টান টান উত্তেজনা, সতর্ক নিউ ইয়র্ক পুলিশ, প্রবাসীদের দলাদলি নিয়ে প্রশ্ন by মিজানুর রহমান
প্রধানমন্ত্রীর
সফরকে ঘিরে নিউ ইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিটিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থা
বিরাজ করছে। চলতি মাস জুড়েই সরগরম বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র কুইন্স
ব্যুরোর জ্যাকসন হাইটস। গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন
ব্যানারে মিছিল-মিটিং হচ্ছে। সরকার প্রধানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে
বক্তৃতা-বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন ও বিজ্ঞাপন প্রচার করছে আওয়ামী লীগ এবং
অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্র ও নিউ ইয়র্ক শাখার নেতৃবৃন্দ। বিরোধী
বিএনপির কমিটি না থাকলেও তাদের তরফে পাল্টা বক্তৃতা- বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন
করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যানারে। তারা সরকার প্রধানের নিউ ইয়র্ক অবস্থানের
পুরো সময় প্রতিবাদী কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রিডম অব স্পিচ
বা বাকস্বাধীনতার মুক্ত চর্চার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগতম জানানোর
পাশাপাশি প্রতিবাদের আয়োজন থাকাটাকে অন্যায় হিসাবে দেখা হয় না। এ নিয়ে
এখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থা কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
তবে তারা আগাগোড়ায় সতর্ক যে বিষয়টি নিয়ে তা হলো স্বাগত জানানো বা প্রতিবাদ-
কোনো কর্মসূচিকে ঘিরে যেন সহিংসতা না হয়! এমনটাই বলছিলেন চলতি জাতিসংঘ
অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফর বাস্তবায়নে বিশেষত
সরকার প্রধানের নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করা এক
বাংলাদেশি কর্মকর্তা।
তার বক্তব্যের সঙ্গে দলমতনির্বিশেষে সহমত পোষণ করে প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি। এখানে অনেক বছর ধরে (অভিবাসী হিসেবে) থাকা মৌলভীবাজারের মাতারকাপন এলাকার আবদুল মুমিন চৌধুরীও এমনটাই বলছিলেন। তার মতে, কমিউনিটি ম্যাটারগুলো নিউ ইয়র্ক পুলিশ বুঝে। তারা এ নিয়ে এতটাই ওয়াকিবহাল যে, অনেক সময় সিরিয়াস মারামারি হলেও তারা এতে জড়ায় না। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর আয়োজন নিয়ে জ্যাকসন হাইট এলাকায় যুবলীগের দুই গ্রুপের মারামারির যে ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সে প্রসঙ্গে মুমিন চৌধুরীর মতে, ওই ঘটনাও পুলিশ হালকাভাবে নিয়েছে। ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গিয়েছিল, পরে অবশ্য তাদের সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রবাসী মুমিনই নন, প্রায় সবাই একমত যে এমন ঘটনায় ব্যক্তির জেল-জরিমানা না হলেও কমিউনিটির ইমেজে বিরাট প্রভাব পড়ে। যা ইমিগ্রেশন বা অন্যান্য কাজে গেলে টের পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থায়ীভাবে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত এমসি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হক চন্নু বরাবরই সহিংসতাবিরোধী। এ নিয়ে কমিউনিটিতে তার কাজও রয়েছে।
তিনি মটিভেশনের কাজ করেন। তিনি বিষয়টাকে দেখেন ভিন্নভাবে। তার কাছে এমন ঘটনার জন্য এককভাবে কমিউনিটি দায়ী হয়। তিনি বলেন, আমি রাজনীতির মানুষ, আর সমাজ বিজ্ঞান বা নীতির শিক্ষক। আমি বিষয়টার গোড়ায় যেতে চাই। প্রবাসীরা ভিন গ্রহের কেউ নয়, তারা যে কমিউনিটি থেকে আসে সেটাই বিলং করে। এটা রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। কিন্তু পরিবর্তনের চেষ্টা থাকতে হবে। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূল- সর্ব মহলের সচেতনতা জরুরি। সেটি সরকারি দল বা বিরোধী পক্ষ সবার জন্যই। প্রবাসে সরাসরি একটি দলের শাখা থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন ওই প্রবাসী সমাজ বিজ্ঞানী। গোলাপগঞ্জের পশ্চিমভাগ এলাকার সাইফুর রহমান বলেন, আমি কাকে সমর্থন করি তা সবাই জানেন। অন্তত আমার এলাকার লোকজন জানেন। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আমার ইউনিয়নে নির্বাচনও করতে পারি। কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝি না ভাই, আমার দল বা বিরোধী যারা যে মতেরই হোন না কেন? আমেরিকার মতো জায়গায় এসে কেন আমাদের মারামারি করতে হবে? তাও সামান্য পদ-পদবির জন্য।
