নাটক শেষে পাকিস্তানের হার
বিশ্বকাপের
১১ ভেন্যুর মধ্যে টন্টনের স্কোরিং গড় সবেচেয়ে বেশি (৬.৭৪)। সেই তুলনায়
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা গণ্ডির মধ্যেই রাখতে পেরেছিল পাকিস্তানি
বোলাররা। তবে পরে পাকিস্তান দেখায় ঠুনকো ব্যাটিং। শেষ দিকে দুই টেইল
এন্ডারের ব্যাটে ম্যাচে নাটকীয়তা ফিরলেও শেষ রক্ষা হয়নি পাকিস্তানের। এদিন
টন্টনে পাকিস্তানকে ৩০৮ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। ৩০০ রান তাড়া করতে
ব্যাট হাতে যেমন মুন্সিয়ানা দেখানোর দরকার তাতে পাকিস্তানিরা ব্যর্থ। এতে
শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানেই হার দেখে তারা।
বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪১ রানে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের অর্ধেকটা শেষে জয়ের সম্ভাবনা উজ্বলই দেখাচ্ছিল পাকিস্তানের।
কিন্তু মিডলঅর্ডারে ধস নিয়ে সম্ভাবনা লোপ পায় তাদের। ২৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৩৬/২। কিন্তু পরের মাত্র ২৪ রানের ব্যবধানে চার উইকেট খোয়ায় তারা (ইমাম উল হক, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, আসিফ আলী)। আর ২৬ বল বাকি রেখেই ২৬৬ রানে গুঁড়িয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। লেজের দিকে ব্যাট হাতে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন হাসান আলী ও ওয়াহাব রিয়াজ। এ দুজনের ব্যাটে পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৭৭ রান।
বিশ্বকাপে ১০ সাক্ষাতে চার জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের এটি ষষ্ঠ হার। আসরে চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়া। তিন ম্যাচে সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান গড়ে শীর্ষে গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের হারে তালিকায় একধাপ উন্নতি দেখছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচে দু’দলেরই সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট। তবে নেট রান গড়ে এগিয়ে তালিকার ৭ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশের। তিন ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টন্টনের কাউন্টি গ্রাউন্ড ভেন্যুতে বড় টার্গেটে ইনিংসের শুরুটা খারাপ ছিল না পাকিস্তানের। শুরুর ১০ ওভারে ৫০/১ এবং ২৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৩৬/২। কিন্তু ৩০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬০/৬-এ।
এদিন দলকে একবারে শুরুতেই চাপে ফেলেন ফখর জামান। দলীয় মাত্র ২ রানে উইকেট খোয়ান এ পাকিস্তানি ওপেনার। প্যাট কামিন্সের বলে কেন রিচার্ডসনের হাতে ক্যাচ দেন ৩৮ ওয়ানডেতে ৪ সেঞ্চুরি ও ১০ হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো ফখর জামান। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন ইমাম উল হক ও বাবর আজম। মাত্র ২৭ বল মোকাবিলায় ৭ চারের সাহায্যে ৩০ রান নিয়ে ফর্ম দোখাচ্ছিলেন বাবর। তবে অজি পেসার কুল্টার নাইলের ডেলিভারিতে অহেতুক বড় শট হাঁকাতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডাকেন ক্যারিয়ারে ৬৬ ম্যাচে ৫১.৩৪ ব্যাটিং গড়ের বাবর আজম। তৃতীয় উইকেটে ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ হাফিজের জুটিতে আসে ৮০ রান। তবে মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে দুজনের বিদায়ে ২৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৬/৪-এ। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক ব্যাট হাতে ‘ডাক’ মেরে শঙ্কায় ডোবান পাকিস্তানকে। আর অল্প ব্যবধানে আসিফ আলীর বিদায়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় ১৯৯২’র বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা।
