে পারছেন না। মৌচাষি কাদের বলেন, ‘কুমড়া চাষিদের পাশাপাশি মৌ-খামারিরাও ক্ষতিতে পড়েছেন। এ মৌসুমে কুমড়া ক্ষেতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে নিজেরা যেমন বাঁচে তেমনি আমরাও আর্থিকভাবে লাভবান হই। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। মৌমাছিকে চিনি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, আলু তোলার পর একই জমিতে মিষ্টিকুমড়া জাতীয় ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এ এলাকার কৃষক। বিশেষ করে কুমড়া একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে সমাদৃত এখন কৃষকদের কাছে। উৎপাদন খরচ কম, লাভ পাওয়ায় প্রতিবছর কুমড়া আবাদ করছেন কৃষক।
জানা গেছে, সার-বীজ, কীটনাশক, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ প্রতিবিঘা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু ফলনে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় এ ক্ষতি পোষাবে কীভাবে এ নিয়ে অনেক কৃষক আহাজারি করছেন।
ইতোমধ্যেই বীজ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন কুমড়াচাষিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মিষ্টিকুমড়া ক্ষেত। এই ভাইরাসের সরাসরি কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।’ তবে তিনি জানান, কৃষকদের একটি আবেদনপত্র পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এ ব্যাপারে তার করার কিছুই নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় এক হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব উদ্দিন এ ব্যাপারে বলেন, ‘মিষ্টিকুমড়ো অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্যগুণ সম্পন্ন ফসল। কখনও কখনও হেলাফেলা করেও বাড়ির চালে বা ক্ষেতেও বাম্পার ফলন হয়, বীজ ও রোপণকালীন পরিচর্যা ঠিক থাকলে অনেক রোগ থেকেই একে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু একবার রোগ ধরলে রক্ষা করা কঠিন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এসব ফসল চাষের ব্যাপারে।’
No comments