যেভাবে চেয়ার ছোড়া হয়েছে, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, ধরে নিয়ে গেছে, সেই ভিডিও আবার ভাইরাল করে দিয়েছে বিরোধীরা। এটা বাংলাদেশ কমিউনিটির জন্য বদনামের। আমি মনে করি, আমার দলের নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। তার সঙ্গে থাকা নিউ ইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাসরত মৌলভীবাজারের দুর্লভপুর গ্রামের আবদুল মালিকও এ নিয়ে সহমত পোষণ করেন। মালিক অবশ্য রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় তেমন আগ্রহী নন। তার মতে, আমরা এখানে স্থায়ীভাবে থাকছি। বাংলাদেশ বা বাংলাদেশি হিসেবে নিউ ইয়র্ক পুলিশের রেকর্ডে আমাদের কিছু পয়েন্ট রয়েছে।
একটা সুনাম আছে। এটা নষ্ট হয়ে গেলে পদে পদে আমাদের বিপদে পড়তে হবে। এ দেশের কেউ যদি ক্রাইম না করে, তার কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও তাড়িয়ে দেয় না। মানবতার দিকটা এখানে প্রবল। সেটা যদি কেউ না বুঝে তা হলে কিছু করার নাই। গত সন্ধ্যায় ম্যানহার্টনে এক আড্ডায়ও এ নিয়েই কথা হয়। একজন একটি খবর দেখিয়ে বলেন- দেখুন রাজনীতির কি অবস্থা। নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে নাকি থাকবে মহানগর আওয়ামী লীগ! বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে এ ঘোষণার আড়ালে থাকা রাজনীতি নিয়ে। সেটাই দেখাচ্ছিলেন ওই কর্মকর্তা। বলেন, নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণাটি দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তিনি কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন। তার ভাষ্য ছিল এরকম ‘যুক্তরাষ্ট্রে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ইমেজ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দহরম-মহরম দেখা যাচ্ছে।
এ দু’জনের ব্যাপারেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার প্রয়োজন রয়েছে।’ এখানে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিস্টার চৌধুরী বলেন, বিএনপি-যুবদল সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনা বিরোধী যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তা সুশৃঙ্খলভাবে রুখে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হয়েছে, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখানোর নামে যদি কোনো ধরনের অশালিন-অসভ্য আচরণের ঔদ্ধত্য দেখানো হয়, তাহলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে প্রচলিত আইনেই।” জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া চৌধুরী এ-ও জানান, এয়ারপোর্টে নেত্রীকে বিপুল অভ্যর্থনা জানানো হবে। জাতিসংঘে তার ভাষণ চলাকালে বাইরে শান্তি সমাবেশও করবে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে কর্মসূচি ঘোষণার ওই সংবাদ সম্মেলনে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ঘায়েলই তার উদ্দেশ্য ছিল জানিয়ে ওই আড্ডায় বলা হয়- দেখুন পদ- পদবি লড়াই থেকে কতটা নোংরামি হচ্ছে। একজন অন্যজনকে কীভাবে ঘায়েল করছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতাই বলছিলেন- ‘তবে দলের পদ-পদবি দেখিয়ে বছরের ৯ মাসই ঢাকায় অবস্থানকারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান মাঝেমধ্যে নিউ ইয়র্কে ফিরে দলের হাইকমান্ডের নাম ভাঙিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিষিয়ে তোলে আখের গোছাতে চান। সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরেও একই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটানো হয়েছে’-অভিযোগ করেন তিনি তার সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে। সেখানে এ-ও বলা হয় তাদের সংবাদ সম্মেলন ভণ্ডুল করার জন্য আরেক চৌধুরী নাকি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা নাকি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাদের লিখিত এমন অভিযোগও করেন ‘পদ-পদবি নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করে দু’জন ব্যক্তি তদবির বাণিজ্যে লিপ্ত। তারা প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।’ এত গেল সরকারি দল আওয়ামী লীগের অবস্থা। বিরোধী বিএনপি! নিউ ইয়র্কে দলটির কোনো কমিটি নেই। যারা পুরনো তারা ৫-৬টি উপদলে বিভক্ত। এক দল অন্য দলকে ঘায়েলে ব্যস্ত। সেখানে আবার অন্য খেলা। একদল জামায়াতঘেঁষা, অন্যদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলার অভিযোগ। ওই অভিযোগগুলো নাকি দলের হাই কমান্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। বিএনপি’র প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিউ ইয়র্কে কাজ করা এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, কেউ কারও নেতৃত্ব মানে না।
