ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে ঝুঁকিতে ৭ লাখ রোহিঙ্গা -গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
১৪টি
দিন আতঙ্কিত হয়ে তার স্ত্রী ও নয় সন্তানকে নিয়ে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল
থেকে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন নাবিল আলম (৪৬)। ওই দিনগুলোতে
পুরোটা পথ সেনা ও সশস্ত্র স্থানীয় মিলিশিয়াদের ভয়ে ভিত ছিল আলম। এটা প্রায়
আট মাস আগের ঘটনা। এখন আলম ও তার পরিবারের বসবাস কক্সবাজারের শরণার্থী
শিবির। তার দিন কাটে উদ্বিগ্ন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, ঘন কালো মেঘের দিকে
নজর রেখে, বর্ষার বৃষ্টি নিয়ে চিন্তিত থেকে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি হচ্ছে কক্সবাজার। বাংলাদেশের এই অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে তিন মিটারেরও কম উঁচু। তিন দিকেই পানির প্রবাহ। এখানে উঁচু ঢেউ আরো উঁচু হয়ে ওঠে। এমনকি চট্টগ্রামের মতো প্রধান শহরও বাদ যায় না পানির ভয়াল গ্রাস থেকে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান শুধু বন্যার ঝুঁকিই বাড়ায় না, প্রায়ই ভয়ানক ঝড় এসে হাজির হয়। ১৯৭০ সালে এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল ৩ লাখ মানুষ। একই এলাকায় ১৯৯১ সালে হওয়া এক ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় এক কোটি মানুষ। এক দশক আগে, ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিহত হন ১০ হাজার মানুষ। গত দুই বছর ধরেও কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ঝড়ের দেখা মিলেছে। এইবারও সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তার শিকার হতে পারে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ৭ লাখ রোহিঙ্গা। তারা কোনো রকমে বাঁশ আর তারপুলিন দিয়ে নির্মাণ করা কুটিরে অবস্থান করছে। ঝড় আসলে এই কুটির নিরাপদ আশ্রয় থাকবে না। ত্রাণ সংস্থাগুলো এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থাপক ডাফনি কুক জানান এমনটি ঘটলে, ‘প্রাণহানি ঘটবে’। ধারণা করা হচ্ছে, ভূমিধস বা বন্যার সরাসরি ঝুঁকিতে আছে প্রায় দুই লাখ শরণার্থী। ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, এরকম পরিস্থিতে তাদের দ্রুত সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। আলাদাভাবে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এদের বেশিরভাগেরই যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
যা ছিল, সব হারিয়েছি
শরণার্থী শিবিরে এই বছরের সবচেয়ে ভারী বর্ষণ দেখা গিয়েছিল গত সপ্তাহে। বর্ষার আগমনী বার্তা জানিয়ে আসা এই বৃষ্টি ত্রাণকর্মীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। অল্প বৃষ্টিতেই শিবিরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অস্থায়ী ড্রেনগুলো খুব দ্রুত ভরে যায়। খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের জন্য তৈরি মাটির রাস্তাগুলো কাদাময় হয়ে যায়। এমনকি সহিনা খাতুন (৭০) নামের এক শরণার্থীর ঘর পর্যন্ত উড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি নতুন ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। সেজন্য ত্রাণকর্মীরা বাঁশ, হাতিয়ার ও অতিরিক্ত তারপুলিন বিতরণ করেন- এমন একটি স্টেশনে নিয়মিত অপেক্ষা করেন।
স্টেশনে অবস্থানকালে সহিনা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে বৃষ্টি হচ্ছিল। আর আমার ঘর তাতে ধ্বংস হয়ে যায়। আমার যা ছিল আমি সব হারিয়েছে। এমনকি আজকেও আমি সকালে কিছুই খেতে পারেনি। আমাকে সরাসরি এখানে আসতে হয়েছে।’
আলম জানান, তার ঘরে ইতিমধ্যেই পানি উঠেছে। নষ্ট হয়ে গেছে জমিয়ে রাখা চাল। তিনি বলেন, আমাকে আমার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নতুন করে চাল কিনতে হয়েছে। মিয়ানমারে তার গ্রাম রাসিডং-এ সারাজীবন বন্যার শিকার হয়েছে আলম। তিনি জানান, তার বয়স যখন ১৮ তখন তিনি তার বাবাকে পা-ওয়ালা বাড়ি নির্মাণ করতে সাহায্য করতেন। কিন্তু তবুও ঘরে পানি উঠতো। সেপ্টেম্বরে যখন তিনি নাফ নদী পাড়ি দেন তখন বৃষ্টির মৌসুমের কথা চিন্তা করার ফুরসত হয়নি তার। তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তাও করিনি যে আমরা নদীটি পার হতে পারবো বা খাবার পাবো অথবা আশ্রয়। এটা আল্লাহর দয়া যে, আমরা এখন ঘুমানোর একটা জায়গা পাচ্ছি। তিন বেলা খেতে পারছি।’
কক্সবাজারে হঠাৎ করে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আগমন অঞ্চলটিতে ভৌগলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯০০ হেক্টর অপরিণত বনাঞ্চলজুড়ে নির্মিত হয়েছে রোহিঙ্গা শিবির। গাছের শিকড় মাটি ধরে রাখার যে পদ্ধতি ভূমিধসের হার কমিয়ে রাখতো তা নষ্ট হয়ে গেছে। বড় ধরনের জলপথ খনন করা হচ্ছে। সরকারের দেয়া বড় যন্ত্রপাতি দিয়ে পাহাড়ি অংশটুকু সমান্তরাল করে দেয়া হচ্ছে, ধীরে ধীরে।
তারপুলিন দিয়ে আর কতটুকুই করা যায়!
