তিন ছাত্রাবাসের দুটিই পরিত্যক্ত
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মোট পাঁচটি ছাত্রাবাস। এর মধ্যে তিনটি ছাত্রাবাস শুধু একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য। এই ছাত্রাবাসগুলো হলো রবীন্দ্রনাথ, সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ও শেরেবাংলা ছাত্রাবাস দুটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সংস্কারের অভাবে অনেক বছর আগেই এগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী চালু থাকলেও সেটিরও জরাজীর্ণ অবস্থা। ছাত্রাবাসটির তিনটি ভবনের মধ্যে দুটিকেই ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। শেরেবাংলা ছাত্রাবাসটি ১৯৯৮ সালে এবং ২০১০ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় রবীন্দ্রনাথ ছাত্রাবাসটি। রবীন্দ্রনাথ ছাত্রাবাস ছিল হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য। এটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকে হিন্দু শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে তোলা বন্ধ রয়েছে। একমাত্র চালু সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসটি মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য। সেটিরও দুটি একতলা ভবন তিন বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তারপরও এই দুই ভবনে ৩২ জন শিক্ষার্থী থাকে। বাকি চারতলা ভবনটিও জরাজীর্ণ। সেখানে আছে ৮০ জন ছাত্র। কলেজ সূত্র জানায়, এই কলেজে বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ২৯২ জন। কিন্তু ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা আছে মাত্র ১১২ জনেরই। রবীন্দ্রনাথ ও সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস দুটি কাগজপত্রে ও স্থানীয়ভাবে ‘নিউ হোস্টেল’ নামে পরিচিত। কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও নিউ হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ১৮৯৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৩০ সালে নগরের দক্ষিণ চর্থা মৌজার টমছমব্রিজ এলাকার ৪ দশমিক শূন্য ৯ একর জায়গা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য রবীন্দ্রনাথ এবং মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। নূরুল ইসলাম বলেন, ছয় বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ছাত্রাবাসকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন। এরপর ওই ছাত্রাবাসে আর কোনো শিক্ষার্থী ওঠানো হয়নি। ফলে হিন্দু শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে থাকতে পারছে না। বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসের তিনটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম পাশের একতলা ভবনে ২০ জন, পূর্ব পাশের একতলা ভবনে ১২ জন ও দক্ষিণ পাশের চারতলা ভবনে থাকছে ৮০ জন শিক্ষার্থী। ২০১৩ সালে এক লাখ টাকা দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ভবন দুটি সামান্য সংস্কার করা হয়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসের ভবনগুলো।
কক্ষগুলো স্যাঁতসেঁতে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তার ওপর গাদাগাদি করে থাকছে শিক্ষার্থীরা। ছাত্রাবাসের পশ্চিম পাশের একতলা ভবনের ৩০ নম্বর কক্ষে থাকে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও ফেনী সদর উপজেলার বাসিন্দা আল ইমদাদুল করিম। সে বলে, বৃষ্টি হলে টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। এতে কক্ষের ভেতর পানি উঠে যায়। ভিজে যায় বই-খাতা-বিছানা। ঝুঁকি নিয়েই তারা ছাত্রাবাসে থাকছে। একই ভবনের ৩২ নম্বর কক্ষে থাকে একই শ্রেণির শিক্ষার্থী ও দাউদকান্দি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আবু সাঈদ। তার ভাষ্যমতে, বিপদে পড়েই এই ছাত্রাবাসে তাদের থাকা। ছাত্রাবাসটির চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ২০৩ নম্বর কক্ষে থাকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নানকরা গ্রামের মেহেদী হাসান। সে বলে, ‘কী আর করব? নোংরা পানির মধ্যেই থাকছি।’ জানতে চাইলে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে ৩৬৬ ফুট দীর্ঘ সীমানাপ্রাচীরের কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া চারতলা ভবনের সংস্কারকাজ চলছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাশের পরিত্যক্ত ভবন গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য সংস্কার করা হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ মো. আবু তাহের বলেন, ছাত্রাবাস সংস্কারের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসের টিনশেডের দুটি ভবনে কিছুটা সংস্কার করে ছাত্রদের রাখা হচ্ছে। চারতলা ভবনেও সংস্কার হচ্ছে। বরাদ্দ এলে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
No comments