সি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক স্বপ্নে বাধা by বেন ওয়েস্টকট
২০১৭
সালের জানুয়ারি। ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পোডিয়ামে দাঁড়ানো চীনের
প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। তখন আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে একরকম প্রত্যাশা
তৈরি হয়েছিল। সেখানে সি জিনপিং বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে যে
বক্তব্য রেখেছিলেন, তখন তাকে বিশ্বজুড়ে সরকার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো
ভূয়সী প্রশংসা করে। এরপর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস
শওয়াব বলেছিলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বক্তব্য।
এর দুই বছর পরে আন্তর্জাতিক সেই প্রত্যাশা ক্রমশ তিক্ত হয়ে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রমশ ঠান্ডা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে থাকে বেইজিং। বিগত মাত্র দুই মাসে সিনজিয়াং প্রদেশে গণহারে (উইঘুর মুসলিমদের) আটক করে রাখার নিন্দা জানায় তুরস্ক।
ব্যাপকহারে হ্যাকিংয়ের জন্য চীন সরকারকে অভিযুক্ত করে বৃটেন। ওদিকে বিশ্বজুড়ে চীনাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে খর্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বহু দেশ চীনের জায়ান্ট প্রযুুক্তি বিষয়ক কোম্পানি হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই কোম্পানিটি তাদের ৫জি নেটওয়ার্ক সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
এসওএসএস চায়না ইন্সটিটিউটের পরিচালক স্টিভ সাং বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে যে অনাকাঙ্খিত আগ্রাসী পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি নেয়া হয়েছে তারই প্রেক্ষিতে এসব আঘাত আসছে। তবে এক্ষেত্রে বেইজিং তার অবস্থানের পরিবর্তন করবে বলে মনে হয় না বলে তিনি সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, সি জিনপিং চীনের রাজনীতি পাল্টে ফেলেছেন। তিনি কোনো দুর্বলতা দেখানোর সক্ষমতা রাখেন না, দেখাতে পারেন না।
চীনের অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতা গত এক দশকে বেড়েছে বেশ। যুক্তরাষ্ট্র এ সময়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অগ্নিঝরা এক বক্তব্য রাখেন। তাতে ইঙ্গিত মেলে যে ওয়াশিংটনের নীতিতে পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে। কারণ, মাইক পেন্স বেইজিংকে একেবারে খোলামেলাভাবে প্রযুক্তি চোর, অর্থনৈতিক ‘প্রিডেটর’ ও সামরিক আগ্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বেইজিং যে দক্ষিণ চীন সাগারে একটি বিতর্কিত কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টি করার উচ্চাকাঙ্খা দেখিয়ে যাচ্ছে এবং চীন দাবি করছে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে- এসবের ভিত্তিতেই ওই বক্তব্য দেন মাইক পেন্স। এখানেই শেষ নয়, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করতে লাগলো যে, চীনা সরকারের কর্মসূচির অধীনে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশকে যে শত শত কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে এটা হলো অর্থনৈতিক এক ব্লাকমেইল। এর মধ্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক অর্জন করতে চাইছে। কারণ, যখন ঋণ গ্রহীতা ঋণ ফেরত দিতে না পারবে তখন তারা চীনের ওপর ধরনা দিয়ে থাকবে। তাদেরকে মোড়ল ভাববে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সব অভিযোগ বার বারই উদ্ভট ও অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয় চীন। অন্য দেশের রাজনীতি নিযন্ত্রণ করার মতো কোনো আগ্রহই নেই চীনের। এ বিষয়ে বৈশ্বিক সম্প্রদায় একেবারে পরিষ্কার।
কিন্তু মাইক পেন্সের বক্তব্যের কয়েক মাস পরে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত চীনা অনেক ‘অ্যাক্টরের’ বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অভিযোগ প্রকাশ হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সামনে এবং গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক উচু স্তরের কর্মকর্তাদের লাইন পড়ে গেল। তারা সতর্ক করলেন চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই হুমকি। ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কমান্ডার এডমিরাল ফিলিপ ডেভিডসন মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে বলেছেন, আন্তর্জাতিক শৃংখলার ভিত্তিতে বিদ্যমান যেসব আদর্শ আছে চীনের, তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে নীতি বিস্তৃত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বেইজিং।