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলাতে শিখিয়েছে। মৃত্যুহার কমাতে ও জনগণকে ঝুঁকি সম্বন্ধে সতর্ক করার জন্য সরকারের বিস্তৃত কার্যপ্রণালি রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: উঁচু ভূমিতে সরে যাওয়া ও শক্ত আশ্রয়ের নিচে অবস্থান নেয়া। রোহিঙ্গাদের জন্য এ দুটির একটি উপায়ও খোলা নেই।
মিয়ানমার সরকারর নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কক্সবাজার স্বর্গস্বরূপ। কিন্তু একইসঙ্গে এটা একধরনের বিশাল বন্দিশালাও। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারপাশে অন্তত ২৭টি সামরিক তল্লাশি-চৌকি বসানো আছে, রোহিঙ্গাদের শিবির ছেড়ে যাওয়া ঠেকাতে। এখন পর্যন্ত, বন্যা ও ভূমিধসের পথ থেকে ১৫ হাজার পরিবারকে সরিয়ে এনেছে মানবাধিকার কর্মীরা। কিন্তু তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সবাইকে ঝুঁকির মুখ থেকে সরিয়ে আনার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই।
রোহিঙ্গাদের শক্ত বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে সাহায্য করার বিষয়টি তো চিন্তার বাইরে। সব মিলিয়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে বাংলাদেশে। এদেশের জনগণের মনোভাব ধীরে ধীরে টলতে শুরু করেছে। এছাড়া এটা নির্বাচনের বছর। ইটের রাস্তা ও সিমেন্টের ড্রেন পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু ইটের বাড়ি নয়। স্কুলের উপস্থিতির মতো, স্থানীয়রা ভাবতে পারেন যে, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে এসেছে। এসব সম্ভব নয় বলে রোহিঙ্গারা বালুর বস্তা দিয়ে বা শক্ত দড়ি দিয়ে বা প্লাস্টিকের বোতলের ভেতর বালি ভর্তি করে তা কুটিরের ছাদে বেঁধে দিয়ে, যেভাবে সম্ভব তাদের কুটিরগুলো সেভাবেই মজবুত করার চেষ্টা করছে।
কুক বলেন, আমরা যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি তা সম্ভবত হতে চলেছে। শুধু তারপুলিন আর বাঁশ দিয়ে আপনি কতটুকুই বা করতে পারবেন! আর প্রাকৃতিক নদীর সৃষ্টি বন্ধ করতে আপনি কতটুকু মাটিই বা সরাবেন!
