হিন্দি ঠেকাও আন্দোলন : বিপাকে মোদি!
ভারতে
নতুন এক শিক্ষানীতি সব স্কুলে হিন্দিকে 'তিনটি ভাষার একটি' হিসেবে চালু
করতে সুপারিশ করার পর এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতে তীব্র প্রতিবাদ
শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে তামিলনাডুতে প্রায় সব রাজনৈতিক দল বলছে তারা সর্বশক্তিতে এই প্রস্তাব রুখবে।
পাশাপাশি সেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতেও দারুণভাবে ট্রেন্ড করছে 'হ্যাশট্যাগ স্টপহিন্দিইম্পোজিশন', অর্থাৎ 'হিন্দি চাপিয়ে দেয়া ঠেকাও'।
এই বাধার মুখে কেন্দ্রীয় সরকারও এখন সাফাই দিচ্ছে যে মানুষের মতামত না-নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বস্তুত হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে ভারতে বিভক্তির ইতিহাস অনেক পুরনো, এখন সেই বিতর্কই আবার নতুন আকারে মাথাচাড়া দিচ্ছে।
ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার ঠিক পর দিনই সরকারের কাছে জমা পড়ে নতুন একটি শিক্ষানীতির খসড়া, যা প্রস্তুত করেছে দেশের নামী মহাকাশবিজ্ঞানী কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
ওই 'খসড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১৯'-এ বলা হয়, বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে ভারতের স্কুলগুলোতে যে 'তিন ভাষা ফর্মুলা' চালু আছে সেটা শুধু বহাল রাখাই যথেষ্ট নয় - তা এখন বাচ্চাদের জন্য আরো অনেক কম বয়সে চালু করা দরকার।
এখন যেহেতু এই তিনটি ভাষার একটা অবশ্যই হিন্দি হতে হবে, এবং ভারতে যে বাচ্চাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয় তাদেরও খুব কম বয়স থেকে হিন্দি শেখাটা বাধ্যতামূলক হবে - তাই দক্ষিণ ভারতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়।
হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস আছে তামিলনাড়ুর দল ডিএমকে-র।
তাদের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী ও এমপি কানিমোজি বিবিসিকে বলছিলেন, "এভাবে ঘুরপথে হিন্দি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা আমরা কিছুতেই মানব না।"
"হিন্দি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনে আমাদের দল আদালতে যেতেও প্রস্তুত", জানাচ্ছেন তিনি।
কানিমোজির বাবা ও প্রবাদপ্রতিম তামিল রাজনীতিবিদ এম করুণানিধি নিজেই ছিলেন তামিলনাডুতে হিন্দি-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
ডিএমকে-র সেই অবস্থান আজও যেমন অপরিবর্তিত, তেমনি কমল হাসান, ভাইকো, রামোদাসের মতো তামিলনাডুর অন্য রাজনীতিবিদরাও নতুন করে হিন্দির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
এমন কী, তামিলনাডুতে ক্ষমতাসীন দল এআইডিএমকে বিজেপির শরিক, কিন্তু তাদের শিক্ষামন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্র যা-ই বলুক, তারা রাজ্যে দুই ভাষা ফর্মুলাই জারি রাখবেন - অর্থাৎ বাচ্চাদের শুধু তামিল ও ইংরেজিই শেখাবেন।
কিন্তু কেন দাক্ষিণাত্যে হিন্দির বিরোধিতা এত তীব্র?
