সিইসির নির্দেশিত তদন্ত ফল প্রকাশ পাবে কি?
প্রধান
নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা নির্দেশিত তদন্ত ফলাফল জানতে অনেকেরই
আগ্রহ থাকবে। তৃতীয় পক্ষ এবং পাঁয়তারা বিষয়ে কথা বলে তিনি আকস্মিকভাবে
কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই সহিংসতা এবং রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দু’জন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এলাকায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি কোথাও কারো প্রশাসনিক ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে জানা যায়নি।
খুলনায় কমিশনার রদবদল এবং গাজীপুর এসিপিকে সরিয়ে নারায়ণগঞ্জে দেয়া ছাড়া আরো কোথাও কোনো রদবদল ঘটেনি। সিইসি এবং তার সহকর্মীগণ বলছেন, অভিযোগ না পেলে তারা কিছু করবেন না। কিন্তু গত কয়েকদিনে বিরোধীদলীয় সমাবেশে যেভাবে হামলার ব্যাপকতা বাড়ছে তাতে অনেকের মতে ইসি নিশ্চিত থাকতে পারে যে, আক্রান্তরা অভিযোগ করে তাদের ভারক্রান্ত করার অবস্থায় নাও থাকতে পারেন।
যদি কিছু করার থাকে তাহলে তাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রায় পাইকারি হারে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনায়নপত্র নাকচ করেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটে বেশকিছু প্রার্থীর বৈধতা ফিরিয়ে দিয়ে সিইসি’র ম্লান ভাবমূর্তি কিছুটা উদ্ধার হয়েছিল। ন্যায়পরায়ণতার জন্য বিএনপি মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার রেশ না কাটতেই সিইসি কার্যত বিএনপি’র বিরুদ্ধ সরকারি মহলের আনা অব্যাহত আগুন সন্ত্রাসের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে দিলেন। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের দু’জনের মৃত্যুই হয়তো সিইসিকে উদ্বিগ্ন করে থাকবে। দু’টি খুন বলেই কি তিনি এতটা বিচলিত নাকি তার কাছে অন্যবিধ ম্যাসেজ আছে, সেটা একটা প্রশ্ন। আবার তার আশঙ্কা কি তিনি ব্যক্তিতগভাবে করেছেন, নাকি পাঁচ সদস্যের ইসি’র এটি মত? তাকে লিখিত ভাষণে ওই আশঙ্কা ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে ইসিকে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি।
৬ই জানুয়ারি ২০১৪ প্রথম আলোর রিপোর্টে তথ্য দেয়া হয়েছিল, ‘একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন গতকাল রোববার ১৯ জন নিহত হয়েছে। এদের প্রায় সবাই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে ১৫ জনই পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। দেশে ভোটের দিন এতো প্রাণহানি এর আগে ঘটেনি।’ তাহলে ২০১৪ সালের নির্বাচনী সহিংসতার সঙ্গে তিনি ২০১৮ সালের তুলনা কোন দিক থেকে করেছেন, সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়। বিরোধীরা নির্বাচনে না গিয়েও যদি ১৯ জন নিহত হয়, তাহলে কি সিইসি তারা অংশ নেবে বলে আরো বেশি সসিহংসতার আশঙ্কা করছেন। গত কয়েকদিনে যেভাবে হামলার ঘটনা ঘটছে, তার সঙ্গে সিইসি’র যুক্তির সবটা বিবেচনায় নিলে অসঙ্গতি ঠেকে।
সিইসি’র কথায় ২০১৫ সালের বিরোধীদলীয় অবরোধ চলাকালে পেট্রলবোমায় ৩৫ দিনে ৯৭ ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারিতে সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবং পরেরদিন থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ ও বিচ্ছিন্নভাবে চলা হরতালে সহিংসতার বিস্তার ঘটে।
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ৩ মাসে নিহত হয়েছেন ১৩৮ জন। সরকারি সূত্রের দাবি ছিল, পুলিশি হিসাবে অবরোধে সহিংসতা ও নাশকতায় নিহত হয়েছেন ৯৮ জন। তাদের ৭৪ জন পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে ও ককটেলের আঘাতে মারা গেছেন। দগ্ধ হয়েছেন ২৮১ জন। সংঘর্ষে ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ১০ জন নিহত হন অন্যান্য নাশকতায়। পুলিশের হিসাবে এই ৯৮ জনের ৮২ জনই সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে পরিবহন শ্রমিক ৭৪ জন। এখন প্রশ্ন হলো সিইসি আসলে কিসের ভয় করছেন? নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিনে নাকি নির্বাচনের পরে, এটা পরিষ্কার হয়নি।
তবে তার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন কারণ তিনি বলেছেন তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন।