ইতিমধ্যে বেইজিংয়ের সঙ্গে রীতিমতো এক বাণিজ্যিক যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ডনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শত শত কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ করেছেন। এ বিষয়ে চুক্তির সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে ১লা মার্চ। ইউসি সান ডিয়েগোতে ২১তম সেঞ্চুরি চায়না সেন্টারের চেয়ার সুসান শিরক বলেছেন, গত বছরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় অবস্থান কঠোর ছিল ওয়াশিংটনের। চীনের হুমকি নিয়ে একটি পীড়া আছে
যুক্তরাষ্ট্র বনাম হুয়াওয়ে
এ বছরের শুরু থেকে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তাদের উদ্দেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমারা। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে একটিমাত্র কোম্পানি। তা হলো হুয়াওয়ে। চীনের এই প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানটি হলো দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি প্রতীক। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে মাত্র ৩০ বছরে। এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ৫জি নেটওয়ার প্রোভাইডারের অন্যতম হয়ে উঠেছে তারা। প্রতিটি মহাদেশেই বড় বড় দেশগুলোর সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। এ অবস্থায় হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার বাতিল করতে মিত্রদের অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই কোম্পানিটি বেইজিংয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। এর মাধ্যমে তারা গোয়েন্দাগিরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেও সোমবার ইউরোপ সফরে এসে বিভিন্ন দেশকে একটি আলটিমেটাম দিয়েছেন। তা হলো: হয়তো যুক্তরাষ্ট্র না হয় হুয়াওয়ে। যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। যেসব স্থানে হুয়াওয়ে থাকবে সেখানে আমাদের অংশীদারিত্ব বজায় রাখা কছিন হয়ে পড়বে।
এ বছরের শুরু থেকে জার্মানি, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া, বৃটেন সবাই হুয়াওয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নভেম্বরে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করেছে নিউজিল্যান্ড। সেখানকার বড় বড় সব টেলিযোগাযোগ কেম্পানিকে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপে বৃটেনের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ভোডাফোন গত মাসে হুয়াওয়ে প্রযুক্তির ব্যবকার স্থগিত করেছে।
এ অবস্থায় হুয়াওয়ে পরিষ্কার করে তার ক্রেতাদের নিশ্চিত করছে যে, তাদের ডাটা চীন সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হবে না। জানুয়ারিতে রেন ঝেংফাই বলেছেন, তার কোম্পানি কখনোই কাস্টমারদের স্বার্থের ক্ষতি করবে না। কিন্তু তাতে কি আস্থা রাখতে পারছেন কাস্টমাররা। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা মনে করছেন, গোয়েন্দাবৃত্তিতে চীনের ডিজিটাল এই প্রক্রিয়া খুবই সুপ্রতিষ্ঠিত।
গত ডিসেম্বরে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ইউরোপ, এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা ও স্পর্শকাতর বাণিজ্যিক ডাটা টার্গেট করে এপিটি-১০ নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগ অত্যন্ত চোখে পড়ার মতো। বৃটেন ও তার মিত্রদের ডাটা অবমুক্ত করার জন্য এটা একটি বিস্তৃত সাইবার আগ্রাসন।
