সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা সৌদি শ্রমবাজার by ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া
সৌদি
আরবের ভিসা সেন্টার বা ড্রপ বক্স চালুর উদ্যোগে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর
একটি বড় অংশের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। দু’টি ভিসা সেন্টারের মাধ্যমে
ভিসা জমা নেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন হলেও এজেন্সিগুলোর আন্দোলনের মুখে তা
আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে মনে করছে আন্দোলনকারী এজেন্সিগুলো। তবে যেকোনো সময়
সেন্টার দু’টি চালুর আশঙ্কায় এজেন্সিগুলো তাদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত
রেখেছে। আগামী শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি
রয়েছে ক্ষুব্ধ এজেন্সিগুলোর। এজেন্সিগুলো বলছে, ভিসা সার্ভিস সেন্টার
প্রতিষ্ঠা পেলে মালয়েশিয়ার মতো সৌদি আরবের শ্রমবাজারও সিন্ডিকেটের হাতে চলে
যাবে। আশঙ্কার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বড়
কোনো কোম্পানিকে না দিয়ে মাত্র দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের তৈরি করা
কোম্পানিকে গোপনে এই সেন্টারখোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে যারা মালয়েশিয়ার
শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের সাথেও জড়িত ছিল।
এ ছাড়াও এরা দুই কোম্পানিতে ২৪ জন করে মোট ৪৮টি এজেন্সিকে এর সাথে রেখেছে। তাদের আরো অভিযোগ করেছে, এজেন্সিগুলোর ব্যবসায়িক গোপনীয়তা রক্ষা হবে না, মূল ভিসা দাতার সাথে ড্রপ বক্সের সাথে জড়িতরা সরাসরি যোগাযোগ করে ব্যবসায় হাতিয়ে নেবে এবং প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া এখন পাসপোর্ট প্রতি ১১০০ টাকা নেয়ার কথা বলা হলেও পরে তা অনেকগুণ বাড়িয়ে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কোনো পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াই অতি গোপনে এই সার্ভিস সেন্টার চালু এবং এ ক্ষেত্রে বায়রার বর্তমান শীর্ষনেতারাও গোপনীয়তা রক্ষা করে সিন্ডিকেটের পক্ষ নিয়েছে বলে এজেন্সিগুলোর অভিযোগ।
গত বছর ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে এই ধরনের সৌদি ভিসা সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে স্থগিত রাখতে সৌদি দূতাবাস বাধ্য হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিগুলোর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) বলছে, সৌদি দূতাবাসের ইচ্ছা অনুযায়ীই এই সার্ভিস সেন্টার হচ্ছে। বায়রা এই সার্ভিস সেন্টারের ব্যাপারে সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ীই অনাপত্তিপত্র দিয়েছে।
যে দু’টি ভিসা সেন্টার দু’টি কোম্পানির নামে খোলা হয়েছে সেগুলোর একটির মালিক বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী এবং অন্যটির মালিক সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হাই। বনানী ও গুলশানে সেন্টার দু’টির অফিস স্থাপন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেন্টার দু’টি চালু করা হবে বলে সৌদি দূতাবাস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। পরে সফটওয়ার প্রস্তুত না হওয়ার কথা জানিয়ে জানানো হয়, আগের নিয়মেই সরাসরি পাসপোর্ট নেবে দূতাবাস। এর আগে দু’টি কোম্পানিকে অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে বায়রার পক্ষ থেকে গত ২৫ এপ্রিল দু’টি পৃথক চিঠি দেয়া হয় সৌদি দূতাবাসকে।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বায়রা চিঠি দিয়েছে। বায়রা এই ধরনের অনেক চিঠিই মন্ত্রণালয়, দূতাবাসসহ বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে থাকে। এখানে সমস্যা কোথায়?
এজেন্সিগুলোর কী ক্ষতি হবে? সদস্যদের মতামত বা জরুরি সাধারণ সভা ডেকে সভার মতামত নিয়ে বায়রা এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, বায়রার সিদ্ধান্ত নিতে সব সদস্যকে জিজ্ঞেস করতে হবে এটা কোথায় বলা আছে? তিনি বলেন, কেন সৌদি দূতাবাস এই ভিসা সেন্টার চালু করেছে কাউন্সিলর সভা করে সেটা জানিয়েছে। যারা আপত্তি করছে তারা ওই দিন সেই সভায় যায়নি কেন, তাকে প্রশ্ন করেনি কেন?
