নতুন দল গড়ার চেষ্টায় জামায়াত: সেক্রেটারির নেতৃত্বে কমিটি by নূর মোহাম্মদ
২০০১
সাল। চারদলীয় জোটের ভূমিধস জয়। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতার অংশীদার
হওয়ার সুযোগ আসে জামায়াতের সামনে। সরকারে যাওয়া উচিত হবে কি-না, গেলে
মন্ত্রিসভায় যাবেন কারা, তা নিয়ে সেসময় দলটির ভেতরে বিতর্ক দেখা দেয়।
শেষ পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দলের অনেকের আপত্তি উপেক্ষা করে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। জরুরি জমানায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি নতুন করে সামনে আসে। এরপর পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবারই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা আজও তাড়া করছে দলটিকে। এটিসহ আরো কয়েকটি ইস্যুতে জামায়াতে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের অস্থিরতা। এর সর্বশেষ সংযোজন হিসেবেই দলটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
সেখানে নতুন দল গঠনে দলের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এজন্য সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৪ই জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একটি অধিবেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ওই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বিবেচনা জন্য পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেখানে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য দলের সেক্রেটারির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত দলের আমীর, সেত্রেুটারি, অঞ্চল দায়িত্বশীল, জেলা ও মহানগর আমীরের মাধ্যমে যথা সময়ে সরাসরি জানানো হবে। এর বাইরে কারও আবেদন-নিবেদন ও অনুরোধে নেতা-কর্মীরা যাতে সাড়া না দেয় সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয় দলের পক্ষ থেকে।
তৃণমূলে জামায়াতের চিঠি
দলের সহকারি সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে নিয়ে সারা দেশে দৃষ্টি আকর্ষণী মর্মে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জামায়াত। সেখানে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগে আমরা মর্মাহত। সংগঠনের এক কঠিন সময় এটা আমাদের বাড়তি কষ্টের কারণ। দীর্ঘদিন তিনি আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে আইন অঙ্গনে সংগঠনের কঠিন সময়ে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অতীতের সব অবদানকে সম্মানের চোখে দেখি। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ব্যাপারে আমাদের সব কর্মীর প্রতি অনুরোধ, তার ব্যাপারে কেউ কোনো বিরূপ মন্তব্য করবেন না।
তার পদত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উনার পদত্যাগের বিষয়ে অবহিত করলে আমরা তাকে আন্তরিক অনুরোধ করেছিলাম পদত্যাগ না করার জন্য। তিনি তাতে সম্মত হননি। তিনি গণমাধ্যমে তার এ পদত্যাগের ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে আমাদের জানালে, আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলাম মিডিয়ায় না দেয়ার জন্য। দুঃখজনক হলেও সত্য তিনি আমাদের অনুরোধটিও রক্ষা করেননি।
এরপর শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ব্যাপারে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছর থেকে তিনি সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যে ভিন্নমত প্রকাশ করে আসছিলেন। যা সংগঠনের জন্য খুবই বিব্রতকর। গোড়ার দিকেই ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা একাধিকবার তার সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেন এবং তার সমস্ত কর্মকাণ্ড সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি হওয়ায় তাকে এসব পরিহার করার জন্য সর্তক করা হয়। এমনকি সে সময়ে তিনি একটি ভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এ বিষয়ে দলের আমীরের নেতৃত্ব্বে ও মহানগরীর নেতারা বসে এরকম কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য তাকে সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার প্রতি এ দরদ ও উদারতার কোনো মূল্যই তিনি দেননি।
সম্প্রতি তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ে লোকদের নিয়ে বিভিন্ন বৈঠক করেন যা সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে। তিনি নিজ দায়িত্বে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে এসব বৈঠকে আলোচনা করেন, যা সংগঠনের রীতিনীতি ও নিয়ম-শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। যদিও তার এ উদ্যোগে সংগঠনের কঠিন দিনের সহকর্মীরা তেমন সাড়া দেননি। তার পরও একজন লোক এ সংগঠন থেকে দূরে চলে যাক সংগঠন তা চায় না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগরীর উত্তর শাখা তার সঙ্গে কথা বলে। এ ক্ষেত্রে তার বক্তব্য সন্তোষজনক ছিল না। এমনকি তার এরূপ কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে মোটেই অনুতপ্ত মনে হয়নি। তাকে দেয়া সংশোধনের সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে পারেননি এবং বর্তমানও অনুরূপ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে তার সদস্য পদ মুলতবি করে বাতিলের জন্য দলের আমীরের কাছে সুপারিশ করা হয়। এক্ষেত্রে আমীরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।
জামায়াত রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে: শাহ আবদুল হান্নান
