১০০০০ রোহিঙ্গার দ্বিতীয় তালিকা দিচ্ছে ঢাকা: প্রত্যাবাসনে ৫৫৯ জনে অনাপত্তি by মিজানুর রহমান
পুরনো
৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা থেকে ৬শ’রও কম বাস্তুচ্যুতকে রাখাইনের বাসিন্দা
বলে স্বীকৃতি দিয়েছে মিয়ানমার। তারা যেকোনো সময় ফিরতে পারবেন বলে ঘোষণা
দিয়েছে দেশটির সরকার। তবে কবে নাগাদ তারা ফিরতে পারবেন তা নিয়ে এখনো
অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন তালিকা প্রস্তুত করেছে
বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মানবজমিনকে
জানিয়েছেন, প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার ওই তালিকা শিগগিরই মিয়ানমার
কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রত্যাবাসন তালিকাকে মিয়ানমারের
স্বীকৃতি বা অনাপত্তি দেয়া না দেয়া নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে তখন ’১১ সালের
আগে আসা ২৪১৫ জনকে স্বীকৃতি দিয়েও মিয়ানমারের না ফেরানোর বিষয়টি সামনে আসছে
। কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সংখ্যা মুখ্য নয়, প্রত্যাবাসনে সুচি
সরকারের আন্তরিকতাটা জরুরি। কারণ মিয়ানমার সরকার ২০১৪ সালে ২৪১৫ জনকে
রাখাইনের বাসিন্দা বলে ফিরতে ‘অনাপত্তি সনদ’ দিয়েছিল। কিন্তু আজও অবধি
তাদের ফেরায় নি। নবাগত রোহিঙ্গাদের ফেরানোর আলোচনায় পুরনোদের বিষয়টি এখন
চাপা পড়ে গেছে। গত বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
সংক্রান্ত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আসন্ন দ্বিতীয় বৈঠকের প্রস্তুতি সভায়
মিলিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের
সভাপতিত্বে তার দপ্তরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন তালিকা এবং
প্রথম তালিকার ৫৫৯ জনের স্বীকৃতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে
প্রত্যাবাসনের জন্য পাঠানো প্রথম তালিকার ৮ হাজার ৩২ জনের মধ্যে ৬শ’ জনেরও
কম ব্যক্তিকে রাখাইনের বাসিন্দা বলে স্বীকৃতি দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। এ
বিষয়ে আসন্ন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ব্যাখ্যা চাওয়ার পরামর্শও আসে।
বৈঠকে অংশ নেয়া ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও
প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেছেন,
যাচাইয়ের পর মিয়ানমারের অনাপত্তি সংক্রান্ত (প্রথম তালিকার) যে নামগুলো
বাংলাদেশ পেয়েছে এখন তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পাশাপাশি মিয়ানমারকে দ্বিতীয় তালিকা দেয়ার প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত। প্রথম
তালিকার সব নাম যাচাইয়ের আগে দ্বিতীয় তালিকা দেয়ার যৌক্তিকতা বিষয়ে জানতে
চাইলে আবুল কালাম বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় তালিকা দিতে
কোনো অসুবিধা নেই। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের
বৈঠকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার প্রথম
প্রত্যাবাসন তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল। সেই তালিকা থেকে এ পর্যন্ত ৫৫৯
জনকে (প্রথমে ৩৭৪, পরে ১৮৫) রাখাইনের আদি বাসিন্দা বলে স্বীকার করে
বাংলাদেশকে ফিরতি তালিকা দিয়েছে মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন
কেন্দ্রে এক সেমিনারের সাইড লাইনে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন,
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সংখ্যা একটি বিষয়, কিন্তু এটিকে বড় করে দেখলে পুরো
প্রক্রিয়া নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। সংখ্যা নিয়ে আমাদেরও প্রশ্ন
আছে। কিন্তু আমরা এটাকে বড় করে দেখতে চাই না। আমরা পুরো প্রক্রিয়াকে
জোরালোভাবে এগিয়ে নিতে চাই। এখানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরাতে
মিয়ানমারের সদিচ্ছাটা জরুরি। দেরি হলেও আমরা টেকসই প্রত্যাবাসন চাই। আর এটি
হতে হবে অবশ্যই নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায়। প্রত্যাবাসন বিষয়ক
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আসন্ন দ্বিতীয় বৈঠক ঢাকায় হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা
বলেন, এখনো সময়ক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে এটি হওয়ার
সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সে মতেই প্রস্তুতি চলছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায়
সহায়তার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে পাকা চুক্তি
শিগগিরই হবে বলেও জানান ঢাকার ওই কূটনীতিক। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫শে আগস্ট
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আচমকা অভিযানে গত কয়েক মাসে প্রায় ৭ লাখ
রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরের
পর এসেছে ৮৭ হাজার। আর এখানে আগে থেকে আরো প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান
করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ ৯৫ হাজার রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের
আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান রয়েছে।