‘ড্রপবক্স সিন্ডিকেট নির্মূল কমিটি ও ক্ষতিগ্রস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকবৃন্দের’ ব্যানারে রিক্রুটিং এজেন্সির একটি বড় অংশ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। তারা প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে এবং সোমবার নিউ ইস্কাটনে বায়রা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে।
আন্দোলনকারী সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল আলিম গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে আন্দোলনের মুখে সৌদি দূতাবাস ড্রপ বক্সের মাধ্যমে ভিসা নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। স্বাভাবিক নিয়েমে ভিসা নিচ্ছে। এভাবেতো হবে না। এটা আমরা মানব না। এটাতো একটা সিন্ডিকেট। যারা এই ভিসা সেন্টার চালাবে তারাও আমাদের লোক আমরা এটা মানতে পারি না। তিনি বলেন, এই ভিসা সার্ভিস সেন্টার চালু হলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক গোপনীয়তা আর থাকবে না। কারণ, সৌদি আরব থেকে ভিসা আসবে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে। সেখানে নিয়োগদাতার নাম-ঠিকানা থাকবে। সার্ভিস সেন্টার চাইলেই সেই নিয়োগদাতার সাথে যোগাযোগ করে আমার ব্যবসা নিয়ে নিতে পারবে। এ ছাড়া নিয়োগদাতারা যখন দেখবে সব ভিসা প্রসেস করছে দু’টি প্রতিষ্ঠান, তখন আমাদের আর ভিসা দেবে না।
সংগঠনের সদস্যসচিব মোবারক উল্লাহ শিমুল নয়া দিগন্তকে বলেন, আপাতত স্থগিত রাখা হলেও আমরা আতঙ্কিত। এটা অপকৌশল হতে পারে আন্দোলনকে প্রশমিত করার জন্য। তিনি বলেন, গত বছর ভারত, শ্রীলঙ্কায়ও এমন ড্রপ বক্স চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের মুখে সৌদি দূতাবাস তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আমরা আগামী শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করব। তাতে বেশির ভাগ রিক্রুটিং এজেন্সি অংশ নেবে বলেও তিনি জানান।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, বায়রা নির্বাহী কমিটি কিভাবে কাজ করবে এটা নির্বাহী কমিটির ব্যাপার। বর্তমানে সৌদি দূতাবাসে সরাসরি পাসপোর্ট জমা দিতে গেলে একটি এজেন্সি সপ্তাহে দুই দিন জমা দিতে পারে। সার্ভিস সেন্টার হওয়ার কারণে আমরা সপ্তাহে পাঁচ দিন পাসপোর্ট জমা দিতে পারব এবং এটি হবে আনলিমিটেড।
আন্দোলনকারীদের সংগঠনের সদস্যসচিব মোবারক উল্লাহ শিমুল এ ব্যাপারে বলেন, বায়রা অনৈতিক কাজ করেছে গোপনে চিঠি দিয়ে। তিনি বলেন, গত বছর এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করে বায়রার পক্ষ থেকে সৌদি দূতাবাসে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তখন যিনি সভাপতি ছিলেন তিনিই আবার এখন সিন্ডিকেটের পক্ষে চিঠি দিলেন। তিনি বলেন, এই ধরনের একটি বড় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই বায়রার ইজিএম ডাকতে হয়। কিন্তু দেখা যায়, আপত্তি ওঠার পর গত ২৩ জুন হোটেল ওয়েস্টিনে কিছু এজেন্সিকে নিয়ে একটি মিটিং করে তাদের সার্ভিস সেন্টার চালুর বিষয় অবহিত করা হলো। তিনি বলেন, এই সার্ভিস সেন্টার সৌদি দূতাবাসের ইচ্ছায় হলে মাত্র দু’টি কোম্পানিকে গোপনে কেন দেয়া হবে? আমাদের সরকার কেন বিষয়টি জানবে না? তিনি বলেন, আগে যেখানে মাসে এক লাখ সৌদি ভিসা প্রসেসিং হতো এখন মাসে ২০ হাজারের মতো হয়। এই ভিসার জন্য দূতাবাসে সরাসরি পাসপোর্ট দিয়ে প্রসেসিং করতে সমস্যা কোথায়?
