মৈত্রী হলে ‘ওরা ১১ জন’-এর ভিপি সুস্মিতা by মরিয়ম চম্পা
যশোরের
কেশবপুরের মেয়ে সুস্মিতা দে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল সংসদ নির্বাচনে
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনের দিন হলে বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট পাওয়ার অভিযোগ উঠে। এসব
ব্যালটে ছাত্রলীগের হল সংসদের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেয়া ছিল। এরপর এই
হলের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। পুনরায় ভোটগ্রহণের মধ্যে দিয়ে তিনটি স্বতন্ত্র
প্যানেলের মধ্যে তিনি ভিপি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় মানবজমিনকে এসব
কথা জানান তিনি।
সুষ্মিতা দে বলেন, শুরুর দিকে নির্বাচন করবো- এমনটা আসলে ভাবিনি।
মূলত ছাত্রলীগ মনোনীত যে প্যানেলটি দেয়া হয়েছে সেখানে সবাই জুনিয়র প্রার্থী ছিল। ওখান থেকেই আমার মনে হয়েছে নির্বাচনে দাঁড়াই। যদিও আমি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, অভিনয়, সরস্বতী পূজার আয়োজক, হলের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন, ভলিবলসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছি। সবকিছু মিলিয়ে হলে সবার সঙ্গে একটা পরিচিতি আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে ১৩ জনের একটি প্যানেল তৈরি করি। পরে অবশ্য দু’জনকে বাদ দিয়ে আমরা ১১ জনের প্যানেল ছিলাম। নির্বাচনী প্যানেলে আমরা ১১ জনের মধ্যে ৮ জন নির্বাচিত হয়েছি এককভাবে। বাকি ৩ জন আরেকটি স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাতে স্বতন্ত্র তিন প্যানেলের মনে হচ্ছিল যে নির্বাচন নিয়ে আমরা খুব একটা সুখকর আভাস পাচ্ছিলাম না। সব সময় মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবে। কিছু একটা হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন নাও হতে পারে। মনে হচ্ছিল কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। এ সময় আমরা নিচে নেমে আসি। রাত সাড়ে ১০টার পরে সাধারণত ম্যামদের রুমের লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ওইদিন রাতে হাউস টিউটর ও অফিসের লাইট বন্ধ থাকলেও প্রভোস্টের রুমের লাইট জ্বালিয়ে রেখে বাহির থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এটা দেখে আমাদের প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়- কেন লাইট বন্ধ করা হয়নি। ভেতরে কি আছে। দায়িত্বে থাকা হলের দাদুকে আমরা প্রভোস্ট ম্যামের রুম চেক করে দেখার বিষয়টি জানাই। এ বিষয়ে প্রভোস্ট ম্যামের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি হলে এসে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। রিডিং রুম এবং ভোটকেন্দ্র অর্থাৎ অডিটরিয়ামের সঙ্গে মাঝে একটি সংযোগ দরজা আছে। আমাদের দাবি ছিল নির্বাচনের দিন মাঝের ওই দরজাটি বন্ধ রাখতে হবে। একইসঙ্গে রিডিংরুমে আমাদের যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। দুটি বিষয়েই ম্যাম অস্বীকৃতি জানায়। রিডিংরুমের একদম পেছনে একটি ক্যাচি গেট আছে। যেটা সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমরা গেটটি খোলা দেখতে পাই।
ফলে পরবর্তীতে ম্যামের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আমরা রিডিং রুম ও অডিটোরিয়ামের মাঝে যে দরজা সেখানে তালা লাগিয়ে দেই। প্রভোস্টের রুমে তখনো আলো জ্বলছিল। এরপর রাত সাড়ে ১২টায় তাকে ফোন দিলে ম্যাম এসে ১০ থেকে ১৫ মিনিট একা একা কিছু একটা করছিলেন। অতঃপর আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিলেও ট্রাংক খুলে দেখা নিয়ে টালবাহানা করা হয়। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সারারাত জেগে পালাক্রমে রুম দুটি পাহারা দেয়া। কিন্তু রাতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় আমরা চলে আসি।
পরদিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিট থেকে মেয়েদের ভোটের লাইন শুরু হয়। তখন আমরা ভোটকেন্দ্রে ছিলাম। এ সময় ম্যামকে ব্যালটবাক্স খালি আছে কি না দেখতে চাইলে অনেক নাটকীয়তার পর প্রোক্টর স্যারকে ডাকা হয়। স্যার এলে অডিটোরিয়ামের মূল দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আমরা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকলে একটা পর্যায়ে একটি কপাট খুলে যায়। তখন আমরা দেখতে পাই রাতের তালাবদ্ধ দরজাটির তালা কোনো কারণে কেটে ফেলা হয়েছে। এবং ওই দরজা দিয়ে কেউ একজন একটি বস্তা টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এটা দেখার পরে আমরা ধাক্কাধাক্কি করে পুরো অডিটোরিয়ামের ভেতরে চলে যাই। তখন রিডিং রুমের ভেতর থেকে সিটকিনি লাগিয়ে দেয়া হয়। এরপর দরজা ধাক্কাধাক্কি করে আমি এবং বর্তমান জিএস মিশমা দু’জনে দৌড়ে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে আসি। বেরিয়ে এসে রিডিং রুমের মূল দরজা দিয়ে দাদুদের পাহারা ভেদ করে অনেকটা জোর করে নিচু হয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে যাই। ওখানে তখন প্রভোস্ট ম্যাম ও আরেকজন ছিলেন। তাদের কিছু না বলেই আমরা ভেতরে প্রবেশ করি। ওখানে একটি কিচেন, নামাজরুম ও ওয়াশরুম ছিল। আমরা প্রথমে কিচেন ও ওয়াশরুম দেখার পরে চলে যাই নামাজরুমে। নামাজরুমেই মূলত ব্যালটের বস্তাটি ছিল। নামাজরুমে যে বস্তাটি রাখা হয়েছে প্রথমে সেটার ওপর নির্দিষ্ট কোনো একটি ধর্মগ্রন্থ রাখা হয়। এরপর কিছু পুরাতন বই। বইয়ের ওপরে ব্যালটগুলো উল্টো করে রাখা হয়। যাতে দেখে মনে হয় যে সাদা পৃষ্ঠা।
এ সময় জিএস মিশমা প্রথমে ব্যালটগুলো ধরে টান দিয়ে বলে, আপু ব্যালট। সঙ্গে সঙ্গে আমি দৌড়ে গিয়ে বের করে দেখি আসলেই অনেক ব্যালট। পুরাতন বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে রাখা হয়েছে কিছু ব্যালট। সবগুলোই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সিল দেয়া। এ সময় দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। এরপরই মূলত আমাদের আন্দোলনটা শুরু হয়।
অতঃপর প্রভোস্ট ম্যামের পদত্যাগ এবং ওই দিনেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমরা দাবি জানাই। আমাদের প্রবল আন্দোলনের মুখে প্রশাসন প্রভোস্ট ম্যামকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য হন। এ সময় ছাত্রলীগের পুরো প্যানেলকে প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র প্যানেলের নির্বাচন হয়। ছাত্রলীগের হল শাখার বর্তমান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও কেন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের ছাত্রলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের যোগ্য প্রার্থী মনে হয়নি। মুখ পরিচিতি, জনপ্রিয়তা সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি হয়তো নির্বাচন করার অধিকার রাখি। রাজনৈতিক একটি দলের প্রতি আমার পছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু দিন শেষে আমি একটি স্বতন্ত্র মানুষ। এবং সবার সঙ্গে আলাদা সম্পর্ক। তাই একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনে আসা।
নির্বাচনের খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচনের কোনো খরচ জোগাতে আমরা ঠিক ওভাবে কারো কাছ থেকে এক টাকাও সাহায্য নেইনি। আমরা যে ১১ জন প্রার্থী ছিলাম সবাই মিলে চাঁদা তুলে নির্বাচন করি। আমাদের লিফলেট অতবেশি অ্যাভেলঅ্যাবল ছিল না। যখন আমাদের ব্যালট নাম্বার আসেনি তখন প্রচারণায় রুমপ্রতি ১টি করে লিফলেট দিয়েছি। যেখানে পুরো প্যানেলের ১১ জনের ছবি ছিল। আমাদের কোনো আলাদা ছবি সংবলিত লিফলেট প্রচারণা ছিল না। যখন ব্যালট নং আসে তখন নতুন করে আরো কিছু লিফলেট ছাপাই। ওরকম ব্যানারও ছিল না। আমরা শুধুমাত্র দুটি ব্যানার করেছিলাম। যেগুলো নিজেদের কষ্টার্জিত চাঁদা থেকে খরচ করেছি। এমনও হয়েছে যে প্যানেলের প্রার্থীরা বিকালের নাস্তার টাকা, রিকশা ভাড়ার টাকা, টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার তহবিল সরবরাহ করেছে। আমাদের প্যানেলটিকে আমরা ‘ওরা ১১ জন’ বলে ডাকতাম। আমার নির্বাচনী ব্যালট নং ছিল-৪। এবং প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৩০৫টি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৯০ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে সুষ্মিতা ছোট। গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। গ্রামের স্কুল-কলেজ থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। বাবা মনীন্দ্র নাথ দে একজন পশুচিকিৎসক। মা গীতা রাণী দত্ত গৃহিণী।
