প্রতিটি সাংবিধানিক নিয়োগেই শুনানিনির্ভর আইন চাই
প্রথম আলো :কোন মানদণ্ডে ১০ জনের নাম বেছে নেওয়া হলো? নতুন কমিশন কি আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করেছে? ১০টি নামের মধ্যে সাতজনকেই কেন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বেছে নিতে হলো?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : চাকরিজীবনে দক্ষতা, সততা, যোগ্যতা; নির্বাচন ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। যেহেতু আমাকে নাগরিক সমাজের একজন হিসেবে অনুসন্ধান কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল এবং ১০ জনের তালিকায় নাগরিক সমাজের তিনজন প্রতিনিধি ছিলেন, আমি আশা করেছিলাম অন্তত একজনকে নির্বাচন কমিশনে রাখা হবে। আমি আরও আশা করেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন একাডেমিক বা শিক্ষাবিদ কমিশনেআমন্ত্রিত হবেন। যেকোনো নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা যথেষ্ট নয়। সম্পূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থাটির খুঁটিনাটি, এর নানা গলদ ও একে প্রভাবিত করে যেমন অর্থ, ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণাও থাকা প্রয়োজন। এ জন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালনায় দক্ষতা, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার ক্ষমতা—এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। সেই সুযোগটি এবার ছিল। এ রকমটা হলে আমি খুশি হতাম। নির্বাচন পরিচালনায় পাবলিক সার্ভেন্টদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা কার্যকর হয়, এ রকম একটি ধারণা থেকে কমিশনে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি বেশি হয়।
প্রথম আলো :প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাই যদি মানদণ্ড হবে, তাহলে বিচারকেরা কীভাবে প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ? বিচারকেরাও প্রশাসন বোঝেন, কিন্তু শিক্ষাবিদসহ অন্যরা বোঝেন না, এ দেশে এ ধারণা নানা ক্ষেত্রে দেখা যায়। আপনার মন্তব্য কী?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : সিভিল সার্ভেন্টরা মাঠপর্যায় থেকে অভিজ্ঞতা নেন বলে হয়তো ধারণা করা হয় তাঁরা নির্বাচন কমিশন ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেন। তবে এ ধারণা থেকে আমাদের বেরোতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে একটি টিম হিসেবে যদি দক্ষতা দেখাতে হয়, তাহলে বিভিন্ন পেশার মানুষকে তাতে অংশ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত একটি আইন হলে তাতে এ ধরনের চিন্তা প্রতিফলিত হতে পারে।
প্রথম আলো :বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে চারটি নাম বেছে নেওয়া হলো। তাহলে বাকি ছয়টি নাম কোন কোন ছোট দলের তালিকা থেকে নেওয়া হলো?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : এলডিপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনএফ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ইত্যাদি। একটি নাম আমি প্রস্তাব করেছিলাম। আর ছোট দলই কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। হয়তো কাকতালীয়ভাবে অনেকের নাম কমোন পড়েছে। নবনিযুক্ত সিইসির নাম সাত–আটটি এবং আলী ইমাম মজুমদারের নাম দুটি দল থেকে এসেছিল।
প্রথম আলো :কী যুক্তিতে শুধু রাজনৈতিক দলের তালিকাই প্রাধান্য পেল? এর আগে সার্চ কমিটি তবু রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার আগে ১০ জনের নাম প্রকাশ করেছিল। এবার তা–ও কেন প্রকাশ করা হলো না? আপনাদের ১০ কার্যদিবস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আপনারা দুই কার্যদিবস আগে দিয়ে কি তাড়াহুড়ো করেননি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সে জন্য তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গতবার রাষ্ট্রপতিকে ১০ জনের নাম দেওয়ার আগে কি তা প্রকাশ করা হয়েছিল? আমার ধারণা, তাঁকে দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব তা সাংবাদিকদের জানান। এবারও ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে জানানো হয়েছে। ১০ কার্যদিবস ৭ তারিখ শেষ হতো। ৭ তারিখই রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেদিন তাঁর ব্যস্ততার জন্য ৬ তারিখ আমরা জমা দিলাম। আমাদের কাজ ৬ তারিখের সভাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