রামসোল হোসাইন তার দুই কক্ষের কুটিরে এক মাদুরের ওপরে বসে থেকে ওপরের দিকে, টিনের ছাদের দিকে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করলো। তিনি এটা তার বাড়ির সুরক্ষার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই বর্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতাম। কিন্তু এই বছর একটু ব্যতিক্রম। এখানে যথেষ্ট পরিমাণ জিনিসপত্র নেই। আমরা যা পাচ্ছি তা দিয়েই চলার চেষ্টা করছি। তার সন্তানরা বাইরে খেলছিল। নিজের উভয় সংকট নিয়ে হোসাইন বলেন, যদি বন্যা হয় তাহলে আমাদের শিবিরের অন্য কোনো অংশে সরে যেতে হবে। কিন্তু সরকারের অনুমতি ছাড়া আমরা সেটা করতে পারবো না।
একবার বৃষ্টি শুরু হলে, মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে নিপীড়নের শিকার হওয়া এই সমপ্রদায়কে আবারো আগের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। থাকো আর মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবিলা করো, অথবা পালাও।
পৃথিবীর সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি হচ্ছে কক্সবাজার। বাংলাদেশের এই অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে তিন মিটারেরও কম উঁচু। তিন দিকেই পানির প্রবাহ। এখানে উঁচু ঢেউ আরো উঁচু হয়ে ওঠে। এমনকি চট্টগ্রামের মতো প্রধান শহরও বাদ যায় না পানির ভয়াল গ্রাস থেকে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান শুধু বন্যার ঝুঁকিই বাড়ায় না, প্রায়ই ভয়ানক ঝড় এসে হাজির হয়। ১৯৭০ সালে এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল ৩ লাখ মানুষ। একই এলাকায় ১৯৯১ সালে হওয়া এক ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় এক কোটি মানুষ। এক দশক আগে, ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিহত হন ১০ হাজার মানুষ। গত দুই বছর ধরেও কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ঝড়ের দেখা মিলেছে। এইবারও সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তার শিকার হতে পারে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ৭ লাখ রোহিঙ্গা। তারা কোনো রকমে বাঁশ আর তারপুলিন দিয়ে নির্মাণ করা কুটিরে অবস্থান করছে। ঝড় আসলে এই কুটির নিরাপদ আশ্রয় থাকবে না। ত্রাণ সংস্থাগুলো এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থাপক ডাফনি কুক জানান এমনটি ঘটলে, ‘প্রাণহানি ঘটবে’। ধারণা করা হচ্ছে, ভূমিধস বা বন্যার সরাসরি ঝুঁকিতে আছে প্রায় দুই লাখ শরণার্থী। ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, এরকম পরিস্থিতে তাদের দ্রুত সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। আলাদাভাবে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এদের বেশিরভাগেরই যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
যা ছিল, সব হারিয়েছি
শরণার্থী শিবিরে এই বছরের সবচেয়ে ভারী বর্ষণ দেখা গিয়েছিল গত সপ্তাহে। বর্ষার আগমনী বার্তা জানিয়ে আসা এই বৃষ্টি ত্রাণকর্মীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। অল্প বৃষ্টিতেই শিবিরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অস্থায়ী ড্রেনগুলো খুব দ্রুত ভরে যায়। খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের জন্য তৈরি মাটির রাস্তাগুলো কাদাময় হয়ে যায়। এমনকি সহিনা খাতুন (৭০) নামের এক শরণার্থীর ঘর পর্যন্ত উড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি নতুন ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। সেজন্য ত্রাণকর্মীরা বাঁশ, হাতিয়ার ও অতিরিক্ত তারপুলিন বিতরণ করেন- এমন একটি স্টেশনে নিয়মিত অপেক্ষা করেন।
স্টেশনে অবস্থানকালে সহিনা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে বৃষ্টি হচ্ছিল। আর আমার ঘর তাতে ধ্বংস হয়ে যায়। আমার যা ছিল আমি সব হারিয়েছে। এমনকি আজকেও আমি সকালে কিছুই খেতে পারেনি। আমাকে সরাসরি এখানে আসতে হয়েছে।’
আলম জানান, তার ঘরে ইতিমধ্যেই পানি উঠেছে। নষ্ট হয়ে গেছে জমিয়ে রাখা চাল। তিনি বলেন, আমাকে আমার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নতুন করে চাল কিনতে হয়েছে। মিয়ানমারে তার গ্রাম রাসিডং-এ সারাজীবন বন্যার শিকার হয়েছে আলম। তিনি জানান, তার বয়স যখন ১৮ তখন তিনি তার বাবাকে পা-ওয়ালা বাড়ি নির্মাণ করতে সাহায্য করতেন। কিন্তু তবুও ঘরে পানি উঠতো। সেপ্টেম্বরে যখন তিনি নাফ নদী পাড়ি দেন তখন বৃষ্টির মৌসুমের কথা চিন্তা করার ফুরসত হয়নি তার। তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তাও করিনি যে আমরা নদীটি পার হতে পারবো বা খাবার পাবো অথবা আশ্রয়। এটা আল্লাহর দয়া যে, আমরা এখন ঘুমানোর একটা জায়গা পাচ্ছি। তিন বেলা খেতে পারছি।’
কক্সবাজারে হঠাৎ করে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আগমন অঞ্চলটিতে ভৌগলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯০০ হেক্টর অপরিণত বনাঞ্চলজুড়ে নির্মিত হয়েছে রোহিঙ্গা শিবির। গাছের শিকড় মাটি ধরে রাখার যে পদ্ধতি ভূমিধসের হার কমিয়ে রাখতো তা নষ্ট হয়ে গেছে। বড় ধরনের জলপথ খনন করা হচ্ছে। সরকারের দেয়া বড় যন্ত্রপাতি দিয়ে পাহাড়ি অংশটুকু সমান্তরাল করে দেয়া হচ্ছে, ধীরে ধীরে।
তারপুলিন দিয়ে আর কতটুকুই করা যায়!
