সৌদিতে বাংলাদেশি নারীদের কান্না
বাংলাদেশ
থেকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়া নারীদের ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম
মিডলইস্ট আই। প্রকাশিত প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানিয়েছে, নিয়োগকারীদের দ্বারা
যৌন ও শারীরিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়ে শত শত নারী কাজ ছেড়ে পালিয়ে যেতে
বাধ্য হচ্ছেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এসব নারীদের থাকার জন্য
আশ্রয় কেন্দ্র (সেইফ হোম) খুলতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। রিয়াদ থেকে
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ফাঁস হওয়া গোপনীয় কূটনৈতিক বার্তা
থেকে এসব তথ্য জানা গেছে বলে দাবি মিডলইস্ট আই’র। ঢাকার একজন কূটনীতিককে
উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পালিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা নারীরা
অভিযোগ করেন নিয়োগকর্তারা তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালান। কেউ আবার
অসুস্থ হয়েও আসেন। তাই তারা এখানে আশ্রয় নিতে চান।’ ২০১৫ সালে লেখা ওই
কূটনৈতিক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ জন নারী আশ্রয় কেন্দ্রে
আসেন। অব্যাহতভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের
থাকার ব্যবস্থা করতে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তারা আশ্রয় কেন্দ্রে
আরো আসন বৃদ্ধি ও সিসিটিভি-সিস্টেম পাঠানোর অনুরোধ করেছেন ওই বার্তায়।
এছাড়া একজন কাউন্সেলর পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বার্তায় আরো বলা হয়, আশ্রয়
কেন্দ্রে আসা নারীদের সহযোগিতার জন্য দূতাবাসে কোনো নারী কূটনীতিক নেই।
আশ্রয় নেয়া নারীরা দেশে ফিরে আসতে দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়ে থাকেন। অনেক
ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের সঙ্গে পাসপোর্ট বা অন্যান্য কাগজপত্র থাকে না।
মিডলইস্ট আই’কে কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, সৌদি আরবে পৌঁছার পর পরই
গৃহকর্তারা তাদের কাছ থেকে সব ধরনের কাগজপত্র নিয়ে নেয়। এতে অনেকের পক্ষে
সহজে দেশে ফিরে আসা সম্ভব হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে
মামলা করে তাদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেন নিয়োগকর্তারা। ফাঁস
হওয়া কূটনৈতিক বার্তায় বলা হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর দেশে ফিরতে
কখনো ১৫ দিন বা এক মাস আবার কখনো ৬ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সৌদিতে এ
ধরনের আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা কত তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য বার্তায় দেয়া
হয়নি। তবে ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, জেদ্দা এবং রিয়াদে অন্তত ২৫০ জন নারী
আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। গত চার বছরে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী যাওয়ার সংখ্যা
নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে ৫ হাজারের
কিছু বেশি নারী সৌদি গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে যান ২১ হাজার, ২০১৬-তে ৬৮
হাজার, ২০১৭-তে ৮৩ হাজার। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে গেছেন ১৬ হাজারের
বেশি।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো মানবজমিনকে জানিয়েছে, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকরা দেশটিতে নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরে। নারী শ্রমিকদের সুরক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে ঢাকার প্রতিনিধিদের আলোচনাও হয়েছে। সেগুনবাগিচার কূটনীতিকরা বলছেন, সৌদিতে নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি তৎপর রয়েছে। সেই তৎপরতার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি ঢাকার কর্মকর্তাদের।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো মানবজমিনকে জানিয়েছে, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকরা দেশটিতে নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরে। নারী শ্রমিকদের সুরক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে ঢাকার প্রতিনিধিদের আলোচনাও হয়েছে। সেগুনবাগিচার কূটনীতিকরা বলছেন, সৌদিতে নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি তৎপর রয়েছে। সেই তৎপরতার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি ঢাকার কর্মকর্তাদের।
No comments