সহায়ক সরকারের ফর্মুলা নভেম্বরে
লন্ডনে চিকিৎসা শেষে সেপ্টেম্বরেই দেশে ফিরতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অক্টোবরের শেষের দিকে অথবা নভেম্বরে দলটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করবে। এ ক্ষেত্রে দলটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ‘রাজনৈতিক বিতর্ক ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি’র অবসানে একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছা। ইতোমধ্যে রূপরেখা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে বিএনপি। রূপরেখায় বিশ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোরও সুপারিশ নিচ্ছে তারা। তবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর রূপরেখা নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণাসংক্রান্ত রায়ের পর সহায়ক সরকার নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে। আগে একটি রায়ে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তা অমান্য করে নির্বাচন করেছে। ওই নির্বাচন যে যথাযথ ছিল না, তা বর্তমান ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে। রায়ে বলা হয়েছে, এ সংসদ ডিসফাংশনাল বা অকার্যকর। ফলে এ সরকারে সবকিছু এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। প্রসঙ্গত, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচন অপরিহার্য। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ও পক্ষপাত ছাড়া নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য সংসদ গঠিত হতে পারে না। আর এ কারণে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংসদ শিশু অবস্থায় রয়ে গেছে। জনগণ নির্বাচন কমিশন ও সংসদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। এ দুইটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের আস্থা ও সম্মানের জায়গায় না আনা যাবে ততদিন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তুলে না ধরলেও প্রায় এক বছর ধরে নির্বাচনকালীন একটি ‘সহায়ক সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একই দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল এ দল। ওই নির্বাচনের আগে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ’৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনকালীন দুইটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে ১০ জনকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন- যা আমলে নেয়নি দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সহায়ক সরকারের ফর্মুলা কেমন হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকেই সহায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা সংবিধান সংশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহায়ক সরকার হতে পারে। অথবা প্রধানমন্ত্রীকে ছুটিতে রেখে কিংবা তার কার্যপরিধি সীমিত করে নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি সহায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। ওই নেতা বলেন, ফর্মুলা যেটাই হোক এ ক্ষেত্রে সমঝোতা কিংবা আলোচনার মনোভাব সবার আগে জরুরি। আলোচনার টেবিলে বসলে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি স্থায়ী সমাধান বের করে আনা সম্ভব। জানা গেছে, রূপরেখা প্রকাশের পর এ দাবিতে সোচ্চার হবে বিএনপি। ড. মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। এটা আমাদের ঘোষিত বিষয়। নেত্রী দেশে থাকা অবস্থায় বিশেষজ্ঞ দল এটা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি আসার পর তা চূড়ান্ত করা হবে। পরে তা নিয়ে জনমত সৃষ্টি করা হবে। তাই আরো জনসংযোগ কর্মসূচি আসবে সামনে। বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক কিংবা সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এখন সরকার আপসে এ ব্যাপারে রাজি হলে সহায়ক সরকারের বিষয়ে আমাদের নতুন করে প্রস্তাব দিতে হবে না। হ্যাঁ, প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সমঝোতা হতে পারে। এটা নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, সরকার অন্যান্য দলের সাথেও আলোচনায় বসতে পারে। এর বাইরে গেলে সরকার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে অমান্য করবে। সেই রকম কিছু হলে তখন আমরা বাধ্য হব আন্দোলনে। যদি আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি, তাহলে ২০১৪ সালের উদাহরণ আছে। এ ঝুঁকি বাংলাদেশ আবার নেবে কি না- সেটা হচ্ছে বিষয়। জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্কভাবে এগোচ্ছে। নির্বাচনে অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় তারা। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই ধাপে ধাপে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন এখনো দূরে থাকায় দলটি দাবি-দাওয়ার মধ্যেই আরো কয়েকটি মাস পার করতে চায়। তবে নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে কর্মসূচির ধরন আমূল পাল্টে ফেলতে পারে বিএনপি।
No comments