প্রথম আলো :সার্চ কমিটি কেন বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছিল? ব্যক্তি বাছাইয়ে মতামত দিতে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সুপারিশ গ্রহণ না করার পেছনে কী যুক্তি ছিল?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : বিশিষ্ট নাগরিকেরা নির্বাচন কমিশন কেমন হবে, এর সদস্যদের কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে—এসব বিষয়ে তাঁদের মত দেন। আমার বিশ্বাস, তাঁরা যা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে তা মনে রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। একধরনের নৈতিক চাপের নিচে তাঁরা থাকবেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রস্তাবটি ছিল চমৎকার। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকগুলোই চায়নি, তাদের দেওয়া নাম প্রকাশ করা হোক। হয়তো তারা চায়নি তারা কাদের নাম প্রস্তাব করেছে, সবাই তা জানুক। স্যারের প্রস্তাবটি অন্যভাবে গ্রহণ করা যেতে পারত, যেমন কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা উল্লেখ না করে সবাইকে জানানো যেত। তাতে একটা পাবলিক ডিবেট হতে পারত। তবে তাতে রাজনৈতিক উত্তেজনাটাও ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু একই সঙ্গে বলতে হয় অনুসন্ধান কমিটির কর্মপরিধিতে এই বিষয়টি ছিল না।
প্রথম আলো :১৬ বা ১৭ জন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানালেও কোনো সংখ্যালঘুর অন্তর্ভুক্তি কেন সম্ভব হলো না? আর কমিশনেও কেউ এলেন না।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকা হবে। তাতে এমন দুজনও ছিলেন; যাঁরা থাকেন চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে। একসময় দেখা গেল এত অল্প সময়ে তাঁদের পক্ষে ঢাকায় এসে বৈঠকে যোগ দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। তাঁদের জায়গায় ঢাকা থেকে দুজনকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল, সেটি হয়নি আমাদের অসাবধানতার কারণে। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আর কমিশনে একজনকে নিতেও কয়েকটি নাম আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু তা যাচাই উতরে যায়নি।
প্রথম আলো :আপনারা কী বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির কাছে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন? সবাই চাইছে বলে আইন দরকার? নাকি এর কোনো উপকারিতা রয়েছে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : একটি আইন থাকার কতগুলো সুষ্ঠু সুবিধা আছে। প্রথমত, তাতে বিধিবিধান, কর্মপরিধি ও পদ্ধতি সবই সুনির্দিষ্ট থাকে, এমনকি প্রতিটি কাজ পদের সংক্রান্ত নির্দিষ্ট থাকে, তাতে এর প্রয়োগ সহজ হয়, একে অনুসরণ করাও সহজ হয়। দ্বিতীয়ত, আইনের একটি বস্তুনিষ্ঠতা থাকে, এটি থাকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা দলের ঊর্ধ্বে। তৃতীয়ত, আইন প্রতিপালনের একটি বাধ্যবাধকতা থাকে; আইনের বরখেলাপের জন্য প্রতিকার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও থাকে। আইন হলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার ভেতরে চলে আসবে। সবাই যখন আইন চায়, বুঝতে হবে একটা প্রয়োজনীয়তা থেকে মানুষ কথাটি বলে। তা ছাড়া, আমি দেখেছি এবার বিএনপিসহ অনেক দল একটি অনুসন্ধান কমিটি তৈরির জন্য অনেক নাম প্রস্তাব করেছিল। তাদের নামগুলো থেকে কোনো নাম রাখা হয়নি। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। আইন থাকলে এটি হতো না। এ প্রসঙ্গে আমি মনে করি, সরকারি ও বিরোধী দলগুলো থেকে সদস্যদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করলে অনুসন্ধানটিও সবার মনমতো হয়, কমিশন গঠনেও ঐকমত্য হয়।
