ভেনিজুয়েলা সংকট: বিভক্ত দুনিয়া স্নায়ুযুদ্ধের আভাস
ভেনিজুয়েলা
সংকটকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত। পরাশক্তিধর, বিশেষ করে
পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দেশগুলো একে অন্যের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।
ভয়াবহ ও শিরদাঁড়া হিম করা এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দুনিয়াজুড়ে। তবে কি
স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়গুলো ফিরে এসেছে! সাবেক সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন
ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চলা স্নায়ুযুদ্ধে
বিশ্ব দেখেছে অনেকগুলো যুদ্ধ। এখনকি ভেনিজুয়েলাকে ঘিরে আরেকটি বড় যুদ্ধের
দিকে ধাবিত হচ্ছে পরাশক্তিগুলো!
ভেনিজুয়েলার শাসক কে হবে- তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে বিজয়ী নিকোলাস মাদুরো নাকি নিজেই নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণাকারী বিরোধী নেতা হুয়ান গাইডো। দেশটির সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান নিকোলাস মাদুরো শপথ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে যে নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমা কিছু দেশ।
অন্যদিকে নিজে নিজে শপথ নিয়ে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন হুয়ান গাইডো। তাকে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এতে চটেছে চীন ও রাশিয়া। একইসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তুরস্ক, সিরিয়া, ইরান ও কিউবা।
সংকট শুরু হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাদুরোকে টেলিফোন করেন। পুতিনের দাবি বাইরে থেকে ভেনিজুয়েলার এ সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। ইঙ্গিত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী শক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং হুয়ান গাইডোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথাও বলেছে দেশটি। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে রাশিয়া। এর আগে দেশটিতে দুটি পরমাণু বোমাবাহী বোম্বারু যুদ্ধবিমানও পাঠায় রাশিয়া।
রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার বলেছেন, আমরা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে নয়, প্রত্যেককে সতর্ক করে দিচ্ছি। ভেনিজুয়েলায় কোনো রকম হস্তক্ষেপ থেকে কী ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে তা সবার জানা উচিত। হুয়ান গাইডোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে আমি মনে করি এই অবস্থান থেকে ভয়াবহ কিছুর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ হলো আগুনে আরো গ্যাস যোগ করা। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তির ব্যবহার করলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। এতে আন্তর্জাতিক বিপুল পরিমাণ সিস্টেমে আঘাত লাগবে, ভেনিজুয়েলাকে আরো রক্তপাতের দিকে ঠেলে দেবে।
এদিকে, রাশিয়ার মিত্র চীনও ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও চীন প্রয়োজনীয় ঋণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে ভেনিজুয়েলাকে। বিশেষ করে চীন সে দেশে বিশাল মাত্রায় বিনিয়োগ করে এসেছে। সে দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্পেও চীনের বড় অবদান রয়েছে। এমন অবস্থায় ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে বিশ্ব স্পষ্টত দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একপক্ষ সমর্থন করছে নিকোলাস মাদুরোকে। অন্যপক্ষ সমর্থন করছে হুয়ান গাইডোকে। এ রাজনীতিতে রয়েছে স্থানীয় কৌশল। তার চেয়ে বড় হয়ে আছে বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ। তাতে সে যে দেশ যাকেই সমর্থন করুক না কেন।
অনলাইন সিএনএন লিখেছে, বিরোধী দলীয় নেতা হুয়ান গাইডোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে রাশিয়া যে সমালোচনা করেছে তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীন, তুরস্ক ও সিরিয়া। এ ইস্যুতে তারা ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সমর্থন জানিয়ে কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাদুরোর বিরুদ্ধে এবং হুয়ান গাইডোকে স্বীকৃতি দেয়ার মার্কিন উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যারা তার মধ্যে রয়েছে বৃটেন, কানাডা, ব্রাজিল, কোস্টারিকা, আর্জেন্টিনা, পেরু, কলোম্বিয়া, ইকুয়েডর, চিলি, স্পেন ও অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সী গাইডোকে স্বীকৃতি দেয়াকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া ও তার মিত্ররা।
গত বুধবার গাইডো নিজে শপথ নিয়ে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। আরো ঘোষণা দেন যে, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এর ফলে ভেনিজুয়েলার ভেতরে ও বাইরে দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ওদিকে হুয়ান গাইডোকে স্বীকৃতি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকোলাস মাদুরো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব কূটনীতিককে তার দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। তবে তার এ নির্দেশকে যুক্তরাষ্ট্র অর্থহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ভেনিজুয়েলা সংকট নিয়ে শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে সিরিয়াও। বৃহস্পতিবার দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপের নিন্দা জানায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকার। এমন হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক সব নিয়ম কানুন, আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন। আর তা ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্বের ওপর ভয়াবহ এক আক্রমণ।
সেনাবাহিনী রয়েছে মাদুরোর পক্ষে