শেষের দিকে মূলত দুই বোলারের ব্যাটে আশা জাগে পাকিস্তানের। আট নম্বরে ব্যাট হাতে ১৫ বলে ৩২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন হাসান আলী। হাসান আলী হাঁকান তিনটি করে চার-ছক্কা। আর ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান ওয়াহাব রিয়াজ করেন ৩৯ বলে ৪৫ রান। অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক সরফরাজের সঙ্গে ৬৩ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন ওয়াহাব রিয়াজ। তবে ৪৫তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন মিচেল স্টার্ক। ৪৫.৪তম ওভারে রানআউটের হতাশা নিয়ে ক্রিজ ছাড়েন সরফরাজ । কামিন্স তিন ও অপর দুই পেসার স্টার্ক ও রিচার্ডসন নেন দুটি করে উইকেট। আসরে আমিরের পেছনে সমান ৯ উইকেট শিকার স্টার্ক ও কামিন্সের।
ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি, আমিরের পাঁচ উইকেট
এবারের বিশ্বকাপটা দুজনের জন্যই চ্যালেঞ্জের। তবে ব্যাটে-বলে জবাব দিলেন মোহাম্মদ আমির ও ডেভিড ওয়ার্নার। গতকাল ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকান ডেভিড ওয়ার্নার। আর বল হাতে পাঁচ উইকেট নেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। জুটির রেকর্ডে গতকাল সাকিব-মুশফিকের কীর্তি ছাড়িয়ে যান অ্যারন ফিঞ্চ-ডেভিড ওয়ার্নার। এতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০০ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা বড় হতে পারতো আরো। বল হাতে দুরন্ত নৈপুণ্যে অজিদের লাগাম টানেন মোহাম্মদ আমির। এতে ৬ বল বাকি রেখেই ৩০৭ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিয়ার সেরা নৈপুণ্যে ১০ ওভারের স্পেলে ৩০ রানে পাঁচ উইকেট নেন আমির।
৫৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আমিরের এটি প্রথম পাঁচ উইকেট। ওয়ানডেতে আমির ইনিংসে ৪ উইকেটের দেখা পান একবারই। তাও ১০ বছরের পুরনো ঘটনা। ২০০৯-এ ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডেতে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ ওভারের স্পলে ২৮ রানে চার উইকেট নিয়েছিলেন আমির। গতকাল টন্টনে টসে জিতে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। আর ওপেনিংয়ে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন ফিঞ্চ-ওয়ার্নার। চলতি বিশ্বকাপের যে কোনো উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। এতে তারা ছাড়িয়ে যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের গড়া ১৪২ রানের কীর্তিকে। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব-মুশফিক। গতকাল নিজের উইকেট দেয়ার আগে ১১১ বলে ১০৭ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার। আর অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের ব্যাট থেকে আসে ৮২ রান।
তবে তাদের বড় ইনিংস খেলার পেছনে ছিল পাকিস্তানি ফিল্ডারদের ভূমিকাও। ইনিংসে ‘জীবন’ পান দুজনেই। তাদের ক্যাচ ফেলে দেন বিশ্বকাপের আগে সন্তান হারানো আসিফ আলী। ২২তম ওভার পর্যন্ত ওভার প্রতি গড়ে সাড়ে ছয়ের ওপরে রান তোলেন তারা। ব্যক্তিগত ৩০ রানে ‘জীবন’ পান ফিঞ্চ। ক্যাচ ফেলেন আসিফ আলী। ব্যক্তিগত ৪৪ রানে দ্বিতীয় জীবন পান পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের হাতে। ২৩তম ওভারের প্রথম বলে ফিঞ্চকে তুলে নিয়ে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ আমির ।
ওয়ার্নার অন্য প্রান্তে প্রায়শ্চিত্ত করেছেন আগের ইনিংসের। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মন্থর ফিফটির জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এমনকি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্নারের ইনিংসটির দিকে আঙুল তোলেন খোদ অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ। গতকাল ৫১ বলে ফিফটির পর ১০২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ওয়ানডেতে এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি। গত বছর মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বল টেম্পারিংয়ের দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটান ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ। ওই ঘটনায় বিশ্বকাপেও দর্শকদের দুয়ো ধ্বনি শুনছেন স্মিথ-ওয়ার্নার। গতকাল আসিফ আলীর হাতে জীবন পান ওয়ার্নারও। অবশ্য ততক্ষণে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন অজি ওপেনার। ব্যক্তিগত ১০৪ রানে থার্ডম্যানে ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন আসিফ। পাকিস্তান দলের গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটাও ছিল ভুলে ভরা। ১ রানকে ২ রান বানাতে তেমন কষ্ট হয়নি অজি ব্যাটসম্যানদের । ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান ওয়ার্নার। আর ৮৪ বলের ইনিংসে ফিঞ্চ হাঁকান ৬ বাউন্ডারি ও চারটি ছক্কা। এ দুই ওপেনারের ব্যাটিংয়ে এক সময় হয়তো ৪০০-র স্বপ্ন দেখছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর বল হাতে জ্বলে ওঠেন আমির। আর ধীরে ধীরে গতি কমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের।
৩০তম ওভার পর্যন্তও গড়ে সাড়ে ছয়ের কাছাকাছি রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার। পরে মোহাম্মদ হাফিজকে উইকেট দেন স্টিভ স্মিথ (১০)। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (১০ বলে ২০) স্টাম্প উপড়ে নেন তরুণ পেসার শাহিন আফ্রিদি। এরপরই কমে আসে রানের গতি। ৩৮তম ওভারে শাহীন আফ্রিদি ওয়ার্নারকে সাজঘরে ফেরানোর পর বাকি কাজ সারেন আমির। ৪২তম ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ২৭৭/৪। তবে শেষ ৩০ রানে ছয় উইকেট খোয়ায় অস্ট্রেলিয়া। একে একে উসমান খাজা, শন মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি ও মিচেল স্টার্ককে সাজঘরে ফিরিয়ে আমির পূর্ণ করেন নিজের পাঁচ উইকেট শিকার।
২০১০’র ইংল্যান্ড সফরে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা পোহান মোহাম্মদ আমির। আর এবারের বিশ্বকাপের আগে চিকেন পক্সে আক্রান্ত আমিরের খেলাটা হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। চলতি আসরে তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক শিকার আমিরেরই। আসরে ৪ ম্যাচে ২৫৫ রান নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন ওয়ার্নার। ব্যাট হাতে তিন ম্যাচে ২৬০ রান নিয়ে তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪১ রানে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের অর্ধেকটা শেষে জয়ের সম্ভাবনা উজ্বলই দেখাচ্ছিল পাকিস্তানের।
কিন্তু মিডলঅর্ডারে ধস নিয়ে সম্ভাবনা লোপ পায় তাদের। ২৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৩৬/২। কিন্তু পরের মাত্র ২৪ রানের ব্যবধানে চার উইকেট খোয়ায় তারা (ইমাম উল হক, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, আসিফ আলী)। আর ২৬ বল বাকি রেখেই ২৬৬ রানে গুঁড়িয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। লেজের দিকে ব্যাট হাতে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন হাসান আলী ও ওয়াহাব রিয়াজ। এ দুজনের ব্যাটে পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৭৭ রান।
বিশ্বকাপে ১০ সাক্ষাতে চার জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের এটি ষষ্ঠ হার। আসরে চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়া। তিন ম্যাচে সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান গড়ে শীর্ষে গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের হারে তালিকায় একধাপ উন্নতি দেখছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচে দু’দলেরই সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট। তবে নেট রান গড়ে এগিয়ে তালিকার ৭ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশের। তিন ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টন্টনের কাউন্টি গ্রাউন্ড ভেন্যুতে বড় টার্গেটে ইনিংসের শুরুটা খারাপ ছিল না পাকিস্তানের। শুরুর ১০ ওভারে ৫০/১ এবং ২৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৩৬/২। কিন্তু ৩০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬০/৬-এ।
