কাশ্মীরে 'হিজবুল মুজাহেদিন'কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহেদিনকে 'বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, হিজবুল মুজাহেদিন যেন সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ প্রাপ্তি বন্ধ করতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো সংগঠন ও ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করলে তারা দেশটির আর্থিক খাতে প্রবেশাধিকার হারায়। মার্কিন নাগরিকরাও তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারেন না। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় হিজাবুল মুজাহেদিনের ক্ষেত্রেও এ বিধান কার্যকর হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এ সংগঠনটির সম্ভাব্য সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার কারণে হিজবুল মুজাহেদিনের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনী ও সংস্থাগুলো এবং অন্য দেশের সরকারও ব্যবস্থা নিতে পারবে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবিতে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় হিজবুল মুজাহেদিন। এ সংগঠনটি হিমালয় উপত্যকার এ জনপদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। গত জুনে মুজাহেদিনের প্রধান সাইয়েদ সালাহউদ্দিনকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ শাহ নামেও পরিচিত। হিজবুল মুজাহিদেরে ২২ বছর বয়সী তরুণ কমান্ডার বুরহমান ওয়ানি ২০১৬ সালের ৮ জুলাই ভারতীয় বাহিনীর হাতে আটকাবস্থায় নিহত হন। এ ঘটনার পর কাশ্মীর জুড়ে ভারতবিরোধী গণ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক মাস ধরা চলা বিক্ষোভ বন্ধে ভারতীয় বাহিনী কারফিউ জারি করে। তা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ করে কাশ্মীরিরা। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এছাড়া হাজার হাজার আহত ব্যক্তির মধ্যে অনেকেই চোখে প্লেটগানবিদ্ধ (ছড়রা গুলি) হয়ে অন্ধ হয়ে যান। কাশ্মীরের এ বিক্ষোভকে সমর্থন ও কমান্ডার বুরহান ওয়ানির প্রশংসা করেন পাকিস্তানের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। কাশ্মীরে নতুন করে শুরু হওয়া বিক্ষোভকে তিনি ইনতিফাদা বা গণজাগরণ বলেও আখ্যা দেন। উল্লেখ্য, ভূস্বর্গ খ্যাত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত স্বাধীন রাজ্য হিসেবে ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে ছিল।
তবে বিদায়ের সময় ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশে বিভক্ত করে গেলেও কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণ করে যায়নি ব্রিটিশরা। এই সুযোগে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে দখল করে নেয়। অন্যদিকে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে কাশ্মীরিরা। কাশ্মীরিদের সশস্ত্র সংগ্রাম মূলত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে ঘিরেই চলছে। তারা কয়েক দশক ভারতীয় শাসনের অবসান দাবি করছেন। এ অবস্থায় কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সেখানে গত সাত দশক ধরে অন্তত পাঁচ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে ভারত। এসব সেনার অভিযানের মুখে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। এদিকে কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের একটি বড় অংশ ভারতীয় শাসনের প্রতি আনুগত্য জানানোর কারণে সেখানকার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসছিল। বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মার্কিন অভযানের সুযোগে কাশ্মীরি সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে অনেকটাই কোনঠাসা করে ফেলতে সক্ষম হয় ভারত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফের সশস্ত্র সংগঠনগুলো কাশ্মীরে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সাধারণ কাশ্মীরিরা, বিশেষ করে তরুণরা তাদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে। যখন সেনা অভিযান চলে তখন তাদের সঙ্গে তরুণরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, এতে সশস্ত্র ব্যক্তিরা সরে পড়ার সুযোগ পায়। ভারতের অভিযোগ, কাশ্মীরি যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তান। তবে দেশটি বরাবর এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
No comments