প্রথম আলো :সংবিধানে ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে যেভাবে আইনের কথা আছে, সেভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের জন্য আইন তৈরির কথা বলা আছে। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আপনি কি মনে করেন, সব সাংবিধানিক পদধারী আপনারা যে প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাই করেছেন, তেমন প্রক্রিয়া তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : অবশ্যই। প্রতিটি সাংবিধানিক নিয়োগের ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট আইন থাকা প্রয়োজন। তাতে একদিকে নিয়োগ-প্রক্রিয়া যেমন স্বচ্ছ হবে, দায়বদ্ধতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।
প্রথম আলো :গোপনীয়তা রক্ষায় কমিটি কী যুক্তিতে সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিল? কমিটি অবশ্যই প্রচলিত আইন দ্বারা চালিত হবে। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন আপনাদের নেওয়া অবস্থানকে সমর্থন করে না। সুতরাং আপনারা আইন লঙ্ঘন করেছেন। মন্তব্য করুন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : চাকরিজীবনে দক্ষতা, সততা, যোগ্যতা; নির্বাচন ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। যেহেতু আমাকে নাগরিক সমাজের একজন হিসেবে অনুসন্ধান কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল এবং ১০ জনের তালিকায় নাগরিক সমাজের তিনজন প্রতিনিধি ছিলেন, আমি আশা করেছিলাম অন্তত একজনকে নির্বাচন কমিশনে রাখা হবে। আমি আরও আশা করেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন একাডেমিক বা শিক্ষাবিদ কমিশনেআমন্ত্রিত হবেন। যেকোনো নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা যথেষ্ট নয়। সম্পূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থাটির খুঁটিনাটি, এর নানা গলদ ও একে প্রভাবিত করে যেমন অর্থ, ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণাও থাকা প্রয়োজন। এ জন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালনায় দক্ষতা, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার ক্ষমতা—এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। সেই সুযোগটি এবার ছিল। এ রকমটা হলে আমি খুশি হতাম। নির্বাচন পরিচালনায় পাবলিক সার্ভেন্টদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা কার্যকর হয়, এ রকম একটি ধারণা থেকে কমিশনে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি বেশি হয়।
প্রথম আলো :প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাই যদি মানদণ্ড হবে, তাহলে বিচারকেরা কীভাবে প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ? বিচারকেরাও প্রশাসন বোঝেন, কিন্তু শিক্ষাবিদসহ অন্যরা বোঝেন না, এ দেশে এ ধারণা নানা ক্ষেত্রে দেখা যায়। আপনার মন্তব্য কী?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : সিভিল সার্ভেন্টরা মাঠপর্যায় থেকে অভিজ্ঞতা নেন বলে হয়তো ধারণা করা হয় তাঁরা নির্বাচন কমিশন ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেন। তবে এ ধারণা থেকে আমাদের বেরোতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে একটি টিম হিসেবে যদি দক্ষতা দেখাতে হয়, তাহলে বিভিন্ন পেশার মানুষকে তাতে অংশ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত একটি আইন হলে তাতে এ ধরনের চিন্তা প্রতিফলিত হতে পারে।
প্রথম আলো :বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে চারটি নাম বেছে নেওয়া হলো। তাহলে বাকি ছয়টি নাম কোন কোন ছোট দলের তালিকা থেকে নেওয়া হলো?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : এলডিপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনএফ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ইত্যাদি। একটি নাম আমি প্রস্তাব করেছিলাম। আর ছোট দলই কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। হয়তো কাকতালীয়ভাবে অনেকের নাম কমোন পড়েছে। নবনিযুক্ত সিইসির নাম সাত–আটটি এবং আলী ইমাম মজুমদারের নাম দুটি দল থেকে এসেছিল।