এখন এই তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি নেই সে বিষয়টি তিনি নির্বাচনের আগে জাতিকে জানানোটা প্রয়োজন হবে। জানাতে পারলে মানুষের ভয় ঘুচবে। এমনিতেই ভয়ভীতির কমতি নেই। তার উপরে কিছু লোক যদি সিইসি’র নিজের ভয় শুনে আরো ভীত হয়ে পড়ে সেটা নিশ্চয় সিইসি চাইবেন না। সে কারণে সিইসি’র ওই ঘোষণার পরে তার এবং তার সহকর্মীদের উচিত হবে তদন্ত ফলাফল প্রকাশ করা এবং সেটা যতো দ্রুত করবেন, ততোই সবার জন্য মঙ্গল হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য তা আরো বেশি কার্যকর ফলপ্রসূ বলে গণ্য হবে।
ভোটের ভাগ্য যাতে মাস্তান সন্ত্রাসীদের হাতে চলে না যায় সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন, কিন্তু এখন হামলাগুলো কারা করছে? পর্যবেক্ষকদের কারো কারো মতে, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার প্রক্রিয়ার হামলাগুলো যদি তিনি পর্যালোচনা করে দেখেন, তাহলে তিনি দেখবেন যে নির্বাচন প্রচারণা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্যভাবে মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। কিন্তু সে কারণে তিনি বাহিনীগুলোকে কিভাবে সতর্ক করেছেন এবং এগুলো খতিয়ে দেখতে বলছেন সেটা জনগণের কাছে পরিষ্কার করা দরকার।
কারণ তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর থেকে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে যা তার নিজের এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হয়নি। তিনি যত ভালোভাবেই আপিলগুলো নিষ্পত্তি করুন না কেন, কারো কারো দাবি তিনি যে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, তা সরকারি দলের পছন্দের বাইরে যাওয়ার কথা নয়।
কেউ আবার বলছেন, তিনি বাংলাদেশের নির্বাচনকে বিতর্ক মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজের ভাগ্নেকে নির্বাচনে দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেছিলেন কি-না, সেটা জনগণ জানতে চায়। সেটা না দিলে তার ব্যক্তিগত কমিটমেন্টের প্রশ্ন অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ থাকতে পারে। নির্বাচনে তার ভাগ্নেকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে তিনি নিয়ম রক্ষা করতে পারেননি। তার ভাগ্নে যে, কোনো ভালো ক্যান্ডিডেট নন, সে বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকেই প্রশ্ন আছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগাররা যে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সে কথা তার অজানা ছিল না। কারো মতে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়ে নিজেই একটি পরোক্ষ নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের পক্ষ হয়েছেন বলে প্রতিয়মান হতে পারে। কারণ নির্বাচনী বিধান এমনই যে তৃণমূল পর্যায় থেকে মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি বাছাই করে নিবে। কিন্তু তার এটা অজানা নয় যে, তার ভাগ্নেকে পটুয়াখালীর সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা প্যানেলভুক্ত করেননি। বরং ওই আসেন ভাগ্নের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা খ ম জাহাঙ্গীর। তিনি একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং তিনি সাংবাদিকদের বলছেন, তার এলাকায় একটি আসমানি বালা কায়েম হয়েছে। তার একটাই পরিচয়, তিনি অমুকের আত্মীয়। এ কথা বলার পরেও কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।
সিইসি গত পরশু বলেছেন, ‘পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজন’। সেটা কোনটা? পর্যবেক্ষকরা বলছেন পিছনের ঘটনার রেশ যদি টানতেই হয়, তাহলে একটি ঘটনার কেন, অন্তত ১৯৯০ সালের পরে অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন এবং তার প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে, সবটাই বিবেচনায় নিতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অতীতে ভোটারবিহীন নির্বাচন এদেশে কিভাবে হয়েছে, সেটা তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জাতি তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে সক্রিয় দেখেছিল।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তার ভাষায় তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, নাকি তিনি একবছর পরের বিরোধী দলের অবরোধকালের আগুন সন্ত্রাসকে নাকি উভয়পর্বকে বুঝিয়েছেন?
