পুকুর গিলছেন ‘বড় বাবু’
আইনত নিষিদ্ধ জেনেও রাজশাহী মহানগর এলাকায় পুকুর ভরাট করছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে হাসপাতালের প্রধান সহকারী। রেলওয়ে হাসপাতালে তিনি ‘বড় বাবু’ বলে পরিচিত। তাঁর নাম আব্দুল কাইয়ুম। তবে আব্দুল কাইয়ুম দাবি করেছেন, কাগজপত্রে জায়গাটি আমবাগান হিসেবে রয়েছে। তাই তিনি ভরাট করছেন। পুকুর ভরাট বেআইনি এটা তিনি জানেন।
‘বড় বাবু’ যে পুকুরটি ভরাট করছেন, সেটি রাজশাহী নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায় অবস্থিত। পুকুরটির তিন দিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাকা দেয়াল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, যাতে পুকুরের পাড় ভেঙে না যায়। প্রায় দুই মাস ধরে দেখা যাচ্ছে, পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোণে মাটি ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি পুকুরের একটি অংশ টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে মাটি ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে এর তিন পাশ দিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরের দক্ষিণ পাশেও রাস্তার ওপর বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দক্ষিণ দিক দিয়েও ধীরে ধীরে পুকুরে মাটি ফেলা হচ্ছে। আব্দুল কাইয়ুম বলেন, পুকুরটির মূল মালিক তাঁর শ্বশুর নসিম উদ্দিন। তিনি পুকুরটির একটি অংশ ভাগে পেয়েছেন। সেটুকুই তিনি ভরাট করছেন। জানতে চাইলে বালিয়াপুকুর এলাকার ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা ছোট থেকে এটাকে পুকুরই দেখে আসছেন। তবে পুকুরের পাড়ে আমগাছ ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০-এর ২-এর (ক) এবং ৬ (ঙ) ধারা মোতাবেক, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ ছাড়া জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। পুকুর ভরাটের কাজ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে জলাধার বলতে ভূমি রেকর্ডে জলাশয় হিসেবে উল্লেখ রয়েছে অথবা এমন নিচু ভূমিকে বোঝানো হয়েছে, যা সলল ও বৃষ্টির পানি ধারণ করে। জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন,
রাজশাহী মহানগরের ভেতরে কেউ পুকুর ভরাট করতে পারবেন না। এই পুকুর ভরাটের ব্যাপারে তাঁদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। তিনি আরও বলেন, কাল রোববার অফিস খুললে তাঁরা খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। রাজশাহী মহানগর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা ২০০৪-২০২৪-এর অন্তর্ভুক্ত এলাকায় কোনো জলাশয় ভরাট করা যাবে না। এ ব্যাপারে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে নগরে লিফলেট বিতরণ করে মানুষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সেই আইনই বলবৎ আছে কি না, জানতে চাইলে গতকাল আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, নিয়ম আগের মতোই আছে। জলাশয় ভরাট করা যাবে না। তিনি বলেন, পুকুর ভরাটের বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি। জলাশয় ভরাটের ওপর ২০১০ সালে হাইকোর্ট তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজ, রাজশাহীর সভাপতি মাহাবুব সিদ্দিকীর দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন। ওই রিটের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তারপরও নগরে পুকুর ভরাট চলছে। এ পর্যন্ত পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চারটি মামলা করা হয়েছে।
No comments