বিমানবন্দর থেকে যুবলীগ নেতা চপল গ্রেফতার
সুনামগঞ্জে হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি ঠিকাদার ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপলকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, খায়রুল হুদা চপল সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য রাতে বিমানবন্দর এলাকায় পৌঁছান। দুদক টিম আগে থেকেই তার গতিবিধি অনুসরণ করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। পরে রাতেই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়। খায়রুল হুদা চপল হাওরে বাঁধ রক্ষার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী। সুনামগঞ্জ সদর থানায় করা মামলায় এ নিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করল দুদক। চপলকে বুধবার বিকালে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। দুদকের উপপরিচালক (গণসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য যুগান্তরকে জানান, আসামি চপলের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের ১৬০টি প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটি প্যাকেজে ঠিকাদারির দায়িত্ব ছিল মেসার্স নূর ট্রেডিংয়ের মালিক চপলের। মামলার এজাহারে তার অভিযোগ সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়, খায়রুল হুদা চপল ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬ ও ৬৭ নম্বর প্যাকেজে বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পান। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৩, ৬৪ ও ৬৪ নম্বর প্যাকেজে কোনো কাজ হয়নি, তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যথাক্রমে ৩০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়। এছাড়া ৬৬ ও ৬৭ নম্বর প্যাকেজে যথাক্রমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯ ও ৪০ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫০ ও ৪০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। খায়রুল হুদা চপল সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুটের ছোট ভাই। দু’বছর আগে তিনি জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা ও ৪৬ জন ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে বলা হয়, প্রতি বছর বন্যা আসার সময় ও আশঙ্কা সম্পর্কে অবহিত থাকার পরও তারা পর¯পর যোগসাজশে মৌলিক চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। ওই চুক্তিতে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের অসমাপ্ত ৮৪টি প্যাকেজের বাঁধ নির্মাণ শেষ করতে ঠিকাদারদের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু পরে আর দরপত্র আহ্বান না করে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আগের ঠিকাদারদেরই ১৬০টি প্যাকেজে নতুন কাজ দেয়া হয়। নতুন প্যাকেজের মধ্যে নয়টির কাজ শুরু না করে এবং ১৫১টি প্যাকেজের কাজ আংশিক সম্পন্ন করার মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ভবিষ্যতে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ সৃষ্টি করেন আসামিরা। দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ৪০৯, ১৬৬, ৫১১ ও ১০৯ ধারায় মামলাটি করে। অন্যদিকে হাওরের বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হক বাদী হয়ে ৩ আগস্ট আরও একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় ১৪০ জনকে। মামলার আসামির তালিকায় ৪৬ জন ঠিকাদারের মধ্যে খায়রুল হুদা চপলের নামও রয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ঠিকাদাররা ৮৪টি প্যাকেজের কাজ দরপত্রের শর্ত মোতাবেক সম্পন্ন করেননি। শুধু চলতি বছর নয়, আগের বছরেও তারা একই কাজ করেছেন। পাউবো কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। এর মাধ্যমে তারা অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। মামলায় তদন্তকালে তাদের অবৈধ স¤পদ জব্দ করারও আবেদন জানানো হয়। আদালত ওই মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে খায়রুল হুদা চপল গ্রেফতারের ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবির উৎফুল্ল হলেও বিক্ষোভ করেছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার সন্ধ্যায় শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা যুবলীগ। এতে নেতৃত্ব দেন যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বজলু, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদার চপল, রনজিৎ চৌধুরী রাজন ও সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এহসান আহমেদ উজ্জ্বল। যুবলীগ নেতারা তাদের বক্তব্যে চপলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন।
No comments