সেই ঘটনার আলোকে আমাদের এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। সবাই অপেক্ষা করবে, তিনি প্রস্তুতির রূপরেখটা প্রকাশ করবেন। গোপন রাখেবন না। অন্তত ৫ সদ্যসের কমিশন সভায় তা প্রকাশ করবেন। সব কমিশনারকে আস্থায় নেবেন।
তিনি বলেন, তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল সশস্ত্র বাহিনী ছিল, পুলিশ বাহিনী ছিল, র্যাব ছিল, বিজেপি ছিল, তবুও আমরা কি দেখেছিলাম পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল প্রিজাইডিং অফিসার নিহত হয়েছিল, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছে, শ’ শ’ মানুষ নিহত হয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে সেটা কি প্রেক্ষিত ছিল আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
এখানেই খটকা, শ’ শ’ মানুষতো ২০১৪ সাল মারা যায়নি।
তবে গত কয়েকদিন হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ যা ঘটছে, তারপর তিনি কি বলবেন, সেটা জানা দরকারি। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা তাকে বিব্রত করেছিল, এখন ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইদ, মওদুদ আহমদ এবং ড. মঈন খানের মতো ব্যক্তিত্বের ওপর হামলাগুলো বিষয়ে তিনি কি বলেন, সেটা একটা জিজ্ঞাসা বটে। সিইসি’র কথাটাকেই লাগাতার হামালাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আরো তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সচেতন মহল:‘দুটো জীবনের মূল’ অনেক।... ওগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক সামাজিক কারণ নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে কি না?
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই সহিংসতা এবং রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দু’জন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এলাকায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি কোথাও কারো প্রশাসনিক ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে জানা যায়নি।
খুলনায় কমিশনার রদবদল এবং গাজীপুর এসিপিকে সরিয়ে নারায়ণগঞ্জে দেয়া ছাড়া আরো কোথাও কোনো রদবদল ঘটেনি। সিইসি এবং তার সহকর্মীগণ বলছেন, অভিযোগ না পেলে তারা কিছু করবেন না। কিন্তু গত কয়েকদিনে বিরোধীদলীয় সমাবেশে যেভাবে হামলার ব্যাপকতা বাড়ছে তাতে অনেকের মতে ইসি নিশ্চিত থাকতে পারে যে, আক্রান্তরা অভিযোগ করে তাদের ভারক্রান্ত করার অবস্থায় নাও থাকতে পারেন।
যদি কিছু করার থাকে তাহলে তাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রায় পাইকারি হারে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনায়নপত্র নাকচ করেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটে বেশকিছু প্রার্থীর বৈধতা ফিরিয়ে দিয়ে সিইসি’র ম্লান ভাবমূর্তি কিছুটা উদ্ধার হয়েছিল। ন্যায়পরায়ণতার জন্য বিএনপি মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার রেশ না কাটতেই সিইসি কার্যত বিএনপি’র বিরুদ্ধ সরকারি মহলের আনা অব্যাহত আগুন সন্ত্রাসের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে দিলেন। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের দু’জনের মৃত্যুই হয়তো সিইসিকে উদ্বিগ্ন করে থাকবে। দু’টি খুন বলেই কি তিনি এতটা বিচলিত নাকি তার কাছে অন্যবিধ ম্যাসেজ আছে, সেটা একটা প্রশ্ন। আবার তার আশঙ্কা কি তিনি ব্যক্তিতগভাবে করেছেন, নাকি পাঁচ সদস্যের ইসি’র এটি মত? তাকে লিখিত ভাষণে ওই আশঙ্কা ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে ইসিকে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি।