প্রথম আলো :কী যুক্তিতে শুধু রাজনৈতিক দলের তালিকাই প্রাধান্য পেল? এর আগে সার্চ কমিটি তবু রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার আগে ১০ জনের নাম প্রকাশ করেছিল। এবার তা–ও কেন প্রকাশ করা হলো না? আপনাদের ১০ কার্যদিবস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আপনারা দুই কার্যদিবস আগে দিয়ে কি তাড়াহুড়ো করেননি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, সে জন্য তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গতবার রাষ্ট্রপতিকে ১০ জনের নাম দেওয়ার আগে কি তা প্রকাশ করা হয়েছিল? আমার ধারণা, তাঁকে দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব তা সাংবাদিকদের জানান। এবারও ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে জানানো হয়েছে। ১০ কার্যদিবস ৭ তারিখ শেষ হতো। ৭ তারিখই রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেদিন তাঁর ব্যস্ততার জন্য ৬ তারিখ আমরা জমা দিলাম। আমাদের কাজ ৬ তারিখের সভাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
প্রথম আলো :সার্চ কমিটি কেন বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছিল? ব্যক্তি বাছাইয়ে মতামত দিতে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সুপারিশ গ্রহণ না করার পেছনে কী যুক্তি ছিল?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : বিশিষ্ট নাগরিকেরা নির্বাচন কমিশন কেমন হবে, এর সদস্যদের কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে—এসব বিষয়ে তাঁদের মত দেন। আমার বিশ্বাস, তাঁরা যা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে তা মনে রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। একধরনের নৈতিক চাপের নিচে তাঁরা থাকবেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রস্তাবটি ছিল চমৎকার। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকগুলোই চায়নি, তাদের দেওয়া নাম প্রকাশ করা হোক। হয়তো তারা চায়নি তারা কাদের নাম প্রস্তাব করেছে, সবাই তা জানুক। স্যারের প্রস্তাবটি অন্যভাবে গ্রহণ করা যেতে পারত, যেমন কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা উল্লেখ না করে সবাইকে জানানো যেত। তাতে একটা পাবলিক ডিবেট হতে পারত। তবে তাতে রাজনৈতিক উত্তেজনাটাও ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু একই সঙ্গে বলতে হয় অনুসন্ধান কমিটির কর্মপরিধিতে এই বিষয়টি ছিল না।
প্রথম আলো :১৬ বা ১৭ জন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানালেও কোনো সংখ্যালঘুর অন্তর্ভুক্তি কেন সম্ভব হলো না? আর কমিশনেও কেউ এলেন না।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকা হবে। তাতে এমন দুজনও ছিলেন; যাঁরা থাকেন চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে। একসময় দেখা গেল এত অল্প সময়ে তাঁদের পক্ষে ঢাকায় এসে বৈঠকে যোগ দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। তাঁদের জায়গায় ঢাকা থেকে দুজনকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল, সেটি হয়নি আমাদের অসাবধানতার কারণে। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আর কমিশনে একজনকে নিতেও কয়েকটি নাম আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু তা যাচাই উতরে যায়নি।
প্রথম আলো :আপনারা কী বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির কাছে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন? সবাই চাইছে বলে আইন দরকার? নাকি এর কোনো উপকারিতা রয়েছে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : একটি আইন থাকার কতগুলো সুষ্ঠু সুবিধা আছে। প্রথমত, তাতে বিধিবিধান, কর্মপরিধি ও পদ্ধতি সবই সুনির্দিষ্ট থাকে, এমনকি প্রতিটি কাজ পদের সংক্রান্ত নির্দিষ্ট থাকে, তাতে এর প্রয়োগ সহজ হয়, একে অনুসরণ করাও সহজ হয়। দ্বিতীয়ত, আইনের একটি বস্তুনিষ্ঠতা থাকে, এটি থাকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা দলের ঊর্ধ্বে। তৃতীয়ত, আইন প্রতিপালনের একটি বাধ্যবাধকতা থাকে; আইনের বরখেলাপের জন্য প্রতিকার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও থাকে। আইন হলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার ভেতরে চলে আসবে। সবাই যখন আইন চায়, বুঝতে হবে একটা প্রয়োজনীয়তা থেকে মানুষ কথাটি বলে। তা ছাড়া, আমি দেখেছি এবার বিএনপিসহ অনেক দল একটি অনুসন্ধান কমিটি তৈরির জন্য অনেক নাম প্রস্তাব করেছিল। তাদের নামগুলো থেকে কোনো নাম রাখা হয়নি। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। আইন থাকলে এটি হতো না। এ প্রসঙ্গে আমি মনে করি, সরকারি ও বিরোধী দলগুলো থেকে সদস্যদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করলে অনুসন্ধানটিও সবার মনমতো হয়, কমিশন গঠনেও ঐকমত্য হয়।
