বাবা ডেকেও রেহাই মেলেনি লুৎফার by মরিয়ম চম্পা
এটা
শুধু একদল নারীর স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প নয়। বরং তাদের নিয়তি আর জীবন কীভাবে
তছনছ হয়ে গেছে এটা সেই গল্প। বর্ণনা করা যায় না, বলা যায় না, লেখা যায় না।
অসহ্য আর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ফিরছে ওরা। বিমানবন্দরে নেমেই ভেঙে পড়ছে
কান্নায়। কেউবা লজ্জায় মুখ ঢাকছে। কেউবা করছে আত্মহত্যার চেষ্টা। সৌদি ফেরত
নারীদের জীবনের অবর্ণনীয় পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মরিয়ম চম্পা-
লুৎফা বেগম। বয়স ৩৩। বাড়ি নেত্রকোনার চারুলিয়ায়। স্বামী আল-আমিন খেতখামারে কাজ করেন। তাদের তিন ছেলে-মেয়ে। একটু ভালো থাকার আশায় গত বছরের শেষের দিকে সৌদিতে পাড়ি জমান লুৎফা। সেখানে মুখোমুখি হন ভয়ঙ্কর জীবনের। বাসার প্রত্যেক লোক মিলে পালাক্রমে মারধর করতো। মালিকের স্ত্রী, ছেলে, মালিক কেউই বাদ যেত না।
সে সময়কার কথা স্মরণ করে এখনো আঁতকে উঠেন লুৎফা। বলেন, ওরা আমাকে টানা ৭ মাস ধরে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন করেছে। দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে দমটা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। একদিন তো সকালে মার শুরু করে সন্ধ্যায় ক্ষান্ত দিয়েছে। এরপর আমি এশার নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছিলাম। তখন এসে মালিকের ছেলে আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
কেন তাকে মারা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকের ছেলে আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করতে চাইতো। খারাপ কাজের প্রস্তাব দিতো। তখন বলতাম ‘আমি তোমার মা’র মতো। মায়ের সঙ্গে কেউ খারাপ কাজ করে বাবা। এটা বলার পর সে আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে চিকন তার দিয়ে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে। এভাবে প্রায় সময় সামান্য কোনো বিষয়ে আমাকে মারতো। একদিন মাঝরাতে মালিকের ছেলে আমাকে বলে ওর মা অসুস্থ তার কাছে যেতে হবে। লুৎফা গিয়ে দেখেন তার মা দিব্বি সুস্থ। এ সময় তাকে একটা রুমে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করে। অনেক কষ্টে নিজেকে মুক্ত করেন লুৎফা। এদিকে বাসার মালিক একদিন সন্ধ্যারাতে তাকে গোসলখানা ধুতে যেতে বলেন। মালিক গোসলখানার ভেতরেই ছিলেন। লুৎফা জানতেন না। লুৎফা গোসলখানা ধুতে গেলে মালিক মন মতো তাকে কাছে না পেয়ে চুলের মুঠি ধরে বেদম পিটাতে থাকেন।
লুৎফা মালিককে বলেন, বাবা আমাকে ছেড়ে দেন। কি অন্যায় করেছি। এ সময় মালিক বলেন, তুই শব্দ করে বাথরুম খুললি কেন। এভাবে দিনের পর দিন অত্যাচারের শিকার হন লুৎফা। তিনি বলেন, মার খেতে খেতে আমার নিয়মিত বমি হতো। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করি। তখন ওরা আমাকে ধরে ফেলে। এরপর বেদম মারতে থাকে। আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই যখনই সুযোগ পেতাম চুরি করে খাবার খেতাম। হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি। মরার মতো অবস্থা। বাসার মালিক মনে করেছে আমি অসুস্থের ভান করে বাসার দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালাবো। তাদের বাসা থেকে কিছু চুরি করেছি কিনা তা পরীক্ষা করতে মালিকের বউ আমার গায়ের কাপড় চোপড় খুলে উলঙ্গ করে শরীর চেক করে। পরে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাস্তায় ফেলে যায়। তখন আমার কোনো হুঁশ-জ্ঞান ছিল না। এরপর পুলিশ আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে রেখে আসে। সেখান থেকে সফর জেলে দেয়া হয়। সফর জেল খেটে অবশেষে বাংলাদেশে ফেরত আসি।
দেশে ফেরত এসে নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন লুৎফা বেগম। স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় খেতখামারের কোনো কাজই করতে পারছেন না। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিনের তিন বেলার দুই বেলাই না খেয়ে থাকতে হয়। পাড়া-প্রতিবেশীরা যে দুই ১শ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন তাই দিয়ে চলে লুৎফার সংসার। তিনি বলেন, একটু আগে একজন প্রতিবেশী ১শ টাকা দিয়েছেন। সেটা দিয়ে ছেলেকে ১ কেজি চাল কিনতে পাঠিয়েছি। চালটা পানিতে ফুটিয়ে ছেলেদের খেতে দিবো। এতো কিছুর পরও নিজ দেশে ফিরতে পেরে সন্তুষ্ট লুৎফা। দেশের মাটিতে না খেয়ে মারা গেলেও যেন সৌদি আরবের মতো দেশে আর যেতে না হয়- এমনটাই জানান তিনি।
