নানা সমস্যায় কমছে শিক্ষার্থী
জরাজীর্ণ ভবন, শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষকের স্বল্পতা, অচল শৌচাগার ও শিক্ষকদের বসার কক্ষ না থাকার মতো কিছু গুরুতর সমস্যায় জর্জরিত নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পিঙ্গুইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিনেও সমস্যার সমাধানে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী কমতে শুরু করেছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিঙ্গুইন গ্রামে ১৯৯৫ সালে রেজিস্টার্ড বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হয়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিদ্যালয়ের জন্য দুটি আধা পাকা কক্ষ নির্মাণ করে দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন চাঁদা তুলে নির্মাণ করে দেয় আরও দুটি কক্ষ। বর্তমানে তিনটি কক্ষে দুই দফায় ছয়টি শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। তবে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা দিলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নেয়। কারণ জরাজীর্ণ ইটের দেয়ালের ওপরের টিনের চালায় অসংখ্য ছিদ্র। বৃষ্টি এলেই মেঝেতে পানি জমে যায়। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান জানায়, বর্ষা এলে তারা প্রায় দিনই ক্লাস করতে পারে না। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের ৫০ বর্গফুটের ছোট্ট একটি কক্ষ অফিসঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে একটা টেবিল নিয়ে প্রধান শিক্ষক বসেন।
অন্য শিক্ষকদের বসার বা বিশ্রামের কোনো জায়গা নেই। শিক্ষার্থীদেরও বসার সমস্যা প্রকট। পর্যাপ্ত বেঞ্চের অভাবে দুজনের একটি বেঞ্চে গাদাগাদি করে পাঁচজন করে বসছে। বিদ্যালয়ের একমাত্র শৌচাগারটি সংস্কারের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে। জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশপাশের বাড়িতে যেতে হয়। এতে অনেকে অস্বস্তি বোধ করে। এভাবে চলতে থাকায় অনেক অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের আর বিদ্যালয়ে আসতেও দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকটও প্রকট। বর্তমানে তিনজন শিক্ষক আছেন। একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। অন্য দুজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে ছয়টি শ্রেণির ১৭০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ান। এতে লেখাপড়ার মান পড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। গত বছর এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৮২। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর সরকারি কোনো অনুদান পায়নি। এমনকি সরকারি হওয়ার পরও বিদ্যালয়টির উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে এই এলাকার একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তার গৌরব হারাচ্ছে। তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের অবকাঠামগত উন্নয়নসহ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান।
No comments