আন্দোলনকারী জনশক্তি রফতানিকারকেরা সোমবার তাদের মানববন্ধনে বলেন, আগে তারা সরাসরি সৌদি দূতাবাসে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে পারতেন। এখন সার্ভিস সেন্টারে ভিসা জমা দিতে গেলে বাড়তি ফি দিতে হবে। এতে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। ড্রপবক্সে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ১,১০০ টাকা ফি ঠিক করা হয়েছে। এটা কিছুদিন পরে ১১,০০০ টাকায় রূপ নিতে পারে।
বায়রার সাধারণ সদস্য টিপু সুলতান বলেন, আমরা এখন যেই পাসপোর্টগুলো সৌদি দূতাবাসে জমা দিচ্ছি তা কোনো খরচ ছাড়া। এখন তারা যেই চার্জ নির্ধারণ করেছে সে ক্ষেত্রে আমাদের অভিবাসন ব্যয় বছরে ২০০ কোটি টাকা বাড়বে।
বায়রার সাধারণ সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বায়রার ১৬ শ’ এজেন্সি এখানে ব্যবসায়িক অধিকার হারাবে। যেটা অতীতে আমরা মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে দেখেছি। এভাবেই শ্রমবাজারটি নষ্ট হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক।
বায়রার সাধারণ সদস্যরা শনিবার রাজধানীর বিজয় নগরে একটি হোটেলে ‘ভিসা সেন্টার’ প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বলেছে, এজেন্সিগুলো ওই দুই জনশক্তি রফতানিকারকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে। সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে গেলে দুই জনশক্তি রফতানিকারকের কাছে ধর্ণা দিতে হবে। তারা কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিলে তবেই কর্মী পাঠানো যাবে। আর সুযোগ না দিলে কোনো জনশক্তি রফতানিকারক কর্মী পাঠাতে পারবে না। ওই সমাবেশ থেকে কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলিম বলেন, বায়রার সাধারণ সদস্যরা ভিসা সার্ভিস সেন্টার বাতিলের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সার্ভিস সেন্টার বাতিল না হলে, সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হবে। একই সাথে সার্ভিস সেন্টারে কোনো পাসপোর্ট জমা না দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। বলা হয়, গত কয়েক বছর মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন ওই সিন্ডিকেট সৌদি আরবেও সিন্ডিকেট করেছে।
সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, আন্দোলনের মুখে সৌদি দূতাবাস সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিসা নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। দূতাবাসের তিন দিন আগে বিদায় নেয়া কাউন্সিল মো: ইব্রাহিমের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেটের সাথে যোজসাজশের অভিযোগ করে আন্দোলনকারীরা বলছেন, আজকালের নতুন কাউন্সিলর মরগানের কাছে এই সার্ভিস সেন্টার বন্ধের জন্য অনুরোধ জানানো হবে। এরই মধ্যে এজেন্সিগুলো তাদের সৌদি কাউন্টার পার্ট ও সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আপত্তি জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন মোবারক উল্লাহ শিমুল।
এ ছাড়াও এরা দুই কোম্পানিতে ২৪ জন করে মোট ৪৮টি এজেন্সিকে এর সাথে রেখেছে। তাদের আরো অভিযোগ করেছে, এজেন্সিগুলোর ব্যবসায়িক গোপনীয়তা রক্ষা হবে না, মূল ভিসা দাতার সাথে ড্রপ বক্সের সাথে জড়িতরা সরাসরি যোগাযোগ করে ব্যবসায় হাতিয়ে নেবে এবং প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া এখন পাসপোর্ট প্রতি ১১০০ টাকা নেয়ার কথা বলা হলেও পরে তা অনেকগুণ বাড়িয়ে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কোনো পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াই অতি গোপনে এই সার্ভিস সেন্টার চালু এবং এ ক্ষেত্রে বায়রার বর্তমান শীর্ষনেতারাও গোপনীয়তা রক্ষা করে সিন্ডিকেটের পক্ষ নিয়েছে বলে এজেন্সিগুলোর অভিযোগ।
গত বছর ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে এই ধরনের সৌদি ভিসা সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে স্থগিত রাখতে সৌদি দূতাবাস বাধ্য হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিগুলোর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) বলছে, সৌদি দূতাবাসের ইচ্ছা অনুযায়ীই এই সার্ভিস সেন্টার হচ্ছে। বায়রা এই সার্ভিস সেন্টারের ব্যাপারে সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ীই অনাপত্তিপত্র দিয়েছে।
যে দু’টি ভিসা সেন্টার দু’টি কোম্পানির নামে খোলা হয়েছে সেগুলোর একটির মালিক বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী এবং অন্যটির মালিক সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হাই। বনানী ও গুলশানে সেন্টার দু’টির অফিস স্থাপন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেন্টার দু’টি চালু করা হবে বলে সৌদি দূতাবাস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। পরে সফটওয়ার প্রস্তুত না হওয়ার কথা জানিয়ে জানানো হয়, আগের নিয়মেই সরাসরি পাসপোর্ট নেবে দূতাবাস। এর আগে দু’টি কোম্পানিকে অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে বায়রার পক্ষ থেকে গত ২৫ এপ্রিল দু’টি পৃথক চিঠি দেয়া হয় সৌদি দূতাবাসকে।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বায়রা চিঠি দিয়েছে। বায়রা এই ধরনের অনেক চিঠিই মন্ত্রণালয়, দূতাবাসসহ বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে থাকে। এখানে সমস্যা কোথায়?