৬ই জানুয়ারি ২০১৪ প্রথম আলোর রিপোর্টে তথ্য দেয়া হয়েছিল, ‘একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন গতকাল রোববার ১৯ জন নিহত হয়েছে। এদের প্রায় সবাই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে ১৫ জনই পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। দেশে ভোটের দিন এতো প্রাণহানি এর আগে ঘটেনি।’ তাহলে ২০১৪ সালের নির্বাচনী সহিংসতার সঙ্গে তিনি ২০১৮ সালের তুলনা কোন দিক থেকে করেছেন, সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়। বিরোধীরা নির্বাচনে না গিয়েও যদি ১৯ জন নিহত হয়, তাহলে কি সিইসি তারা অংশ নেবে বলে আরো বেশি সসিহংসতার আশঙ্কা করছেন। গত কয়েকদিনে যেভাবে হামলার ঘটনা ঘটছে, তার সঙ্গে সিইসি’র যুক্তির সবটা বিবেচনায় নিলে অসঙ্গতি ঠেকে।
সিইসি’র কথায় ২০১৫ সালের বিরোধীদলীয় অবরোধ চলাকালে পেট্রলবোমায় ৩৫ দিনে ৯৭ ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারিতে সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবং পরেরদিন থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ ও বিচ্ছিন্নভাবে চলা হরতালে সহিংসতার বিস্তার ঘটে।
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ৩ মাসে নিহত হয়েছেন ১৩৮ জন। সরকারি সূত্রের দাবি ছিল, পুলিশি হিসাবে অবরোধে সহিংসতা ও নাশকতায় নিহত হয়েছেন ৯৮ জন। তাদের ৭৪ জন পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে ও ককটেলের আঘাতে মারা গেছেন। দগ্ধ হয়েছেন ২৮১ জন। সংঘর্ষে ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ১০ জন নিহত হন অন্যান্য নাশকতায়। পুলিশের হিসাবে এই ৯৮ জনের ৮২ জনই সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে পরিবহন শ্রমিক ৭৪ জন। এখন প্রশ্ন হলো সিইসি আসলে কিসের ভয় করছেন? নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিনে নাকি নির্বাচনের পরে, এটা পরিষ্কার হয়নি।
তবে তার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন কারণ তিনি বলেছেন তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন।
এখন এই তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি নেই সে বিষয়টি তিনি নির্বাচনের আগে জাতিকে জানানোটা প্রয়োজন হবে। জানাতে পারলে মানুষের ভয় ঘুচবে। এমনিতেই ভয়ভীতির কমতি নেই। তার উপরে কিছু লোক যদি সিইসি’র নিজের ভয় শুনে আরো ভীত হয়ে পড়ে সেটা নিশ্চয় সিইসি চাইবেন না। সে কারণে সিইসি’র ওই ঘোষণার পরে তার এবং তার সহকর্মীদের উচিত হবে তদন্ত ফলাফল প্রকাশ করা এবং সেটা যতো দ্রুত করবেন, ততোই সবার জন্য মঙ্গল হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য তা আরো বেশি কার্যকর ফলপ্রসূ বলে গণ্য হবে।
ভোটের ভাগ্য যাতে মাস্তান সন্ত্রাসীদের হাতে চলে না যায় সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন, কিন্তু এখন হামলাগুলো কারা করছে? পর্যবেক্ষকদের কারো কারো মতে, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার প্রক্রিয়ার হামলাগুলো যদি তিনি পর্যালোচনা করে দেখেন, তাহলে তিনি দেখবেন যে নির্বাচন প্রচারণা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্যভাবে মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। কিন্তু সে কারণে তিনি বাহিনীগুলোকে কিভাবে সতর্ক করেছেন এবং এগুলো খতিয়ে দেখতে বলছেন সেটা জনগণের কাছে পরিষ্কার করা দরকার।
কারণ তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর থেকে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে যা তার নিজের এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হয়নি। তিনি যত ভালোভাবেই আপিলগুলো নিষ্পত্তি করুন না কেন, কারো কারো দাবি তিনি যে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, তা সরকারি দলের পছন্দের বাইরে যাওয়ার কথা নয়।