ডিসেম্বরে হুয়াওয়ের অর্থ বিষয়ক প্রধান নির্বাহী মেং ওয়ানঝোকে গ্রেপ্তার করা হয় কানাডায়। তাতে কড়া ক্ষোভ প্রকাশ করে চীন। কিন্তু তাতে কোম্পানিটির সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে কোনো ঘাতটি ঘটাতে পারে নি। ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনা হয়েছে মেং-এর বিরুদ্ধে। তারপর থেকে বেশ কিছু কানাডিয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে চীনে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে মাদকের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। সাং চীনের বিষয়ে বলেন, তারা অতিরিক্ত শক্তিশালী, অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করছে যে, হুয়াওয়ে কোনো সাধারণ কোম্পানি নয়। চীনা সরকারের দৃষ্টিতে হুয়াওয়ে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এ জন্যই পশ্চিমা সরকারগুলো হুয়াওয়ে ও চীনের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এর দুই বছর পরে আন্তর্জাতিক সেই প্রত্যাশা ক্রমশ তিক্ত হয়ে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রমশ ঠান্ডা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে থাকে বেইজিং। বিগত মাত্র দুই মাসে সিনজিয়াং প্রদেশে গণহারে (উইঘুর মুসলিমদের) আটক করে রাখার নিন্দা জানায় তুরস্ক।
ব্যাপকহারে হ্যাকিংয়ের জন্য চীন সরকারকে অভিযুক্ত করে বৃটেন। ওদিকে বিশ্বজুড়ে চীনাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে খর্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বহু দেশ চীনের জায়ান্ট প্রযুুক্তি বিষয়ক কোম্পানি হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই কোম্পানিটি তাদের ৫জি নেটওয়ার্ক সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
এসওএসএস চায়না ইন্সটিটিউটের পরিচালক স্টিভ সাং বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে যে অনাকাঙ্খিত আগ্রাসী পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি নেয়া হয়েছে তারই প্রেক্ষিতে এসব আঘাত আসছে। তবে এক্ষেত্রে বেইজিং তার অবস্থানের পরিবর্তন করবে বলে মনে হয় না বলে তিনি সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, সি জিনপিং চীনের রাজনীতি পাল্টে ফেলেছেন। তিনি কোনো দুর্বলতা দেখানোর সক্ষমতা রাখেন না, দেখাতে পারেন না।
চীনের অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতা গত এক দশকে বেড়েছে বেশ। যুক্তরাষ্ট্র এ সময়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অগ্নিঝরা এক বক্তব্য রাখেন। তাতে ইঙ্গিত মেলে যে ওয়াশিংটনের নীতিতে পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে। কারণ, মাইক পেন্স বেইজিংকে একেবারে খোলামেলাভাবে প্রযুক্তি চোর, অর্থনৈতিক ‘প্রিডেটর’ ও সামরিক আগ্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বেইজিং যে দক্ষিণ চীন সাগারে একটি বিতর্কিত কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টি করার উচ্চাকাঙ্খা দেখিয়ে যাচ্ছে এবং চীন দাবি করছে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে- এসবের ভিত্তিতেই ওই বক্তব্য দেন মাইক পেন্স। এখানেই শেষ নয়, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করতে লাগলো যে, চীনা সরকারের কর্মসূচির অধীনে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশকে যে শত শত কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে এটা হলো অর্থনৈতিক এক ব্লাকমেইল। এর মধ্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক অর্জন করতে চাইছে। কারণ, যখন ঋণ গ্রহীতা ঋণ ফেরত দিতে না পারবে তখন তারা চীনের ওপর ধরনা দিয়ে থাকবে। তাদেরকে মোড়ল ভাববে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সব অভিযোগ বার বারই উদ্ভট ও অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয় চীন। অন্য দেশের রাজনীতি নিযন্ত্রণ করার মতো কোনো আগ্রহই নেই চীনের। এ বিষয়ে বৈশ্বিক সম্প্রদায় একেবারে পরিষ্কার।
কিন্তু মাইক পেন্সের বক্তব্যের কয়েক মাস পরে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত চীনা অনেক ‘অ্যাক্টরের’ বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অভিযোগ প্রকাশ হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সামনে এবং গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক উচু স্তরের কর্মকর্তাদের লাইন পড়ে গেল। তারা সতর্ক করলেন চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই হুমকি। ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কমান্ডার এডমিরাল ফিলিপ ডেভিডসন মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে বলেছেন, আন্তর্জাতিক শৃংখলার ভিত্তিতে বিদ্যমান যেসব আদর্শ আছে চীনের, তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে নীতি বিস্তৃত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বেইজিং।