প্রথম আলো :সংবিধানে ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে যেভাবে আইনের কথা আছে, সেভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের জন্য আইন তৈরির কথা বলা আছে। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আপনি কি মনে করেন, সব সাংবিধানিক পদধারী আপনারা যে প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাই করেছেন, তেমন প্রক্রিয়া তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : অবশ্যই। প্রতিটি সাংবিধানিক নিয়োগের ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট আইন থাকা প্রয়োজন। তাতে একদিকে নিয়োগ-প্রক্রিয়া যেমন স্বচ্ছ হবে, দায়বদ্ধতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।
প্রথম আলো :গোপনীয়তা রক্ষায় কমিটি কী যুক্তিতে সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিল? কমিটি অবশ্যই প্রচলিত আইন দ্বারা চালিত হবে। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন আপনাদের নেওয়া অবস্থানকে সমর্থন করে না। সুতরাং আপনারা আইন লঙ্ঘন করেছেন। মন্তব্য করুন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আপনি যে অর্থে গোপনীয়তা বলছেন, সে অর্থে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি আমরা দেখিনি। আমরা চেয়েছি, কাজটা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা নিজেদের মধ্যেই আলাপ-আলোচনা করব এবং প্রতিদিন মিডিয়াকে একটা ব্রিফিং দেওয়া হবে। আমরা ভেবেছি যেহেতু নামগুলো যাচাই-বাছাই করা একটি চলমান প্রক্রিয়া, এ নিয়ে কথা বললে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। তা ছাড়া, দলগুলো যেহেতু তাদের দেওয়া নামগুলোর ব্যাপারে গোপনীয়তা রেখেছে, আমরাও রেখেছি। এতে তথ্য অধিকার আইনের বরখেলাপ হয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। তবে নির্বাচন কমিশন আইন হলে, সেখানে অনুসন্ধান কমিটির বিধান থাকলে এই গোপনীয়তার বিষয়টি স্পষ্ট করা সম্ভব হবে।
প্রথম আলো :মুখপাত্র নিয়োগ করে আপনারা নিজেদের জনগণের মুখোমুখি হওয়া এড়িয়েছেন। সাচিবিক সহায়তা মানে একটি স্বাধীন কমিটির সরকারি মুখপাত্র করা বোঝায় না। মন্তব্য করুন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আমাদের সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব যে ব্রিফিং দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কমিটি ঠিক করে দিত। তিনি নিজ থেকে কোনো মন্তব্য যোগ করেননি, আমাদের নির্দেশনার বাইরে যাননি। ফলে এখানে তিনি ‘সরকারি মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করেননি, করেছেন অনুসন্ধান কমিটির মুখপাত্র হিসেবে। এ দায়িত্ব আমি পালন করলেও একই তথ্য সাংবাদিকেরা পেতেন।
প্রথম আলো :যদি আপনারা শুনানি করতেন, তাহলে তা আরও স্বচ্ছ হতো। সিইসির বিরুদ্ধে জনতার মঞ্চসংক্রান্ত অভিযোগ তোলা ও তা খণ্ডনের সুযোগ নতুন সিইসিরই থাকত। এসব এড়াতে আপনার সুপারিশ কী? সাংবিধানিক পদমর্যাদায় লোক নিতে ব্রিটেন ও ভারত বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের পথে গেছে। আমাদের পথ কী হবে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আমার সুপারিশ একটাই—নির্বাচন কমিশন আইন হোক। সেই আইনে গণশুনানি থাকতে পারে, অন্যান্য পদ্ধতিও থাকতে পারে। আমরা ভারত ও ব্রিটেনের পথে যেতে পারি, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি উঁচুমানের? দলগুলোর ভেতর কি গণতন্ত্র আছে? সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও শ্রদ্ধা আছে? ভারতের রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের, প্রধানমন্ত্রী বিজেপির। দিব্যি তারা রাজনৈতিক ঘরসংসার করছেন। আমাদের দেশে কি তা ভাবা যায়? যেদিন ভাবা যাবে, সেদিন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ হবে।
