উড়ালসড়কের ওপর ট্রাফিক সিগন্যাল, বাড়বে যানজট
মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের ওপর মৌচাক পয়েন্টে সিগন্যাল-ব্যবস্থা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যে অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, তাতে উড়ালসড়কেও সিগন্যালের ব্যবস্থা থাকছে। সিগন্যাল এড়িয়ে গাড়িগুলোর গতি অবাধ রাখতে হলে উড়ালসড়ক তিনতলার স্থলে চারতলা করতে হবে। তা করতে হলে গাড়ি ঘোরানোর জন্য চারদিকে আরও জায়গা লাগবে। বাড়তি জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে এবং ভাঙতে হবে অনেক বহুতল ভবন। যানজট এড়িয়ে গাড়ির গতিপ্রবাহ অবাধ রাখতেই উড়ালসড়ক নির্মাণ কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে মৌচাক পয়েন্টে উড়ালসড়কেও সিগন্যাল করতে হচ্ছে। ফলে বিপুল ব্যয়ে এবং দীর্ঘ দিন ধরে জনভোগান্তি সৃষ্টি করে যে উড়ালসড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। প্রাথমিকভাবে ২০১১ সালের মার্চে উড়ালসড়কের কাজ শুরুর জন্য প্রায় ৭৭৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এর প্রথম দুটি অংশ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর ও মালিবাগ অংশ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। উড়ালসড়কের বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও ঠিকাদার কোম্পানি তমা কনস্ট্রাকশন জানায়, উড়ালসড়ক মৌচাক পয়েন্টে চারতলা না করা হলে সিগন্যাল-ব্যবস্থা এড়ানো যাবে না। সূত্রমতে, এই উড়ালসড়কের জন্য যে নকশা করা হয়েছে, তা অনুসরণ করায় এখানে যানজট আরও বাড়বে। কারণ উড়ালসড়কের বাংলামোটর, মালিবাগ ও শান্তিনগর থেকে আসা অংশ এসে মিলবে মৌচাক পয়েন্টে। উড়ালসড়কের ওপরেই তৈরি হবে তিন রাস্তার মোড়। মোড়ের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে সিগন্যাল বাতির ব্যবস্থা রাখতেই হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্য, বিশ্বের কোনো দেশে উড়ালসড়কের ওপর ট্রাফিক সিগন্যাল আছে বলে তাঁরা শোনেননি। প্রশ্ন উঠেছে, যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্যই উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, তাহলে সেই উড়ালসড়কের ওপরই কেন যানজট হবে?এ বিষয়ে এলজিইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে এই উড়ালসড়ক নির্মাণের জন্য আমেরিকার একটি কোম্পানি সমীক্ষা করে নকশা করেছিল।
এই উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। তিন দিক থকে আসা উড়ালসড়কের অংশ মৌচাকের যে স্থানে মিলিত হবে, সেখানে ঠিক কতটুক জায়গার প্রয়োজন তা নিরূপণ না করেই নকশা করা হয়েছে। পরে আর নকশা হালনাগাদ করা হয়নি। আট বছর পর ২০১২ সালে সেই নকশা ধরেই কাজ শুরু হয়। আবার উড়ালসড়কের বিস্তারিত নকশা (ডিজাইন) ছাড়াই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ, দরপত্র আহ্বান ও প্রকল্পের পুরো কাজে হাত দেওয়া হয়। ফলে উড়ালসড়কের ওপরেই রাখতে হচ্ছে ট্রাফিক সিগন্যাল। যানজট হবে বলেই সিগন্যাল বাতি দিতে হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডি। এ বিষয়ে মালিবাগ-মৌচাক (ডব্লিউ-৫), বাংলামোটর-মৌচাক অংশ (ডব্লিউ-৬) ও শান্তিনগর লুপের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মৌচাক পয়েন্টে বর্তমানে যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে, তাতে তিন রাস্তার মোড়ের জন্য সিগন্যালের ব্যবস্থা রাখতেই হচ্ছে। এটা এড়াতে গেলে সেখানে তিনতলার স্থলে চারতলা উড়ালসড়ক করতে হবে। অর্থাৎ আরও একটি তলা বাড়াতে হবে। সেটা বাড়াতে হলে গাড়ি ঘোরানোর জন্য যে টার্নিং করতে হবে, তাতে চারদিকের অনেক উঁচু ভবন ভাঙতে হবে। তার আগে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে তিনি বলেছেন, সিগন্যাল থাকায় সেখানে খুব বেশি যানজট হবে না, কারণ সেখানে খুব বেশি গাড়ি জমবে না বলে আশা করা যায়। তবে একাধিক সূত্রমতে, এখানে যানজট সৃষ্টি হবেই। উড়ালসড়কের ওপর তিনটি রাস্তার মোড় করার ব্যবস্থা না রেখে একটি আরেকটির ওপর দিয়ে গেলে জটিলতা হতো না।
No comments