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে করেন দলটির মতাদর্শের চিন্তাবিদ ও সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান। তিনি মনে করেন, নতুন করে একটি দল আসতে পারে যারা সরাসরি ইসলামের কথা বলবে না, কিন্তু ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। তার মতে, দলটি এখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাবে এবং তারা ইসলামের প্রচার কাজ ও সমাজসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে। অন্য একটি দল হয়তো তারা করবে, যে দলটির লক্ষ্য হবে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। দলের সংস্কার ও গতকাল জামায়াতে ইসলামী থেকে সহকারি সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের পর মানবজমিনকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এসব মতামত ব্যক্ত করেন এ অর্থনীতিবিদ। তার মতে, আজকে যে জামায়াত তারা ইসলামের কথা সরাসরি খুব বেশি বলেছে। পরবর্তী যে জামায়াত আসবে তারা হয়তো সরাসরি এত ইসলামের কথা বলবে না। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগকে তার ব্যক্তিগত অধিকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, রাজ্জাক আমার বন্ধু ও ছোট ভাই, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং জামায়াত রাজ্জাকের অবদানের কথা স্বীকার করে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা খুবই ভালো দিক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোলাম আযম নিজে অনেক বছর আগে ক্ষমা চেয়েছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর বিশাল জনসভায় তিনি ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, আমি যদি কোনো ভুল-ত্রুটি করে থাকি তবে ক্ষমা চাচ্ছি।
দুই ইস্যুতে মতভেদ
মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং নতুন নামে দল গঠন নিয়েই মূলত জামায়াতে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক গতকাল পদত্যাগপত্রে দাবি করেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে তিনি জামায়াতকে একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তার সেই পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানও কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ওই চিঠিতে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে কামারুজ্জামান লিখেছিলেন, প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? এক. যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকবো (বতমানে এই কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছে)।
দুই. পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছন থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে। তিন. আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো এবং সম্পূর্ন নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেবো। মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী ‘বিবেচনায় আনতে হবে সবকিছু’ শিরোনামে কামারুজ্জামানের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। সংস্কার ইস্যু নিয়ে জামায়াতে তখন বিতর্ক শুরু হলে ‘ইসলামী আন্দোলনে হীনম্মন্যতাবোধের সুযোগ নেই’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় একটি জাতীয় দৈনিকে। ধারণা করা হয়, আবু নকীব ছদ্মনামে কারাগার থেকে লেখাটি লিখেছেন মতিউর রহমান নিজামী।
শেষ পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দলের অনেকের আপত্তি উপেক্ষা করে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। জরুরি জমানায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি নতুন করে সামনে আসে। এরপর পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবারই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা আজও তাড়া করছে দলটিকে। এটিসহ আরো কয়েকটি ইস্যুতে জামায়াতে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের অস্থিরতা। এর সর্বশেষ সংযোজন হিসেবেই দলটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
সেখানে নতুন দল গঠনে দলের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এজন্য সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৪ই জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একটি অধিবেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ওই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বিবেচনা জন্য পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেখানে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য দলের সেক্রেটারির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত দলের আমীর, সেত্রেুটারি, অঞ্চল দায়িত্বশীল, জেলা ও মহানগর আমীরের মাধ্যমে যথা সময়ে সরাসরি জানানো হবে। এর বাইরে কারও আবেদন-নিবেদন ও অনুরোধে নেতা-কর্মীরা যাতে সাড়া না দেয় সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয় দলের পক্ষ থেকে।
তৃণমূলে জামায়াতের চিঠি
দলের সহকারি সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে নিয়ে সারা দেশে দৃষ্টি আকর্ষণী মর্মে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জামায়াত। সেখানে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগে আমরা মর্মাহত। সংগঠনের এক কঠিন সময় এটা আমাদের বাড়তি কষ্টের কারণ। দীর্ঘদিন তিনি আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে আইন অঙ্গনে সংগঠনের কঠিন সময়ে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অতীতের সব অবদানকে সম্মানের চোখে দেখি। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ব্যাপারে আমাদের সব কর্মীর প্রতি অনুরোধ, তার ব্যাপারে কেউ কোনো বিরূপ মন্তব্য করবেন না।
তার পদত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উনার পদত্যাগের বিষয়ে অবহিত করলে আমরা তাকে আন্তরিক অনুরোধ করেছিলাম পদত্যাগ না করার জন্য। তিনি তাতে সম্মত হননি। তিনি গণমাধ্যমে তার এ পদত্যাগের ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে আমাদের জানালে, আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলাম মিডিয়ায় না দেয়ার জন্য। দুঃখজনক হলেও সত্য তিনি আমাদের অনুরোধটিও রক্ষা করেননি।