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলাতে শিখিয়েছে। মৃত্যুহার কমাতে ও জনগণকে ঝুঁকি সম্বন্ধে সতর্ক করার জন্য সরকারের বিস্তৃত কার্যপ্রণালি রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: উঁচু ভূমিতে সরে যাওয়া ও শক্ত আশ্রয়ের নিচে অবস্থান নেয়া। রোহিঙ্গাদের জন্য এ দুটির একটি উপায়ও খোলা নেই।
মিয়ানমার সরকারর নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কক্সবাজার স্বর্গস্বরূপ। কিন্তু একইসঙ্গে এটা একধরনের বিশাল বন্দিশালাও। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারপাশে অন্তত ২৭টি সামরিক তল্লাশি-চৌকি বসানো আছে, রোহিঙ্গাদের শিবির ছেড়ে যাওয়া ঠেকাতে। এখন পর্যন্ত, বন্যা ও ভূমিধসের পথ থেকে ১৫ হাজার পরিবারকে সরিয়ে এনেছে মানবাধিকার কর্মীরা। কিন্তু তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সবাইকে ঝুঁকির মুখ থেকে সরিয়ে আনার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই।
রোহিঙ্গাদের শক্ত বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে সাহায্য করার বিষয়টি তো চিন্তার বাইরে। সব মিলিয়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে বাংলাদেশে। এদেশের জনগণের মনোভাব ধীরে ধীরে টলতে শুরু করেছে। এছাড়া এটা নির্বাচনের বছর। ইটের রাস্তা ও সিমেন্টের ড্রেন পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু ইটের বাড়ি নয়। স্কুলের উপস্থিতির মতো, স্থানীয়রা ভাবতে পারেন যে, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে এসেছে। এসব সম্ভব নয় বলে রোহিঙ্গারা বালুর বস্তা দিয়ে বা শক্ত দড়ি দিয়ে বা প্লাস্টিকের বোতলের ভেতর বালি ভর্তি করে তা কুটিরের ছাদে বেঁধে দিয়ে, যেভাবে সম্ভব তাদের কুটিরগুলো সেভাবেই মজবুত করার চেষ্টা করছে।
কুক বলেন, আমরা যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি তা সম্ভবত হতে চলেছে। শুধু তারপুলিন আর বাঁশ দিয়ে আপনি কতটুকুই বা করতে পারবেন! আর প্রাকৃতিক নদীর সৃষ্টি বন্ধ করতে আপনি কতটুকু মাটিই বা সরাবেন!
রামসোল হোসাইন তার দুই কক্ষের কুটিরে এক মাদুরের ওপরে বসে থেকে ওপরের দিকে, টিনের ছাদের দিকে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করলো। তিনি এটা তার বাড়ির সুরক্ষার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই বর্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতাম। কিন্তু এই বছর একটু ব্যতিক্রম। এখানে যথেষ্ট পরিমাণ জিনিসপত্র নেই। আমরা যা পাচ্ছি তা দিয়েই চলার চেষ্টা করছি। তার সন্তানরা বাইরে খেলছিল। নিজের উভয় সংকট নিয়ে হোসাইন বলেন, যদি বন্যা হয় তাহলে আমাদের শিবিরের অন্য কোনো অংশে সরে যেতে হবে। কিন্তু সরকারের অনুমতি ছাড়া আমরা সেটা করতে পারবো না।
একবার বৃষ্টি শুরু হলে, মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে নিপীড়নের শিকার হওয়া এই সমপ্রদায়কে আবারো আগের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। থাকো আর মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবিলা করো, অথবা পালাও।
No comments