এদিন দলকে একবারে শুরুতেই চাপে ফেলেন ফখর জামান। দলীয় মাত্র ২ রানে উইকেট খোয়ান এ পাকিস্তানি ওপেনার। প্যাট কামিন্সের বলে কেন রিচার্ডসনের হাতে ক্যাচ দেন ৩৮ ওয়ানডেতে ৪ সেঞ্চুরি ও ১০ হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো ফখর জামান। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন ইমাম উল হক ও বাবর আজম। মাত্র ২৭ বল মোকাবিলায় ৭ চারের সাহায্যে ৩০ রান নিয়ে ফর্ম দোখাচ্ছিলেন বাবর। তবে অজি পেসার কুল্টার নাইলের ডেলিভারিতে অহেতুক বড় শট হাঁকাতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডাকেন ক্যারিয়ারে ৬৬ ম্যাচে ৫১.৩৪ ব্যাটিং গড়ের বাবর আজম। তৃতীয় উইকেটে ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ হাফিজের জুটিতে আসে ৮০ রান। তবে মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে দুজনের বিদায়ে ২৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৬/৪-এ। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক ব্যাট হাতে ‘ডাক’ মেরে শঙ্কায় ডোবান পাকিস্তানকে। আর অল্প ব্যবধানে আসিফ আলীর বিদায়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় ১৯৯২’র বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা।
শেষের দিকে মূলত দুই বোলারের ব্যাটে আশা জাগে পাকিস্তানের। আট নম্বরে ব্যাট হাতে ১৫ বলে ৩২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন হাসান আলী। হাসান আলী হাঁকান তিনটি করে চার-ছক্কা। আর ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান ওয়াহাব রিয়াজ করেন ৩৯ বলে ৪৫ রান। অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক সরফরাজের সঙ্গে ৬৩ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন ওয়াহাব রিয়াজ। তবে ৪৫তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন মিচেল স্টার্ক। ৪৫.৪তম ওভারে রানআউটের হতাশা নিয়ে ক্রিজ ছাড়েন সরফরাজ । কামিন্স তিন ও অপর দুই পেসার স্টার্ক ও রিচার্ডসন নেন দুটি করে উইকেট। আসরে আমিরের পেছনে সমান ৯ উইকেট শিকার স্টার্ক ও কামিন্সের।
ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি, আমিরের পাঁচ উইকেট
এবারের বিশ্বকাপটা দুজনের জন্যই চ্যালেঞ্জের। তবে ব্যাটে-বলে জবাব দিলেন মোহাম্মদ আমির ও ডেভিড ওয়ার্নার। গতকাল ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকান ডেভিড ওয়ার্নার। আর বল হাতে পাঁচ উইকেট নেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। জুটির রেকর্ডে গতকাল সাকিব-মুশফিকের কীর্তি ছাড়িয়ে যান অ্যারন ফিঞ্চ-ডেভিড ওয়ার্নার। এতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০০ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা বড় হতে পারতো আরো। বল হাতে দুরন্ত নৈপুণ্যে অজিদের লাগাম টানেন মোহাম্মদ আমির। এতে ৬ বল বাকি রেখেই ৩০৭ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিয়ার সেরা নৈপুণ্যে ১০ ওভারের স্পেলে ৩০ রানে পাঁচ উইকেট নেন আমির।
৫৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আমিরের এটি প্রথম পাঁচ উইকেট। ওয়ানডেতে আমির ইনিংসে ৪ উইকেটের দেখা পান একবারই। তাও ১০ বছরের পুরনো ঘটনা। ২০০৯-এ ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডেতে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ ওভারের স্পলে ২৮ রানে চার উইকেট নিয়েছিলেন আমির। গতকাল টন্টনে টসে জিতে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। আর ওপেনিংয়ে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন ফিঞ্চ-ওয়ার্নার। চলতি বিশ্বকাপের যে কোনো উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। এতে তারা ছাড়িয়ে যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের গড়া ১৪২ রানের কীর্তিকে। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব-মুশফিক। গতকাল নিজের উইকেট দেয়ার আগে ১১১ বলে ১০৭ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার। আর অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের ব্যাট থেকে আসে ৮২ রান।
