দুই বন্দরে ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না
বাগেরহাটের
মংলা সমুদ্র বন্দর ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ব্যাপক দুর্নীতি ও
চাঁদাবাজির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি
ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুই বন্দরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ
নিয়েছে দাবি করে টিআইবি জানায়, ঘুষ ছাড়া সেখানে কোনো সেবা মেলে না। আর
শুল্ক দপ্তর ও বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। ‘মংলা
বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন:
আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক
টিআইবি’র গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি
কার্যালয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনের
তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন টিআইবির কর্মকর্তা মনজুর ই খোদা ও মো. খোরশেদ আলম।
টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, পণ্য আমদানি-রপ্তানি কাজে মংলা স্থলবন্দরের কাস্টম হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে’ আদায় করছে। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মংলা বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ চার কোটি ৬১ লাখ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করেছে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে মংলা কাস্টম হাউজে প্রায় প্রতিটি ধাপে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায় করা হয়। এই সময়ে আমদানি করা গাড়ির শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কাস্টম হাউজে প্রতি গাড়ি চার হাজার টাকা এবং গাড়ি ছাড়ের ক্ষেত্রে মংলা বন্দরে ১ হাজার ৭১৫ টাকা ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে’ আদায় করা হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মংলা কাস্টম হাউজে জাহাজ আগমন-বহির্গমনের সময় ৮ হাজার ৩৫০ টাকা করে নেয়া হয়। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ নেয় ২১ হাজার টাকা। এছাড়া পণ্য ছাড়ের ক্ষেত্রে বন্দরে বিকাল ৫টার আগে ৬০০০ এবং পরে ৭২০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন নিয়েও গবেষণা করেছে টিআইবি। বুড়িমারী স্থলবন্দরের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এই বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির বিভিন্ন পর্যায়ে কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র এবং পণ্যের ধরন, গুণগত মান, ওজনসহ সবকিছু সঠিক থাকা সত্ত্বেও পণ্য ছাড়ের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে অলিখিতভাবে নির্ধারিত ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র, পণ্যের মান, ধরন বা ওজনে সমস্যা থাকলে, অথবা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ পরস্পরের দরকষাকষির সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে, বুড়িমারী বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে বিল অব এন্ট্রি প্রতি গড়ে ন্যূনতম ২০৫০ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে বা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। একইভাবে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে বিল অব এক্সপোর্ট প্রতি গড়ে ন্যূনতম ১৭০০ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে দিতে হয়।
এতে আরো বলা হয়, বুড়িমারী স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন আমদানি ও রপ্তানির জন্য বিল অব এন্ট্রিতে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ৪৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে হিসাব দেখিয়েছে টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় ব্যবহৃত ট্রাক থেকে বুড়িমারীর মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন চাঁদা নিয়েছে ৫ কোটি চার লাখ টাকা। এখানে আমদানি পণ্যের প্রতিটি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানির বেলায় এটি দেড় হাজার টাকা। আবার আমদানি করা পণ্য ছাড় করতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানিতে এই ঘুষ ২০০ টাকা।
এই দুই বন্দরে দুর্নীতি প্রতিরোধে পণ্যের শুল্কায়ন, কায়িক পরীক্ষণ, পণ্য-ছাড় এবং জাহাজের আগমন-বহির্গমন প্রক্রিয়া অনুমোদনে কার্যকর ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করা, সকল পর্যায়ে অটোমেশন এবং পেপার-লেস অফিস প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি সুপারিশের কথা জানিয়েছে টিআইবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আমদানি হওয়া গাড়ির ৬০ শতাংশ মংলা বন্দর দিয়ে আসে। এছাড়া ক্লিনকার, সার, কয়লা, এলপি গ্যাস আমদানি করা হয় এই বন্দর দিয়ে। রপ্তানি হয় চিংড়ি, পাট, সিরামিক ইত্যাদি পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছর মোংলা বন্দর ২২৭ কোটি টাকা ও মংলা কাস্টমস ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা আয় করে। অন্যদিকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে বোল্ডার, সবজি বীজ, ভুট্টা, পিয়াজ ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়। তবে আমদানি পণ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পাথর। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মংলা বন্দর ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগসাজশে ও বলপূর্বক দুর্নীতি হচ্ছে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে সেবাগ্রহীতারা দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। এসব দুর্নীতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত। তারাও সুবিধা পায় বলে এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি, আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা ও দাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কমানো গেলে দুর্নীতি কমে যায়। তবে সেই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে সুফল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর হতে আমদানি পণ্য দেশের বিভিন্নস্থানে পরিবহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করার ক্ষেত্রে বুড়িমারী ট্রাক টার্মিনালে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ট্রাক প্রতি প্রায় ৯০০ টাকা চাঁদা হিসেবে আদায় করে নিচ্ছে। দালালের সাহায্য ছাড়া বুড়িমারী হতে ট্রাক ভাড়া পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে দালালকে ট্রাক প্রতি ৪০০ হতে ৫০০ টাকা বকশিশ দিতে হয়। এ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০টি হিসেবে বছরে প্রায় ৬০০০টি পণ্যবাহী ট্রাক এই টার্মিনাল হতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করে। আর এই হিসেবে দেখা যায়, প্রতি বছর এই টার্মিনাল হতে ন্যূনতম প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্দরের এই দুর্নীতি আইনের চোখে প্রমাণিত না, যে কারণে আমরা এটাকে অভিযোগ বলছি। যারা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতির শিকার হয়, নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে তাদের তথ্য এবং অন্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের পদ্ধতি অনুযায়ী প্রমাণিত বিধায় আমরা এটাকে (দুর্নীতি) বলছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বলেন জোর করে টাকা নিচ্ছি না, তারা তো বিভিন্নভাবে সেটা ব্যাখ্যা করেন। এটাকে অনেকে স্পিড মানি বলে থাকেন। আমাদের সরকারের একাংশ থেকেও আমরা সেটা শুনে থাকি। তবে আমরা সেটাকে দুর্নীতিই বলি।
‘বকশিশ হিসাবে যে অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয় সেটা খুশি হয়ে দিচ্ছি এটা কেউ স্বীকার করবে না। তারা কিন্তু জিম্মি হয়ে দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন এবং জিম্মি হয়ে দুর্নীতির অংশীদারও হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় খানা জরিপে ৮৯ শতাংশ মানুষ যারা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা বলেছেন, ঘুষ না দিলে আমরা সেবা পাবো না, কাজেই ঘুষ দিতে বাধ্য হই’ যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি কমবে না যদি রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়।
টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, পণ্য আমদানি-রপ্তানি কাজে মংলা স্থলবন্দরের কাস্টম হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে’ আদায় করছে। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মংলা বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ চার কোটি ৬১ লাখ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করেছে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে মংলা কাস্টম হাউজে প্রায় প্রতিটি ধাপে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায় করা হয়। এই সময়ে আমদানি করা গাড়ির শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কাস্টম হাউজে প্রতি গাড়ি চার হাজার টাকা এবং গাড়ি ছাড়ের ক্ষেত্রে মংলা বন্দরে ১ হাজার ৭১৫ টাকা ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে’ আদায় করা হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মংলা কাস্টম হাউজে জাহাজ আগমন-বহির্গমনের সময় ৮ হাজার ৩৫০ টাকা করে নেয়া হয়। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ নেয় ২১ হাজার টাকা। এছাড়া পণ্য ছাড়ের ক্ষেত্রে বন্দরে বিকাল ৫টার আগে ৬০০০ এবং পরে ৭২০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন নিয়েও গবেষণা করেছে টিআইবি। বুড়িমারী স্থলবন্দরের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এই বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির বিভিন্ন পর্যায়ে কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র এবং পণ্যের ধরন, গুণগত মান, ওজনসহ সবকিছু সঠিক থাকা সত্ত্বেও পণ্য ছাড়ের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে অলিখিতভাবে নির্ধারিত ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র, পণ্যের মান, ধরন বা ওজনে সমস্যা থাকলে, অথবা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ পরস্পরের দরকষাকষির সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে, বুড়িমারী বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে বিল অব এন্ট্রি প্রতি গড়ে ন্যূনতম ২০৫০ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে বা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। একইভাবে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে বিল অব এক্সপোর্ট প্রতি গড়ে ন্যূনতম ১৭০০ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে দিতে হয়।