প্রথম আলো : নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আপনার কোনো বক্তব্য?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : নতুন নির্বাচন কমিশনকে আমি অনুরোধ করব, সব রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জনের কাজটি তারা অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখবে। খুব দ্রুত ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনা তৈরি করে তারা কাজ শুরু করবে। এই পরিকল্পনায় রাজনৈতিক দলগুলোর থাকে সংলাপ; স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট করা ও জবাবদিহির বিষয়টি সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকার ও তা বাস্তবায়নের পথনির্দেশ থাকবে। নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা নিয়মিত বৈঠক করবে। মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে তাদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে অবহিত রাখবে এবং প্রতিটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার থাকবে। এগুলো নাগরিক সমাজ তাদের থেকে আশা করেছে এবং জনগণ করছে ও করবে। এটি যেন তাদের সব কর্মকাণ্ডের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে থাকে।
প্রথম আলো :আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রথম আলো :মুখপাত্র নিয়োগ করে আপনারা নিজেদের জনগণের মুখোমুখি হওয়া এড়িয়েছেন। সাচিবিক সহায়তা মানে একটি স্বাধীন কমিটির সরকারি মুখপাত্র করা বোঝায় না। মন্তব্য করুন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আমাদের সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব যে ব্রিফিং দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কমিটি ঠিক করে দিত। তিনি নিজ থেকে কোনো মন্তব্য যোগ করেননি, আমাদের নির্দেশনার বাইরে যাননি। ফলে এখানে তিনি ‘সরকারি মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করেননি, করেছেন অনুসন্ধান কমিটির মুখপাত্র হিসেবে। এ দায়িত্ব আমি পালন করলেও একই তথ্য সাংবাদিকেরা পেতেন।
প্রথম আলো :যদি আপনারা শুনানি করতেন, তাহলে তা আরও স্বচ্ছ হতো। সিইসির বিরুদ্ধে জনতার মঞ্চসংক্রান্ত অভিযোগ তোলা ও তা খণ্ডনের সুযোগ নতুন সিইসিরই থাকত। এসব এড়াতে আপনার সুপারিশ কী? সাংবিধানিক পদমর্যাদায় লোক নিতে ব্রিটেন ও ভারত বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের পথে গেছে। আমাদের পথ কী হবে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আমার সুপারিশ একটাই—নির্বাচন কমিশন আইন হোক। সেই আইনে গণশুনানি থাকতে পারে, অন্যান্য পদ্ধতিও থাকতে পারে। আমরা ভারত ও ব্রিটেনের পথে যেতে পারি, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি উঁচুমানের? দলগুলোর ভেতর কি গণতন্ত্র আছে? সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও শ্রদ্ধা আছে? ভারতের রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের, প্রধানমন্ত্রী বিজেপির। দিব্যি তারা রাজনৈতিক ঘরসংসার করছেন। আমাদের দেশে কি তা ভাবা যায়? যেদিন ভাবা যাবে, সেদিন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ হবে।
প্রথম আলো : নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আপনার কোনো বক্তব্য?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : নতুন নির্বাচন কমিশনকে আমি অনুরোধ করব, সব রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জনের কাজটি তারা অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখবে। খুব দ্রুত ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনা তৈরি করে তারা কাজ শুরু করবে। এই পরিকল্পনায় রাজনৈতিক দলগুলোর থাকে সংলাপ; স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট করা ও জবাবদিহির বিষয়টি সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকার ও তা বাস্তবায়নের পথনির্দেশ থাকবে। নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা নিয়মিত বৈঠক করবে। মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে তাদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে অবহিত রাখবে এবং প্রতিটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার থাকবে। এগুলো নাগরিক সমাজ তাদের থেকে আশা করেছে এবং জনগণ করছে ও করবে। এটি যেন তাদের সব কর্মকাণ্ডের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে থাকে।
প্রথম আলো :আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments