নতুন মাদক খাতের বিস্তার by শুভ্র দেব
নিউ
সাইকো-অ্যাক্টিভ সাবসটেনসেস (এনপিএস) মাদক ‘খাতের’ কারবারে বৈশ্বিক
সিন্ডিকেটের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই সিন্ডিকেট দেশীয় মাদক
কারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। তবে বাংলাদেশকে
তারা ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। খাত নিয়ে তদন্ত করছেন এমন গোয়েন্দা
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার মাদক কারবারিরা খাতের
কারবার করতে বাংলাদেশে বড় ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আর গ্রিন টি
আমদানি-রপ্তানির নামে এই মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েছে অন্তত অর্ধশত
সিন্ডিকেট। মূলত গ্রিন টির আড়ালেই তারা এই খাত বেচাকেনা করছেন। তাদের মধ্যে
৩৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে ভুয়া নাম-ঠিকানা
ব্যবহার করে খাতের চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন তারা।
ফলে এই কারবারে জড়িত দেশি হোতাদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও কাস্টম হাউজে তারা নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বেশিরভাগ সময় খাতের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই আনা হয়। সময়-সুযোগ মতো পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্য দেশে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও কাস্টম হাউজের তৎপরতায় খাতের বড় ধরনের ১৪টি চালান ধরা পড়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কেজি খাত। চালানের সঙ্গে জব্দ কাগজপত্র থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। খাতের কারবারে জড়িত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, এশা এন্টারপ্রাইজ, সেনিন করপোরেশন, আলমগীর এন্টারপ্রাইজ, মতি এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯ কেজি খাতসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেনিন করপোরেশনের মালিক এস এম বাবুল আহমেদকে। তিনি খাত কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল জানিয়েছেন, ইথিওপিয়া থেকে ‘চালা নুরি’ নামের এক কারবারি তার কাছে খাত পাঠান। ওই নুরি দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেও নুরি তার কাছে ১৯৬ কেজি খাত পঠিয়েছিলেন। ওই খাত বাবুল যুক্তরাজ্য পাঠিয়েছেন। বাবুল তার মালিকাধীন সেনিন করপোরেশনের নামে গ্রিন টির আড়ালে এসব খাত এনে মজুত করে রাখতেন। চালা নুরি ছাড়াও জিয়াদ মুহাম্মদ ইউসুফসহ আরো কয়েকজন দেশে খাতের চালান পাঠাচ্ছেন। গত ৩০শে আগস্ট ৮৬০ কেজি খাতসহ নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা। নাজিম খাত কারবারের অনেক গোপন তথ্য জানিয়েছিলেন গোয়েন্দাদের। তিনি জানিয়েছিলেন, ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা এলাকার কারবারি জিয়াদ মোহাম্মদ ইউসুফ তার কাছে খাতের চালান পাঠাতেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও তার নামে ১ হাজার কেজি খাতের চালান এসেছে। তবে ইউসুফকে তিন হাজার কেজি খাত পাঠানোর অর্ডার করেছিলেন নাজিম। খাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অভিযানের বিষয়টি ইউসুফ টের পেয়ে পরবর্তীতে আর খাত পাঠাননি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার মানবজমিনকে বলেন, মূলত সিন্ডিকেট বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যববহার করত। দেশে যারা কারবারি ছিল তাদের আলাদা আলাদা নেটওয়ার্ক ছিল। আমরা খাতের বড় মাপের কারবারি নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে সতর্ক হয়েছি। এখন আর কোনো খাতের চালান আসতে পারছে না। কারণ বিমানবন্দরগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক কর্মকর্তা সতর্ক রয়েছেন। যদি কোনো খাতের চালান কেউ নিয়ে আসে তবে সেটা ধরা পড়বে। তিনি বলেন, নতুন মাদক আইন-২০১৯ এ খাতকে মাদকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খাতের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তবে এখন পর্যন্ত দেশে খাতের ব্যবহারকারীকে পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত কয়েক বছর ধরে এনপিএস বা খাতের চালান গ্রিন টির নামে বাংলাদেশে পাঠানো হলেও এ সম্পর্কে কারো ধারণা ছিল না। মূলত বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন ওইসব সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে আসা এসব খাতের চালান ইউরোপ বা আমেরিকা পাঠানো হয়। কারণ এসব দেশে খাতের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের মধ্যে যারা খাতের কারবারের সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারবারি মাহবুবুল আলম হাওলাদার। নামে বেনামে, ভুয়া ঠিকানায় তিনি খাত আমদানি করেন। পোশাক কারখানার আড়ালে তিনি খাতের মজুত করেন। সময়-সুযোগ মতো চালান করেন বিদেশে। সূত্র বলছে, খাতের কারবার করতে দুই বছর আগে তার ভাই কামাল হাওলাদার ইথিওপিয়ায় পাড়ি জমান। সেখান থেকে কামালই দেশে খাতের চালান পাঠাতেন। গত বছর ৩৯৫ কেজি খাতসহ উত্তরার একটি বাড়ি থেকে নাজমুল ইসলাম তালুকদার ও মাহবুবুর রহমান পলাশ নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যে গুদাম থেকে এই খাত জব্দ করা হয়েছে, এটি এশা এন্টারপ্রাইজের। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানের নামে আসা তিনটি চালান জব্দ করা হয়েছিল। সিআইডি সূত্র জানায়, খাতের সবচেয়ে বড় চালানটি জব্দ করা হয় ৯ই সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় পল্টন থানায় অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় শাহ আলম, একরামুল, মতি মিয়া, উজ্জ্বল মিয়া, আলমগীর হোসেন, সাইফুল ইসলাম, লতিফ, ওবায়দুর, জয়, বাদল, আতিকুল্লাহ, আমিন রুহুল আমিন, মুশফিক, মিজানুর, এস এম সাইফুলকে আসামি করা হয়েছে। পরে ওই সপ্তাহে মতিঝিলের ব্যবসায়ী মুন্না ও দক্ষিণ খানের রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিন কার্টন খাত জব্দ করা হয়।
ডিএনসি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময় আসা চালানের কাগজপত্র থেকে ১৯টি ঠিকানা পান গোয়েন্দারা। তবে এসব ঠিকানায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই খাতের কারবারে জড়িত বড় ব্যবসায়ীদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ছাড়াও কেনিয়া থেকে খাতের চালান আসে। এ ছাড়া জিবুতি, উগান্ডা, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে খাতের চাষ করা হয়। এটি দেখতে অনেকটা চা পাতার গুঁড়ার মতো। সেবনে আসক্তিটা ইয়াবার কাছাকাছি। অনিদ্রা, অবসাদ, ক্ষুধামন্দাসহ মানবদেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। গত বছরের ৩১শে আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম খাতের চালান আটক করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ওইদিন বিমানবন্দর ও শান্তিনগর প্লাজা থেকে ৮৬০ কেজি খাতসহ নাজিম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। উদ্ধারকৃত খাত সায়েন্স ল্যাবে পরীক্ষা করে এতে মাদকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর ৫ই সেপ্টেম্বর আবার বিমানবন্দর থেকে ২০ কেজি খাত উদ্ধার করা হয়। ৮ই সেপ্টেম্বর ১৬০ কেজি এবং ১০ই সেপ্টেম্বর ১৪৫ কেজি উদ্ধার করা হয়। ৯ই সেপ্টেম্বর বৈদেশিক পার্সেল শাখা থেকে দেশের সবচেয়ে বড় খাতের চালান উদ্ধার করা হয়। ১ হাজার ৫৮৬ কেজি খাত জব্দ করে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এরপর ১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৩ কেজি, ১৪ই সেপ্টেম্বর ১২০ কেজি ও ১৮ সেপ্টেম্বর ১০৭ কেজি জব্দ করে সিআইডি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, খাতের কারবারে জড়িত অনেককেই আটক করা হয়েছে। ইদানীং আর খাতের চালান আসছে না। তাই মনে করছি খাত আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
ফলে এই কারবারে জড়িত দেশি হোতাদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও কাস্টম হাউজে তারা নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বেশিরভাগ সময় খাতের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই আনা হয়। সময়-সুযোগ মতো পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্য দেশে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও কাস্টম হাউজের তৎপরতায় খাতের বড় ধরনের ১৪টি চালান ধরা পড়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কেজি খাত। চালানের সঙ্গে জব্দ কাগজপত্র থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। খাতের কারবারে জড়িত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, এশা এন্টারপ্রাইজ, সেনিন করপোরেশন, আলমগীর এন্টারপ্রাইজ, মতি এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯ কেজি খাতসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেনিন করপোরেশনের মালিক এস এম বাবুল আহমেদকে। তিনি খাত কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল জানিয়েছেন, ইথিওপিয়া থেকে ‘চালা নুরি’ নামের এক কারবারি তার কাছে খাত পাঠান। ওই নুরি দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেও নুরি তার কাছে ১৯৬ কেজি খাত পঠিয়েছিলেন। ওই খাত বাবুল যুক্তরাজ্য পাঠিয়েছেন। বাবুল তার মালিকাধীন সেনিন করপোরেশনের নামে গ্রিন টির আড়ালে এসব খাত এনে মজুত করে রাখতেন। চালা নুরি ছাড়াও জিয়াদ মুহাম্মদ ইউসুফসহ আরো কয়েকজন দেশে খাতের চালান পাঠাচ্ছেন। গত ৩০শে আগস্ট ৮৬০ কেজি খাতসহ নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা। নাজিম খাত কারবারের অনেক গোপন তথ্য জানিয়েছিলেন গোয়েন্দাদের। তিনি জানিয়েছিলেন, ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা এলাকার কারবারি জিয়াদ মোহাম্মদ ইউসুফ তার কাছে খাতের চালান পাঠাতেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও তার নামে ১ হাজার কেজি খাতের চালান এসেছে। তবে ইউসুফকে তিন হাজার কেজি খাত পাঠানোর অর্ডার করেছিলেন নাজিম। খাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অভিযানের বিষয়টি ইউসুফ টের পেয়ে পরবর্তীতে আর খাত পাঠাননি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার মানবজমিনকে বলেন, মূলত সিন্ডিকেট বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যববহার করত। দেশে যারা কারবারি ছিল তাদের আলাদা আলাদা নেটওয়ার্ক ছিল। আমরা খাতের বড় মাপের কারবারি নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে সতর্ক হয়েছি। এখন আর কোনো খাতের চালান আসতে পারছে না। কারণ বিমানবন্দরগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক কর্মকর্তা সতর্ক রয়েছেন। যদি কোনো খাতের চালান কেউ নিয়ে আসে তবে সেটা ধরা পড়বে। তিনি বলেন, নতুন মাদক আইন-২০১৯ এ খাতকে মাদকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খাতের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তবে এখন পর্যন্ত দেশে খাতের ব্যবহারকারীকে পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত কয়েক বছর ধরে এনপিএস বা খাতের চালান গ্রিন টির নামে বাংলাদেশে পাঠানো হলেও এ সম্পর্কে কারো ধারণা ছিল না। মূলত বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন ওইসব সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে আসা এসব খাতের চালান ইউরোপ বা আমেরিকা পাঠানো হয়। কারণ এসব দেশে খাতের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের মধ্যে যারা খাতের কারবারের সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারবারি মাহবুবুল আলম হাওলাদার। নামে বেনামে, ভুয়া ঠিকানায় তিনি খাত আমদানি করেন। পোশাক কারখানার আড়ালে তিনি খাতের মজুত করেন। সময়-সুযোগ মতো চালান করেন বিদেশে। সূত্র বলছে, খাতের কারবার করতে দুই বছর আগে তার ভাই কামাল হাওলাদার ইথিওপিয়ায় পাড়ি জমান। সেখান থেকে কামালই দেশে খাতের চালান পাঠাতেন। গত বছর ৩৯৫ কেজি খাতসহ উত্তরার একটি বাড়ি থেকে নাজমুল ইসলাম তালুকদার ও মাহবুবুর রহমান পলাশ নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যে গুদাম থেকে এই খাত জব্দ করা হয়েছে, এটি এশা এন্টারপ্রাইজের। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানের নামে আসা তিনটি চালান জব্দ করা হয়েছিল। সিআইডি সূত্র জানায়, খাতের সবচেয়ে বড় চালানটি জব্দ করা হয় ৯ই সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় পল্টন থানায় অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় শাহ আলম, একরামুল, মতি মিয়া, উজ্জ্বল মিয়া, আলমগীর হোসেন, সাইফুল ইসলাম, লতিফ, ওবায়দুর, জয়, বাদল, আতিকুল্লাহ, আমিন রুহুল আমিন, মুশফিক, মিজানুর, এস এম সাইফুলকে আসামি করা হয়েছে। পরে ওই সপ্তাহে মতিঝিলের ব্যবসায়ী মুন্না ও দক্ষিণ খানের রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিন কার্টন খাত জব্দ করা হয়।
ডিএনসি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময় আসা চালানের কাগজপত্র থেকে ১৯টি ঠিকানা পান গোয়েন্দারা। তবে এসব ঠিকানায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই খাতের কারবারে জড়িত বড় ব্যবসায়ীদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ছাড়াও কেনিয়া থেকে খাতের চালান আসে। এ ছাড়া জিবুতি, উগান্ডা, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে খাতের চাষ করা হয়। এটি দেখতে অনেকটা চা পাতার গুঁড়ার মতো। সেবনে আসক্তিটা ইয়াবার কাছাকাছি। অনিদ্রা, অবসাদ, ক্ষুধামন্দাসহ মানবদেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। গত বছরের ৩১শে আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম খাতের চালান আটক করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ওইদিন বিমানবন্দর ও শান্তিনগর প্লাজা থেকে ৮৬০ কেজি খাতসহ নাজিম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। উদ্ধারকৃত খাত সায়েন্স ল্যাবে পরীক্ষা করে এতে মাদকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর ৫ই সেপ্টেম্বর আবার বিমানবন্দর থেকে ২০ কেজি খাত উদ্ধার করা হয়। ৮ই সেপ্টেম্বর ১৬০ কেজি এবং ১০ই সেপ্টেম্বর ১৪৫ কেজি উদ্ধার করা হয়। ৯ই সেপ্টেম্বর বৈদেশিক পার্সেল শাখা থেকে দেশের সবচেয়ে বড় খাতের চালান উদ্ধার করা হয়। ১ হাজার ৫৮৬ কেজি খাত জব্দ করে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এরপর ১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৩ কেজি, ১৪ই সেপ্টেম্বর ১২০ কেজি ও ১৮ সেপ্টেম্বর ১০৭ কেজি জব্দ করে সিআইডি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, খাতের কারবারে জড়িত অনেককেই আটক করা হয়েছে। ইদানীং আর খাতের চালান আসছে না। তাই মনে করছি খাত আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
No comments