এতে আরো বলা হয়, বুড়িমারী স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন আমদানি ও রপ্তানির জন্য বিল অব এন্ট্রিতে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ৪৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে হিসাব দেখিয়েছে টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় ব্যবহৃত ট্রাক থেকে বুড়িমারীর মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন চাঁদা নিয়েছে ৫ কোটি চার লাখ টাকা। এখানে আমদানি পণ্যের প্রতিটি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানির বেলায় এটি দেড় হাজার টাকা। আবার আমদানি করা পণ্য ছাড় করতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানিতে এই ঘুষ ২০০ টাকা।
এই দুই বন্দরে দুর্নীতি প্রতিরোধে পণ্যের শুল্কায়ন, কায়িক পরীক্ষণ, পণ্য-ছাড় এবং জাহাজের আগমন-বহির্গমন প্রক্রিয়া অনুমোদনে কার্যকর ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করা, সকল পর্যায়ে অটোমেশন এবং পেপার-লেস অফিস প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি সুপারিশের কথা জানিয়েছে টিআইবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আমদানি হওয়া গাড়ির ৬০ শতাংশ মংলা বন্দর দিয়ে আসে। এছাড়া ক্লিনকার, সার, কয়লা, এলপি গ্যাস আমদানি করা হয় এই বন্দর দিয়ে। রপ্তানি হয় চিংড়ি, পাট, সিরামিক ইত্যাদি পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছর মোংলা বন্দর ২২৭ কোটি টাকা ও মংলা কাস্টমস ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা আয় করে। অন্যদিকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে বোল্ডার, সবজি বীজ, ভুট্টা, পিয়াজ ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়। তবে আমদানি পণ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পাথর। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মংলা বন্দর ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগসাজশে ও বলপূর্বক দুর্নীতি হচ্ছে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে সেবাগ্রহীতারা দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। এসব দুর্নীতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত। তারাও সুবিধা পায় বলে এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি, আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা ও দাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কমানো গেলে দুর্নীতি কমে যায়। তবে সেই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে সুফল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর হতে আমদানি পণ্য দেশের বিভিন্নস্থানে পরিবহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করার ক্ষেত্রে বুড়িমারী ট্রাক টার্মিনালে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ট্রাক প্রতি প্রায় ৯০০ টাকা চাঁদা হিসেবে আদায় করে নিচ্ছে। দালালের সাহায্য ছাড়া বুড়িমারী হতে ট্রাক ভাড়া পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে দালালকে ট্রাক প্রতি ৪০০ হতে ৫০০ টাকা বকশিশ দিতে হয়। এ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০টি হিসেবে বছরে প্রায় ৬০০০টি পণ্যবাহী ট্রাক এই টার্মিনাল হতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করে। আর এই হিসেবে দেখা যায়, প্রতি বছর এই টার্মিনাল হতে ন্যূনতম প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্দরের এই দুর্নীতি আইনের চোখে প্রমাণিত না, যে কারণে আমরা এটাকে অভিযোগ বলছি। যারা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতির শিকার হয়, নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে তাদের তথ্য এবং অন্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের পদ্ধতি অনুযায়ী প্রমাণিত বিধায় আমরা এটাকে (দুর্নীতি) বলছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বলেন জোর করে টাকা নিচ্ছি না, তারা তো বিভিন্নভাবে সেটা ব্যাখ্যা করেন। এটাকে অনেকে স্পিড মানি বলে থাকেন। আমাদের সরকারের একাংশ থেকেও আমরা সেটা শুনে থাকি। তবে আমরা সেটাকে দুর্নীতিই বলি।
‘বকশিশ হিসাবে যে অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয় সেটা খুশি হয়ে দিচ্ছি এটা কেউ স্বীকার করবে না। তারা কিন্তু জিম্মি হয়ে দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন এবং জিম্মি হয়ে দুর্নীতির অংশীদারও হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় খানা জরিপে ৮৯ শতাংশ মানুষ যারা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা বলেছেন, ঘুষ না দিলে আমরা সেবা পাবো না, কাজেই ঘুষ দিতে বাধ্য হই’ যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি কমবে না যদি রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়।
No comments