সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা
সংবাদমাধ্যমে
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত
হয়। সর্বশেষ গত শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ১২ জেলায় সড়ক
দুর্ঘটনায় শিশুসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৩১৮ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত
হলেন ২ হাজার ৬৯৭ জন মানুষ। গুরুতর এই জাতীয় সমস্যাটি সরকারি
কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না; যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে
সড়ক-মহাসড়কে মানুষের মৃত্যু প্রতিনিয়তই ঘটবে, কারোর কিছু করার নেই। কিন্তু
করার অবশ্যই অনেক কিছু আছে। বাংলাদেশ সে অঙ্গীকারও করেছে: জাতিসংঘের সদস্য
দেশগুলোর মধ্য যারা অঙ্গীকার করেছে যে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক
দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। কিন্তু
আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, সেই অঙ্গীকার পূরণের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো কী
পদক্ষেপ নিয়েছে? আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি সড়ক দুঘটনা ঘটে, কী কী
পদক্ষেপ নিতে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব—এসবও বহুল আলোচিত বিষয়। অনেক
গবেষণা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আছে। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা
ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে
অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য।
চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে
দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও
বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার ও
শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, জরুরি
ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা
হ্রাসের লক্ষ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রথম
কাজ। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন
চলাচল—এসব বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককেই যেন লাইসেন্স
দেওয়া হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএর অসাধু
কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে
এটা একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যা। সরকারের পাশাপাশি পরিবহনমালিক, শ্রমিক ও
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেষ্ট হতে হবে, যাত্রী সাধারণের সচেতনতাও
বাড়াতে হবে।
No comments