এজেন্সিগুলোর কী ক্ষতি হবে? সদস্যদের মতামত বা জরুরি সাধারণ সভা ডেকে সভার মতামত নিয়ে বায়রা এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, বায়রার সিদ্ধান্ত নিতে সব সদস্যকে জিজ্ঞেস করতে হবে এটা কোথায় বলা আছে? তিনি বলেন, কেন সৌদি দূতাবাস এই ভিসা সেন্টার চালু করেছে কাউন্সিলর সভা করে সেটা জানিয়েছে। যারা আপত্তি করছে তারা ওই দিন সেই সভায় যায়নি কেন, তাকে প্রশ্ন করেনি কেন?
‘ড্রপবক্স সিন্ডিকেট নির্মূল কমিটি ও ক্ষতিগ্রস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকবৃন্দের’ ব্যানারে রিক্রুটিং এজেন্সির একটি বড় অংশ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। তারা প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে এবং সোমবার নিউ ইস্কাটনে বায়রা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে।
আন্দোলনকারী সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল আলিম গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে আন্দোলনের মুখে সৌদি দূতাবাস ড্রপ বক্সের মাধ্যমে ভিসা নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। স্বাভাবিক নিয়েমে ভিসা নিচ্ছে। এভাবেতো হবে না। এটা আমরা মানব না। এটাতো একটা সিন্ডিকেট। যারা এই ভিসা সেন্টার চালাবে তারাও আমাদের লোক আমরা এটা মানতে পারি না। তিনি বলেন, এই ভিসা সার্ভিস সেন্টার চালু হলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক গোপনীয়তা আর থাকবে না। কারণ, সৌদি আরব থেকে ভিসা আসবে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে। সেখানে নিয়োগদাতার নাম-ঠিকানা থাকবে। সার্ভিস সেন্টার চাইলেই সেই নিয়োগদাতার সাথে যোগাযোগ করে আমার ব্যবসা নিয়ে নিতে পারবে। এ ছাড়া নিয়োগদাতারা যখন দেখবে সব ভিসা প্রসেস করছে দু’টি প্রতিষ্ঠান, তখন আমাদের আর ভিসা দেবে না।
সংগঠনের সদস্যসচিব মোবারক উল্লাহ শিমুল নয়া দিগন্তকে বলেন, আপাতত স্থগিত রাখা হলেও আমরা আতঙ্কিত। এটা অপকৌশল হতে পারে আন্দোলনকে প্রশমিত করার জন্য। তিনি বলেন, গত বছর ভারত, শ্রীলঙ্কায়ও এমন ড্রপ বক্স চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের মুখে সৌদি দূতাবাস তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আমরা আগামী শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করব। তাতে বেশির ভাগ রিক্রুটিং এজেন্সি অংশ নেবে বলেও তিনি জানান।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, বায়রা নির্বাহী কমিটি কিভাবে কাজ করবে এটা নির্বাহী কমিটির ব্যাপার। বর্তমানে সৌদি দূতাবাসে সরাসরি পাসপোর্ট জমা দিতে গেলে একটি এজেন্সি সপ্তাহে দুই দিন জমা দিতে পারে। সার্ভিস সেন্টার হওয়ার কারণে আমরা সপ্তাহে পাঁচ দিন পাসপোর্ট জমা দিতে পারব এবং এটি হবে আনলিমিটেড।
আন্দোলনকারীদের সংগঠনের সদস্যসচিব মোবারক উল্লাহ শিমুল এ ব্যাপারে বলেন, বায়রা অনৈতিক কাজ করেছে গোপনে চিঠি দিয়ে। তিনি বলেন, গত বছর এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করে বায়রার পক্ষ থেকে সৌদি দূতাবাসে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তখন যিনি সভাপতি ছিলেন তিনিই আবার এখন সিন্ডিকেটের পক্ষে চিঠি দিলেন। তিনি বলেন, এই ধরনের একটি বড় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই বায়রার ইজিএম ডাকতে হয়। কিন্তু দেখা যায়, আপত্তি ওঠার পর গত ২৩ জুন হোটেল ওয়েস্টিনে কিছু এজেন্সিকে নিয়ে একটি মিটিং করে তাদের সার্ভিস সেন্টার চালুর বিষয় অবহিত করা হলো। তিনি বলেন, এই সার্ভিস সেন্টার সৌদি দূতাবাসের ইচ্ছায় হলে মাত্র দু’টি কোম্পানিকে গোপনে কেন দেয়া হবে? আমাদের সরকার কেন বিষয়টি জানবে না? তিনি বলেন, আগে যেখানে মাসে এক লাখ সৌদি ভিসা প্রসেসিং হতো এখন মাসে ২০ হাজারের মতো হয়। এই ভিসার জন্য দূতাবাসে সরাসরি পাসপোর্ট দিয়ে প্রসেসিং করতে সমস্যা কোথায়?