ইতিমধ্যে বেইজিংয়ের সঙ্গে রীতিমতো এক বাণিজ্যিক যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ডনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শত শত কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ করেছেন। এ বিষয়ে চুক্তির সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে ১লা মার্চ। ইউসি সান ডিয়েগোতে ২১তম সেঞ্চুরি চায়না সেন্টারের চেয়ার সুসান শিরক বলেছেন, গত বছরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় অবস্থান কঠোর ছিল ওয়াশিংটনের। চীনের হুমকি নিয়ে একটি পীড়া আছে
যুক্তরাষ্ট্র বনাম হুয়াওয়ে
এ বছরের শুরু থেকে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও তাদের উদ্দেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমারা। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে একটিমাত্র কোম্পানি। তা হলো হুয়াওয়ে। চীনের এই প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানটি হলো দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি প্রতীক। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে মাত্র ৩০ বছরে। এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ৫জি নেটওয়ার প্রোভাইডারের অন্যতম হয়ে উঠেছে তারা। প্রতিটি মহাদেশেই বড় বড় দেশগুলোর সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। এ অবস্থায় হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার বাতিল করতে মিত্রদের অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই কোম্পানিটি বেইজিংয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। এর মাধ্যমে তারা গোয়েন্দাগিরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেও সোমবার ইউরোপ সফরে এসে বিভিন্ন দেশকে একটি আলটিমেটাম দিয়েছেন। তা হলো: হয়তো যুক্তরাষ্ট্র না হয় হুয়াওয়ে। যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। যেসব স্থানে হুয়াওয়ে থাকবে সেখানে আমাদের অংশীদারিত্ব বজায় রাখা কছিন হয়ে পড়বে।
এ বছরের শুরু থেকে জার্মানি, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া, বৃটেন সবাই হুয়াওয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নভেম্বরে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করেছে নিউজিল্যান্ড। সেখানকার বড় বড় সব টেলিযোগাযোগ কেম্পানিকে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপে বৃটেনের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ভোডাফোন গত মাসে হুয়াওয়ে প্রযুক্তির ব্যবকার স্থগিত করেছে।
এ অবস্থায় হুয়াওয়ে পরিষ্কার করে তার ক্রেতাদের নিশ্চিত করছে যে, তাদের ডাটা চীন সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হবে না। জানুয়ারিতে রেন ঝেংফাই বলেছেন, তার কোম্পানি কখনোই কাস্টমারদের স্বার্থের ক্ষতি করবে না। কিন্তু তাতে কি আস্থা রাখতে পারছেন কাস্টমাররা। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা মনে করছেন, গোয়েন্দাবৃত্তিতে চীনের ডিজিটাল এই প্রক্রিয়া খুবই সুপ্রতিষ্ঠিত।
গত ডিসেম্বরে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ইউরোপ, এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা ও স্পর্শকাতর বাণিজ্যিক ডাটা টার্গেট করে এপিটি-১০ নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগ অত্যন্ত চোখে পড়ার মতো। বৃটেন ও তার মিত্রদের ডাটা অবমুক্ত করার জন্য এটা একটি বিস্তৃত সাইবার আগ্রাসন।
ডিসেম্বরে হুয়াওয়ের অর্থ বিষয়ক প্রধান নির্বাহী মেং ওয়ানঝোকে গ্রেপ্তার করা হয় কানাডায়। তাতে কড়া ক্ষোভ প্রকাশ করে চীন। কিন্তু তাতে কোম্পানিটির সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে কোনো ঘাতটি ঘটাতে পারে নি। ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনা হয়েছে মেং-এর বিরুদ্ধে। তারপর থেকে বেশ কিছু কানাডিয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে চীনে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে মাদকের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। সাং চীনের বিষয়ে বলেন, তারা অতিরিক্ত শক্তিশালী, অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করছে যে, হুয়াওয়ে কোনো সাধারণ কোম্পানি নয়। চীনা সরকারের দৃষ্টিতে হুয়াওয়ে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এ জন্যই পশ্চিমা সরকারগুলো হুয়াওয়ে ও চীনের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
No comments