সমস্যায় জর্জরিত ফরিদপুরের দ্বারিকানাথ হিন্দু ছাত্রাবাস
নানা সমস্যায় জর্জরিত ফরিদপুরের দ্বারিকানাথ হিন্দু ছাত্রাবাসের অর্ধশত শিক্ষার্থী। দূরদূরান্ত থেকে হতদরিদ্র তফসিলি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এ ছাত্রাবাসে কম খরচে অবস্থান করে শহরের বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তাঁরা সঠিকভাবে পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারছেন না।
১৯৪০ সালে ফরিদপুর শহরের পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর মহল্লার ধোপাবাড়ি সড়কে এ ছাত্রাবাস স্থাপিত হয়। এ ছাত্রাবাসের জন্য জমি দান করেন চরভদ্রাসন উপজেলার চর অযোধ্যা গ্রামের দ্বারিকানাথ সরকার নামের এক দানশীল ব্যক্তি। শুরুতে এ ছাত্রাবাসের জমির পরিমাণ ৬৬ শতাংশ থাকলেও পৌরসভার সড়ক হওয়ায় বর্তমানে জমির পরিমাণ ৫৭ শতাংশ। গত ২০ জানুয়ারি ওই ছাত্রাবাসে গিয়ে এবং নিবাসী ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সমস্যা আর অব্যবস্থাপনার নানা তথ্য। ছাত্রাবাসে একটি আধা পাকা ও দুটি টিনশেড ঘরে ৪৮ জন শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৬০ জন। তাঁদের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি শৌচাগার ও দুটি প্রস্রাবখানা, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ছাত্রাবাসের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সীমানাপ্রাচীর থাকলেও উত্তর ও পশ্চিম দিকে ডোবা থাকায় ওই দুই দিকে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। ছাত্রাবাসের উত্তর-পূর্ব কোণে এলাকাবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলায় প্রতিনিয়ত সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে শুরু করা তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছাত্ররা জানান, চতুর্দিকে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় এলাকার বখাটে ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উৎপাত প্রতিনিয়তই ঘটে। ঘটে চুরির ঘটনাও।
বখাটেরা ছাত্রাবাসের বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে ফল পেড়ে নিয়ে যায়, প্রতিরোধ করেও ঠেকানো যায় না। এ ছাড়া টিনশেড ঘরে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। টিনগুলো মরচে পড়ে জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি জানালা ভাঙা থাকায় শীতের কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঝড়-বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ওই ছাত্রাবাসের নিবাসী ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের বাসিন্দা সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা সুলভে এ ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করি। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো সুফল পাইনি।’ ছাত্রাবাসের আরেক নিবাসী মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কার্তিক ঘোষ জানান, ছাত্রাবাসের অব্যবস্থাপনা ও বহিরাগতদের উৎপাতের কারণে তাঁরা ঠিকমতো পড়াশোনায় মন দিতে পারেন না। ছাত্রাবাসের ২১ সদস্যবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী শহরের অম্বিকাপুর মহল্লার বাসিন্দা সুরেন্দ্রনাথ রায়। সুরেন্দ্রনাথ রায় প্রথম আলোকে বলেন, টাকার অভাবে উন্নয়নকাজ করা যাচ্ছে না। এর আগে জেলা পরিষদের টাকায় নিচু মাঠ ভরাট করা হয়। একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করলেও তা শেষ করা যায়নি। এলাকাবাসী আবর্জনা ফেলায় ছাত্রাবাসের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও এলাকাবাসীর নজরদারি প্রয়োজন। ফরিদপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল জলিল শেখ বলেন, এলাকাবাসী যাতে ছাত্রাবাসের কাছে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে, সে ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এলাকার বখাটেদের উৎপাত রোধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফরিদপুর সদরের ইউএনও ওই ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রাবাসে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের থাকা ও পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা দূর করা হবে।
No comments