গর্ত ও ধুলার সড়ক
‘রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করলে ধুলোয় একাকার হয়ে যায়। কিছুই দেখা যায় না। দরজা-জানালা বন্ধ করেও ঘরে থাকা যায় না। তখন নাকেমুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে থাকতে হয়। রান্নার কাজ করা যায় না। সন্তানদের খেতে দেওয়া যায় না। গাড়ির শব্দ শুনলে ভাতের থালা নিয়ে ঘরের ফাঁকা জায়গায় চলে যেতে হয়।’ কথাগুলো ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের মুহাম্মদ এয়াকুবের স্ত্রী জেসমিন আকতারের। তাদের বাড়ি উপজেলার চার কিলোমিটার দীর্ঘ দমদমা-লেলাং সড়কের পাশে তেলপারই খালসংলগ্ন এলাকায়। শুধু জেসমিন আকতার নন, সড়কটির দুরবস্থা সম্পর্কে লেলাং এলাকার স্কুলশিক্ষক সত্যব্রত দাশ, নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আবু তাহের, নাজিরহাট কলেজের শিক্ষার্থী সাহেদুল আলম, লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) সদস্য মুহাম্মদ ফারুকও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। দমদমা-লেলাং সড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. আজম উদ্দিন (৩৪) বলেন, ‘সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিরুপায় হয়ে এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। ফলে দিনে দিনে গর্তগুলো আরও বড় হচ্ছে। বাড়ছে যাত্রীদের দুর্ভোগ। গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। দ্রুত রাস্তার মেরামত করা না হলে এ পথে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ’ ইমামনগর বোর্ড স্কুল এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল উদ্দিন (৩৭) বলেন, ‘বিকল্প যাতায়াতের কোনো উপায় নেই বলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ আধা পাকা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’ লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সড়কটি এখন এ অঞ্চলের মরণফাঁদ।
এটি দিয়ে উপজেলার উত্তর–পূর্বাঞ্চল থেকে ফটিকছড়ি সদরসহ চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় সহজে যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া এটি মাইজভান্ডার-নানুপুর সড়কের বিকল্প সড়ক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের লেলাং থেকে দুই কিলোমিটার ইট বিছানো। ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। যানবাহন যাওয়ার সময় ধুলাবালু উড়ে মেঘের মতো হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের মতো পথচারী ও পরিবহনযাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধুলার হাত থেকে রক্ষা পেতে সড়কসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও দোকানিরা নিজেদের উদ্যোগে কলসি ও বালতি দিয়ে রাস্তায় পানি ছিটাচ্ছেন। ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী ম. বিলাল হোসেন জানান, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরে দমদমা-লেলাং সড়কের চার কিলোমিটারের সড়কটির দুই কিলোমিটার অংশ কার্পেটিংয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করার পর কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। পরে উপকরণের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদার শুধু ইট বিছিয়ে কাজ ফেলে চলে যান। এ জন্য ঠিকাদারকে জরিমানা করা হয়। পুনরায় সড়কের প্রকল্প প্রাক্কলন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শিগগিরই সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার রায় বলেন, দমদমা-লেলাং সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এটি দ্রুত সংস্কার এবং বাকি অংশের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
No comments