বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ
বছরের
শেষ প্রান্তে এসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয়
বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। বাড়ছে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের দায়।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) দায় শোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায়
রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি। কাক্সিক্ষত হারে সরবরাহ না বাড়ায় এ
যাবৎকালের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ বেড়ে গেছে। ফলে এক
দিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেছে। সেই সাথে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার
রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩১
ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩২২ কোটি ডলার, আর আমদানি
পর্যায়ে টাকার মান কমে হয়েছে ৮৩ টাকা ২০ পয়সা। বিশ্লেষকদের মতে, যে হারে
দায় বাড়ছে, সেই হারে সরবরাহ না বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমে
যাবে। কেননা, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন দেশের তুলনায় দেশের বর্তমান বৈদেশিক
মুদ্রার যে রিজার্ভ তা নিয়ে আত্মতুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই। চীনের বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ ৩ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার, জাপানের ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৩০
কোটি ডলার, সুইজারল্যান্ডের ৭৯ হাজার ৫১০ কোটি ডলার, তাইওয়ানে ৪৫ হাজার ৪৭
কোটি ডলার, ভারতের ৪০ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার, সিঙ্গাপুরে ২৭ হাজার ৫১০ কোটি
ডলার, সেখানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩ হাজার ৩২২ কোটি ডলার। সুতরাং যে হারে
ডলারের চাহিদা বাড়ছে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিদ্যমান রিজার্ভও
ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এ জন্য রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ
নিতে হবে। বাড়াতে হবে বৈদেশিক বিনিয়োগ। সেই সাথে অনুৎপাদনশীল খাতে আমদানির
রাশ টেনে ধরতে হবে। আর মূলধনী যন্ত্রপাতির নামে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে
কি না সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে। অন্যথায় বৈদেশিক মুদ্রার যে দায়
সৃষ্টি হয়েছে সামনে তা মেটানো দুষ্কর হয়ে পড়বে। অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে
বাণিজ্য ঘাটতি : বিগত বছরের শুরুর দিকে আমদানি ব্যয় কম ছিল। কিন্তু শেষ ৬
মাসে এসে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। ফলে বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়ে
যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চার মাসেই দ্বিগুণেরও বেশি
বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর)
বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৫৮০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৭৭
কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানি বেড়েছে
অস্বাভাবিক হারে। কিন্তু রফতানি বাড়েনি। একই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে
পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সেই সাথে বেড়েছে স্থানীয় বাজারে টাকার বিপরীতে
ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর লক্ষ্যমাত্রা
অনুযায়ী রফতানি আয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ হারে না বাড়লে বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেড়ে
যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার
পাশাপাশি সেবা খাতের ঘাটতিও বেড়ে গেছে। ফলে দেশে চলতি হিসাবের ভারসাম্যও
ঋণাত্মক হয়ে গেছে। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার সাথে সামগ্রিক
লেনদেনের ঘাটতিও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, চার
মাসে সেবা খাতে ঘাটতি হয়েছে ১৪৩ কোটি ডলার। এতে চলতি হিসাবের ভারসাম্য
হয়েছে ঋণাত্মক ৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল সাড়ে চার
কোটি ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক
লেনদেনে ঘাটতি হয়েছে সাড়ে ২২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে
দেখা যায়, আলোচ্য চার মাসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এর মধ্যে তৈরী পোশাক রফতানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। কিন্তু বিপরীতে
আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। দেখা গেছে, গত বছরের প্রথম
চার মাসে আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৩৩২ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরের একই
সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭১৪ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ
হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে কয়েক দফা আগাম
বন্যায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন হয়নি। ফলে বেড়েছে ভোগ্যপণ্য
আমদানি। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। একই সাথে আন্তর্জাতিক
বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমদানির পরিমাণের পাশাপাশি মূল্যও দিতে
হয়েছে বেশি। অপর দিকে রফতানি আয় কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। ৬ মাসে রফতানি
লক্ষ্যমাত্রা হলো ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু বছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন
না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ আরো বেড়ে
যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে।
আকুর দায় বাড়ছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আকুভুক্ত দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ ও চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর ফলে বছর এমনকি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ আকুর দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আকুর দায় পরিশোধ করা হয়েছে জুলাই-আগস্টে ১১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তা কিছুটা কমে হয় ১১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, আর নভেম্বর-ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগামী ৭ জানুয়ারি পরিশোধ করতে হবে।
বেসরকারি পর্যায়ে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ
বছরের শুরুতে ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। বিনিয়োগ খরায় ভোগে ব্যাংকগুলো। কিন্তু এর পরে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বছরের শেষ প্রান্তে এসে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৬১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এসব ঋণের সুদ আপাতত কম মনে হলেও টাকা-ডলারের বিনিময় হারজনিত কারণে প্রকৃত সুদের হার বেড়ে যাবে। কারণ, বছরের শুরুতে যখন ঋণ নেয়া হয় তখন প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু বছরের শেষ প্রান্তে এসে ব্যয় করতে হচ্ছে ৮৩ টাকা ২০ পয়সা। যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে, ফলে বিনিময় হারজনিত কারণে কার্যত সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। এসব ঋণ পরিশোধের সময় চাপ বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