কেউ আবার বলছেন, তিনি বাংলাদেশের নির্বাচনকে বিতর্ক মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজের ভাগ্নেকে নির্বাচনে দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেছিলেন কি-না, সেটা জনগণ জানতে চায়। সেটা না দিলে তার ব্যক্তিগত কমিটমেন্টের প্রশ্ন অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ থাকতে পারে। নির্বাচনে তার ভাগ্নেকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে তিনি নিয়ম রক্ষা করতে পারেননি। তার ভাগ্নে যে, কোনো ভালো ক্যান্ডিডেট নন, সে বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকেই প্রশ্ন আছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগাররা যে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সে কথা তার অজানা ছিল না। কারো মতে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়ে নিজেই একটি পরোক্ষ নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের পক্ষ হয়েছেন বলে প্রতিয়মান হতে পারে। কারণ নির্বাচনী বিধান এমনই যে তৃণমূল পর্যায় থেকে মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি বাছাই করে নিবে। কিন্তু তার এটা অজানা নয় যে, তার ভাগ্নেকে পটুয়াখালীর সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা প্যানেলভুক্ত করেননি। বরং ওই আসেন ভাগ্নের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা খ ম জাহাঙ্গীর। তিনি একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং তিনি সাংবাদিকদের বলছেন, তার এলাকায় একটি আসমানি বালা কায়েম হয়েছে। তার একটাই পরিচয়, তিনি অমুকের আত্মীয়। এ কথা বলার পরেও কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।
সিইসি গত পরশু বলেছেন, ‘পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজন’। সেটা কোনটা? পর্যবেক্ষকরা বলছেন পিছনের ঘটনার রেশ যদি টানতেই হয়, তাহলে একটি ঘটনার কেন, অন্তত ১৯৯০ সালের পরে অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন এবং তার প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে, সবটাই বিবেচনায় নিতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অতীতে ভোটারবিহীন নির্বাচন এদেশে কিভাবে হয়েছে, সেটা তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জাতি তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে সক্রিয় দেখেছিল।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তার ভাষায় তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, নাকি তিনি একবছর পরের বিরোধী দলের অবরোধকালের আগুন সন্ত্রাসকে নাকি উভয়পর্বকে বুঝিয়েছেন?
সেই ঘটনার আলোকে আমাদের এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। সবাই অপেক্ষা করবে, তিনি প্রস্তুতির রূপরেখটা প্রকাশ করবেন। গোপন রাখেবন না। অন্তত ৫ সদ্যসের কমিশন সভায় তা প্রকাশ করবেন। সব কমিশনারকে আস্থায় নেবেন।
তিনি বলেন, তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল সশস্ত্র বাহিনী ছিল, পুলিশ বাহিনী ছিল, র্যাব ছিল, বিজেপি ছিল, তবুও আমরা কি দেখেছিলাম পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল প্রিজাইডিং অফিসার নিহত হয়েছিল, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছে, শ’ শ’ মানুষ নিহত হয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে সেটা কি প্রেক্ষিত ছিল আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
এখানেই খটকা, শ’ শ’ মানুষতো ২০১৪ সাল মারা যায়নি।
তবে গত কয়েকদিন হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ যা ঘটছে, তারপর তিনি কি বলবেন, সেটা জানা দরকারি। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা তাকে বিব্রত করেছিল, এখন ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইদ, মওদুদ আহমদ এবং ড. মঈন খানের মতো ব্যক্তিত্বের ওপর হামলাগুলো বিষয়ে তিনি কি বলেন, সেটা একটা জিজ্ঞাসা বটে। সিইসি’র কথাটাকেই লাগাতার হামালাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আরো তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সচেতন মহল:‘দুটো জীবনের মূল’ অনেক।... ওগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক সামাজিক কারণ নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে কি না?
No comments