এরপর শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ব্যাপারে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছর থেকে তিনি সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যে ভিন্নমত প্রকাশ করে আসছিলেন। যা সংগঠনের জন্য খুবই বিব্রতকর। গোড়ার দিকেই ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা একাধিকবার তার সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেন এবং তার সমস্ত কর্মকাণ্ড সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি হওয়ায় তাকে এসব পরিহার করার জন্য সর্তক করা হয়। এমনকি সে সময়ে তিনি একটি ভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এ বিষয়ে দলের আমীরের নেতৃত্ব্বে ও মহানগরীর নেতারা বসে এরকম কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য তাকে সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার প্রতি এ দরদ ও উদারতার কোনো মূল্যই তিনি দেননি।
সম্প্রতি তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ে লোকদের নিয়ে বিভিন্ন বৈঠক করেন যা সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে। তিনি নিজ দায়িত্বে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে এসব বৈঠকে আলোচনা করেন, যা সংগঠনের রীতিনীতি ও নিয়ম-শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। যদিও তার এ উদ্যোগে সংগঠনের কঠিন দিনের সহকর্মীরা তেমন সাড়া দেননি। তার পরও একজন লোক এ সংগঠন থেকে দূরে চলে যাক সংগঠন তা চায় না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগরীর উত্তর শাখা তার সঙ্গে কথা বলে। এ ক্ষেত্রে তার বক্তব্য সন্তোষজনক ছিল না। এমনকি তার এরূপ কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে মোটেই অনুতপ্ত মনে হয়নি। তাকে দেয়া সংশোধনের সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে পারেননি এবং বর্তমানও অনুরূপ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে তার সদস্য পদ মুলতবি করে বাতিলের জন্য দলের আমীরের কাছে সুপারিশ করা হয়। এক্ষেত্রে আমীরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।
জামায়াত রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে: শাহ আবদুল হান্নান
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে করেন দলটির মতাদর্শের চিন্তাবিদ ও সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান। তিনি মনে করেন, নতুন করে একটি দল আসতে পারে যারা সরাসরি ইসলামের কথা বলবে না, কিন্তু ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। তার মতে, দলটি এখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাবে এবং তারা ইসলামের প্রচার কাজ ও সমাজসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে। অন্য একটি দল হয়তো তারা করবে, যে দলটির লক্ষ্য হবে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। দলের সংস্কার ও গতকাল জামায়াতে ইসলামী থেকে সহকারি সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের পর মানবজমিনকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এসব মতামত ব্যক্ত করেন এ অর্থনীতিবিদ। তার মতে, আজকে যে জামায়াত তারা ইসলামের কথা সরাসরি খুব বেশি বলেছে। পরবর্তী যে জামায়াত আসবে তারা হয়তো সরাসরি এত ইসলামের কথা বলবে না। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগকে তার ব্যক্তিগত অধিকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, রাজ্জাক আমার বন্ধু ও ছোট ভাই, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং জামায়াত রাজ্জাকের অবদানের কথা স্বীকার করে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা খুবই ভালো দিক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোলাম আযম নিজে অনেক বছর আগে ক্ষমা চেয়েছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর বিশাল জনসভায় তিনি ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, আমি যদি কোনো ভুল-ত্রুটি করে থাকি তবে ক্ষমা চাচ্ছি।
দুই ইস্যুতে মতভেদ
মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং নতুন নামে দল গঠন নিয়েই মূলত জামায়াতে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক গতকাল পদত্যাগপত্রে দাবি করেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে তিনি জামায়াতকে একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তার সেই পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানও কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ওই চিঠিতে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে কামারুজ্জামান লিখেছিলেন, প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? এক. যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকবো (বতমানে এই কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছে)।
দুই. পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছন থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে। তিন. আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো এবং সম্পূর্ন নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেবো। মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী ‘বিবেচনায় আনতে হবে সবকিছু’ শিরোনামে কামারুজ্জামানের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। সংস্কার ইস্যু নিয়ে জামায়াতে তখন বিতর্ক শুরু হলে ‘ইসলামী আন্দোলনে হীনম্মন্যতাবোধের সুযোগ নেই’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় একটি জাতীয় দৈনিকে। ধারণা করা হয়, আবু নকীব ছদ্মনামে কারাগার থেকে লেখাটি লিখেছেন মতিউর রহমান নিজামী।
No comments