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গেই রয়েছে তার দেশের সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার তারা এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ করেছে, তাদের দেশে একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একে একটি অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এসে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মাদুরোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মাদুরোর মন্ত্রিসভার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়েই রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তারা। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাদ্রিনো লোপেজও সেনাবাহিনীর কর্নেল হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০২ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় হুগো শ্যাভেজ সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন তিনি। একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রচারের কারণে তিনি বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, শ্যাভেজ এখনও বেঁচে আছেন। তার মাতৃভূমি এগিয়ে চলছে। স্বাধীন ও সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমি।
পাদ্রিনো লোপেজ যৌথ বাহিনীর প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে এবং পরে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৪ সালে মাদুরো তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। তার মতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের আনুগত্য ভেনিজুয়েলার ভবিষ্যৎ নেতা নির্ধারণ করে দিতে সক্ষম।
মাদুরোকে এরদোগানের ফোন, তুরস্ক আপনার পাশে আছে
ভেনিজুয়েলা সংকটের মধ্যে বুধবারই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ফোন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। তিনি তাকে দৃঢ়তা অবলম্বনের আহ্বান জানান। বলেন, আপনার পাশে আছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা আনাডোলু। ইব্রাহিম কালিন বৃহস্পতিবার টুইটে লিখেছেন, এরদোগানের নেতৃত্ব সব রকম অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান বজায় রাখবে তুরস্ক।
ওদিকে মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে চীনও। তারা বলেছে, ভেনিজুয়েলা সরকার তার জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিইং বলেছেন, চীন আশা করে ভেনিজুয়েলার অন্য দলগুলো তাদের সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাবে এবং রাজনৈতিক বিরোধ সহিংসতা এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে। আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনিজুয়েলার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সমতা, পারস্পরিক সম্মান ও একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মধ্য দিয়ে বজায় থাকুক। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধী চীন। হুয়া চুনিইং বলেন, ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে সব পক্ষই বিরোধিতা করবে। আমি বলতে চাই বাইরের দেশ থেকে অবরোধ এবং হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে। এতে সংকটের সমাধান হবে না।
অবস্থা যখন এই, তখন ভেনিজুয়েলার রাজপথ অস্থির। আর বিদেশি শক্তিগুলো পক্ষ নেয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি, ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক সংকট আরো গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ পর্যন্ত ভয়াবহ এক বিপর্যয় থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ভেনিজুয়েলার শাসক কে হবে- তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে বিজয়ী নিকোলাস মাদুরো নাকি নিজেই নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণাকারী বিরোধী নেতা হুয়ান গাইডো। দেশটির সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান নিকোলাস মাদুরো শপথ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে যে নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমা কিছু দেশ।
অন্যদিকে নিজে নিজে শপথ নিয়ে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন হুয়ান গাইডো। তাকে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এতে চটেছে চীন ও রাশিয়া। একইসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তুরস্ক, সিরিয়া, ইরান ও কিউবা।
সংকট শুরু হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাদুরোকে টেলিফোন করেন। পুতিনের দাবি বাইরে থেকে ভেনিজুয়েলার এ সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। ইঙ্গিত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী শক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং হুয়ান গাইডোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথাও বলেছে দেশটি। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে রাশিয়া। এর আগে দেশটিতে দুটি পরমাণু বোমাবাহী বোম্বারু যুদ্ধবিমানও পাঠায় রাশিয়া।
রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার বলেছেন, আমরা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে নয়, প্রত্যেককে সতর্ক করে দিচ্ছি। ভেনিজুয়েলায় কোনো রকম হস্তক্ষেপ থেকে কী ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে তা সবার জানা উচিত। হুয়ান গাইডোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে আমি মনে করি এই অবস্থান থেকে ভয়াবহ কিছুর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ হলো আগুনে আরো গ্যাস যোগ করা। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তির ব্যবহার করলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। এতে আন্তর্জাতিক বিপুল পরিমাণ সিস্টেমে আঘাত লাগবে, ভেনিজুয়েলাকে আরো রক্তপাতের দিকে ঠেলে দেবে।
এদিকে, রাশিয়ার মিত্র চীনও ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও চীন প্রয়োজনীয় ঋণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে ভেনিজুয়েলাকে। বিশেষ করে চীন সে দেশে বিশাল মাত্রায় বিনিয়োগ করে এসেছে। সে দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্পেও চীনের বড় অবদান রয়েছে। এমন অবস্থায় ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে বিশ্ব স্পষ্টত দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একপক্ষ সমর্থন করছে নিকোলাস মাদুরোকে। অন্যপক্ষ সমর্থন করছে হুয়ান গাইডোকে। এ রাজনীতিতে রয়েছে স্থানীয় কৌশল। তার চেয়ে বড় হয়ে আছে বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ। তাতে সে যে দেশ যাকেই সমর্থন করুক না কেন।
