নতুন কৌশল গ্রহণ করছে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী! by ফারহান বুখারি
মঙ্গলবারের
বার্ষিক বাজেট ঘোষণাকে সামনে রেখে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সশস্ত্র বাহিনী ও
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার আগামী বছরের জন্য সামরিক বাহিনীর ব্যয়ের
লাগাম টেনে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
লেনদেনের ভারসাম্যজনিত সঙ্কট নিরসন করতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কাছ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণের ভিত্তি প্রস্তুতের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সম্ভবত প্রথমবারের মতো এই অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
বুধবার ইমরান খান এক টুইটে স্বীকার করেন যে নানা নিরাপত্তাগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের মারাত্মক আর্থিক পরিস্থিতির কারণে সশস্ত্র বাহিনী স্বেচ্ছায় তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় হ্রাস করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এর এক দিন আগে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেট স্বেচ্ছায় হ্রাস করা হলেও তা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার মূল্যে করা হবে না। আমরা সম্ভাব্য সব হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর সাড়া দিয়ে যাব।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট দেশটির মোট সরকারি ব্যয়ের (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনে ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার) প্রায় এক পঞ্চমাংশ। পাকিস্তান তার ৫ লাখ সদস্যবিশিষ্ট সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। বিশেষ করে কাশ্মির নিয়ে বিরোধের জের ধরে দেশটি নিরাপত্তা বাহিনীকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে ফেব্রুয়ারিতে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা বাড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জানিয়েছে, হামলাটি চালিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক একটি ইসলামি গ্রুপ। তবে ইমরান খানের সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার উত্তেজনা পাশ্চাত্যের দেশগুলোর জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। উভয় দেশই পরমাণু শক্তির অধিকারী।
তালেবান গ্রুপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযানে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এখন পর্যন্ত তালেবানের প্রধান প্রধান শক্তিকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী, তারা আফগান সীমান্তের ‘উপজাতীয় এলাকাগুলোতে’ থাকা পকেটগুলোতে তাদের পশ্চাদপসরণে বাধ্যও করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর আগামী বছরের জন্য ন্যূনতম মাত্রায়ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্তটি আসলে দেশটির মারাত্মক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকেই স্বীকার করে নেয়ার সামিল। ওই সঙ্কটের কারণে ইসলামাবাদকে আইএমএফের কাছ থেকে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হতে হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের ন্যানিয়াঙ টেকনলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো জেমস দরসি বলেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি, পতনের মুখে থাকা অর্থনীতি নয়।
তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণের জন্য প্রয়োজন কৃচ্ছ্রমূলক পদক্ষেপ। এটা জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, এটা বেদনাদায়ক কর্মসূচি হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা জানা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আইএমএফের ঋণের জের ধরে আয়কর সংগ্রহ নজিরবিহীন মাত্রায় বাড়ানো হবে, সরকারি ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হবে।
ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের সামরিক প্রতিশ্রুতির কারণে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যয় হ্রাস করার একটি সীমা আছে।
তিনি বলেন, ব্যয় ব্যাপকভাবে কমানো হলে বা প্রচলিত প্রতিরক্ষা কেনা হ্রাস করা হলে স্বাভাবিকভাবেই হুমকি বাড়বে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বিশেষ করে কাশ্মির প্রশ্নে ভারতের সাথে সমঝোতা না হলে দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তান এ ধরনের অবস্থা সামাল দিতে পারবে না।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এর সাথে একমত নন। সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসাচৃ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ন্যান তিয়ান বলেন, পাকিস্তানের ব্যয় হ্রাস করার আশু কোনো প্রভাব দেশটির অস্ত্র ক্রয়ের ওপর পড়বে না।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে কোনো চুক্তিতে সই হলে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে কয়েক বছর পর। সাথে সাথেই মূল্য পরিশোধ করতে হয় না।
পাশ্চাত্যের কূটনীতিকরা বলছেন, সামরিক সরঞ্জামের জন্য পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান হারে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানের বেশির ভাগ অস্ত্রের যোগান দিত।
বেইজিংয়ের সাথে ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্কের ফলে দেশটির সাথে বড় বড় চুক্তি হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে এক দশকের মধ্যে চীনের কাছ থেকে আটটি সনাতন সাবমেরিন ক্রয়, পাকিস্তানে স্থানীয়ভাবে জেএফ-১৭ থান্ডার জঙ্গিবিমান নির্মাণ চুক্তি। এই বিমান পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান অবলম্বন হতে যাচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পাশ্চাত্যের এক কূটনীতিক নিক্কিইকে বলেন, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে আমি নিশ্চিত, পাকিস্তানের সামরিক ঋণগুলো চীন পুনঃতফসিল করতে আগ্রহী হবে।
নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ/সাউথ এশিয়ান মনিটর
লেনদেনের ভারসাম্যজনিত সঙ্কট নিরসন করতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কাছ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণের ভিত্তি প্রস্তুতের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সম্ভবত প্রথমবারের মতো এই অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
বুধবার ইমরান খান এক টুইটে স্বীকার করেন যে নানা নিরাপত্তাগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের মারাত্মক আর্থিক পরিস্থিতির কারণে সশস্ত্র বাহিনী স্বেচ্ছায় তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় হ্রাস করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এর এক দিন আগে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেট স্বেচ্ছায় হ্রাস করা হলেও তা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার মূল্যে করা হবে না। আমরা সম্ভাব্য সব হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর সাড়া দিয়ে যাব।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট দেশটির মোট সরকারি ব্যয়ের (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনে ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার) প্রায় এক পঞ্চমাংশ। পাকিস্তান তার ৫ লাখ সদস্যবিশিষ্ট সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। বিশেষ করে কাশ্মির নিয়ে বিরোধের জের ধরে দেশটি নিরাপত্তা বাহিনীকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে ফেব্রুয়ারিতে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা বাড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জানিয়েছে, হামলাটি চালিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক একটি ইসলামি গ্রুপ। তবে ইমরান খানের সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার উত্তেজনা পাশ্চাত্যের দেশগুলোর জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। উভয় দেশই পরমাণু শক্তির অধিকারী।
তালেবান গ্রুপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযানে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এখন পর্যন্ত তালেবানের প্রধান প্রধান শক্তিকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী, তারা আফগান সীমান্তের ‘উপজাতীয় এলাকাগুলোতে’ থাকা পকেটগুলোতে তাদের পশ্চাদপসরণে বাধ্যও করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর আগামী বছরের জন্য ন্যূনতম মাত্রায়ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্তটি আসলে দেশটির মারাত্মক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকেই স্বীকার করে নেয়ার সামিল। ওই সঙ্কটের কারণে ইসলামাবাদকে আইএমএফের কাছ থেকে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হতে হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের ন্যানিয়াঙ টেকনলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো জেমস দরসি বলেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি, পতনের মুখে থাকা অর্থনীতি নয়।
তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণের জন্য প্রয়োজন কৃচ্ছ্রমূলক পদক্ষেপ। এটা জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, এটা বেদনাদায়ক কর্মসূচি হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা জানা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আইএমএফের ঋণের জের ধরে আয়কর সংগ্রহ নজিরবিহীন মাত্রায় বাড়ানো হবে, সরকারি ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হবে।
ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের সামরিক প্রতিশ্রুতির কারণে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যয় হ্রাস করার একটি সীমা আছে।
তিনি বলেন, ব্যয় ব্যাপকভাবে কমানো হলে বা প্রচলিত প্রতিরক্ষা কেনা হ্রাস করা হলে স্বাভাবিকভাবেই হুমকি বাড়বে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বিশেষ করে কাশ্মির প্রশ্নে ভারতের সাথে সমঝোতা না হলে দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তান এ ধরনের অবস্থা সামাল দিতে পারবে না।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এর সাথে একমত নন। সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসাচৃ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ন্যান তিয়ান বলেন, পাকিস্তানের ব্যয় হ্রাস করার আশু কোনো প্রভাব দেশটির অস্ত্র ক্রয়ের ওপর পড়বে না।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে কোনো চুক্তিতে সই হলে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে কয়েক বছর পর। সাথে সাথেই মূল্য পরিশোধ করতে হয় না।
পাশ্চাত্যের কূটনীতিকরা বলছেন, সামরিক সরঞ্জামের জন্য পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান হারে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানের বেশির ভাগ অস্ত্রের যোগান দিত।
বেইজিংয়ের সাথে ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্কের ফলে দেশটির সাথে বড় বড় চুক্তি হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে এক দশকের মধ্যে চীনের কাছ থেকে আটটি সনাতন সাবমেরিন ক্রয়, পাকিস্তানে স্থানীয়ভাবে জেএফ-১৭ থান্ডার জঙ্গিবিমান নির্মাণ চুক্তি। এই বিমান পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান অবলম্বন হতে যাচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পাশ্চাত্যের এক কূটনীতিক নিক্কিইকে বলেন, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে আমি নিশ্চিত, পাকিস্তানের সামরিক ঋণগুলো চীন পুনঃতফসিল করতে আগ্রহী হবে।
নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ/সাউথ এশিয়ান মনিটর
No comments