‘সরকার আর ১৫ দিন ক্ষমতায়, বেআইনি আদেশ মানবেন না’
আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন,
এই সরকার আর মাত্র ১৫/১৬ দিন ক্ষমতায় আছে। ওদের বেআইনি কোনো আদেশ মানবেন
না। গতকাল বিকালে পুরানা পল্টন ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ
সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে
শ্রদ্ধা জানানো শেষে হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা
হয়। পুলিশের উদ্দেশ্যে ড. কামাল বলেন, দেশে কোনো সরকার আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
কোনো সরকার চিরস্থায়ী নয়। আপনারা বেআইনি আদেশ মানবেন না। আগে দেখবেন আইনানুগ কিনা, সংবিধান ভঙ্গ করবেন না। আমি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি।
দেশের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে। সংবিধানের কথা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন। আজকে যে কাজগুলো করা হচ্ছে। এতে সংবিধান অমান্য করা হচ্ছে। এতে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। ড. কামাল বলেন, পুলিশ ভাইদের জন্য আজ দুঃখ লাগে যে, তাদের বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করে। একটু চিন্তা করে দেখেন- আপনাদের বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে এটা বলে পার পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এটা একটা সভ্য দেশ। এখানে সভ্যতা আমরা রক্ষা করি। সংবিধান এখানে মেনে চলতে হয়। ক্ষমতায় তো সরকার ৫ বছর থাকে। সেই ৫ বছর শেষ। আর কয়দিন আছে। মাত্র ১০, ২০ বা ১৫ দিন। অর্থাৎ যারা এই ১৫ দিন ক্ষমতায় আছেন। মাথা ঠান্ডা করে এসব বেআইনি আদেশ দেয়া বন্ধ করুন। এই মুহূর্তে বন্ধ করুন। তিনি বলেন, এই সরকারের লজ্জা থাকা উচিত। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন আমরা আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হারিয়েছি। তাদের স্মরণেই আমরা এদিনটা উদযাপন করি। এই দিবসে তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে আমাদের কি হয়েছে সেটা চিন্তা করার দরকার নেই। কিন্তু শহীদদের প্রতি তারা অবমাননা করেছে।
এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এটা সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ মেনে নিতে পারে না। কবরস্থানে আমার বাবা যেখানে আছেন সেখানে গিয়ে কেউ যদি এমন ঘটনা ঘটাতো তাহলে কি মনে করতাম। আর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে তো অনেক শহীদ রয়েছেন। আমরা সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে গাড়িতে উঠে চলে আসছি। এমন সময় কিছু ভাড়াটিয়া হামলা করেছে। আমরা কোনো ক্ষতি করিনি। আমরা শ্রদ্ধা জানিয়েছি শহীদদেরকে। এটা যাদের গায়ে লাগে ওরা কারা? যারা পয়সা নিয়ে এগুলো করতে পারে স্মৃতিসৌধে। ওরা ভাড়াটিয়া। ওদের দুই পয়সায় কেনা যায়। তোমাদেরকে আমি চার পয়সা দেব। তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। কয় পয়সা দিয়েছে ওরা। কয় পয়সা পেয়ে তোমরা এগুলো করেছো। এটা কোনো নীতির কাজ হতে পারে না। শহীদদের স্মৃতিসৌধে গিয়ে এগুলো করা কোনো সুস্থ ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না। এই ঘটনায় শহীদদের আত্মা তো অবশ্যই কষ্ট পাওয়ার কথা। ১৪ই ডিসেম্বর যে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এটা ভুলে গেছে তারা। এ সময় তিনি রেগে গিয়ে বলেন, যেসব ছোকড়ারা এই কাজটা করেছে।
আমি দেখলাম কিছু ছোকড়া দৌড়ে দৌড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে। শুনলাম তারা ইটপাটকেল মেরেছে। আহত করেছে। গাড়িগুলো ভাঙার চেষ্টা করেছে। এরা টোকাই। কারা এদের ভাড়া করেছে। হামলার ঘটনার তথ্য আইজিপিকে দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইজিপি সাহেব আমি আপনাকে লিখিত চিঠি পাঠাবো। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করা যায়। দেশে আইন যদি প্রয়োগ করা হয়। আপনার পুলিশদের ব্যাপারে কিছু কথা আমি শুনেছি। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের পুলিশের ব্যাপারে এই কথাগুলো পাবলিকলি শুনতে হচ্ছে। আপনার দায়িত্ববোধ আছে আমি জানি।