যে যার মতো করে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা সংবাদ সম্মেলনের খবরও এসেছে। ‘প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা’ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর আজকের বক্তৃতার সময় নাকি তারা বাইরে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা দেখাবে। তারা নাকি এ জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নিয়েছে। অবশ্য বিরোধী মহলের কর্মসূচির বিষয়ে আগাগোড়ায় সতর্ক রয়েছে সরকার। দলীয় নেতারাও আছেন সক্রিয়। তারা খোলামেলাই বলছেন, প্রতিবাদের নামে জামায়াত-শিবিরের প্ররোচনায় বিএনপি যদি কোনো অসভ্য-অগণতান্ত্রিক আচরণের চেষ্টা করে তাহলে তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা রক্ষায় তারা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকবেন। গত কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি ওই সব বক্তব্যের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে পৌঁছাচ্ছেন। স্থানীয় সময় দুপুরে তার নিউ আর্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পৌঁছার কথা।
তার বক্তব্যের সঙ্গে দলমতনির্বিশেষে সহমত পোষণ করে প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি। এখানে অনেক বছর ধরে (অভিবাসী হিসেবে) থাকা মৌলভীবাজারের মাতারকাপন এলাকার আবদুল মুমিন চৌধুরীও এমনটাই বলছিলেন। তার মতে, কমিউনিটি ম্যাটারগুলো নিউ ইয়র্ক পুলিশ বুঝে। তারা এ নিয়ে এতটাই ওয়াকিবহাল যে, অনেক সময় সিরিয়াস মারামারি হলেও তারা এতে জড়ায় না। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর আয়োজন নিয়ে জ্যাকসন হাইট এলাকায় যুবলীগের দুই গ্রুপের মারামারির যে ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সে প্রসঙ্গে মুমিন চৌধুরীর মতে, ওই ঘটনাও পুলিশ হালকাভাবে নিয়েছে। ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গিয়েছিল, পরে অবশ্য তাদের সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রবাসী মুমিনই নন, প্রায় সবাই একমত যে এমন ঘটনায় ব্যক্তির জেল-জরিমানা না হলেও কমিউনিটির ইমেজে বিরাট প্রভাব পড়ে। যা ইমিগ্রেশন বা অন্যান্য কাজে গেলে টের পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থায়ীভাবে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত এমসি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হক চন্নু বরাবরই সহিংসতাবিরোধী। এ নিয়ে কমিউনিটিতে তার কাজও রয়েছে।
তিনি মটিভেশনের কাজ করেন। তিনি বিষয়টাকে দেখেন ভিন্নভাবে। তার কাছে এমন ঘটনার জন্য এককভাবে কমিউনিটি দায়ী হয়। তিনি বলেন, আমি রাজনীতির মানুষ, আর সমাজ বিজ্ঞান বা নীতির শিক্ষক। আমি বিষয়টার গোড়ায় যেতে চাই। প্রবাসীরা ভিন গ্রহের কেউ নয়, তারা যে কমিউনিটি থেকে আসে সেটাই বিলং করে। এটা রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। কিন্তু পরিবর্তনের চেষ্টা থাকতে হবে। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূল- সর্ব মহলের সচেতনতা জরুরি। সেটি সরকারি দল বা বিরোধী পক্ষ সবার জন্যই। প্রবাসে সরাসরি একটি দলের শাখা থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন ওই প্রবাসী সমাজ বিজ্ঞানী। গোলাপগঞ্জের পশ্চিমভাগ এলাকার সাইফুর রহমান বলেন, আমি কাকে সমর্থন করি তা সবাই জানেন। অন্তত আমার এলাকার লোকজন জানেন। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আমার ইউনিয়নে নির্বাচনও করতে পারি। কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝি না ভাই, আমার দল বা বিরোধী যারা যে মতেরই হোন না কেন? আমেরিকার মতো জায়গায় এসে কেন আমাদের মারামারি করতে হবে? তাও সামান্য পদ-পদবির জন্য।
যেভাবে চেয়ার ছোড়া হয়েছে, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, ধরে নিয়ে গেছে, সেই ভিডিও আবার ভাইরাল করে দিয়েছে বিরোধীরা। এটা বাংলাদেশ কমিউনিটির জন্য বদনামের। আমি মনে করি, আমার দলের নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। তার সঙ্গে থাকা নিউ ইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাসরত মৌলভীবাজারের দুর্লভপুর গ্রামের আবদুল মালিকও এ নিয়ে সহমত পোষণ করেন। মালিক অবশ্য রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় তেমন আগ্রহী নন। তার মতে, আমরা এখানে স্থায়ীভাবে থাকছি। বাংলাদেশ বা বাংলাদেশি হিসেবে নিউ ইয়র্ক পুলিশের রেকর্ডে আমাদের কিছু পয়েন্ট রয়েছে।
