মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং ৩১ ডিসেম্বর শেষ : চলছে ধরপাকড়ও
মালয়েশিয়ায়
অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশী শ্রমিকদের রি-হায়ারিং কর্মসূচির পাশাপাশি
চলছে ইমিগ্রেশন পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়। এরপরও থামছে না অবৈধভাবে (ট্যুরিস্ট
ও ভিজিট ভিসার নামে) দেশটিতে পাড়ি জমানোর সংখ্যা। কুয়ালালামপুরসহ দেশটির
কোনো-না-কোনো এলাকায় প্রায় পুলিশি অভিযানে কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশীসহ
বিদেশীরা ধরা পড়ছে। পরে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ডিটেনশন
ক্যাম্পে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আটকৃরা টিকিটের টাকা ও হাইকমিশন থেকে আউট
পাস সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে তাদের সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে সেন্ট্রাল জেলে।
গত শনিবার রাতে দেড় শতাধিক ইমিগ্রেশন পুলিশের সমন্বয়ে দেশটির সীমান্ত
এলাকা জহুরবারু, টেবরাও আইভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এবং কটা টিংগি এলাকায়
পৃথক অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে কাজ করা বাংলাদেশীসহ বিদেশী এক হাজার ৩০০
শ্রমিককে আটক করে। কাগজপত্র যাচাই শেষে ইমিগ্রেশন পুলিশ ৫১৪ জনকে হেফাজতে
নেয়। ধরপাকড়ের খবরটি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের ওয়েবসাইটে দেয়ার পর অবৈধভাবে
থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই তারা নিরাপদ আশ্রয়ের
সন্ধানে চলে যান বলে দেশটিতে থাকা একাধিক শ্রমিক গতকাল টেলিফোনে এ
প্রতিবেদককে জানান। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,
শনিবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে একটানা অভিযান চলে ভোর পর্যন্ত। ১১৫ জন
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার এ অভিযানে এক হাজার ৩৯৯ জন বিদেশী শ্রমিককে আটক করে
যাচাই-বাছাই শেষে ৫১৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার মধ্যে ৪৮৭ জন পুরুষ ও
২৪ জন নারী। এর মধ্যে আবার তিনজন মালিক রয়েছেন। এর আগে মালয়েশিয়ায় ডিটেনশন
ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশী রয়েছে তার পরিসংখ্যান চেয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে
ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দেয়া হলে আট শতাধিক বাংলাদেশী দেশটির ২৬ ডিটেনশন
ক্যাম্পে আটক আছে বলে জানানো হয়। এ দিকে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশী
শ্রমিকদের রি-হায়ারিং কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে চলতি বছরের ৩১
ডিসেম্বর। অবৈধদের চিহ্নিত করে বৈধতা দেয়ার কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে
রি-হায়ারিং প্রোগ্রাম। মূলত যারা উড়োজাহাজে করে দেশটির ইমিগ্রেশন পার হয়ে
মালয়েশিয়ায় গিয়ে পরে অবৈধ হয়েছেন তারাই এ কর্মসূচির আওতায় পড়বেন। অপর দিকে
যারা সমুদ্রপথে কিংবা অবৈধপথে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন এ সুযোগের মধ্যে তাদের
রাখা হয়নি। তাদের জন্য চালু হয়েছে ই-কার্ড (এনফোর্সমেন্ট কার্ড)
প্রোগ্রাম। ই-কার্ড কর্মসূচির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০
জুন পর্যন্ত। ই-কার্ড কর্মসূচিতে নিবন্ধিত হলেও দীর্ঘমেয়াদে বৈধতা পেতে
প্রত্যেককে অবশ্যই রি-হায়ারিং কর্মসূচিতেও নিবন্ধন করতে হবে। এ দিকে এ দুই
কর্মসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবহিত করতে হাইকমিশন থেকে
সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। ই-কার্ড কর্মসূচির আওতায় এসেছেন
প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার। যার মেয়াদ রয়েছে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাস
পর্যন্ত। গতকাল পোর্ট ক্লাক থেকে সাতক্ষীরার যুবক আকাশ এ প্রতিবেদককে ক্ষোভ
প্রকাশ করে বলেন, আমি এ দেশে এসেছিলাম স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। এক বছর পর
অবৈধ হয়ে যাই। মালয়েশিয়া সরাকারের ঘোষিত ই-কার্ডের সুযোগ নিয়ে এখন আমি এক
বছরের জন্য বৈধতা পেয়েছি। এ সময়ের মধ্যে আমাকে ইমিগ্রেশনে নির্দিষ্ট পরিমাণ
রিংগিট জমা দিতে হবে। তিনি বলেন, এখনতো মালয়েশিয়ায় ট্যুরিস্ট, ভিজিট ও
স্টুডেন্ট ভিসায় আসা লোকদের কোনো কোম্পানির মালিক কাজে রাখছে না। কারণ
ইমিগ্রেশনের অভিযানে এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাহলে ওই মালিককেও পুলিশ ধরে
নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে স্টুডেন্ট ভিসায় আসা অনেকেই এসে বেকার বসে আছে।
তিনি মালয়েশিয়ায় আসার অপেক্ষায় থাকাদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, দালালদের
মাধ্যমে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে কেউ এলে তাকে বিপদের মধ্যে পড়তে হবে
নিশ্চিত।
No comments