কেরালার রাজনীতিবিদ ও তিরুবনন্তপুরম থেকে টানা তিনবার জিতে আসা কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের ব্যাখ্যা হলো, "ভারতের মতো বহুভাষী একটা দেশে একটাই জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা চালু করার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি বিপদও কিন্তু আছে।"
"উত্তর ভারতে যে শুক্লা, সিং, শর্মারা জন্ম থেকে হিন্দি শিখে বড় হয়েছেন তারা যখন দেখেন তাদের পছন্দের ভাষাই প্রশাসনিক কাজে, অফিস-আদালতে জাতীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে তখন তারা ভীষণ খুশি হতে পারেন।"
"কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেই মুহুর্তেই কিন্তু দক্ষিণ ভারতের সুব্রহ্মণ্যম, রেড্ডি বা মেনন - যারা কখনও হিন্দি শেখেননি - তাদের আপনি দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে দিচ্ছেন।"
"ফলে ঐক্যের বদলে যখনই আপনি ইউনিফর্মিটি বা একই ধরনের জিনিসে বেশি গুরুত্ব দেবেন, ভারতকেও কিন্তু তখনই ধ্বংস করে ফেলবেন!", বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি থারুর।
বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা বিজেপিকে বহুদিন পর্যন্ত শুধু হিন্দি বলয়ের দল হিসেবেই দেখা হয়ে এসেছে, একটা সময় তাদের স্লোগানও ছিল 'হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান'।
তাদের নতুন মেয়াদের শুরুতেই মাথাচাড়া দেওয়া এই হিন্দি-বিতর্ককে মোদি সরকার অবশ্য দ্রুতই চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানাচ্ছেন, "সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি - জনমত যাচাইয়ের পরই নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।"
"কাজেই এটা নিয়ে কোনো ভুলবোঝাবুঝি কাম্য নয়।"
"আর মোদি সরকার সব ভারতীয় ভাষারই প্রসারের পক্ষপাতী, সুতরাং কোনো ভাষাই কারো ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না।"
চুয়ান্ন বছর আগে হিন্দি-বিরোধী দাঙ্গায় তামিলনাডুতে প্রায় ৭০ জন নিহত ওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু কথা দিয়েছিলেন, হিন্দিভাষী নয় দেশের এমন কোনো রাজ্যেই জোর করে হিন্দি চাপানো হবে না।
কিন্তু এখন বিজেপি জমানায় কেন্দ্র সেই প্রতিশ্রুতি আদৌ রাখবে কি না, দক্ষিণের রাজ্যগুলো কিন্তু সেই সংশয়ে ভুগতে শুরু করেছে।
সূত্র : বিবিসি
বিশেষ করে তামিলনাডুতে প্রায় সব রাজনৈতিক দল বলছে তারা সর্বশক্তিতে এই প্রস্তাব রুখবে।
পাশাপাশি সেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতেও দারুণভাবে ট্রেন্ড করছে 'হ্যাশট্যাগ স্টপহিন্দিইম্পোজিশন', অর্থাৎ 'হিন্দি চাপিয়ে দেয়া ঠেকাও'।
এই বাধার মুখে কেন্দ্রীয় সরকারও এখন সাফাই দিচ্ছে যে মানুষের মতামত না-নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বস্তুত হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে ভারতে বিভক্তির ইতিহাস অনেক পুরনো, এখন সেই বিতর্কই আবার নতুন আকারে মাথাচাড়া দিচ্ছে।
ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার ঠিক পর দিনই সরকারের কাছে জমা পড়ে নতুন একটি শিক্ষানীতির খসড়া, যা প্রস্তুত করেছে দেশের নামী মহাকাশবিজ্ঞানী কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
ওই 'খসড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১৯'-এ বলা হয়, বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে ভারতের স্কুলগুলোতে যে 'তিন ভাষা ফর্মুলা' চালু আছে সেটা শুধু বহাল রাখাই যথেষ্ট নয় - তা এখন বাচ্চাদের জন্য আরো অনেক কম বয়সে চালু করা দরকার।
এখন যেহেতু এই তিনটি ভাষার একটা অবশ্যই হিন্দি হতে হবে, এবং ভারতে যে বাচ্চাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয় তাদেরও খুব কম বয়স থেকে হিন্দি শেখাটা বাধ্যতামূলক হবে - তাই দক্ষিণ ভারতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়।
হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস আছে তামিলনাড়ুর দল ডিএমকে-র।
তাদের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী ও এমপি কানিমোজি বিবিসিকে বলছিলেন, "এভাবে ঘুরপথে হিন্দি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা আমরা কিছুতেই মানব না।"
"হিন্দি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনে আমাদের দল আদালতে যেতেও প্রস্তুত", জানাচ্ছেন তিনি।
কানিমোজির বাবা ও প্রবাদপ্রতিম তামিল রাজনীতিবিদ এম করুণানিধি নিজেই ছিলেন তামিলনাডুতে হিন্দি-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
ডিএমকে-র সেই অবস্থান আজও যেমন অপরিবর্তিত, তেমনি কমল হাসান, ভাইকো, রামোদাসের মতো তামিলনাডুর অন্য রাজনীতিবিদরাও নতুন করে হিন্দির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
এমন কী, তামিলনাডুতে ক্ষমতাসীন দল এআইডিএমকে বিজেপির শরিক, কিন্তু তাদের শিক্ষামন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্র যা-ই বলুক, তারা রাজ্যে দুই ভাষা ফর্মুলাই জারি রাখবেন - অর্থাৎ বাচ্চাদের শুধু তামিল ও ইংরেজিই শেখাবেন।
কিন্তু কেন দাক্ষিণাত্যে হিন্দির বিরোধিতা এত তীব্র?
কেরালার রাজনীতিবিদ ও তিরুবনন্তপুরম থেকে টানা তিনবার জিতে আসা কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের ব্যাখ্যা হলো, "ভারতের মতো বহুভাষী একটা দেশে একটাই জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা চালু করার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি বিপদও কিন্তু আছে।"
"উত্তর ভারতে যে শুক্লা, সিং, শর্মারা জন্ম থেকে হিন্দি শিখে বড় হয়েছেন তারা যখন দেখেন তাদের পছন্দের ভাষাই প্রশাসনিক কাজে, অফিস-আদালতে জাতীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে তখন তারা ভীষণ খুশি হতে পারেন।"
"কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেই মুহুর্তেই কিন্তু দক্ষিণ ভারতের সুব্রহ্মণ্যম, রেড্ডি বা মেনন - যারা কখনও হিন্দি শেখেননি - তাদের আপনি দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে দিচ্ছেন।"
"ফলে ঐক্যের বদলে যখনই আপনি ইউনিফর্মিটি বা একই ধরনের জিনিসে বেশি গুরুত্ব দেবেন, ভারতকেও কিন্তু তখনই ধ্বংস করে ফেলবেন!", বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি থারুর।
বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা বিজেপিকে বহুদিন পর্যন্ত শুধু হিন্দি বলয়ের দল হিসেবেই দেখা হয়ে এসেছে, একটা সময় তাদের স্লোগানও ছিল 'হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান'।
তাদের নতুন মেয়াদের শুরুতেই মাথাচাড়া দেওয়া এই হিন্দি-বিতর্ককে মোদি সরকার অবশ্য দ্রুতই চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানাচ্ছেন, "সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি - জনমত যাচাইয়ের পরই নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।"
"কাজেই এটা নিয়ে কোনো ভুলবোঝাবুঝি কাম্য নয়।"
"আর মোদি সরকার সব ভারতীয় ভাষারই প্রসারের পক্ষপাতী, সুতরাং কোনো ভাষাই কারো ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না।"
চুয়ান্ন বছর আগে হিন্দি-বিরোধী দাঙ্গায় তামিলনাডুতে প্রায় ৭০ জন নিহত ওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু কথা দিয়েছিলেন, হিন্দিভাষী নয় দেশের এমন কোনো রাজ্যেই জোর করে হিন্দি চাপানো হবে না।
কিন্তু এখন বিজেপি জমানায় কেন্দ্র সেই প্রতিশ্রুতি আদৌ রাখবে কি না, দক্ষিণের রাজ্যগুলো কিন্তু সেই সংশয়ে ভুগতে শুরু করেছে।
সূত্র : বিবিসি
No comments