নবীগঞ্জে অপ-চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
নবীগঞ্জে
নার্স ও আয়ার অপ-চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
আলোচিত ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবায় অব্যস্থাপনার
চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এনিয়ে উপজেলা শহরে তোলপাড় চলছে। নিহত প্রসূতির নাম
সুফলা রাণী দাশ (৩৩)। তিনি উপজেলার রোকনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে তার অকাল মৃত্যু হয়। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে
এসেছে। চিকিৎসাসেবা নিয়ে অবহেলার অভিযোগে আইনি প্রক্রিয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নিহত প্রসূতি পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামের মৃত সুমেশ চন্দ্র দাশের কন্যা ও
উপজেলার আমড়াখাইড় গ্রামের রিপন তালুকদারের স্ত্রী। প্রসূতি সুফলা রাণী
দাশের পারিবারিক সূত্র জানায়, সুফলা গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া নমিতা রানী আচার্য্য তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
এমনকি ঘটনার তিন দিন পূর্বে অর্থাৎ গত রোববার বিকেলেও বাসায় গিয়ে সুফলা
রাণী দাশকে দেখে আসেন এবং বলেন তার প্রসবের আরো তিন দিন সময় আছে। সবকিছু
ঠিক আছে। বুধবার বিকেল ৩টায় শিক্ষিকা সুফলার প্রসব ব্যথা শুরু হলে আয়া
নমিতাকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে নমিতা প্রসূতির বাড়িতে যান। এ সময় তিনি
সুফলাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রসূতিকে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেলিভারির কার্যক্রম শুরু করেন। প্রসূতির মা প্রণতি
রাণী জানতে চান আয়া নমিতা ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি বালা নাথ দ্বারা কি
তার কন্যা সুফলার ডেলিভারি সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে আয়া নমিতা রাণী
প্রসূতির মাকে বলেন, তারা থাকতে ডেলিভারিতে কোনো সমস্যা হবে না এবং আর কোনো
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন নেই। এমন কথা বলে ওই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ
নার্স আরতি ও চন্দ্রনা দে কে এনে তারা তিন জনের সমন্বয়ে ডেলিভারির
কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় প্রসব ব্যথায় বেকুল প্রসূতির সুফলা অসহ্য হয়ে
ছটফট ও হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করলে তারা তাকে সান্ত্বনার স্থলে অকথ্য
ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি প্রসূতির গলা শুকিয়ে ওষ্ঠাগত হওয়ার ফলে তাদের
কাছে পানি চাইলে তারা কোন কর্ণপাত না করে ডেলিভারির কাজ অসমাপ্ত রেখে অন্য
রোগীদের পাশে গিয়ে সময় দেন। এ সময় প্রসূতির গর্ভধারিণী মা প্রণতি রাণী
মেয়ের করুণ অবস্থা দেখে কাকুতি-মিনতি করে আয়া নমিতা ও তার সহযোগীদের কাছে
গিয়ে তাদেরকে ডেলিভারি কক্ষে নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে হাসপাতালের চিকিৎসক
চম্পক কিশোর সাহা সুমন প্রসূতির চিকিৎসার খবর নেন। ডাক্তার সুমন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রসূতির অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে বলে সান্ত্বনা দেন
এবং জরুরি বিভাগে চলে যান। এরই মধ্যে প্রসূতির গর্ভের সন্তান অর্ধেক
ভূমিষ্ঠের পথে। কিন্তু আয়া ও নার্সরা প্রসূতির সন্তানকে কোনো ভাবে উদ্ধার
করতে না পেরে ‘কেচি দিয়ে কেটে’ নবজাতককে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। যার ফলে
প্রসূতির অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়। এরই মধ্যে সুফলার মৃত নবজাতক উদ্ধার করে
তারা। তার অবস্থার অবনতি হলে দায়ভার এড়াতে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সিলেট নেয়ার পথে উপজেলার আউশকান্দি কাছে গিয়ে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রসূতি সুফলা রাণী দাশ। সুফলার মা প্রণতি রাণী দাশ
বলেন, তার মেয়ের এমন রক্তক্ষরণ হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওই সময়
তার রক্তে ডেলিভারি কক্ষ প্লাবিত হয়েছে। ওইদিন জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক
ডা. চম্পক কিশোর সাহা বলেন, আয়া নমিতার তত্ত্বাবধানে প্রসূতির পরিবার তাকে
হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং তিনি গিয়ে দেখেছেন প্রসূতির মৃত বাচ্চা প্রসব
হয়েছে। প্রসূতির অধিক রক্তক্ষরণের ফলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে
প্রেরণ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও (ভারপ্রাপ্ত) ডা.
আব্দুস সামাদ বলেন, জেনেছি ওইদিন ওই প্রসূতির মৃত বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়েছে এবং
অবস্থা খারাপ দেখে তাকে সিলেট রেফার্ড করা হয়। ওদিকে, হাসপাতালের
অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক সংবাদ পরিবেশিত
হলেও চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার
লোকজন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত চিকিৎসকরা
প্রাইভেট চিকিৎসা ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে কর্মরত নার্স আর আয়া দিয়ে চলছে
চিকিৎসার নামে বাণিজ্য। শিক্ষিকা প্রসূতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও উপজেলা
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তদারকি কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন
শ্রেণি-পেশার লোকজন।
No comments