একটা সুনাম আছে। এটা নষ্ট হয়ে গেলে পদে পদে আমাদের বিপদে পড়তে হবে। এ দেশের কেউ যদি ক্রাইম না করে, তার কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও তাড়িয়ে দেয় না। মানবতার দিকটা এখানে প্রবল। সেটা যদি কেউ না বুঝে তা হলে কিছু করার নাই। গত সন্ধ্যায় ম্যানহার্টনে এক আড্ডায়ও এ নিয়েই কথা হয়। একজন একটি খবর দেখিয়ে বলেন- দেখুন রাজনীতির কি অবস্থা। নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে নাকি থাকবে মহানগর আওয়ামী লীগ! বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে এ ঘোষণার আড়ালে থাকা রাজনীতি নিয়ে। সেটাই দেখাচ্ছিলেন ওই কর্মকর্তা। বলেন, নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণাটি দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তিনি কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন। তার ভাষ্য ছিল এরকম ‘যুক্তরাষ্ট্রে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ইমেজ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দহরম-মহরম দেখা যাচ্ছে।
এ দু’জনের ব্যাপারেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার প্রয়োজন রয়েছে।’ এখানে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিস্টার চৌধুরী বলেন, বিএনপি-যুবদল সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনা বিরোধী যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তা সুশৃঙ্খলভাবে রুখে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হয়েছে, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখানোর নামে যদি কোনো ধরনের অশালিন-অসভ্য আচরণের ঔদ্ধত্য দেখানো হয়, তাহলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে প্রচলিত আইনেই।” জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া চৌধুরী এ-ও জানান, এয়ারপোর্টে নেত্রীকে বিপুল অভ্যর্থনা জানানো হবে। জাতিসংঘে তার ভাষণ চলাকালে বাইরে শান্তি সমাবেশও করবে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে কর্মসূচি ঘোষণার ওই সংবাদ সম্মেলনে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ঘায়েলই তার উদ্দেশ্য ছিল জানিয়ে ওই আড্ডায় বলা হয়- দেখুন পদ- পদবি লড়াই থেকে কতটা নোংরামি হচ্ছে। একজন অন্যজনকে কীভাবে ঘায়েল করছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতাই বলছিলেন- ‘তবে দলের পদ-পদবি দেখিয়ে বছরের ৯ মাসই ঢাকায় অবস্থানকারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান মাঝেমধ্যে নিউ ইয়র্কে ফিরে দলের হাইকমান্ডের নাম ভাঙিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিষিয়ে তোলে আখের গোছাতে চান। সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরেও একই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটানো হয়েছে’-অভিযোগ করেন তিনি তার সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে। সেখানে এ-ও বলা হয় তাদের সংবাদ সম্মেলন ভণ্ডুল করার জন্য আরেক চৌধুরী নাকি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা নাকি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাদের লিখিত এমন অভিযোগও করেন ‘পদ-পদবি নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করে দু’জন ব্যক্তি তদবির বাণিজ্যে লিপ্ত। তারা প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।’ এত গেল সরকারি দল আওয়ামী লীগের অবস্থা। বিরোধী বিএনপি! নিউ ইয়র্কে দলটির কোনো কমিটি নেই। যারা পুরনো তারা ৫-৬টি উপদলে বিভক্ত। এক দল অন্য দলকে ঘায়েলে ব্যস্ত। সেখানে আবার অন্য খেলা। একদল জামায়াতঘেঁষা, অন্যদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলার অভিযোগ। ওই অভিযোগগুলো নাকি দলের হাই কমান্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। বিএনপি’র প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিউ ইয়র্কে কাজ করা এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, কেউ কারও নেতৃত্ব মানে না।
যে যার মতো করে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা সংবাদ সম্মেলনের খবরও এসেছে। ‘প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা’ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর আজকের বক্তৃতার সময় নাকি তারা বাইরে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা দেখাবে। তারা নাকি এ জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নিয়েছে। অবশ্য বিরোধী মহলের কর্মসূচির বিষয়ে আগাগোড়ায় সতর্ক রয়েছে সরকার। দলীয় নেতারাও আছেন সক্রিয়। তারা খোলামেলাই বলছেন, প্রতিবাদের নামে জামায়াত-শিবিরের প্ররোচনায় বিএনপি যদি কোনো অসভ্য-অগণতান্ত্রিক আচরণের চেষ্টা করে তাহলে তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা রক্ষায় তারা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকবেন। গত কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি ওই সব বক্তব্যের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে পৌঁছাচ্ছেন। স্থানীয় সময় দুপুরে তার নিউ আর্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পৌঁছার কথা।
No comments