পড়া নিয়ে শিশুদের চেয়ে মা-বাবাদের প্রতিযোগিতা বেশি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা শিক্ষাকে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
শিশু অবস্থাতেই তাদের পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক,
শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি
বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি এটুকুই বলব, কোনোমতেই যেন কোমলমতি
শিশুদের কোনো অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া হয়। তাহলেই দেখবেন তারা ভেতরে একটা
আলাদা শক্তি পাবে। আর তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্তভাবে তৈরি হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
অল্প বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে ‘এক ধরনের মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘শিশুরা প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসি খেলার মধ্য দিয়েই লেখাপড়া করবে। তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই সাত বছরের আগে শিশুদের স্কুলে পাঠায় না। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে খেলতে, মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর কথা, ‘সেখানে অনবরত “পড়, পড়, পড়” বলাটা বা ধমক দেওয়াটা বা আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহটা কমে যাবে, একটা ভীতির সৃষ্টি হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার প্রতি সেই ভীতিটা যেন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমি আমাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুদের মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাকেও আমি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করি।’
তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর সমান মেধা থাকবে না এবং সবাই সবকিছু একরকম করায়াত্ত করতে পারবে না। তবে, যার যেটি যেভাবে সহজাতভাবে আসবে, তাকে সেটি গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া, যেন শিক্ষাটাকে সে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক’ বিতরণ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।
প্রাথমিক শিক্ষাটা যেন আরও উন্নত এবং মানসম্মত হয়, তার প্রতি দৃষ্টি রাখছে তাঁর সরকার—উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮-২০২৩ মেয়াদের জন্য ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে সরকারের কোনো কার্পণ্য নেই উল্লেখ করে তিনি তাঁর সরকারের শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণমূলক কার্যক্রমও আলোচনায় তুলে আনেন।
শেখ হাসিনা বলেন,‘শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু, ঝরে পড়া রোধকল্পে বিভিন্ন স্থানে বিনা মূল্যে স্কুলের পোশাকসহ সব শিক্ষা উপকরণ প্রদান, শিক্ষা ভাতা ও ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষার ফি প্রদান করাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজেদের ভাষায় শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্যও বই প্রদান ও হিয়ারিং এইড প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এ জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছে।
এ সময় প্রতিটি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই শিক্ষাকে আমরা সর্বজনীন ও বহুমুখী করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবল প্রতিভা বের হয়ে আসছে, যারা বিদেশ থেকে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্কাউটিং এবং কাবিং যেন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে চালু হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, ‘স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়, তারা শৃঙ্খলা শেখে, নানা ধরনের উদ্ভাবনী কাজ করতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আমরা করে দিয়েছি এবং এটা সব জায়গায় পর্যায়ক্রমিকভাবে করে দেব এবং মাধ্যমিকের ন্যায় প্রাথমিক পর্যায় থেকেও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেব।’ প্রতি দুই কিমির মধ্যে যেন একটা বিদ্যালয় থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখেই তাঁর সরকার সমগ্র দেশে প্রায় ১৫ হাজার নতুন বিদ্যালয় করে দিয়েছে এবং উন্নতকরণ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যাতে তাঁরা ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে এ জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বেশি চাপ প্রয়োগ না করারও পরামর্শ দেন।
প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাপানো প্রশ্নপত্র প্রদানের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে শিখতে, তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেখানে স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে এমন শিশুদের সেসব স্কুলে ভর্তি করে নিতে হবে। ’
স্কুলে ভর্তি হওয়াকে শিশুদের অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিশুরা যেন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’
তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষাটাকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন।
তিনি এ সময় ঝরে পড়া রোধকল্পে তাঁর সরকারের বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, ১ কোটি ৪০ লাখ মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়াসহ সারা দেশে সরকারি- বেসরকারি এবং স্থানীয় উদ্যোগে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি স্কুল দরকার হলে টিফিন তৈরি করে দেবে, না হলে বাচ্চার মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য টিফিন তৈরি করে দেবে। এটা প্রত্যেক মা এবং অভিভাবককেই উদ্যোগ নিতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি চালুর ফলে আমরা দেখেছি অনেক জায়গাতেই এখন ঝরে পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি এ সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিজম-আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধী) শিশুদের শিক্ষার বেলায়ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, সহপাঠী এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে করে তারা মূল স্রোতে যুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারের পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শিক্ষাজীবনের শুরুতেই একটি সনদ পাওয়ায় তাদের যেমন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, তেমনি পরীক্ষাভীতিও দূর হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এগুলো এ জন্য করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাটাকে কোনো ভীতির বিষয় মনে না করে।’
শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আজকের শিশুদের ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নিয়ে গড়ে ওঠার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ হিসেবে যেন আজকের কোমলমতি শিশুরা গড়ে উঠতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও তাঁদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
অল্প বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে ‘এক ধরনের মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘শিশুরা প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসি খেলার মধ্য দিয়েই লেখাপড়া করবে। তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই সাত বছরের আগে শিশুদের স্কুলে পাঠায় না। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে খেলতে, মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর কথা, ‘সেখানে অনবরত “পড়, পড়, পড়” বলাটা বা ধমক দেওয়াটা বা আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহটা কমে যাবে, একটা ভীতির সৃষ্টি হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার প্রতি সেই ভীতিটা যেন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমি আমাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুদের মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাকেও আমি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করি।’
তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর সমান মেধা থাকবে না এবং সবাই সবকিছু একরকম করায়াত্ত করতে পারবে না। তবে, যার যেটি যেভাবে সহজাতভাবে আসবে, তাকে সেটি গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া, যেন শিক্ষাটাকে সে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক’ বিতরণ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।
প্রাথমিক শিক্ষাটা যেন আরও উন্নত এবং মানসম্মত হয়, তার প্রতি দৃষ্টি রাখছে তাঁর সরকার—উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮-২০২৩ মেয়াদের জন্য ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে সরকারের কোনো কার্পণ্য নেই উল্লেখ করে তিনি তাঁর সরকারের শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণমূলক কার্যক্রমও আলোচনায় তুলে আনেন।
শেখ হাসিনা বলেন,‘শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু, ঝরে পড়া রোধকল্পে বিভিন্ন স্থানে বিনা মূল্যে স্কুলের পোশাকসহ সব শিক্ষা উপকরণ প্রদান, শিক্ষা ভাতা ও ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষার ফি প্রদান করাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজেদের ভাষায় শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্যও বই প্রদান ও হিয়ারিং এইড প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এ জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছে।
এ সময় প্রতিটি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই শিক্ষাকে আমরা সর্বজনীন ও বহুমুখী করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবল প্রতিভা বের হয়ে আসছে, যারা বিদেশ থেকে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্কাউটিং এবং কাবিং যেন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে চালু হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, ‘স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়, তারা শৃঙ্খলা শেখে, নানা ধরনের উদ্ভাবনী কাজ করতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আমরা করে দিয়েছি এবং এটা সব জায়গায় পর্যায়ক্রমিকভাবে করে দেব এবং মাধ্যমিকের ন্যায় প্রাথমিক পর্যায় থেকেও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেব।’ প্রতি দুই কিমির মধ্যে যেন একটা বিদ্যালয় থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখেই তাঁর সরকার সমগ্র দেশে প্রায় ১৫ হাজার নতুন বিদ্যালয় করে দিয়েছে এবং উন্নতকরণ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যাতে তাঁরা ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে এ জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বেশি চাপ প্রয়োগ না করারও পরামর্শ দেন।
প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাপানো প্রশ্নপত্র প্রদানের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে শিখতে, তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেখানে স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে এমন শিশুদের সেসব স্কুলে ভর্তি করে নিতে হবে। ’
স্কুলে ভর্তি হওয়াকে শিশুদের অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিশুরা যেন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’
তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষাটাকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন।
তিনি এ সময় ঝরে পড়া রোধকল্পে তাঁর সরকারের বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, ১ কোটি ৪০ লাখ মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়াসহ সারা দেশে সরকারি- বেসরকারি এবং স্থানীয় উদ্যোগে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি স্কুল দরকার হলে টিফিন তৈরি করে দেবে, না হলে বাচ্চার মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য টিফিন তৈরি করে দেবে। এটা প্রত্যেক মা এবং অভিভাবককেই উদ্যোগ নিতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি চালুর ফলে আমরা দেখেছি অনেক জায়গাতেই এখন ঝরে পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি এ সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিজম-আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধী) শিশুদের শিক্ষার বেলায়ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, সহপাঠী এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে করে তারা মূল স্রোতে যুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারের পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শিক্ষাজীবনের শুরুতেই একটি সনদ পাওয়ায় তাদের যেমন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, তেমনি পরীক্ষাভীতিও দূর হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এগুলো এ জন্য করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাটাকে কোনো ভীতির বিষয় মনে না করে।’
শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আজকের শিশুদের ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নিয়ে গড়ে ওঠার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ হিসেবে যেন আজকের কোমলমতি শিশুরা গড়ে উঠতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও তাঁদের প্রতি আহ্বান জানান।
No comments