মধ্যপ্রাচ্যে মাইক পেন্সকে প্রত্যাখ্যানের হিড়িক
জেরুজালেম
শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে আসন্ন
মধ্যপ্রাচ্য সফরে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে প্রত্যাখ্যানের
হিড়িক পড়েছে। পেন্সের সফরের সময় তার সঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ
আব্বাসের নির্ধারিত বৈঠক হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি। শনিবার মিসরের কায়রোতে এক সংবাদ
সম্মেলনে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ‘ধিক্কারের মধ্যে’
পেন্সের সঙ্গে দেখা করবেন না ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট। জাতিসংঘ নিরাপত্তা
পরিষদ ও আরব লীগে ট্রাম্পের এ ঘোষণার বিরুদ্ধে খসড়া প্রস্তাব ফিলিস্তিনের
পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হবে বলেও জানান মালিকি। আলজাজিরা জানায়, চলতি মাসে
পেন্সের এ সফর হওয়ার কথা রয়েছে। সফরে ১৯ ডিসেম্বর তার সঙ্গে মাহমুদ
আব্বাসের বৈঠক নির্ধারিত ছিল। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন,
আব্বাসের পাশে দাঁড়াতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান এবং ফরাসি
প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা একমত হয়েছেন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায়
রাখতে তারা টেলিফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাবেন। মিসরের রাষ্ট্রীয়
সংবাদ সংস্থা মিনা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতিবাদে পেন্সের মিসর
সফরের সময় তার সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন দেশটির কপটিক গির্জার পোপ। এক
বিবৃতিতে মিসরের কপটিক গির্জা জানায়, ‘ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে লাখ লাখ আরবীয়র
অনুভূতি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।’ শনিবার গির্জার পোপ দ্বিতীয় তাওয়াদ্রস বলেন,
পেন্সের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হচ্ছে না। ২০ ডিসেম্বর পেন্সের কায়রো
সফরের কথা রয়েছে। শুক্রবার কায়রোর আল আজহার মসজিদের প্রধান ইমাম শেখ আহমেদ
আল তাইয়্যেব বলেন, তিনিও পেন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। এই সফরে পেন্স
ইসরাইলেও যাবেন।
তিনি ফিলিস্তিনের শহর বেথেলহেমে যাত্রা বিরতি করবেন বলে
ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ফিলিস্তিনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী সায়েব ইরিকাত
বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত বাতিল না করবেন ততক্ষণ
ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না।’ এদিকে, হোয়াইট হাউসে
ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছেন মাহমুদ
আব্বাস। প্রেসিডেন্ট আব্বাসের প্রধান উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনই
সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। জেরুজালেমকে স্বীকৃতির
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার জরুরি বৈঠকে বসেন ফিলিস্তিনের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
ক্ষমতাসীন ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) কেন্দ্রীয়
কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক শেষ হবে আগামী সপ্তাহে। এ বৈঠকেই পেন্সের সঙ্গে
আব্বাসের বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত এসেছে। দশকের পর দশক ইসরাইল-ফিলিস্তিন
ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলে বুধবার ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের
রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজা, পশ্চিম তীর ও
জেরুজালেমে তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গাজা ও ইসরাইল সীমান্তে অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনি যুবক ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে
পাথর ছুঁড়েছে। ইসরাইলের পাল্টা গুলিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। শনিবার ইসরাইলি বিমান হামলায়
দুই ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে হামাস। এর আগে শুক্রবার গাজায়
ফিলিস্তিনিদের ডাকা ‘ক্ষোভ দিবসে’ ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে ২ ফিলিস্তিনি
নিহত হন।
No comments