কমে যাচ্ছে টাকার মান : বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান না করে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা (আমদানি ঋণপত্র স্থাপন), অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে চাহিদার প্রক্ষেপণ না করেই অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা এবং সেই সাথে কাক্সিক্ষত হারে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়ায় বছরের শেষ সময়ে এসে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। সেই সাথে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বিদায়ী বছরের জানুয়ারিতে প্রতি ডলারের জন্য যেখানে ব্যয় করতে হয়েছে ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা, সেখানে বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরে আমদানিতে প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৮৩ টাকা ২০ পয়সা। টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে চলেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতিতে।
বছরের শেষ সময়ে এসে চাপে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : ব্যাংক বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৯ শতাংশ অথচ রফতানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স পৌনে ১১ শতাংশ, যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। কারণ, আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স অনেক কম। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য রফতানি আয় বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু বছরের শেষ সময়ে এসে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। এ দিকে, ব্যাংকগুলোর অপরিকল্পিত আমদানি ঋণপত্র স্থাপন এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে বছরের শুরুর চেয়ে শেষ প্রান্তে এসে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সরবরাহ লাইন কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। ফলে বছরের শেষ সময়ে এসে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অনেকটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য ডলার সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত বছরে ১০৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সর্বোচ্চ সীমা আড়াই বিলিয়ন থেকে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে অনসাইট ও অফসাইট দুই ক্ষেত্রেই নজরদারি বাড়ানো হয়। ফলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হলেও চাপ এখনো রয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে। সব মিলে বছরের শেষ সময়ে এসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ে যায়। সামনে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আকুর দায় বাড়ছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আকুভুক্ত দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ ও চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর ফলে বছর এমনকি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ আকুর দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আকুর দায় পরিশোধ করা হয়েছে জুলাই-আগস্টে ১১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তা কিছুটা কমে হয় ১১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, আর নভেম্বর-ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগামী ৭ জানুয়ারি পরিশোধ করতে হবে।
বেসরকারি পর্যায়ে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ
বছরের শুরুতে ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। বিনিয়োগ খরায় ভোগে ব্যাংকগুলো। কিন্তু এর পরে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বছরের শেষ প্রান্তে এসে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৬১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এসব ঋণের সুদ আপাতত কম মনে হলেও টাকা-ডলারের বিনিময় হারজনিত কারণে প্রকৃত সুদের হার বেড়ে যাবে। কারণ, বছরের শুরুতে যখন ঋণ নেয়া হয় তখন প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু বছরের শেষ প্রান্তে এসে ব্যয় করতে হচ্ছে ৮৩ টাকা ২০ পয়সা। যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে, ফলে বিনিময় হারজনিত কারণে কার্যত সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। এসব ঋণ পরিশোধের সময় চাপ বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
কমে যাচ্ছে টাকার মান : বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান না করে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা (আমদানি ঋণপত্র স্থাপন), অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে চাহিদার প্রক্ষেপণ না করেই অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা এবং সেই সাথে কাক্সিক্ষত হারে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়ায় বছরের শেষ সময়ে এসে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। সেই সাথে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বিদায়ী বছরের জানুয়ারিতে প্রতি ডলারের জন্য যেখানে ব্যয় করতে হয়েছে ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা, সেখানে বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরে আমদানিতে প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৮৩ টাকা ২০ পয়সা। টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে চলেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতিতে।
বছরের শেষ সময়ে এসে চাপে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : ব্যাংক বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৯ শতাংশ অথচ রফতানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স পৌনে ১১ শতাংশ, যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। কারণ, আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স অনেক কম। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য রফতানি আয় বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু বছরের শেষ সময়ে এসে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। এ দিকে, ব্যাংকগুলোর অপরিকল্পিত আমদানি ঋণপত্র স্থাপন এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে বছরের শুরুর চেয়ে শেষ প্রান্তে এসে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সরবরাহ লাইন কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। ফলে বছরের শেষ সময়ে এসে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অনেকটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য ডলার সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত বছরে ১০৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সর্বোচ্চ সীমা আড়াই বিলিয়ন থেকে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে অনসাইট ও অফসাইট দুই ক্ষেত্রেই নজরদারি বাড়ানো হয়। ফলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হলেও চাপ এখনো রয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে। সব মিলে বছরের শেষ সময়ে এসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ে যায়। সামনে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
No comments