বিউটি ধর্ষণ ও খুন: প্রধান আসামি বাবুল সিলেটে গ্রেপ্তার
নানার
বাড়ি থেকে বিউটিকে তুলে নিয়ে খুনের ঘটনার পরপরই পালিয়েছিল বাবুল মিয়া।
এরপর থেকে সে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। প্রায় ১৪ দিন পর
র্যাব সদস্যরা শুক্রবার রাত ১টার দিকে বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাবের একটি দল সিলেটের বিয়ানীবাজারের রামদা গ্রামের ফুফুর বাড়ি থেকে
তাকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে- গ্রেপ্তারের পর বাবুল মিয়া খুনের ঘটনা সম্পর্কে
র্যাবের কাছে মুখ খুলেনি। প্রথম ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও
দ্বিতীয় ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয় বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। গতকাল
বিকালে র্যাব সদস্যরা বাবুল মিয়াকে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত বাবুল মিয়া হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা
গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা
গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তার। বয়স ১৬। চলতি বছরের ২১শে জানুয়ারি
একই গ্রামের বাবুল মিয়া বিউটি আক্তারকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরে তাকে ধর্ষণ করে। এই ধর্ষণের ঘটনা এলাকাজুড়ে আলোচিত হলেও সমাজপতিরা সেটি
সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে সায়েদ আলী তার মেয়ে
বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা
করেন। ওই মামলার পর ফের সমাজপতিরা নড়েচড়ে ওঠেন। তারা ধর্ষণের ঘটনাটি
সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালান। এমনকি পুলিশের কাছ থেকে তারা
ঘটনাটি শেষ করার কথা বলে সময় চেয়ে নেন। ওদিকে-ধর্ষণ মামলা দায়ের করার পর
থেকে বাবুল মিয়া ও তার মা বিউটি ও তার বাবাকে মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত
হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের এই হুমকির মুখে তটস্থ হয়ে পড়েন সায়েদ মিয়া। তিনি
মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন। ফের তার মেয়েকে অপহরণ ও
হত্যার হুমকি দেয়া হলে বাবুল মিয়া মেয়েকে নিজ বাড়ি থেকে সরিয়ে পার্শ্ববর্তী
উপজেলার লাখাইয়ের গুণিপুর গ্রামের নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপরও বাঁচানো
গেলো না বিউটিকে। ১৬ই মার্চ নানা বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয় বিউটিকে। সেখান
থেকে তুলে নিয়ে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পরদিন ১৭ই মার্চ সকালে নানা
বাড়ি গুণিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে ছাতাগর্ত হাওরে বিউটি আক্তারের
ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। আর লাশ উদ্ধারের পরপরই এলাকায় তোলপাড় শুরু
হয়। গোটা দেশজুড়ে আলোচনায় আসে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের বিউটি আক্তার অপহরণ
ও হত্যার ঘটনা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বিউটি বিচার চেয়েও পায়নি। উল্টো তার
জীবন দিতে হলো। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এদিকে- বিউটি খুনের
ঘটনার পরদিন নিজ এলাকা ছেড়ে পালায় বাবুল মিয়া। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ হন্য
হয়ে অভিযান শুরু করে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না বাবুল মিয়াকে। তবে এরই মধ্যে
পুলিশ বাবুল মিয়ার মাকে গ্রেপ্তার করেছে। বাবুলের সন্ধান শুরু করে র্যাব।
তারা সোর্স নিয়োগ করে বাবুল মিয়াকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তাকে পাওয়া
যাচ্ছিল না। সে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার আস্তানা বদল করেছে। সর্বশেষ গত
শুক্রবার সে অবস্থান নেয় বিয়ানীবাজারের রামদা গ্রামে তার ফুফুর বাড়িতে। রাত
১টার দিকে র্যাব সদস্যরা তাকে ধরতে অভিযান চালায়। রাতে তাকে গ্রেপ্তার
করা হয়। গতকাল দুপুরে র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে তাকে নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের
আয়োজন করা হয়। এ সময় র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ
তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। তিনি বলেন- রাত ১টার দিকে তার ফুফুর বাড়ি থেকে
বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে র্যাবের পক্ষ থেকে
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেনি। হত্যাকাণ্ডের
সঙ্গে অন্যরা জড়িত বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। র্যাব প্রধান দাবি করেন-
বাবুল মিয়া মিথ্যা বলছে। তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
লে. কর্নেল আজাদ বলেন- প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, খুনের ঘটনার পরপরই
সে এলাকা ছেড়ে পালায়। তিনি বলেন- প্রথম ঘটনার পর বিষয়টি সামাজিক ভাবে
নিষ্পত্তির চেষ্টা চালানো হয়। এর ফাঁকেই বিউটিকে ফের তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও
খুনের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন- বিকালে গ্রেপ্তারকৃত বাবুল মিয়াকে
শায়েস্তাগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
No comments