তবে তাদের বড় ইনিংস খেলার পেছনে ছিল পাকিস্তানি ফিল্ডারদের ভূমিকাও। ইনিংসে ‘জীবন’ পান দুজনেই। তাদের ক্যাচ ফেলে দেন বিশ্বকাপের আগে সন্তান হারানো আসিফ আলী। ২২তম ওভার পর্যন্ত ওভার প্রতি গড়ে সাড়ে ছয়ের ওপরে রান তোলেন তারা। ব্যক্তিগত ৩০ রানে ‘জীবন’ পান ফিঞ্চ। ক্যাচ ফেলেন আসিফ আলী। ব্যক্তিগত ৪৪ রানে দ্বিতীয় জীবন পান পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের হাতে। ২৩তম ওভারের প্রথম বলে ফিঞ্চকে তুলে নিয়ে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ আমির ।
ওয়ার্নার অন্য প্রান্তে প্রায়শ্চিত্ত করেছেন আগের ইনিংসের। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মন্থর ফিফটির জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এমনকি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্নারের ইনিংসটির দিকে আঙুল তোলেন খোদ অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ। গতকাল ৫১ বলে ফিফটির পর ১০২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ওয়ানডেতে এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি। গত বছর মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বল টেম্পারিংয়ের দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটান ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ। ওই ঘটনায় বিশ্বকাপেও দর্শকদের দুয়ো ধ্বনি শুনছেন স্মিথ-ওয়ার্নার। গতকাল আসিফ আলীর হাতে জীবন পান ওয়ার্নারও। অবশ্য ততক্ষণে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন অজি ওপেনার। ব্যক্তিগত ১০৪ রানে থার্ডম্যানে ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন আসিফ। পাকিস্তান দলের গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটাও ছিল ভুলে ভরা। ১ রানকে ২ রান বানাতে তেমন কষ্ট হয়নি অজি ব্যাটসম্যানদের । ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান ওয়ার্নার। আর ৮৪ বলের ইনিংসে ফিঞ্চ হাঁকান ৬ বাউন্ডারি ও চারটি ছক্কা। এ দুই ওপেনারের ব্যাটিংয়ে এক সময় হয়তো ৪০০-র স্বপ্ন দেখছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর বল হাতে জ্বলে ওঠেন আমির। আর ধীরে ধীরে গতি কমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের।
৩০তম ওভার পর্যন্তও গড়ে সাড়ে ছয়ের কাছাকাছি রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার। পরে মোহাম্মদ হাফিজকে উইকেট দেন স্টিভ স্মিথ (১০)। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (১০ বলে ২০) স্টাম্প উপড়ে নেন তরুণ পেসার শাহিন আফ্রিদি। এরপরই কমে আসে রানের গতি। ৩৮তম ওভারে শাহীন আফ্রিদি ওয়ার্নারকে সাজঘরে ফেরানোর পর বাকি কাজ সারেন আমির। ৪২তম ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ২৭৭/৪। তবে শেষ ৩০ রানে ছয় উইকেট খোয়ায় অস্ট্রেলিয়া। একে একে উসমান খাজা, শন মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি ও মিচেল স্টার্ককে সাজঘরে ফিরিয়ে আমির পূর্ণ করেন নিজের পাঁচ উইকেট শিকার।
২০১০’র ইংল্যান্ড সফরে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা পোহান মোহাম্মদ আমির। আর এবারের বিশ্বকাপের আগে চিকেন পক্সে আক্রান্ত আমিরের খেলাটা হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। চলতি আসরে তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক শিকার আমিরেরই। আসরে ৪ ম্যাচে ২৫৫ রান নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন ওয়ার্নার। ব্যাট হাতে তিন ম্যাচে ২৬০ রান নিয়ে তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
No comments