আইজি সাহেব আপনার সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা ছিল। যেন সেই ধারণা থাকে। আপনাকে অনুরোধ করব। আপনি আমাদের কথাগুলোকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন। আপনাকে যে তথ্যগুলো দেয়া হবে। আপনি আপনার বিশ্বস্ত লোককে দিয়ে এই হামলার তদন্ত করাবেন। আপনাকে সব রকম সাহায্য করবো। আইনানুগ সহায়তা করবো। আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে এই কাজটা করব। এ সময় আহতদের দেখিয়ে বলেন, তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র সবই আছে। তিনি বলেন, ওখানে আমাদের যারা আইনানুগভাবে কাজ করছে তাদের পুলিশ কার আদেশে অ্যারেস্ট করে? কেন এত অ্যারেস্ট করা হচ্ছে? অ্যারেস্ট, অ্যারেস্ট, অ্যারেস্ট। আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের তথ্য চাই। এদেশে এখনো সংবিধান আছে।
যে সংবিধানে এক নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর রয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, এই দেশের মানুষ আইনের আশ্রয় পাবে। কিন্তু আজ পুলিশ যেটা করেছে এটা সংবিধানের লঙ্ঘন করেছে। বঙ্গবন্ধু যেটা দিয়ে গেছে তারা এটা অমান্য করেছে। বঙ্গবন্ধুর কথাকে বিজয়ের মাসে অমান্য করেছে।
তিনি বলেন, আমি পুলিশ একাডেমিতে বহু বক্তৃতা করেছি। বেআইনি আদেশ তোমরা একদম মানবে না। তোমাদের কর্তব্য আছে। তোমরা মানবে না। এটা পুলিশরা সব জেনে রাখো। যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে তারা চিরস্থায়ী না। কেউ কোনদিন চিরস্থায়ী হয় না। তোমরা ভুলে যেও না। ৫০/৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত তোমরা তো কাজ করবে। পুলিশ থাকবে। এটা মনে রেখে আজ যে বা যারা আদেশ দেয় সেটা যাচাই করবে। দেখবে যাদের ব্যাপারে আদেশ আসছে তারা অন্যায় করেছে কিনা। তোমরা যার কথামতো এগুলো করছো আমাকে জানাতে পারো। বলতে পারো আমরা চাকরি করি।
আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। যারা বাধ্য করছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, এটা বিজয়ের মাস। আমাদের মনে করেছিল নিরস্ত্র বাঙালি। ওরা কি করতে পারবে। কিন্তু আমরা এখন নিরস্ত্র না। অসহায়ও না। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এই দেশ একটা সুন্দর দেশ হোক। শহীদদের আকাঙ্ক্ষিত দেশ হোক। উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা কি আপনাদের আকাঙ্ক্ষিত দেশ। যেখানে মানুষের উপরে হামলা হবে। এটা আমাদের কথা না। দলীয় কথা না। এটা দেশের ১৮ কোটি মানুষের কথা।
ড. কামাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, প্রচারণায় বাধা, ভাঙচুরের মাধ্যমে সারা দেশে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। যা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়। দলীয় সরকারের অধীনে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। এটা অনুভব করেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থান করা হয়েছিল।
৭ দফার অন্যতম দাবি ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। আমরা মনে করি বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপরে এই আক্রমণ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ওপর আক্রমণের শামিল। এই দুর্বৃত্তায়িত আওয়ামী লীগের মুখে স্বাধীনতার কথা মানায় না। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এতদিন জানতাম আওয়ামী লীগের রাগ আছে শুধু বিএনপির প্রতি। এখন দেখি যারাই তাদের বিরদ্ধে যায় তাদের ওপর হামলা করে।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, তৃতীয় শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা কিন্তু কিছুই বলিনি। সব তারাই বলছে। নির্বাচন কমিশন একটা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো বসে আছে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিব্রত বোধ করে নির্বাচন কমিশন। অসহায়ত্ব দেখান। আপনি মসজিদের ইমাম নাকী যে, কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত যে কয়টা ঘটনা ঘটেছে সব কয়টার বিচার করতে হবে। বিচার করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন অব্যাহতি নেন। না হয় সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ধারালো অস্ত্র, লাঠি, হকিস্টিক ও রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা আমাদের ভয় দেখায়। ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। এখানে যারা বসে আছি, এই ড. কামাল হোসেন, আ স ম অবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এরা কেউ ভয় পাওয়ার মতো লোক না। আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তিনি বলেন, ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরানো যাবে না। মরবো কিন্তু সরে যাবো না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই। নির্বাচন করতে চাই। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল মনোনয়ন দাখিল করবেন না। তখন বললাম দাখিল করলে কি হবে? বলে শেষ করে দেব। আমি বলেছিলাম- এর আগে আমাকে ৪ বার শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ যদি কারো হায়াত রাখে কেউ তাকে শেষ করতে পারে না। তিনি বলেন, আজ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে হামলা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা আজ যা করছে তাতে বঙ্গবন্ধু কবরে কান্নাকাটি করছেন।
