আমেরিকা-ইউরোপের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক বজায় রাখবে বিএনপি by সালমান তারেক শাকিল
যুক্তরাষ্ট্রসহ
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে
করেন, যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত কারণেই ভারতকে টপকে বাংলাদেশ বিষয়ে আগ্রহ
দেখাচ্ছে কম। আগামী নির্বাচনেও এর বেশি পরিবর্তন হবে না। ফলে,
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের বাইরে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চিন্তা আপাতত
বিএনপিতে কম। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো গণতন্ত্র,
মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সোচ্চার থাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ
রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা আদতে বিএনপির পক্ষেই যাচ্ছে, এমন ভাবনায় সন্তুষ্টি
রয়েছে দলটিতে।
বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের সূত্রগুলোর তথ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া নীতি ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের বাইরে যাবে না। বিশেষ করে, এ অঞ্চলে চীনের প্রাধান্য কমাতে ভারতকেই পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও কৌশলগত কারণে আচরণ সীমাবদ্ধ রেখেছে দেশটি।
সূত্রটি মনে করে, পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ স্বতঃসিদ্ধ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনশৃঙ্খলা, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, বাকস্বাধীনতাসহ এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে। এ কারণে এই রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বড় ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছে না বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্বিশ্বের সব রাষ্ট্রে গণতন্ত্র, রুলস অব ল, মানবাধিকার, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তারা সবকিছু দেখতে চায়। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই জিনিসগুলো তারা দেখতে চায়। যে সরকার এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে না, তাদের ওপর তারা অসন্তুষ্ট থাকবে।’
ইনাম আহমেদ চৌধুরী যোগ করেন, ‘‘আমেরিকা ও ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো ‘ইমারজেন্সি ফ্যাসিজম’ সম্পর্কে ধারণা রাখে। তারা এটা ইতালিতে দেখেছে, স্পেনে দেখেছে। ফলে, তারা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে দৃষ্টি রাখে।’’
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, একুশ শতকের শুরু থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ আলাদা কোনও গুরুত্ব পায়নি। দশকের শুরুতে ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা বা ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেও দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে দেশটির সাবেক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বাংলাদেশ সফরে এলেও নির্বাচন বিষয়ে তার পরামর্শকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এছাড়া দেশটির রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা তার দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচন বিষয়ক তৎপরতাকেও ক্ষমতাসীনরা ইতিবাচকভাবে দেখেনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফরে এলেও মৌলিক কোনও ভূমিকা রাখার সুযোগ পাননি দেশটির কূটনীতিকরা।
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, ২০১৬ সালে নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। যদিও গত বছরের শেষ দিকে মিয়ানমার ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। মিয়ানমারে পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ইস্যুতে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মনে করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে চীন-ইন্টারেস্টের বিষয়টি সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে বিএনপিও পশ্চিমা দেশগুলোকে সহযোগিতা দিতে চাইছে। বিশেষ করে মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বাংলাদেশকে পাশে রাখা ছাড়া উপায় নেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের। যদিও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখছে বিএনপি।
সূত্রের ভাষ্য, মিয়ানমারে অং সান সুচিকে ক্ষমতায় আনতে পশ্চিমা বিশ্বের অবদান বেশি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইইউ। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগকেই এগিয়ে রাখেন সু চি। আর এ বিষয়টিই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে মনোভাব তৈরি করে পশ্চিমাদের।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রাধান্য কমাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোকে ভারতের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এসব কারণ বিবেচনায় বাংলাদেশ নিয়ে ভিন্ন কোনও পরিকল্পনা নেই তাদের।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে এখন উত্তর কোরিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব কম হলেও এ দেশের সিস্টেম সম্পর্কে তাদের কাছে গুরুত্ব রয়েছে বেশি।’
পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রহের বিষয়ে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির সুবিধা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যেসব বিষয় চায়, তাতে বিএনপিরই উপকার হয়। বহির্বিশ্ব চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং, গণতন্ত্র চায়, দুর্নীতি হবে না। ফলে, এই চাওয়াগুলো তো বিএনপির পক্ষেই যায়।’
২০১৫ সালে বিএনপির একটি কূটনৈতিক দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। ওই সময়ে ১১ জানুয়ারি সাবিহ উদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তিনদিন পর ১৪ জানুয়ারি গুলশান-২ এলাকায় দুর্বৃত্তরা হামলা করে আরেক চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যান সাংবাদিক শফিক রেহমান। গ্রেফতার হয়ে ছয় মাস কারাগারে থাকতে হয় শমসের মবিন চৌধুরীকে। এরপরই কূটনৈতিক উইংয়ের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই চারজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির আন্তরিক সম্পর্ক নির্মাণে কাজ করেছেন। ৫ মাস জেল খেটে সরাসরি রাজনীতি থেকে অবসরে চলে যান শমসের মবিন চৌধুরী।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে অভিজ্ঞ কূটনীতিক ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কী ধরনের সম্পর্কে আগ্রহী। তবে এখন পর্যন্ত তারা বলে আসছে একটা অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় তারা। বিস্তারিত কী চায়, সেটা আরও পরে বোঝা যাবে।’
২০১৬ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে ছিল বিএনপি। হিলারির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সুসম্পর্ক ছিল, এমন বিশ্বাসও নেতাকর্মীরা করতেন। নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। যদিও সে নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় হয়। দায়িত্বশীল নেতারা অবশ্য বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি পরিবর্তিত হওয়ার সুযোগ কম। ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট বা কোনও ব্যক্তির ওপর পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, তারা বাংলাদেশে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে তারা বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনকে বুঝিয়েছেন। তাহলে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে সব দল ও দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আমাদের সঙ্গেও একই সম্পর্ক। এছাড়া আমাদের চাওয়ার ওপর তো কিছু নির্ভর করে না। তারা তাদের দেশের কূটনীতি অনুযায়ী কাজ করবে।’
বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের সূত্রগুলোর তথ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া নীতি ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের বাইরে যাবে না। বিশেষ করে, এ অঞ্চলে চীনের প্রাধান্য কমাতে ভারতকেই পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও কৌশলগত কারণে আচরণ সীমাবদ্ধ রেখেছে দেশটি।
সূত্রটি মনে করে, পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ স্বতঃসিদ্ধ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনশৃঙ্খলা, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, বাকস্বাধীনতাসহ এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে। এ কারণে এই রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বড় ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছে না বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্বিশ্বের সব রাষ্ট্রে গণতন্ত্র, রুলস অব ল, মানবাধিকার, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তারা সবকিছু দেখতে চায়। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই জিনিসগুলো তারা দেখতে চায়। যে সরকার এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে না, তাদের ওপর তারা অসন্তুষ্ট থাকবে।’
ইনাম আহমেদ চৌধুরী যোগ করেন, ‘‘আমেরিকা ও ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো ‘ইমারজেন্সি ফ্যাসিজম’ সম্পর্কে ধারণা রাখে। তারা এটা ইতালিতে দেখেছে, স্পেনে দেখেছে। ফলে, তারা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে দৃষ্টি রাখে।’’
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, একুশ শতকের শুরু থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ আলাদা কোনও গুরুত্ব পায়নি। দশকের শুরুতে ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা বা ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেও দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে দেশটির সাবেক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বাংলাদেশ সফরে এলেও নির্বাচন বিষয়ে তার পরামর্শকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এছাড়া দেশটির রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা তার দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচন বিষয়ক তৎপরতাকেও ক্ষমতাসীনরা ইতিবাচকভাবে দেখেনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফরে এলেও মৌলিক কোনও ভূমিকা রাখার সুযোগ পাননি দেশটির কূটনীতিকরা।
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, ২০১৬ সালে নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। যদিও গত বছরের শেষ দিকে মিয়ানমার ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। মিয়ানমারে পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ইস্যুতে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মনে করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে চীন-ইন্টারেস্টের বিষয়টি সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে বিএনপিও পশ্চিমা দেশগুলোকে সহযোগিতা দিতে চাইছে। বিশেষ করে মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বাংলাদেশকে পাশে রাখা ছাড়া উপায় নেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের। যদিও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখছে বিএনপি।
সূত্রের ভাষ্য, মিয়ানমারে অং সান সুচিকে ক্ষমতায় আনতে পশ্চিমা বিশ্বের অবদান বেশি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইইউ। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগকেই এগিয়ে রাখেন সু চি। আর এ বিষয়টিই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে মনোভাব তৈরি করে পশ্চিমাদের।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রাধান্য কমাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোকে ভারতের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এসব কারণ বিবেচনায় বাংলাদেশ নিয়ে ভিন্ন কোনও পরিকল্পনা নেই তাদের।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে এখন উত্তর কোরিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব কম হলেও এ দেশের সিস্টেম সম্পর্কে তাদের কাছে গুরুত্ব রয়েছে বেশি।’
পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রহের বিষয়ে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির সুবিধা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যেসব বিষয় চায়, তাতে বিএনপিরই উপকার হয়। বহির্বিশ্ব চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং, গণতন্ত্র চায়, দুর্নীতি হবে না। ফলে, এই চাওয়াগুলো তো বিএনপির পক্ষেই যায়।’
২০১৫ সালে বিএনপির একটি কূটনৈতিক দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। ওই সময়ে ১১ জানুয়ারি সাবিহ উদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তিনদিন পর ১৪ জানুয়ারি গুলশান-২ এলাকায় দুর্বৃত্তরা হামলা করে আরেক চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যান সাংবাদিক শফিক রেহমান। গ্রেফতার হয়ে ছয় মাস কারাগারে থাকতে হয় শমসের মবিন চৌধুরীকে। এরপরই কূটনৈতিক উইংয়ের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই চারজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির আন্তরিক সম্পর্ক নির্মাণে কাজ করেছেন। ৫ মাস জেল খেটে সরাসরি রাজনীতি থেকে অবসরে চলে যান শমসের মবিন চৌধুরী।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে অভিজ্ঞ কূটনীতিক ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কী ধরনের সম্পর্কে আগ্রহী। তবে এখন পর্যন্ত তারা বলে আসছে একটা অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় তারা। বিস্তারিত কী চায়, সেটা আরও পরে বোঝা যাবে।’
২০১৬ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে ছিল বিএনপি। হিলারির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সুসম্পর্ক ছিল, এমন বিশ্বাসও নেতাকর্মীরা করতেন। নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। যদিও সে নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় হয়। দায়িত্বশীল নেতারা অবশ্য বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি পরিবর্তিত হওয়ার সুযোগ কম। ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট বা কোনও ব্যক্তির ওপর পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, তারা বাংলাদেশে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে তারা বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনকে বুঝিয়েছেন। তাহলে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে সব দল ও দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আমাদের সঙ্গেও একই সম্পর্ক। এছাড়া আমাদের চাওয়ার ওপর তো কিছু নির্ভর করে না। তারা তাদের দেশের কূটনীতি অনুযায়ী কাজ করবে।’
No comments