ভালোবাসার শহীদ মিনার
চারদিকে উঁচু উঁচু সুদৃশ্য ভবন। এর মধ্যে কয়েকটি বাড়ি বেমানান। একতলা বাড়ির ওপরে টিনের চাল। দেয়ালের রং মলিন। বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। রাজধানীর মণিপুরীপাড়ার সাত নম্বর গেটের গলির ভেতরের দিকের এলাকায় ছোট ছোট ঘরে একসঙ্গে একাধিক পরিবারের বাস। এখানে পোশাককর্মী, দোকানিসহ নিম্ন আয়ের লোকজন থাকেন। একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে হাঁটতে বেরিয়ে এলাকাটিতে এসে চোখ আটকে যায়। এখানকার কিশোরেরা শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ব্যবস্থা করেছে। গোটা দশেক ঘরের মাঝখানে একটুখানি উঠান। সেখানে একটি টিউবওয়েল। তার কাছেই ফাঁকা জায়গায় সাদা রঙের পরিত্যক্ত টিউবলাইট দিয়ে শহীদ মিনারের কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। শহীদ মিনারের সামনের অংশে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরোনো সংবাদপত্র। দেওয়া হয়েছে কিছু ফুল। এখানকার বাসিন্দা কিশোর নূর আলম বলল, ‘প্রতিবছরই শহীদ মিনার বানাই।
যা পাই, তা দিয়াই বানাই। এবার বানাইছি টিউবলাইট দিয়া।’ উদ্যোক্তা কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গতকাল সোমবার রাত আটটা থেকে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হতে হতে রাত পৌনে ১২টা বেজে যায়। রাত ১২টায় ভাষার গান গেয়ে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দেয়। কিশোর নূর আলম একটি গ্যারেজে কাজ করে। আর্থিক অনটনের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির পর তাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। সে জানায়, একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দেয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই তারা নিজেরাই শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। নূর আলমদের ভাষা দিবস পালনের উদ্যোগে বড়দেরও সায় আছে। মিলন বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমাগো তো দূরে যাওয়ার সুযোগ নাই। তাই এহানেই পোলাপানের বানানো শহীদ মিনারে ফুল দেই। ভালো লাগে।’ নূর আলমসহ অন্য কিশোরেরা জানায়, প্রাণের টানে তারা তাদের মতো করে শহীদ মিনার গড়েছে। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নিয়েছে। তাদের বানানো শহীদ মিনারটি আজ সারা দিন থাকবে। দিন শেষে শহীদ মিনারটি সরিয়ে নেওয়া হবে।
No comments