বউভাতে উপহার গাছের চারা
বউভাতে
গিয়ে চমৎকৃত হয়েছেন অতিথিরা। সাধারণত বিয়ের পর বউভাতের আয়োজনে নবদম্পতিকে
বিভিন্ন উপহার দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। পাশাপাশি নবদম্পতির তরফ থেকে ফিরতি
উপহারের চলও আছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার এক নবদম্পতি অতিথিদের ফিরতি উপহার
হিসেবে গাছের চারা দিয়েছেন। বর-কনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা
গেছে, গত শনিবার সিলেট নগরের কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা শারমিন ফেরদৌসির
সঙ্গে বিয়ে হয় দক্ষিণ সুরমা এলাকার কাদিপুরের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান
শাওনের। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত
রোববার বউভাতের আয়োজনে অন্যান্য অতিথির পাশপাশি সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন
‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর কর্মীদেরও দাওয়াত দেন তাঁরা। এতে ওই সংগঠনের
কর্মীরা বর-কনেকে ফলদ, বনজ ও ঔষধি ৫০০ গাছের চারা উপহার দেন। পরে ওই
পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীদের সম্মতিতেই বিয়ের আয়োজনে আসা অতিথিদের গাছগুলো
ফিরতি উপহার হিসেবে তুলে দেন বর-কনে। গত রোববার রাত সাড়ে আটটায় দক্ষিণ
সুরমার ময়ূরকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারে বউভাতে আসা অতিথিরা খাওয়া শেষে একে একে
নিজ গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। এ সময় নবদম্পতি অতিথিদের হাতে গাছের চারা উপহার
হিসেবে তুলে দেন। কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল, ১৫-২০ জন
মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে পছন্দের গাছের চারা বেছে
নিচ্ছিলেন। এ সময় বর মাসুদুর রহমানকে অতিথিদের সঙ্গে গাছ নিয়েই কথা বলতে
দেখা গেল। বউভাতে আসা ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা প্রকৌশলী কাজী মনোয়ার উদ্দিন
আহমদ বলেন, ‘এমন উপহার পেয়ে আমি খুশি। জীবনে অনেক উপহার পেয়েছি, কিন্তু
আজকের উপহারটি সব থেকে আলাদা।’ মানুষ নিজেদের ব্যবহারের জন্য বৃক্ষ নিধন
করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শহরে এখন গাছ নেই।
মানুষ নিজেরা নিজেদের বিপদ ডেকে
আনছে। তাই বিয়েসহ বিভিন্ন আয়োজনে অন্য উপহারের বদলে গাছের চারা উপহার
দেওয়ার রীতি চালু করলে প্রকৃতি ও মানুষ উপকৃত হবে।’ বউভাতে আসা সিলেটের
ওসমানীনগরের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, বউভাতে ফিরতি উপহার হিসেবে খেজুর ও
মালটাগাছের চারা পেয়েছেন তিনি। উপহার হিসেবে গাছ পেয়ে কেমন লাগছে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, ‘দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পর নবদম্পতিকে ভুলে যাবেন অনেকে।
কিন্তু আমি গাছগুলো দেখে তাদের কথা মনে রাখব।’ গাছে প্রথম ফল এলে আজকের
নবদম্পতিকে উপহার পাঠাবেন বলেও জানান তিনি। বউভাতে আসা বড়দের পাশপাশি
ছোটদেরও গাছের চারা নিতে ব্যস্ত হতে দেখা গেছে। দক্ষিণ সুরমার জালালপুরের
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আসিফ বাবা-মায়ের সঙ্গে বিয়ের আমন্ত্রণে এসেছিল। একটি
অর্জুনগাছ ও কাঁঠালগাছের চারা হাতে পেয়ে সে জানাল, গাছগুলো সে স্কুলের খালি
অংশে লাগাবে। সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক
মেহেদী হাসান জনি বললেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কাদিপুরের বাসিন্দা মাসুদুর
রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে পরিচিত। সে সুবাদে বউভাতে
তাঁদের সংগঠনের কর্মীদের দাওয়াত দেন তিনি। সংগঠনের পক্ষ থেকে নবদম্পতিকে
বিয়ের উপহার হিসেবে তাঁরা ৫০০ গাছের চারা উপহার দেন।
No comments