অনলাইন সিএনএন লিখেছে, বিরোধী দলীয় নেতা হুয়ান গাইডোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে রাশিয়া যে সমালোচনা করেছে তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীন, তুরস্ক ও সিরিয়া। এ ইস্যুতে তারা ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সমর্থন জানিয়ে কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাদুরোর বিরুদ্ধে এবং হুয়ান গাইডোকে স্বীকৃতি দেয়ার মার্কিন উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যারা তার মধ্যে রয়েছে বৃটেন, কানাডা, ব্রাজিল, কোস্টারিকা, আর্জেন্টিনা, পেরু, কলোম্বিয়া, ইকুয়েডর, চিলি, স্পেন ও অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সী গাইডোকে স্বীকৃতি দেয়াকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া ও তার মিত্ররা।
গত বুধবার গাইডো নিজে শপথ নিয়ে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। আরো ঘোষণা দেন যে, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এর ফলে ভেনিজুয়েলার ভেতরে ও বাইরে দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ওদিকে হুয়ান গাইডোকে স্বীকৃতি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকোলাস মাদুরো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব কূটনীতিককে তার দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। তবে তার এ নির্দেশকে যুক্তরাষ্ট্র অর্থহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ভেনিজুয়েলা সংকট নিয়ে শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে সিরিয়াও। বৃহস্পতিবার দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপের নিন্দা জানায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকার। এমন হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক সব নিয়ম কানুন, আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন। আর তা ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্বের ওপর ভয়াবহ এক আক্রমণ।
সেনাবাহিনী রয়েছে মাদুরোর পক্ষে
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গেই রয়েছে তার দেশের সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার তারা এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ করেছে, তাদের দেশে একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একে একটি অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এসে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মাদুরোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মাদুরোর মন্ত্রিসভার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়েই রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তারা। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাদ্রিনো লোপেজও সেনাবাহিনীর কর্নেল হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০২ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় হুগো শ্যাভেজ সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন তিনি। একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রচারের কারণে তিনি বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, শ্যাভেজ এখনও বেঁচে আছেন। তার মাতৃভূমি এগিয়ে চলছে। স্বাধীন ও সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমি।
পাদ্রিনো লোপেজ যৌথ বাহিনীর প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে এবং পরে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৪ সালে মাদুরো তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। তার মতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের আনুগত্য ভেনিজুয়েলার ভবিষ্যৎ নেতা নির্ধারণ করে দিতে সক্ষম।
মাদুরোকে এরদোগানের ফোন, তুরস্ক আপনার পাশে আছে
ভেনিজুয়েলা সংকটের মধ্যে বুধবারই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ফোন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। তিনি তাকে দৃঢ়তা অবলম্বনের আহ্বান জানান। বলেন, আপনার পাশে আছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা আনাডোলু। ইব্রাহিম কালিন বৃহস্পতিবার টুইটে লিখেছেন, এরদোগানের নেতৃত্ব সব রকম অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান বজায় রাখবে তুরস্ক।
ওদিকে মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে চীনও। তারা বলেছে, ভেনিজুয়েলা সরকার তার জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিইং বলেছেন, চীন আশা করে ভেনিজুয়েলার অন্য দলগুলো তাদের সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাবে এবং রাজনৈতিক বিরোধ সহিংসতা এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে। আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনিজুয়েলার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সমতা, পারস্পরিক সম্মান ও একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মধ্য দিয়ে বজায় থাকুক। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধী চীন। হুয়া চুনিইং বলেন, ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে সব পক্ষই বিরোধিতা করবে। আমি বলতে চাই বাইরের দেশ থেকে অবরোধ এবং হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে। এতে সংকটের সমাধান হবে না।
অবস্থা যখন এই, তখন ভেনিজুয়েলার রাজপথ অস্থির। আর বিদেশি শক্তিগুলো পক্ষ নেয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি, ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক সংকট আরো গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ পর্যন্ত ভয়াবহ এক বিপর্যয় থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
No comments