কথা রাখেনি মিয়ানমার, পুরাতন ২৪১৫ জনকে ফেরায়নি, উদ্যোগও নেই: সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ২০১১ সালের অক্টোবরের আগে বাংলাদেশে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই হাজার ৪১৫ জনের পরিচয় যাচাই করে রাখাইনের আদি বাসিন্দা হিসেবে স্বীকার করে তাদের ফেরায় অনাপত্তি দিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু আজ অবধি তাদের ফেরায় নি। নবাগতদের ফেরানোর সামপ্রতিক চুক্তি ও মাঠ পর্যায়ের তৎপরতায় পুরাতনদের ফেরানোর কোনো উদ্যোগই এখন নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিয়ানমারের কূটকৌশলে এখানে বছরের পর বছর ধরে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরার বিষয়টি আড়াল হয়ে আছে। আদৌ আর কোনো দিন এদের নিয়ে কেউ আলোচনা করবে কি-না তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে! সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ৩১শে আগস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে বৈঠকে মিয়ানমার তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দুই মাসের মধ্যে শুরুর আশ্বাসও দিয়েছিল। এমনকি গত বছরের ২৫শে আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নতুন করে অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশমুখী ঢলের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও বলেছিলেন, সবাইকে নয়, বরং এর আগে যাচাই করা সেই দুই হাজার ৪১৫ জনকেই তারা ফেরত নেবেন। কিন্তু গত ২৩শে নভেম্বর দুুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে এবং গত ১৯শে ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপরিধি ঠিক করা হয়েছে, সেখানে ওই দুই হাজার ৪১৫ জনের প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যখন শরণার্থী শিবিরের বাইরে অবৈধভাবে অবস্থান করা কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছিল তখনও মিয়ানমার ওই দুই হাজার ৪১৫ জনকে ফেরত নিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এরপর আর তা বাস্তবায়ন করেনি। বরং তাদের সৃষ্টি করা পরিস্থিতিতে আরো অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে: প্রত্যাবাসনে দেরি হওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস, বন্যা, সাইক্লোন হওয়ার আশঙ্কায় পাহাড়ি এলাকায় চরম ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শরণার্থী বিষয়ক বিশেষ সেলের তত্ত্বাবধানে কাজটি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র মতে, চরম ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সমপ্রতি জাতিসংঘের যেসব রিপোর্ট এসেছে তার ভিত্তিতে ১১ হাজার জনকে এরই মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি আরো ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে সরানো হবে বলে জানা গেছে।
কথা রাখেনি মিয়ানমার, পুরাতন ২৪১৫ জনকে ফেরায়নি, উদ্যোগও নেই: সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ২০১১ সালের অক্টোবরের আগে বাংলাদেশে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই হাজার ৪১৫ জনের পরিচয় যাচাই করে রাখাইনের আদি বাসিন্দা হিসেবে স্বীকার করে তাদের ফেরায় অনাপত্তি দিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু আজ অবধি তাদের ফেরায় নি। নবাগতদের ফেরানোর সামপ্রতিক চুক্তি ও মাঠ পর্যায়ের তৎপরতায় পুরাতনদের ফেরানোর কোনো উদ্যোগই এখন নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিয়ানমারের কূটকৌশলে এখানে বছরের পর বছর ধরে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরার বিষয়টি আড়াল হয়ে আছে। আদৌ আর কোনো দিন এদের নিয়ে কেউ আলোচনা করবে কি-না তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে! সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ৩১শে আগস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে বৈঠকে মিয়ানমার তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দুই মাসের মধ্যে শুরুর আশ্বাসও দিয়েছিল। এমনকি গত বছরের ২৫শে আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নতুন করে অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশমুখী ঢলের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও বলেছিলেন, সবাইকে নয়, বরং এর আগে যাচাই করা সেই দুই হাজার ৪১৫ জনকেই তারা ফেরত নেবেন। কিন্তু গত ২৩শে নভেম্বর দুুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে এবং গত ১৯শে ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপরিধি ঠিক করা হয়েছে, সেখানে ওই দুই হাজার ৪১৫ জনের প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যখন শরণার্থী শিবিরের বাইরে অবৈধভাবে অবস্থান করা কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছিল তখনও মিয়ানমার ওই দুই হাজার ৪১৫ জনকে ফেরত নিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এরপর আর তা বাস্তবায়ন করেনি। বরং তাদের সৃষ্টি করা পরিস্থিতিতে আরো অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে: প্রত্যাবাসনে দেরি হওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস, বন্যা, সাইক্লোন হওয়ার আশঙ্কায় পাহাড়ি এলাকায় চরম ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শরণার্থী বিষয়ক বিশেষ সেলের তত্ত্বাবধানে কাজটি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র মতে, চরম ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সমপ্রতি জাতিসংঘের যেসব রিপোর্ট এসেছে তার ভিত্তিতে ১১ হাজার জনকে এরই মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি আরো ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে সরানো হবে বলে জানা গেছে।
No comments