সুষ্মিতা দে বলেন, শুরুর দিকে নির্বাচন করবো- এমনটা আসলে ভাবিনি।
মূলত ছাত্রলীগ মনোনীত যে প্যানেলটি দেয়া হয়েছে সেখানে সবাই জুনিয়র প্রার্থী ছিল। ওখান থেকেই আমার মনে হয়েছে নির্বাচনে দাঁড়াই। যদিও আমি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, অভিনয়, সরস্বতী পূজার আয়োজক, হলের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন, ভলিবলসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছি। সবকিছু মিলিয়ে হলে সবার সঙ্গে একটা পরিচিতি আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে ১৩ জনের একটি প্যানেল তৈরি করি। পরে অবশ্য দু’জনকে বাদ দিয়ে আমরা ১১ জনের প্যানেল ছিলাম। নির্বাচনী প্যানেলে আমরা ১১ জনের মধ্যে ৮ জন নির্বাচিত হয়েছি এককভাবে। বাকি ৩ জন আরেকটি স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের দিন রাতে স্বতন্ত্র তিন প্যানেলের মনে হচ্ছিল যে নির্বাচন নিয়ে আমরা খুব একটা সুখকর আভাস পাচ্ছিলাম না। সব সময় মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবে। কিছু একটা হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন নাও হতে পারে। মনে হচ্ছিল কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। এ সময় আমরা নিচে নেমে আসি। রাত সাড়ে ১০টার পরে সাধারণত ম্যামদের রুমের লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ওইদিন রাতে হাউস টিউটর ও অফিসের লাইট বন্ধ থাকলেও প্রভোস্টের রুমের লাইট জ্বালিয়ে রেখে বাহির থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এটা দেখে আমাদের প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়- কেন লাইট বন্ধ করা হয়নি। ভেতরে কি আছে। দায়িত্বে থাকা হলের দাদুকে আমরা প্রভোস্ট ম্যামের রুম চেক করে দেখার বিষয়টি জানাই। এ বিষয়ে প্রভোস্ট ম্যামের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি হলে এসে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। রিডিং রুম এবং ভোটকেন্দ্র অর্থাৎ অডিটরিয়ামের সঙ্গে মাঝে একটি সংযোগ দরজা আছে। আমাদের দাবি ছিল নির্বাচনের দিন মাঝের ওই দরজাটি বন্ধ রাখতে হবে। একইসঙ্গে রিডিংরুমে আমাদের যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। দুটি বিষয়েই ম্যাম অস্বীকৃতি জানায়। রিডিংরুমের একদম পেছনে একটি ক্যাচি গেট আছে। যেটা সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমরা গেটটি খোলা দেখতে পাই।
ফলে পরবর্তীতে ম্যামের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আমরা রিডিং রুম ও অডিটোরিয়ামের মাঝে যে দরজা সেখানে তালা লাগিয়ে দেই। প্রভোস্টের রুমে তখনো আলো জ্বলছিল। এরপর রাত সাড়ে ১২টায় তাকে ফোন দিলে ম্যাম এসে ১০ থেকে ১৫ মিনিট একা একা কিছু একটা করছিলেন। অতঃপর আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিলেও ট্রাংক খুলে দেখা নিয়ে টালবাহানা করা হয়। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সারারাত জেগে পালাক্রমে রুম দুটি পাহারা দেয়া। কিন্তু রাতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় আমরা চলে আসি।
পরদিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিট থেকে মেয়েদের ভোটের লাইন শুরু হয়। তখন আমরা ভোটকেন্দ্রে ছিলাম। এ সময় ম্যামকে ব্যালটবাক্স খালি আছে কি না দেখতে চাইলে অনেক নাটকীয়তার পর প্রোক্টর স্যারকে ডাকা হয়। স্যার এলে অডিটোরিয়ামের মূল দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আমরা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকলে একটা পর্যায়ে একটি কপাট খুলে যায়। তখন আমরা দেখতে পাই রাতের তালাবদ্ধ দরজাটির তালা কোনো কারণে কেটে ফেলা হয়েছে। এবং ওই দরজা দিয়ে কেউ একজন একটি বস্তা টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এটা দেখার পরে আমরা ধাক্কাধাক্কি করে পুরো অডিটোরিয়ামের ভেতরে চলে যাই। তখন রিডিং রুমের ভেতর থেকে সিটকিনি লাগিয়ে দেয়া হয়। এরপর দরজা ধাক্কাধাক্কি করে আমি এবং বর্তমান জিএস মিশমা দু’জনে দৌড়ে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে আসি। বেরিয়ে এসে রিডিং রুমের মূল দরজা দিয়ে দাদুদের পাহারা ভেদ করে অনেকটা জোর করে নিচু হয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে যাই। ওখানে তখন প্রভোস্ট ম্যাম ও আরেকজন ছিলেন। তাদের কিছু না বলেই আমরা ভেতরে প্রবেশ করি। ওখানে একটি কিচেন, নামাজরুম ও ওয়াশরুম ছিল। আমরা প্রথমে কিচেন ও ওয়াশরুম দেখার পরে চলে যাই নামাজরুমে। নামাজরুমেই মূলত ব্যালটের বস্তাটি ছিল। নামাজরুমে যে বস্তাটি রাখা হয়েছে প্রথমে সেটার ওপর নির্দিষ্ট কোনো একটি ধর্মগ্রন্থ রাখা হয়। এরপর কিছু পুরাতন বই। বইয়ের ওপরে ব্যালটগুলো উল্টো করে রাখা হয়। যাতে দেখে মনে হয় যে সাদা পৃষ্ঠা।
এ সময় জিএস মিশমা প্রথমে ব্যালটগুলো ধরে টান দিয়ে বলে, আপু ব্যালট। সঙ্গে সঙ্গে আমি দৌড়ে গিয়ে বের করে দেখি আসলেই অনেক ব্যালট। পুরাতন বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে রাখা হয়েছে কিছু ব্যালট। সবগুলোই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সিল দেয়া। এ সময় দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। এরপরই মূলত আমাদের আন্দোলনটা শুরু হয়।
অতঃপর প্রভোস্ট ম্যামের পদত্যাগ এবং ওই দিনেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমরা দাবি জানাই। আমাদের প্রবল আন্দোলনের মুখে প্রশাসন প্রভোস্ট ম্যামকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য হন। এ সময় ছাত্রলীগের পুরো প্যানেলকে প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র প্যানেলের নির্বাচন হয়। ছাত্রলীগের হল শাখার বর্তমান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও কেন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের ছাত্রলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের যোগ্য প্রার্থী মনে হয়নি। মুখ পরিচিতি, জনপ্রিয়তা সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি হয়তো নির্বাচন করার অধিকার রাখি। রাজনৈতিক একটি দলের প্রতি আমার পছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু দিন শেষে আমি একটি স্বতন্ত্র মানুষ। এবং সবার সঙ্গে আলাদা সম্পর্ক। তাই একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনে আসা।
নির্বাচনের খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচনের কোনো খরচ জোগাতে আমরা ঠিক ওভাবে কারো কাছ থেকে এক টাকাও সাহায্য নেইনি। আমরা যে ১১ জন প্রার্থী ছিলাম সবাই মিলে চাঁদা তুলে নির্বাচন করি। আমাদের লিফলেট অতবেশি অ্যাভেলঅ্যাবল ছিল না। যখন আমাদের ব্যালট নাম্বার আসেনি তখন প্রচারণায় রুমপ্রতি ১টি করে লিফলেট দিয়েছি। যেখানে পুরো প্যানেলের ১১ জনের ছবি ছিল। আমাদের কোনো আলাদা ছবি সংবলিত লিফলেট প্রচারণা ছিল না। যখন ব্যালট নং আসে তখন নতুন করে আরো কিছু লিফলেট ছাপাই। ওরকম ব্যানারও ছিল না। আমরা শুধুমাত্র দুটি ব্যানার করেছিলাম। যেগুলো নিজেদের কষ্টার্জিত চাঁদা থেকে খরচ করেছি। এমনও হয়েছে যে প্যানেলের প্রার্থীরা বিকালের নাস্তার টাকা, রিকশা ভাড়ার টাকা, টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার তহবিল সরবরাহ করেছে। আমাদের প্যানেলটিকে আমরা ‘ওরা ১১ জন’ বলে ডাকতাম। আমার নির্বাচনী ব্যালট নং ছিল-৪। এবং প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৩০৫টি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৯০ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে সুষ্মিতা ছোট। গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। গ্রামের স্কুল-কলেজ থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। বাবা মনীন্দ্র নাথ দে একজন পশুচিকিৎসক। মা গীতা রাণী দত্ত গৃহিণী।
No comments