শেখ হাসিনার মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা, গরিব মানুষের কথা মানায় না। আ স ম রব বলেন, আমাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর পুলিশ চলে যায়। এর পরই হামলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী পতাকা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই পতাকা নামিয়ে প্রটোকল ছাড়া প্রচার চালাতে হবে। তা নাহলে ড. কামাল হোসেনকেও পতাকা ব্যবহার করার সুযোগ দিতে হবে। সরকার ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি- সরকার খিচুড়ি খাইয়ে ২৯ তারিখে লোক দাঁড় করিয়ে রাখবে। রাত ১০টার মধ্যে ভোটের বাক্স ভরে রাখবে। কেন্দ্রে ধানের শীষের ভোটারদের প্রবেশ করতে দেবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশন সরাসরি আমাদের বিপক্ষে এবং সরকারের পক্ষে কাজ করছে। আমরা ২৯ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকবো। তবে ৩০ তারিখ এই কামড় অন্যদিকে চলে যাবে। ৩০ ডিসেম্বর ব্যালটের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটবে। তিনি আরো বলেন, আমরা কর্মসূচি ঠিক করেছি। শনিবার আমরা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রোড মার্চ করবো। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় র্যালি করবো। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল ড. কামাল হোসেনের ওপরে হামলা করার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু এখন দেখছি ক্ষমতার জন্য এই সরকার যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়। কিন্তু এত ভয় কেন? কি এমন করেছেন যে, ক্ষমতা হারাতে এত ভয় পান। এ সময় তিনি বলেন, তাদের কোনো লজ্জা নেই। যদি তাদের সামান্য সম্মানও থাকে তাহলে সরে যাওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, জেএসপি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, ড. রেজা কিবরিয়া, ঢাকা-১৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
কোনো সরকার চিরস্থায়ী নয়। আপনারা বেআইনি আদেশ মানবেন না। আগে দেখবেন আইনানুগ কিনা, সংবিধান ভঙ্গ করবেন না। আমি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি।
দেশের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে। সংবিধানের কথা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন। আজকে যে কাজগুলো করা হচ্ছে। এতে সংবিধান অমান্য করা হচ্ছে। এতে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। ড. কামাল বলেন, পুলিশ ভাইদের জন্য আজ দুঃখ লাগে যে, তাদের বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করে। একটু চিন্তা করে দেখেন- আপনাদের বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে এটা বলে পার পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এটা একটা সভ্য দেশ। এখানে সভ্যতা আমরা রক্ষা করি। সংবিধান এখানে মেনে চলতে হয়। ক্ষমতায় তো সরকার ৫ বছর থাকে। সেই ৫ বছর শেষ। আর কয়দিন আছে। মাত্র ১০, ২০ বা ১৫ দিন। অর্থাৎ যারা এই ১৫ দিন ক্ষমতায় আছেন। মাথা ঠান্ডা করে এসব বেআইনি আদেশ দেয়া বন্ধ করুন। এই মুহূর্তে বন্ধ করুন। তিনি বলেন, এই সরকারের লজ্জা থাকা উচিত। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন আমরা আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হারিয়েছি। তাদের স্মরণেই আমরা এদিনটা উদযাপন করি। এই দিবসে তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে আমাদের কি হয়েছে সেটা চিন্তা করার দরকার নেই। কিন্তু শহীদদের প্রতি তারা অবমাননা করেছে।
এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এটা সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ মেনে নিতে পারে না। কবরস্থানে আমার বাবা যেখানে আছেন সেখানে গিয়ে কেউ যদি এমন ঘটনা ঘটাতো তাহলে কি মনে করতাম। আর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে তো অনেক শহীদ রয়েছেন। আমরা সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে গাড়িতে উঠে চলে আসছি। এমন সময় কিছু ভাড়াটিয়া হামলা করেছে। আমরা কোনো ক্ষতি করিনি। আমরা শ্রদ্ধা জানিয়েছি শহীদদেরকে। এটা যাদের গায়ে লাগে ওরা কারা? যারা পয়সা নিয়ে এগুলো করতে পারে স্মৃতিসৌধে। ওরা ভাড়াটিয়া। ওদের দুই পয়সায় কেনা যায়। তোমাদেরকে আমি চার পয়সা দেব। তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। কয় পয়সা দিয়েছে ওরা। কয় পয়সা পেয়ে তোমরা এগুলো করেছো। এটা কোনো নীতির কাজ হতে পারে না। শহীদদের স্মৃতিসৌধে গিয়ে এগুলো করা কোনো সুস্থ ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না। এই ঘটনায় শহীদদের আত্মা তো অবশ্যই কষ্ট পাওয়ার কথা। ১৪ই ডিসেম্বর যে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এটা ভুলে গেছে তারা। এ সময় তিনি রেগে গিয়ে বলেন, যেসব ছোকড়ারা এই কাজটা করেছে।
আমি দেখলাম কিছু ছোকড়া দৌড়ে দৌড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে। শুনলাম তারা ইটপাটকেল মেরেছে। আহত করেছে। গাড়িগুলো ভাঙার চেষ্টা করেছে। এরা টোকাই। কারা এদের ভাড়া করেছে। হামলার ঘটনার তথ্য আইজিপিকে দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইজিপি সাহেব আমি আপনাকে লিখিত চিঠি পাঠাবো। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করা যায়। দেশে আইন যদি প্রয়োগ করা হয়। আপনার পুলিশদের ব্যাপারে কিছু কথা আমি শুনেছি। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের পুলিশের ব্যাপারে এই কথাগুলো পাবলিকলি শুনতে হচ্ছে। আপনার দায়িত্ববোধ আছে আমি জানি।
আইজি সাহেব আপনার সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা ছিল। যেন সেই ধারণা থাকে। আপনাকে অনুরোধ করব। আপনি আমাদের কথাগুলোকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন। আপনাকে যে তথ্যগুলো দেয়া হবে। আপনি আপনার বিশ্বস্ত লোককে দিয়ে এই হামলার তদন্ত করাবেন। আপনাকে সব রকম সাহায্য করবো। আইনানুগ সহায়তা করবো। আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে এই কাজটা করব। এ সময় আহতদের দেখিয়ে বলেন, তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র সবই আছে। তিনি বলেন, ওখানে আমাদের যারা আইনানুগভাবে কাজ করছে তাদের পুলিশ কার আদেশে অ্যারেস্ট করে? কেন এত অ্যারেস্ট করা হচ্ছে? অ্যারেস্ট, অ্যারেস্ট, অ্যারেস্ট। আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের তথ্য চাই। এদেশে এখনো সংবিধান আছে।
যে সংবিধানে এক নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর রয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, এই দেশের মানুষ আইনের আশ্রয় পাবে। কিন্তু আজ পুলিশ যেটা করেছে এটা সংবিধানের লঙ্ঘন করেছে। বঙ্গবন্ধু যেটা দিয়ে গেছে তারা এটা অমান্য করেছে। বঙ্গবন্ধুর কথাকে বিজয়ের মাসে অমান্য করেছে।
তিনি বলেন, আমি পুলিশ একাডেমিতে বহু বক্তৃতা করেছি। বেআইনি আদেশ তোমরা একদম মানবে না। তোমাদের কর্তব্য আছে। তোমরা মানবে না। এটা পুলিশরা সব জেনে রাখো। যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে তারা চিরস্থায়ী না। কেউ কোনদিন চিরস্থায়ী হয় না। তোমরা ভুলে যেও না। ৫০/৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত তোমরা তো কাজ করবে। পুলিশ থাকবে। এটা মনে রেখে আজ যে বা যারা আদেশ দেয় সেটা যাচাই করবে। দেখবে যাদের ব্যাপারে আদেশ আসছে তারা অন্যায় করেছে কিনা। তোমরা যার কথামতো এগুলো করছো আমাকে জানাতে পারো। বলতে পারো আমরা চাকরি করি।
আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। যারা বাধ্য করছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, এটা বিজয়ের মাস। আমাদের মনে করেছিল নিরস্ত্র বাঙালি। ওরা কি করতে পারবে। কিন্তু আমরা এখন নিরস্ত্র না। অসহায়ও না। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এই দেশ একটা সুন্দর দেশ হোক। শহীদদের আকাঙ্ক্ষিত দেশ হোক। উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা কি আপনাদের আকাঙ্ক্ষিত দেশ। যেখানে মানুষের উপরে হামলা হবে। এটা আমাদের কথা না। দলীয় কথা না। এটা দেশের ১৮ কোটি মানুষের কথা।
ড. কামাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, প্রচারণায় বাধা, ভাঙচুরের মাধ্যমে সারা দেশে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। যা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়। দলীয় সরকারের অধীনে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। এটা অনুভব করেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থান করা হয়েছিল।
