টেকনাফে তরমুজ–বাঙ্গির বিপ্লব
মাঠজুড়ে সবুজ রঙের বল আকৃতির ডোরাকাটা তরমুজ ও সবুজ-হলুদ বাঙ্গিতে ভরপুর হাটবাজার। স্তূপ করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। শীতের শেষে একটু গরম পড়তে শুরু করায় বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। গত কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার কক্সবাজারের টেকনাফের চাষিরা আগাম তরমুজ ও বাঙ্গি চাষ শুরু করেন।
১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, টেকনাফ পৌর এলাকার পুরাতন বাসস্টেশনের বিভিন্ন স্থানে পিকআপ, চাঁদের গাড়ি, ভ্যানগাড়ি ও অটোরিকশা ভর্তি করে শত শত তরমুজ ও বাঙ্গি নিয়ে আসেন স্থানীয় কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী মো. ইউনুচ (৩৩), রিয়াজ উদ্দিন (৫২), আবদুস সালাম (৫০), কালা মিয়া (৪৫), মোহাম্মদ আলম (৪২) ও ফরিদ আলম (৪০)। পৌরসভার বাসস্টেশন এলাকার এবি ব্যাংকের সামনে ফুটপাতে বসে তরমুজ বিক্রি করেন মো. ইউনুচ। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেড় শতাধিক তরমুজ ও অর্ধশতাধিক বাঙ্গি বিক্রয় করেছেন। মো. ইউনুচ জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবার ভালো তরমুজ ও বাঙ্গির ফলন হয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ফড়িয়াদের কারণে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। আমরাও বেশি দামে কিনছি, আর বিক্রি করছি।’ মো. ইউনুচ মাঠ থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতি শত তরমুজ এগারো হাজার ও বাঙ্গি সাড়ে ছয় হাজার টাকায় কিনে এনেছেন। প্রতিটি তরমুজের দাম পড়েছে ১১০ টাকা আর বাঙ্গির দাম পড়েছে ৬৫ টাকা করে। সেই তরমুজ টেকনাফ শহরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৮০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় আর বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৬০ থেকে ২৩০ টাকায়। অন্যদিকে ফড়িয়ারা খেত থেকে একই তরমুজ কিনছেন প্রতি শত আট হাজার ও বাঙ্গি কিনছেন সাড়ে চার হাজার টাকায়। কিন্তু বিক্রির বেলায় ঠিকই বেশি দামে বিক্রি করছেন। রিকশাচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, ‘সকাল থেকে ৩৫৫ টাকা রোজগার করেছি। ১৪০ টাকায় একটা তরমুজ কিনলাম।
বাড়িতে নিয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা খুশি হবে। বাকি টাকা থেকে রিকশা ভাড়া ও রাতের খাবারের জন্য বাজার করব।’ বাসস্টেশনের ফল ব্যবসায়ী ফরিদ আলম জানান, এখানকার তরমুজ ও বাঙ্গি চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। টেকনাফের লেদার চাষি নুর আহমদ (৩৯) ও আলী আহমদ (৪৫) জানান, অন্যান্য স্থানের তুলনায় প্রায় দুই-তিন মাস আগে টেকনাফের চাষিরা তরমুজ ও বাঙ্গি চাষে নামেন। এক কানি (৪০ শতক) জমিতে ২ হাজার ২০০টি তরমুজ ও বাঙ্গির থালি করা হয়। প্রতি থালিতে সার, কীটনাশক, বীজ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয় প্রায় ৩০-৪০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কানিতে খরচ যায় প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকার মতো। ভালো ফলন হওয়ায় এ পর্যন্ত দুবার করে ফল তুলে দুই চাষি যথাক্রমে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ ও বাঙ্গি বিক্রি করেছেন। খেতের বাকি তরমুজ ও বাঙ্গি বিক্রি করে একেকজন আরও দেড়-দুই লাখ টাকা পাওয়ার আশা করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন , চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮৯০ একরে তরমুজ ও ২২৪ একরে বাঙ্গি চাষ করছেন ১ হাজার ৩১৩ জন চাষি। কয়েক দিন ধরে উপজেলার সদর, সাবরাং, বাহারছড়া, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামে তরমুজ ও বাঙ্গির চাষ হয়েছে।
No comments