ইতিবাচক অগ্রগতি দেখছে বিএনপি by কাফি কামাল
জাতীয়
ঐক্যপ্রক্রিয়ায় ইতিবাচক অগ্রগতি দেখছে বিএনপি। কারাগারে যাওয়ার আগে জাতীয়
ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ‘জাতীয়
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া,
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে
সেনা মোতায়েন’-এর মতো যেসব দাবিকে সামনে রেখে তিনি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
জানিয়েছিলেন তা এখন নিজেদের দাবি হিসেবে গ্রহণ করেছে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া
সংশ্লিষ্ট দলগুলো। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়ে একমত
পোষণের পাশাপাশি নিজেরাই সে দাবি উচ্চারণ করেছে নাগরিক সমাবেশে। ইতিবাচক
অগ্রগতি হয়েছে অন্য আরেকটি জায়গায়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের শরিক
দল জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় একটি টানাপড়েন ছিল এতদিন। জামায়াতের
সঙ্গে জোটবদ্ধ রাজনীতি ও স্বতন্ত্রভাবে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার অংশগ্রহণে
বিএনপির কৌশলটি দুইপক্ষেই পেয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। যার প্রেক্ষিতে, জোটের ঐক্য
ধরে রেখে জাতীয় ঐক্যে এগোনোর সুযোগ তৈরি হয়েছে বিএনপির সামনে। আর
সন্দেহ-সংশয়ের ঘূর্ণাবর্ত পেরিয়ে নাগরিক সমাবেশে বিকল্প ধারা সভাপতি ও
সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর অংশগ্রহণটিই এখন
পর্যন্ত সবচেয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিএনপিসহ রাজনৈতিক
মহলে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে কোনো জটিলতা নেই এখন।
প্রচারণা ছিল, নেতৃত্ব নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মধ্যে এবং এই দুইজনের সঙ্গে
বিএনপির কিছুটা মতদ্বৈততা আছে। কিন্তু শনিবারের সমাবেশে সে প্রচারণা হাওয়ায়
উড়ে গেছে। বিএনপি নেতারা বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা নেই। যৌথ
নেতৃত্বে পরিচালিত হবে চলমান জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও আন্দোলন। শনিবারের
নাগরিক সমাবেশ শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটিসহ দলটির নানা পর্যায়ের নেতাকর্মী ও
জোট নেতারা এমন মনোভাব পোষণ করেছেন।
জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সার্বিক অগ্রগতিকে ইতিবাচক বিবেচনা করেই শনিবারের নাগরিক সমাবেশে অংশ নেয় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদল। সেখানে বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্যে ঐক্যের উদ্যোক্তাদের নানা বিশেষণে সম্মান দেখান। বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে ড. কামাল হোসেনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘জাতির এ চরম দুর্দিনে তিনি দেশবাসীকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন’। উদ্যোক্তাদের ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ড. কামাল হোসেনকে ‘বাংলাদেশের গৌরব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াকে বিএনপি কতটুকু ইতিবাচকভাবে দেখছে তা তাদের বক্তব্যেই প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঐক্যের পথে একধাপ এগিয়ে গেছি।’ কারাগার থেকে খালেদা জিয়া ঐক্যের তাগিদ দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে দেশকে রক্ষা করার প্রক্রিয়ার সূচনা হলো। আমি মনে করি, সারা দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।’
জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার গতি-প্রকৃতি ও কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রয়েছে নানা কৌতূহল। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলের ক্ষেত্রে ‘আন্দোলন’ শব্দটির ভেতর দিয়ে সরকারের তরফে প্রচারণা চালানো হয় একটি নেতিবাচক আশঙ্কার। এবার নতুন ধারার একটি আন্দোলন করতে চায় জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দলগুলো। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সে আন্দোলন এগিয়ে যাবে। কর্মসূচিতে ধ্বংসাত্মক প্রকাশ নয়, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত এবং বিপুল অংশগ্রহণের মাধ্যমে চাপ তৈরি করা হবে সরকারের ওপর। জনমতের ভিত্তিতে অনুকূলে আনা হবে কূটনীতিক সমর্থন। জনমতের চাপেই খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করা হবে। তবে গণতান্ত্রিক রীতি মেনে প্রথমে আলোচনার পথে হাঁটবে, পরে কড়া কর্মসূচি দেয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে নাগরিক সমাবেশের যৌথ প্রস্তাবে উত্থাপিত দাবিগুলো পূরণে সরকারকে ৩১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়ার পাশাপাশি দাবি পূরণ না হলে ১লা অক্টোবর থেকে সারা দেশে সমাবেশের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের নেতারা। আগামীতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া হবে আন্দোলন। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে যেভাবে সারা দেশে ধরপাকড় চালাচ্ছে বৃহত্তর ঐক্যপ্রতিষ্ঠা ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। সে জন্য কিছু স্যাক্রিফাইস যদি করতে হয়, করতে হবে। সবসময় সবাইকে সামনে আসার কি দরকার। যখন নির্বাচন আসবে তখন রাজনীতিতে নতুন বিবেচনা আসতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির যে অঙ্গীকার সেটা অর্জনের লক্ষ্য পূরণে এ বৃহত্তর ঐক্যের পথযাত্রা জাতীয় রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক ঘটনা।
২০দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানান, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম আহূত জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জোটের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও জোটের শরিক দল জামায়াতের ব্যাপারে ঐক্যের উদ্যোক্তাদের মনোভাব নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। সেসব বৈঠকে নেতারা একমত হন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। কিন্তু জামায়াত ইস্যুতে বিষয়টি আটকে ছিল বেশকিছুদিন। একদিকে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের তরফে আপত্তি ছিল জামায়াতের ব্যাপারে অন্যদিকে জামায়াতকে বাদ দিয়ে এ ঐক্যের ব্যাপারে সংশয় ছিল জোটসহ বিএনপির একাংশের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে একটি অবস্থানে এসে পৌঁছে বিএনপি। বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার পরামর্শ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট আলোচনার মাধ্যমে এই সমাধানে পৌঁছে দলটি। সিদ্ধান্ত হয়, জোটের শরিক দল হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে জোটের রাজনীতিতে ঐক্য ধরে রাখবে বিএনপি। অন্যদিকে স্বতন্ত্র দল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায়। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার তরফে জোটের বেশকিছু দলকে স্বতন্ত্রভাবে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ করায় সহজ হয়ে যায় বিএনপির এ কৌশল। জামায়াত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামায়াত নেতারাও মনে করেন দেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে এ ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে তাদের মনে। আর সন্দেহ-সংশয় থেকে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। দলীয় ফোরাম ও শুভাকাঙক্ষী মহলে তারা এ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা সন্দেহ করছেন, সরকার সমর্থক কোনো শক্তি এ জোটের গতিপথ ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে পারে। তবে আপাতত এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেবে না জামায়াত। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াবিরোধী কোনো অবস্থানও নেবে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। পরিস্থিতি মেনেই পরিবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বড় কোনো জটিলতা তৈরি না হলে জামায়াত জাতীয় ঐক্যবিরোধী অবস্থানে যাবে না। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা দলগুলোর নেতারা জানান, জামায়াত ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও ২০দলীয় জোটের মধ্যে যতটুকু টানাপড়েনের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে বাস্তবে ততটুকু জটিলতা নেই। জাতীয় ঐক্য স্বাধীনতার পক্ষের দল নিয়ে ঐক্য ও আন্দোলন করবে। জামায়াতকে সেখানে যুক্ত করা হবে না। এখন জামায়াতকে কীভাবে হ্যান্ডেল করবে সেটা বিএনপির বিষয়। বিএনপি এখন পর্যন্ত সেটা সফলভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছে বলেই তারা অংশগ্রহণ করতে পেরেছে নাগরিক সমাবেশে।
২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা ২০ দল জোটবদ্ধভাবে রাজনীতি করি, আমাদের প্রধান শরিক দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে, আমরাও নাগরিক সমাবেশে দাওয়াত পেয়েছি। সমাবেশে উপস্থিত থাকতে না পারলেও আমরা ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি। আমাদের প্রত্যাশা- যে ইতিবাচক লক্ষ্য ও অঙ্গীকার থেকে এ জাতীয় ঐক্যের পথযাত্রা শুরু হয়েছে আগামীদিনের পথচলায় সেটা অক্ষুণ্ন থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এ ঐক্যে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সৈনিকরা যথাযথ সম্মান পাবে।
২০দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের রাজনীতিতে ২০দলীয় একটি জোটের নেতৃত্ব দেয় বিএনপি। শরিক দলগুলো এ জোটের অধীনে রাজনীতি করে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রথম ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের যেসব দাবিগুলোকে সামনে রেখে এ ডাক দিয়েছিলেন এতদিন সেগুলো উচ্চারণ করেছে কেবল বিএনপি ও ২০ দল। এখন দাবিগুলো ক্ষমতাসীন জোট ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও মূলদাবিতে পরিণত হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতারা কিছু দাবিতে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে শনিবার একটি নাগরিক সমাবেশ করেছে। সেখানে তারা যাদের দাওয়াত করেছে তারাই অংশ নিয়েছে। দাওয়াত পেয়ে বিএনপি জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সেখানে সবাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ইস্যুতে চলমান আন্দোলনের পরিসর বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়েছে বিএনপি। মনে রাখতে হবে, এটা একটি আন্দোলনের ঐক্য। ফলে এখানে জটিলতা সৃষ্টির কোনো কারণ নেই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পথযাত্রা শুরু হয়েছে যেসব দাবির ভিত্তিতে তা অর্জনের আন্দোলনকে জোরদার করবে শনিবারের নাগরিক সমাবেশ। ফলে নাগরিক সমাবেশটি আন্দোলন জোরদারের ক্ষেত্রে একটি শুভ লক্ষণ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটাকে স্বাগত জানাই। মহানগর নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে তারাই শেষ নয়, আশাকরি দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এ প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হবে। আর এ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াকে জোরদার করে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে সঠিক পথে আনার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরু করার কারণে মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে সরকার। তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে কারাগারে। মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আগেও নেতারা অনেকবার ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু নেতাদের কিছু আচরণে মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, হতাশা তৈরি হয়েছে। আশা করি, এবার নেতারা সে ধরনের কোনো আচরণ করবেন না। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে তা আরো জোরদার হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস যোগাবে। যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছে তা ইতিবাচকভাবে এগোবে। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত ও সবার অংশগ্রহণে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আদায়ে সক্ষম হবে। যার মাধ্যমে বর্তমান অবৈধ সরকারের পরিবর্তন হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে সূচনা ঘটেছে নবদিগন্তের। এর মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে যে ঐক্যপ্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগকেও যুক্ত করতে চেয়েছেন; সেখানে আওয়ামী লীগ না এলেও অন্য যারা এসেছেন সেটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এর লক্ষ্য যদি হয় গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুদ্ধার, তাহলে সে ঐক্যের প্রথম পর্বটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন মাঠে গড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে- তাদের ছাড়া জাতীয় ঐক্য কীভাবে হবে? তারা প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করে যাচ্ছেন। আমি বলতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শাসক দল মুসলিম লীগকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে যদি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্য হতে পারে, নব্বইয়ে যদি জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে, এখন আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে বাধা কোথায়? বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে এসেছেন, শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা বাস্তব রূপ লাভ করেছে। এখন সুনির্দিষ্ট দাবিতে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পালা।
জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সার্বিক অগ্রগতিকে ইতিবাচক বিবেচনা করেই শনিবারের নাগরিক সমাবেশে অংশ নেয় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদল। সেখানে বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্যে ঐক্যের উদ্যোক্তাদের নানা বিশেষণে সম্মান দেখান। বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে ড. কামাল হোসেনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘জাতির এ চরম দুর্দিনে তিনি দেশবাসীকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন’। উদ্যোক্তাদের ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ড. কামাল হোসেনকে ‘বাংলাদেশের গৌরব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াকে বিএনপি কতটুকু ইতিবাচকভাবে দেখছে তা তাদের বক্তব্যেই প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঐক্যের পথে একধাপ এগিয়ে গেছি।’ কারাগার থেকে খালেদা জিয়া ঐক্যের তাগিদ দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে দেশকে রক্ষা করার প্রক্রিয়ার সূচনা হলো। আমি মনে করি, সারা দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।’
জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার গতি-প্রকৃতি ও কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রয়েছে নানা কৌতূহল। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলের ক্ষেত্রে ‘আন্দোলন’ শব্দটির ভেতর দিয়ে সরকারের তরফে প্রচারণা চালানো হয় একটি নেতিবাচক আশঙ্কার। এবার নতুন ধারার একটি আন্দোলন করতে চায় জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দলগুলো। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সে আন্দোলন এগিয়ে যাবে। কর্মসূচিতে ধ্বংসাত্মক প্রকাশ নয়, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত এবং বিপুল অংশগ্রহণের মাধ্যমে চাপ তৈরি করা হবে সরকারের ওপর। জনমতের ভিত্তিতে অনুকূলে আনা হবে কূটনীতিক সমর্থন। জনমতের চাপেই খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করা হবে। তবে গণতান্ত্রিক রীতি মেনে প্রথমে আলোচনার পথে হাঁটবে, পরে কড়া কর্মসূচি দেয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে নাগরিক সমাবেশের যৌথ প্রস্তাবে উত্থাপিত দাবিগুলো পূরণে সরকারকে ৩১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়ার পাশাপাশি দাবি পূরণ না হলে ১লা অক্টোবর থেকে সারা দেশে সমাবেশের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের নেতারা। আগামীতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া হবে আন্দোলন। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে যেভাবে সারা দেশে ধরপাকড় চালাচ্ছে বৃহত্তর ঐক্যপ্রতিষ্ঠা ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। সে জন্য কিছু স্যাক্রিফাইস যদি করতে হয়, করতে হবে। সবসময় সবাইকে সামনে আসার কি দরকার। যখন নির্বাচন আসবে তখন রাজনীতিতে নতুন বিবেচনা আসতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির যে অঙ্গীকার সেটা অর্জনের লক্ষ্য পূরণে এ বৃহত্তর ঐক্যের পথযাত্রা জাতীয় রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক ঘটনা।
২০দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানান, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম আহূত জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জোটের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও জোটের শরিক দল জামায়াতের ব্যাপারে ঐক্যের উদ্যোক্তাদের মনোভাব নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। সেসব বৈঠকে নেতারা একমত হন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। কিন্তু জামায়াত ইস্যুতে বিষয়টি আটকে ছিল বেশকিছুদিন। একদিকে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের তরফে আপত্তি ছিল জামায়াতের ব্যাপারে অন্যদিকে জামায়াতকে বাদ দিয়ে এ ঐক্যের ব্যাপারে সংশয় ছিল জোটসহ বিএনপির একাংশের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে একটি অবস্থানে এসে পৌঁছে বিএনপি। বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার পরামর্শ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট আলোচনার মাধ্যমে এই সমাধানে পৌঁছে দলটি। সিদ্ধান্ত হয়, জোটের শরিক দল হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে জোটের রাজনীতিতে ঐক্য ধরে রাখবে বিএনপি। অন্যদিকে স্বতন্ত্র দল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায়। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার তরফে জোটের বেশকিছু দলকে স্বতন্ত্রভাবে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ করায় সহজ হয়ে যায় বিএনপির এ কৌশল। জামায়াত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামায়াত নেতারাও মনে করেন দেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে এ ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে তাদের মনে। আর সন্দেহ-সংশয় থেকে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। দলীয় ফোরাম ও শুভাকাঙক্ষী মহলে তারা এ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা সন্দেহ করছেন, সরকার সমর্থক কোনো শক্তি এ জোটের গতিপথ ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে পারে। তবে আপাতত এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেবে না জামায়াত। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াবিরোধী কোনো অবস্থানও নেবে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। পরিস্থিতি মেনেই পরিবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বড় কোনো জটিলতা তৈরি না হলে জামায়াত জাতীয় ঐক্যবিরোধী অবস্থানে যাবে না। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা দলগুলোর নেতারা জানান, জামায়াত ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও ২০দলীয় জোটের মধ্যে যতটুকু টানাপড়েনের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে বাস্তবে ততটুকু জটিলতা নেই। জাতীয় ঐক্য স্বাধীনতার পক্ষের দল নিয়ে ঐক্য ও আন্দোলন করবে। জামায়াতকে সেখানে যুক্ত করা হবে না। এখন জামায়াতকে কীভাবে হ্যান্ডেল করবে সেটা বিএনপির বিষয়। বিএনপি এখন পর্যন্ত সেটা সফলভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছে বলেই তারা অংশগ্রহণ করতে পেরেছে নাগরিক সমাবেশে।
২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা ২০ দল জোটবদ্ধভাবে রাজনীতি করি, আমাদের প্রধান শরিক দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে, আমরাও নাগরিক সমাবেশে দাওয়াত পেয়েছি। সমাবেশে উপস্থিত থাকতে না পারলেও আমরা ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি। আমাদের প্রত্যাশা- যে ইতিবাচক লক্ষ্য ও অঙ্গীকার থেকে এ জাতীয় ঐক্যের পথযাত্রা শুরু হয়েছে আগামীদিনের পথচলায় সেটা অক্ষুণ্ন থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এ ঐক্যে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সৈনিকরা যথাযথ সম্মান পাবে।
২০দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের রাজনীতিতে ২০দলীয় একটি জোটের নেতৃত্ব দেয় বিএনপি। শরিক দলগুলো এ জোটের অধীনে রাজনীতি করে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রথম ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের যেসব দাবিগুলোকে সামনে রেখে এ ডাক দিয়েছিলেন এতদিন সেগুলো উচ্চারণ করেছে কেবল বিএনপি ও ২০ দল। এখন দাবিগুলো ক্ষমতাসীন জোট ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও মূলদাবিতে পরিণত হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতারা কিছু দাবিতে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে শনিবার একটি নাগরিক সমাবেশ করেছে। সেখানে তারা যাদের দাওয়াত করেছে তারাই অংশ নিয়েছে। দাওয়াত পেয়ে বিএনপি জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সেখানে সবাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ইস্যুতে চলমান আন্দোলনের পরিসর বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়েছে বিএনপি। মনে রাখতে হবে, এটা একটি আন্দোলনের ঐক্য। ফলে এখানে জটিলতা সৃষ্টির কোনো কারণ নেই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পথযাত্রা শুরু হয়েছে যেসব দাবির ভিত্তিতে তা অর্জনের আন্দোলনকে জোরদার করবে শনিবারের নাগরিক সমাবেশ। ফলে নাগরিক সমাবেশটি আন্দোলন জোরদারের ক্ষেত্রে একটি শুভ লক্ষণ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটাকে স্বাগত জানাই। মহানগর নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে তারাই শেষ নয়, আশাকরি দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এ প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হবে। আর এ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াকে জোরদার করে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে সঠিক পথে আনার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরু করার কারণে মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে সরকার। তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে কারাগারে। মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আগেও নেতারা অনেকবার ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু নেতাদের কিছু আচরণে মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, হতাশা তৈরি হয়েছে। আশা করি, এবার নেতারা সে ধরনের কোনো আচরণ করবেন না। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে তা আরো জোরদার হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস যোগাবে। যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছে তা ইতিবাচকভাবে এগোবে। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত ও সবার অংশগ্রহণে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আদায়ে সক্ষম হবে। যার মাধ্যমে বর্তমান অবৈধ সরকারের পরিবর্তন হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে সূচনা ঘটেছে নবদিগন্তের। এর মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে যে ঐক্যপ্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগকেও যুক্ত করতে চেয়েছেন; সেখানে আওয়ামী লীগ না এলেও অন্য যারা এসেছেন সেটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এর লক্ষ্য যদি হয় গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুদ্ধার, তাহলে সে ঐক্যের প্রথম পর্বটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন মাঠে গড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে- তাদের ছাড়া জাতীয় ঐক্য কীভাবে হবে? তারা প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করে যাচ্ছেন। আমি বলতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শাসক দল মুসলিম লীগকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে যদি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্য হতে পারে, নব্বইয়ে যদি জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে, এখন আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে বাধা কোথায়? বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে এসেছেন, শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা বাস্তব রূপ লাভ করেছে। এখন সুনির্দিষ্ট দাবিতে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পালা।
No comments