৭ দফার অন্যতম দাবি ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। আমরা মনে করি বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপরে এই আক্রমণ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ওপর আক্রমণের শামিল। এই দুর্বৃত্তায়িত আওয়ামী লীগের মুখে স্বাধীনতার কথা মানায় না। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এতদিন জানতাম আওয়ামী লীগের রাগ আছে শুধু বিএনপির প্রতি। এখন দেখি যারাই তাদের বিরদ্ধে যায় তাদের ওপর হামলা করে।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, তৃতীয় শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা কিন্তু কিছুই বলিনি। সব তারাই বলছে। নির্বাচন কমিশন একটা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো বসে আছে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিব্রত বোধ করে নির্বাচন কমিশন। অসহায়ত্ব দেখান। আপনি মসজিদের ইমাম নাকী যে, কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত যে কয়টা ঘটনা ঘটেছে সব কয়টার বিচার করতে হবে। বিচার করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন অব্যাহতি নেন। না হয় সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ধারালো অস্ত্র, লাঠি, হকিস্টিক ও রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা আমাদের ভয় দেখায়। ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। এখানে যারা বসে আছি, এই ড. কামাল হোসেন, আ স ম অবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এরা কেউ ভয় পাওয়ার মতো লোক না। আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তিনি বলেন, ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরানো যাবে না। মরবো কিন্তু সরে যাবো না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই। নির্বাচন করতে চাই। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল মনোনয়ন দাখিল করবেন না। তখন বললাম দাখিল করলে কি হবে? বলে শেষ করে দেব। আমি বলেছিলাম- এর আগে আমাকে ৪ বার শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ যদি কারো হায়াত রাখে কেউ তাকে শেষ করতে পারে না। তিনি বলেন, আজ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে হামলা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা আজ যা করছে তাতে বঙ্গবন্ধু কবরে কান্নাকাটি করছেন।
শেখ হাসিনার মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা, গরিব মানুষের কথা মানায় না। আ স ম রব বলেন, আমাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর পুলিশ চলে যায়। এর পরই হামলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী পতাকা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই পতাকা নামিয়ে প্রটোকল ছাড়া প্রচার চালাতে হবে। তা নাহলে ড. কামাল হোসেনকেও পতাকা ব্যবহার করার সুযোগ দিতে হবে। সরকার ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি- সরকার খিচুড়ি খাইয়ে ২৯ তারিখে লোক দাঁড় করিয়ে রাখবে। রাত ১০টার মধ্যে ভোটের বাক্স ভরে রাখবে। কেন্দ্রে ধানের শীষের ভোটারদের প্রবেশ করতে দেবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশন সরাসরি আমাদের বিপক্ষে এবং সরকারের পক্ষে কাজ করছে। আমরা ২৯ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকবো। তবে ৩০ তারিখ এই কামড় অন্যদিকে চলে যাবে। ৩০ ডিসেম্বর ব্যালটের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটবে। তিনি আরো বলেন, আমরা কর্মসূচি ঠিক করেছি। শনিবার আমরা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রোড মার্চ করবো। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় র্যালি করবো। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল ড. কামাল হোসেনের ওপরে হামলা করার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু এখন দেখছি ক্ষমতার জন্য এই সরকার যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়। কিন্তু এত ভয় কেন? কি এমন করেছেন যে, ক্ষমতা হারাতে এত ভয় পান। এ সময় তিনি বলেন, তাদের কোনো লজ্জা নেই। যদি তাদের সামান্য সম্মানও থাকে তাহলে সরে যাওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, জেএসপি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, ড. রেজা কিবরিয়া, ঢাকা-১৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
No comments