বাণিজ্যে ঢাকা ‘বিশ্বাস-ই-বিজয়’!
ওপরে
ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছাদ। নিচে ফাস্ট ফুডের দোকান। দোকান থেকে
ত্রিভুজ আকৃতির বেশ খানিকটা জায়গা ঘিরে দেয়াল দেওয়া। দেয়াল ঘেঁষে পার্ক করে
রাখা ব্যক্তিগত গাড়ি। মাঝখানে অবরুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য
‘বিশ্বাস-ই-বিজয়’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ হলের সামনে এই
ভাস্কর্যের অবস্থান। জায়গাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। ২০১১ সালে
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার উদ্যোগে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা
হয়। শেখ মনিরুজ্জামান, নবেন্দু সাহা ও আশিক রনোর শিল্পনির্দেশনায়
ভাস্কর্যটির নকশা করেন ভাস্কর দীপক সরকার ও কামরুল হাসান। তবে ভাস্কর্যটি
এখন ফাস্ট ফুডের দোকান আর পার্ক করা গাড়ির আড়ালে পড়ে থাকছে। এটি
রক্ষণাবেক্ষণেরও কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বিভাগ বলছে, জায়গাটি
সিটি করপোরেশনের। আর সিটি করপোরেশন বলছে, এই জায়গায় খাবারের দোকান করা বা
গাড়ি পার্ক করার জন্য কাউকে অনুমতি বা লিজ দেওয়া হয়নি। শাহনেওয়াজ হল
কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব নয়। কারণ, জায়গাটি তাদের নয়।
দুই মাস আগেও এই ভাস্কর্য ফাস্ট ফুডের দোকানের টানানো ত্রিপলে ঢাকা ছিল।
সম্প্রতি ভাস্কর্যের ওপর থেকে ত্রিপল সরানো হয়েছে। বাকি অংশে ছাউনি বহাল
আছে। জানা যায়, এই ফাস্ট ফুডের দোকানটি দিয়েছেন মাহমুদ আলম তারেক ও
ভাস্কর্যের অন্যতম শিল্পনির্দেশক শেখ মনিরুজ্জামান। তাঁরা এখন ছাত্রলীগের
সাবেক নেতা। কারণ, তাঁদের পড়ালেখার পাঠ চুকে গেছে। তারেক ছিলেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০০১ সালের কমিটির যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক এবং মনিরুজ্জামান ছিলেন একই সময়ের চারুকলা অনুষদ
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের জায়গায় দোকান
দিতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। নগরের স্থাপনা দেখভালের কাজও
তাদের। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা কামরুল
ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই স্থাপনাগুলো বৈধ না।’
সরেজমিনে দেখা
যায়, ভাস্কর্যটির চারদিকে পার্ক করে রাখা হয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি।
চালকেরা জানান, গাড়ির মালিকেরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন।
অন্য কোথাও ফাঁকা জায়গা না থাকায় এখানে গাড়ি পার্ক করেন তাঁরা। গত
শুক্রবার দুপুরে সেখানে গেলে খোলা পাওয়া যায় খাবারের দোকানটি। দোকানের
পাশে রাখা স্টিলের বাক্সে রাখা হয়েছে তৈরি খাবার। ৫টি টেবিলে বসে চা, কফি,
জুস, পাকোড়া খাচ্ছে ক্রেতারা। খাবার সরবরাহ করছে ১০-১২ বছর বয়সী এক শিশু।
দোকানে বসে তদারক করছেন একজন। নাম সুজন হাওলাদার। তিনি দুই বছর ধরে এই
দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফাস্ট
ফুডের দোকানের মালিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল আলম বলেন, ‘জায়গাটিতে
আগে ময়লা-আবর্জনা ছিল। ২০০৭-৮ সালের দিকে আমি ও মনিরুজ্জামান ভাই উদ্যোগ
নিয়ে এখানে ভাস্কর্য নির্মাণ করি। সে জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করি
জায়গার জন্য। তারা জানায়, বিশ্বাস বিল্ডার্স নামের একটি ডেভেলপার
প্রতিষ্ঠানকে ওই জায়গায় ফোয়ারা তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরে আমরা ওই
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আর্থিক সহায়তায় ভাস্কর্যটি নির্মাণ
করি। নকশায় ভাস্কর্যের সঙ্গে ফাস্ট ফুডের দোকান ছিল। সিটি করপোরেশনও
সেটির অনুমোদন দেয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নয়।
ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল ওই এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য।’ নগরের
সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ। এই জায়গার
সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে, সে বিষয়েই অবগত নয়
বলে জানান করপোরেশনের উপরাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান খান। ভাস্কর্যটি যে
সময় নির্মাণ করা হয়েছিল, তখন সিটি করপোরেশনের নগর-পরিকল্পনা বিভাগের
দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
ভাস্কর্যের নকশা অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই
সময়ে এমন নকশার ভাস্কর্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না, সেটি আমার জানা নেই।’
No comments