লুৎফা বেগম। বয়স ৩৩। বাড়ি নেত্রকোনার চারুলিয়ায়। স্বামী আল-আমিন খেতখামারে কাজ করেন। তাদের তিন ছেলে-মেয়ে। একটু ভালো থাকার আশায় গত বছরের শেষের দিকে সৌদিতে পাড়ি জমান লুৎফা। সেখানে মুখোমুখি হন ভয়ঙ্কর জীবনের। বাসার প্রত্যেক লোক মিলে পালাক্রমে মারধর করতো। মালিকের স্ত্রী, ছেলে, মালিক কেউই বাদ যেত না।
সে সময়কার কথা স্মরণ করে এখনো আঁতকে উঠেন লুৎফা। বলেন, ওরা আমাকে টানা ৭ মাস ধরে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন করেছে। দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে দমটা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। একদিন তো সকালে মার শুরু করে সন্ধ্যায় ক্ষান্ত দিয়েছে। এরপর আমি এশার নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছিলাম। তখন এসে মালিকের ছেলে আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
কেন তাকে মারা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকের ছেলে আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করতে চাইতো। খারাপ কাজের প্রস্তাব দিতো। তখন বলতাম ‘আমি তোমার মা’র মতো। মায়ের সঙ্গে কেউ খারাপ কাজ করে বাবা। এটা বলার পর সে আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে চিকন তার দিয়ে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে। এভাবে প্রায় সময় সামান্য কোনো বিষয়ে আমাকে মারতো। একদিন মাঝরাতে মালিকের ছেলে আমাকে বলে ওর মা অসুস্থ তার কাছে যেতে হবে। লুৎফা গিয়ে দেখেন তার মা দিব্বি সুস্থ। এ সময় তাকে একটা রুমে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করে। অনেক কষ্টে নিজেকে মুক্ত করেন লুৎফা। এদিকে বাসার মালিক একদিন সন্ধ্যারাতে তাকে গোসলখানা ধুতে যেতে বলেন। মালিক গোসলখানার ভেতরেই ছিলেন। লুৎফা জানতেন না। লুৎফা গোসলখানা ধুতে গেলে মালিক মন মতো তাকে কাছে না পেয়ে চুলের মুঠি ধরে বেদম পিটাতে থাকেন।
লুৎফা মালিককে বলেন, বাবা আমাকে ছেড়ে দেন। কি অন্যায় করেছি। এ সময় মালিক বলেন, তুই শব্দ করে বাথরুম খুললি কেন। এভাবে দিনের পর দিন অত্যাচারের শিকার হন লুৎফা। তিনি বলেন, মার খেতে খেতে আমার নিয়মিত বমি হতো। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করি। তখন ওরা আমাকে ধরে ফেলে। এরপর বেদম মারতে থাকে। আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই যখনই সুযোগ পেতাম চুরি করে খাবার খেতাম। হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি। মরার মতো অবস্থা। বাসার মালিক মনে করেছে আমি অসুস্থের ভান করে বাসার দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালাবো। তাদের বাসা থেকে কিছু চুরি করেছি কিনা তা পরীক্ষা করতে মালিকের বউ আমার গায়ের কাপড় চোপড় খুলে উলঙ্গ করে শরীর চেক করে। পরে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাস্তায় ফেলে যায়। তখন আমার কোনো হুঁশ-জ্ঞান ছিল না। এরপর পুলিশ আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে রেখে আসে। সেখান থেকে সফর জেলে দেয়া হয়। সফর জেল খেটে অবশেষে বাংলাদেশে ফেরত আসি।
দেশে ফেরত এসে নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন লুৎফা বেগম। স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় খেতখামারের কোনো কাজই করতে পারছেন না। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিনের তিন বেলার দুই বেলাই না খেয়ে থাকতে হয়। পাড়া-প্রতিবেশীরা যে দুই ১শ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন তাই দিয়ে চলে লুৎফার সংসার। তিনি বলেন, একটু আগে একজন প্রতিবেশী ১শ টাকা দিয়েছেন। সেটা দিয়ে ছেলেকে ১ কেজি চাল কিনতে পাঠিয়েছি। চালটা পানিতে ফুটিয়ে ছেলেদের খেতে দিবো। এতো কিছুর পরও নিজ দেশে ফিরতে পেরে সন্তুষ্ট লুৎফা। দেশের মাটিতে না খেয়ে মারা গেলেও যেন সৌদি আরবের মতো দেশে আর যেতে না হয়- এমনটাই জানান তিনি।
No comments