আন্দোলনকারী জনশক্তি রফতানিকারকেরা সোমবার তাদের মানববন্ধনে বলেন, আগে তারা সরাসরি সৌদি দূতাবাসে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে পারতেন। এখন সার্ভিস সেন্টারে ভিসা জমা দিতে গেলে বাড়তি ফি দিতে হবে। এতে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। ড্রপবক্সে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ১,১০০ টাকা ফি ঠিক করা হয়েছে। এটা কিছুদিন পরে ১১,০০০ টাকায় রূপ নিতে পারে।
বায়রার সাধারণ সদস্য টিপু সুলতান বলেন, আমরা এখন যেই পাসপোর্টগুলো সৌদি দূতাবাসে জমা দিচ্ছি তা কোনো খরচ ছাড়া। এখন তারা যেই চার্জ নির্ধারণ করেছে সে ক্ষেত্রে আমাদের অভিবাসন ব্যয় বছরে ২০০ কোটি টাকা বাড়বে।
বায়রার সাধারণ সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বায়রার ১৬ শ’ এজেন্সি এখানে ব্যবসায়িক অধিকার হারাবে। যেটা অতীতে আমরা মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে দেখেছি। এভাবেই শ্রমবাজারটি নষ্ট হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক।
বায়রার সাধারণ সদস্যরা শনিবার রাজধানীর বিজয় নগরে একটি হোটেলে ‘ভিসা সেন্টার’ প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বলেছে, এজেন্সিগুলো ওই দুই জনশক্তি রফতানিকারকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে। সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে গেলে দুই জনশক্তি রফতানিকারকের কাছে ধর্ণা দিতে হবে। তারা কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিলে তবেই কর্মী পাঠানো যাবে। আর সুযোগ না দিলে কোনো জনশক্তি রফতানিকারক কর্মী পাঠাতে পারবে না। ওই সমাবেশ থেকে কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলিম বলেন, বায়রার সাধারণ সদস্যরা ভিসা সার্ভিস সেন্টার বাতিলের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সার্ভিস সেন্টার বাতিল না হলে, সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হবে। একই সাথে সার্ভিস সেন্টারে কোনো পাসপোর্ট জমা না দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। বলা হয়, গত কয়েক বছর মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন ওই সিন্ডিকেট সৌদি আরবেও সিন্ডিকেট করেছে।
সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, আন্দোলনের মুখে সৌদি দূতাবাস সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিসা নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। দূতাবাসের তিন দিন আগে বিদায় নেয়া কাউন্সিল মো: ইব্রাহিমের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেটের সাথে যোজসাজশের অভিযোগ করে আন্দোলনকারীরা বলছেন, আজকালের নতুন কাউন্সিলর মরগানের কাছে এই সার্ভিস সেন্টার বন্ধের জন্য অনুরোধ জানানো হবে। এরই মধ্যে এজেন্সিগুলো তাদের সৌদি কাউন্টার পার্ট ও সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আপত্তি জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন মোবারক উল্লাহ শিমুল।
No comments