রোববার কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
বন্যায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়া অসহায় মানুষদের দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর যাচ্ছেন। সেদিন দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় বিএনএফ স্কুল প্রাঙ্গণে ও দিনাজপুর জেলা স্কুলমাঠে ত্রাণ বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং ও স্থানীয় জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও দিনাজপুরে পানি কিছুটা কমেছে। তবে দুই জেলায় এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি দুর্গতরা। ফলে কমেনি জনদুর্ভোগ। ত্রাণ অপ্রত্যুল হওয়ায় দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছেনি খাদ্য সহায়তা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গা রাণী লক্ষ্মী প্রিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন রোববার বিকালে। বিস্তারিত সরকারি সফর সূচি এখনও পাওয়া যায়নি। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মির খায়রুল আলম জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০ প্রধানমন্ত্রীকে বহণকারী হেলিকপ্টারটি জেলা গৌরএ শহীদ বড় ময়দান মাঠে অবতরণ করবে। এরপর জেলা স্কুল প্রাঙ্গণে তিনি বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ করবেন। তারপর বিরল উপজেলার টেঘরা উচ্চবিদ্যালয়ে মাঠে বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ করবেন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রাম ফেরিঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৬ সেমি এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৬৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বাপক ভাঙ্গন। পুরোপুরি পানি না নামা পর্যন্ত ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের সুযোগ নেই। সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসা সেবা দিতে ৯০টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ, ওর স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ আছে। ভয়াবহ বন্যার কারণে পানিতে ডুবে গেছে ৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক। পানি সড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার উপযোগী করা হবে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেক মোহাম্মদ ফেরদৌস খান স্বাক্ষরিত জেলা কন্ট্রোল রুম কর্তৃক প্রেরিত তথ্যে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলার ৬২টি ইউনিয়নের ৮২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ১৭ হাজার ৩০২টি। যার লোক সংখ্যা চার লাখ ৭৯ হাজার ৮২০জন। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ৪৪কিলোমিটার।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের সংখ্যা ৬০৭টি। কাঁচা ও পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে ২হাজার ৬৯৪টি বাড়ি। এসময়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু রাস্তা ও বাঁধে আশ্রিত লোকসংথ্যা এক লাখ ১৭০ জন। জেলা প্রশাসক আরো জানান, বন্যা দুর্গতদের মাঝে ইতিমধ্যে ৮৫১ দশমিক ৩৮০ মেট্রিকটন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। জিআর ক্যাশ বিতরণ করা হয়েছে ২৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২ হাজার প্যাকেট শুকা খাবার বিতরণ করা হয়। এখনও মজুদ আছে ১৫০ মেট্রিকটন চাল ও সাড়ে ৯লাখ টাকা। আমাদেও চাহিদা মোতাবেক ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই কোথাও কোনো সংঙ্কট নেই। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইছামতি, পুনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার নিচে। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও প্লাবিত হয়ে থাকার পাশাপাশি দিনাজপুর শহরের বেশ কিছু অংশ এখনও পানির নিচে ডুবে আছে। এদিকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সরকারি হিসেবে অনুযায়ী প্রায় পৌনে ৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হলেও বরাদ্দ এসেছে ৪৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা। এতে প্রতি জন মানুষের ভাগ্যে জুটছে ১ কেজি করে চাল ও ৩ টাকা করে।
No comments